ঝালকাঠি প্রতিনিধি : ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে অভিযান-১০ লঞ্চে আগুন লাগার পর দ্রুত তীরে ভেড়ানো হলে এত মুত্যু এড়ানো যেত বলে মনে করছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা।
রোববার ঘটনাস্থল এবং পুড়ে যাওয়া লঞ্চটির বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন্স অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, তিন তলা ওই লঞ্চের অগ্নিনির্বাবক ব্যবস্থাও কার্যকর ছিল না বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন তদন্তকারীরা।
ঢাকা থেকে বরগুনা যাওয়ার পথে ঝালকাঠির গাবখানের কাছাকাছি সুগন্ধা নদীতে থাকা অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাত ৩টার পর আগুনে পুড়ে যায় অভিযান-১০।
ওই ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩৮ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে। আহত হয়ে ৮০ জনের বেশি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান বলেন, ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে যে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে, তাদের কাজ এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। পুরো তদন্ত শেষ করতে প্রায় দুই সপ্তাহ সময় লাগবে।
“আগুন লাগার পরে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ দ্রুত লঞ্চটি নোঙ্গর করে পাড়ে থামিয়ে রাখলে এত লোকের মৃত্যু হত না, যেহেতু নদী খুব ছোটো। কিন্তু লঞ্চ কর্তৃপক্ষ সেটা করেনি, যার কারণে হতাহতের সংখ্যা বেশি হয়েছে।”
অভিযান-১০: ইঞ্জিন রুমে আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছিল, মেলেনি উত্তর
রাত ৩টার দিকে যখন চলন্ত লঞ্চে আগুনের সূত্রপাত হয়, যাত্রীদের বেশিরভাগই তখন ঘুমিয়ে ছিলেন। না থামিয়ে ওই অবস্থায় চালিয়ে নেওয়া হয় অনেকটা পথ। এক পর্যায়ে নদীর মধ্যে পুরো লঞ্চ দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে।
জিল্লুর রহমান বলেন, “আমরা প্রাথমিকভাবে যেটা বলতে পারি, এই লঞ্চের অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা তেমন কার্যকর ছিল না এবং যারা দায়িত্বে ছিল, তারা এটা ম্যানেজ করতে পারেনি।
“আমরা যখন ফায়ার ফাইটিংয়ে আসি, তখন আমরা দেখতে পাই যে, সম্পূর্ণ লঞ্চে আগুন জ্বলছে এবং প্রতিটি ফ্লোরেই আগুন জ্বলছিল। জাহাজের সম্মুখভাগ থেকে পিছনের অংশ ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত সম্পূর্ণ অংশে আগুন জ্বলছিল।”
তিনি বলেন, এমনিতে নদীর ভেতরে কোনো নৌযানে আগুন লাগলে তা নেভানো সহজ হওয়ার কথা যদি ফায়ার পাম্প ও হোসপাইপের ব্যবস্থা ঠিকঠাক থাকে। কিন্তু অভিযান-১০ লঞ্চের ক্ষেত্রে তা ঘটেনি।
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে আগুনে পোড়া অভিযান-১০ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে আগুনে পোড়া অভিযান-১০রাতের বেলা অগ্নিকা- হওয়ায় এবং প্রাথমিক অবস্থায় আগুন নেভাতে না পারায় এত বেশি হতাহত হয়েছে বলে মত দেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান।
তিনি বলেন, “এখানে যারা প্রত্যক্ষদর্শী ছিল, এবং যারা আমাদের তথ্য দিতে পারছে, তাদের কাছ থেকে আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি এবং এটা পরিদর্শন করছি। এই প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। আশা করি, দুই সপ্তাহ লাগবে তদন্ত শেষ করতে।
“সম্ভাব্য কোন কারণে এই অগ্নিকা- ঘটেছে বা এর অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা পর্যাপ্ত ছিল কিনা তা দুই সপ্তাহ পরে আমরা বলতে পারব।”
বরিশাল বিআইডব্লিটিএ কর্মকর্তাদের একটি দলও রোববার দুপুরে ঝালকাঠি লঞ্চঘাটে রাখা পোড়া অভিযান-১০ লঞ্চটি ঘুরে দেখেন।
সাংবাকিদের প্রশ্নের জবাবে বরিশাল নৌযানের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. বাহারুল আমীন বলেন, লঞ্চটিতে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ছিল না। ঢাকা বরিশাল রুটের সব লঞ্চেই ওপরে বিলাসবহুল ব্যবস্থা থাকে, কিন্তু ইঞ্জিন রুমে নিরাপত্তা জন্য কিছুই থাকে না।”
এদিকে সুগন্ধা নদীতে নিখোঁজদের সন্ধানে তৃতীয় দিনের তল্লাশি অভিযান চলছে। তবে নতুন করে কারও মরদেহ পাওয়া যায়নি। এখনও অনেকে স্বজনদের খোঁজে ভিড় করছেন নদী তীরে। তাদের দাবি, এখনও প্রায় অর্ধশত মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন।
রোববার সকাল থেকেই দুর্ঘটনা কবলিত সুগন্ধা নদীর দিয়াকুলসহ আশপাশের ১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ফায়ার সার্ভিস ও কোস্ট গার্ডের উদ্ধার তৎপরতা শুরু হয়।
নিখোঁজ ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহে পুলিশের পক্ষ থেকে লঞ্চঘাট এলাকায় একটি কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। সেখানে স্বজনরা এসে তথ্য দিয়ে যাচ্ছেন।
সদর থানা পুলিশ এ কন্ট্রোল রুমে নিখোঁজের স্বজনদের দেওয়া তথ্যে ৪৭ জনের তালিকাও প্রস্তুত করেছে। এছাড়া ঝালকাঠি রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি স্বজনদের বক্তব্যের ভিত্তিতে নিখোঁজ ৫১ জনের তথ্য সংগ্রহ করেছে।
আগুন লাগার পর লঞ্চ দ্রুত তীরে ভেড়ানো হলে এত মৃত্যু হত না: ফায়ার সার্ভিস
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ