বিদেশের খবর ডেস্ক : এখনো যখন বোমার বিস্ফোরণে কেঁপে উঠছে গাজায় আকাশ-বাতাস, তখনই যুদ্ধ পরবর্তী শাসনব্যবস্থার জন্য শুরু হয়েছে পর্দার আড়ালের এক নতুন প্রস্তুতি। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) নিরাপত্তা বাহিনীর প্রায় ৩০০ সদস্য মিশরে যাচ্ছেন বিশেষ প্রশিক্ষণে, যা ভবিষ্যতের গাজা শাসন কাঠামো পাল্টে দেওয়ার পরিকল্পনার অংশ। রোববার ‘আল্ট্রা ফিলিস্তিন’ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি সপ্তাহে কায়রোর উদ্দেশে রওনা দিচ্ছেন পিএ’র নির্বাচিত নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। দুই মাসব্যাপী এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচির তত্ত্বাবধানে রয়েছে মিশরীয় কর্তৃপক্ষ, যা আরব লীগের অনুমোদন পেয়েছে গত মার্চেই। প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং মনোনীত কর্মকর্তারা কোনোভাবেই এই দায়িত্ব প্রত্যাখ্যান করতে পারবেন না। এমন কিছু হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণেরও হুঁশিয়ারি রয়েছে। তবে এই প্রশিক্ষণের পর তাদের কোন ধরনের দায়িত্বে নিযুক্ত করা হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি আল্ট্রা ফিলিস্তিনের সূত্র। ধারণা করা হচ্ছে, যে কর্মকর্তারা মিসরে যাচ্ছেন ভবিষ্যতে তারা রাফা সীমান্ত ক্রসিং ও গাজার অন্যান্য সীমান্ত এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় অংশ নিতে পারেন। যদিও এটি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, যার বাস্তবায়নের দায়িত্ব পাবে নিরাপত্তা বাহিনী।
মিশরের প্রস্তাবিত পরিকল্পনা অনুসারে, যুদ্ধ পরবর্তী গাজার পূনর্গঠন এবং প্রশাসনিক কাঠামো গঠনের জন্য প্রয়োজন হবে বিপুল অর্থ, যা প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এই পরিকল্পনার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো গাজায় হামাসের শাসনের ইতি টেনে সেখানে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। তবে হামাস তাদের পূর্বের অবস্থানে অনড়। তারা যুদ্ধ পরবর্তী গাজা পরিচালনার জন্য একটি সর্বদলীয় সমন্বিত কমিটি গঠনের পক্ষে এবং অস্ত্র সমর্পণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, এই নতুন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কি আদৌ সম্ভব? কারণ, ইসরায়েল ইতোমধ্যেই পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছে, তারা গাজায় পিএ’র শাসন মেনে নেবে না।
অথচ বাস্তবতা বলছে, যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপের মাঝেই এক নতুন শাসন কাঠামোর জন্ম দেওয়ার জন্য একের পর এক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য, ইসরাইল এখন গাজা যুদ্ধ বিরতির শর্ত হিসেবে প্রতিরোধ আন্দোলনকারীদের অস্ত্র হস্তান্তরকে বাধ্যতামূলক করছে, এবং সেই লক্ষ্যে সামরিক অভিযান আরও জোরদার করেছে। গত ১৮ মার্চ থেকে নতুন করে শুরু হওয়া ইসরাইলি স্থল অভিযানে গাজার প্রায় ৫০ শতাংশ ভূখ- এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে। এ হামলায় এ পর্যন্ত ১ হাজার ৬৩০ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৪ হাজার ৩০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।