নিজস্ব প্রতিবেদক : ভয়াবহ আগুনে ভস্মীভূত হওয়ার নয় দিনের মাথায় বঙ্গবাজারে আবার শুরু হলো কাপড় কেনাবেচা। দোকান নেই, এ অবস্থায় চৈত্রের তীব্র গরমে খোলা আকাশের নিচে চৌকি পেতে শুরু হয়েছে বিকিকিনি।
গতকাল বুধবার সকাল থেকে শুরু হয় এ ব্যবসা। পরে দুপুরে তা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপস। তিনি বলেন, “আগুন লাগার পর সারা দেশের মানুষ, প্রবাসীরাসহ সবাই যেভাবে এগিয়ে এসেছেন এটাই বাঙালির শক্তি।” যে ৩ হাজার ৮৪৫টি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের মালিকরা সবাই এখানে ব্যবসার সুযোগ পাবেন জানিয়ে তিনি বলেন, “এখানে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হবে ওপরে ছাউনিও দেয়া হবে।” ঈদের আগে ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন করার যে লক্ষ্যের কথা বলা হয়েছিল, সবার চেষ্টায় তা পূরণ হয়েছে বলেও মনে করেন তিনি। তাপস বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য তহবিল গঠন চলছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেই তহবিলে টাকা দেবেন।” ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে দুই কোটি টাকা অনুদান দেওয়ার ঘোষণাও দেন মেয়র। কীভাবে ক্ষতিপূরণের টাকা বণ্টন করা হবে, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী, ব্যবসায়ী নেতা, ঢাকা চেম্বার, সবার সঙ্গে বসে কার কত ক্ষতি হয়েছে, সেটা ঠিক হবে। এরপর সে অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের টাকা নির্ধারণ করা হবে।” গত ৪ এপ্রিল ভোরে দেশে কাপড়ের সবচেয়ে বড় পাইকারি মার্কেটের একটি বঙ্গবাজারে আগুন লাগে। এতে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স, গুলিস্তান ইউনিট, মহানগর ইউনিট ও আদর্শ ইউনিট ওই আগুনে সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। বঙ্গবাজারের উত্তর পশ্চিম কোণে সাততলা এনেক্সকো টাওয়ার, তার পূর্ব পাশে মহানগর কমপ্লেক্স মার্কেটও পোড়ে আগুনে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় বঙ্গবাজারের পশ্চিম পাশের সড়কের অপর প্রান্তের দুটি মার্কেটও। সব মিলিয়ে ৩৮৪৫ দোকান পুড়ে সেখানে ৩০৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাক্কলন করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটির তদন্ত কমিটি।
ঈদে বিক্রির জন্য বাজারে শত শত কোটি টাকার যে কাপড় মজুদ করা হয়েছিল, তার প্রায় সবই ছাই হয়ে গেছে আগুনে। দুর্ঘটনার পর ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, কারখানা ও সরবরাহকারীরা তাদেরকে আবার কাপড় দিতে রাজি আছে। যদি এখানে চৌকিতে বসার সুযোগ করে দেওয়া হয়, তাহলে তারা ব্যবসার ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারবেন। ওই জায়গায় বহুতল মার্কেট করার যে পরিকল্পনা, তাতেও আর বাধা হয়ে দাঁড়াবেন না তারা। অথচ ২০১৯ সালে ফায়ার সার্ভিস মার্কেটটিকে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে নোটিশ দেওয়ার পর সিটি করপোরেশন সেখানে বহুতল ভবন করার যে উদ্যোগ নেয়, তাতে বাধা দেন ব্যবসায়ীরাই। ফায়ার সার্ভিস একের পর এক নোটিস দিলেও ব্যবসায়ীরা হাই কোর্টে গিয়ে আটকে দেন বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ। অগ্নিকা-ের পর সেটি উল্লেখ করে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আক্ষেপ করে বলেন, “মার্কেটটি নির্মিত হলে হয়ত এমন অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটত না।” মেয়র তাপস জানান, এই ব্যবসায়ীদের পূর্ণভাবে পুনর্বাসনের জন্য কী পদক্ষেপ নেয়া হবে, সে সিদ্ধান্ত ঈদের পর ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বসেই নেওয়া হবে। তিনি বলেন, “আমরা এ ধরনের দুর্ঘটনা চাই না।” গত সোমবার থেকে শুরু করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কয়েক হাজার টন আবর্জনা সরানো হয়েছে উল্লেখ করে সিটি করপোরেশনের কর্মীদের ধন্যবাদও জানান সিটি মেয়র। স্থানীয় সংসদ বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আগুনে পোড়া বঙ্গবাজারে চৌকি পেতে ব্যবসা
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ