ঢাকা ০৮:২০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০১ অক্টোবর ২০২৫

আগুনে পুড়ে এক পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যু

  • আপডেট সময় : ০৯:৫৪:৪১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৩
  • ১০২ বার পড়া হয়েছে

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : ‘বাবা, বাবা, আগুন লেগেছে, বের হও রুম থেকে’-মধ্যরাতে সন্তানদের এমন আর্তনাদে ঘুম ভেঙেছিল খোকন বসাকের। ঘরের দরজা খুলে বারান্দায় জড়ো হয়েছিলেন সবাই। কিন্তু বের হওয়ার পথটিতে তখন আগুনের হলকা। পরিবারের সবাইকে পেছন পেছন আসতে বলে ওই আগুনের মধ্যেই খোকন বাইরের দিকে দৌড় দেন। স্ত্রী, দুই ছেলেমেয়ে, মা-বাবা কেউ আর বের হতে পারেননি। ঘরের ভেতরেই পুড়ে অঙ্গার হন তাঁরা।
গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার পারুয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মহাজন পাড়ায় এই ঘটনা ঘটে। পরিবারটির একমাত্র জীবিত সদস্য এখন খোকন বসাক (৪২)। সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক খোকনের শরীরের ২০ শতাংশ পুড়ে গেছে। আহত খোকন বসাক চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) চিকিৎসাধীন। তাঁর বাম হাত, বুক, পিঠ ও মুখের একাংশ পুড়ে গেছে। তবে পোড়া ক্ষতের যন্ত্রণার চেয়েও স্বজন হারানোর কষ্ট খোকনকে বেশি ভোগাচ্ছে। যে ছেলেমেয়ে তাঁকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দিয়েছে, তাদের বাঁচাতে না পারার আক্ষেপ পোড়াচ্ছে খোকনকে।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে তাঁর সঙ্গে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘একটি ঘরের কক্ষে আমার মা ও ছেলেমেয়ে দুটি ঘুমাত। আমার বাবা অন্য একটি ঘরে। আরেক ঘরে আমরা স্বামী-স্ত্রী থাকতাম। পাশের ঘর থেকে ডেকে আমার ছেলেমেয়ে আমাদের ঘুম থেকে তুলে দেয়, বলেছে বাবা আগুন। এরপর বারান্দায় জড়ো হই। কিন্তু বাইরে বের হওয়ার ফটক যে পথে, সে পথে যাওয়ার দরজা খুলে দেখি প্রচ- আগুনের হলকা আসছে। এর মধ্যে আমি তাদের পেছন পেছন আসতে বলে দৌড় দিই বাইরে। কেউ বের হতে পারেনি আর।’
খোকন বসাকের বাবা কাঙ্গাল বসাক (৬৮), মা ললিতা বসাক (৫৭), স্ত্রী লাকি বসাক (৩৩), ছেলে সৌরভ বসাক (১২) ও মেয়ে শায়ন্তী বসাক (৬)। ছেলে সপ্তম শ্রেণিতে ও মেয়ে প্রথম শ্রেণিতে পড়ত।
সেমিপাকা টিনশেডের ঘরটিতে দেড় বছর ধরে থাকতেন খোকনরা। তাঁরা তিন ভাই। অপর দুই ভাই অন্য জায়গায় থাকেন। খোকন সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালান। সিএনজিটি থাকে রান্নাঘরের পাশে। রান্নাঘরের চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
খোকন বলেন, ‘রাত সাড়ে ১০টায় ভাত খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। বাচ্চাদের ডাকে উঠে দেখি তখন রাত পৌনে দুটা। রান্নাঘর ও বারান্দার এক পাশে আগুন। তা আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে। সিএনজিটিও জ্বলছে। জানি না কীভাবে আগুন লেগেছে। তবে মনে হচ্ছে চুলা থেকে ঘটেছে।’ খোকন বলেন, ঘর থেকে বের হয়ে নিজে পানি ঢেলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছেন খোকন। তখনো তাঁর পিঠে আগুন জ্বলছিল। কিন্তু স্বজনদের বাঁচাতে তাঁর সেদিকে খেয়াল ছিল না।
চমেক বার্ন ইউনিটের সহকারী রেজিস্ট্রার লিটন কুমার পালিত বলেন, খোকনের শ্বাসনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে। হাসপাতালে বুক, পিঠ ও হাতে ব্যান্ডেজ নিয়ে বসে আছেন খোকন। ছেলেমেয়েদের স্মৃতি মনে করে কাঁদছেন তিনি। শুধু মনে পড়ছে সেই ডাক, বাবা, আগুন…

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

র‌্যাবের ওপর হামলা করে সন্ত্রাসী সাহেব আলীকে ছিনিয়ে নিলো সহযোগীরা

আগুনে পুড়ে এক পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যু

আপডেট সময় : ০৯:৫৪:৪১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৩

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : ‘বাবা, বাবা, আগুন লেগেছে, বের হও রুম থেকে’-মধ্যরাতে সন্তানদের এমন আর্তনাদে ঘুম ভেঙেছিল খোকন বসাকের। ঘরের দরজা খুলে বারান্দায় জড়ো হয়েছিলেন সবাই। কিন্তু বের হওয়ার পথটিতে তখন আগুনের হলকা। পরিবারের সবাইকে পেছন পেছন আসতে বলে ওই আগুনের মধ্যেই খোকন বাইরের দিকে দৌড় দেন। স্ত্রী, দুই ছেলেমেয়ে, মা-বাবা কেউ আর বের হতে পারেননি। ঘরের ভেতরেই পুড়ে অঙ্গার হন তাঁরা।
গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার পারুয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মহাজন পাড়ায় এই ঘটনা ঘটে। পরিবারটির একমাত্র জীবিত সদস্য এখন খোকন বসাক (৪২)। সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক খোকনের শরীরের ২০ শতাংশ পুড়ে গেছে। আহত খোকন বসাক চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) চিকিৎসাধীন। তাঁর বাম হাত, বুক, পিঠ ও মুখের একাংশ পুড়ে গেছে। তবে পোড়া ক্ষতের যন্ত্রণার চেয়েও স্বজন হারানোর কষ্ট খোকনকে বেশি ভোগাচ্ছে। যে ছেলেমেয়ে তাঁকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দিয়েছে, তাদের বাঁচাতে না পারার আক্ষেপ পোড়াচ্ছে খোকনকে।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে তাঁর সঙ্গে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘একটি ঘরের কক্ষে আমার মা ও ছেলেমেয়ে দুটি ঘুমাত। আমার বাবা অন্য একটি ঘরে। আরেক ঘরে আমরা স্বামী-স্ত্রী থাকতাম। পাশের ঘর থেকে ডেকে আমার ছেলেমেয়ে আমাদের ঘুম থেকে তুলে দেয়, বলেছে বাবা আগুন। এরপর বারান্দায় জড়ো হই। কিন্তু বাইরে বের হওয়ার ফটক যে পথে, সে পথে যাওয়ার দরজা খুলে দেখি প্রচ- আগুনের হলকা আসছে। এর মধ্যে আমি তাদের পেছন পেছন আসতে বলে দৌড় দিই বাইরে। কেউ বের হতে পারেনি আর।’
খোকন বসাকের বাবা কাঙ্গাল বসাক (৬৮), মা ললিতা বসাক (৫৭), স্ত্রী লাকি বসাক (৩৩), ছেলে সৌরভ বসাক (১২) ও মেয়ে শায়ন্তী বসাক (৬)। ছেলে সপ্তম শ্রেণিতে ও মেয়ে প্রথম শ্রেণিতে পড়ত।
সেমিপাকা টিনশেডের ঘরটিতে দেড় বছর ধরে থাকতেন খোকনরা। তাঁরা তিন ভাই। অপর দুই ভাই অন্য জায়গায় থাকেন। খোকন সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালান। সিএনজিটি থাকে রান্নাঘরের পাশে। রান্নাঘরের চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
খোকন বলেন, ‘রাত সাড়ে ১০টায় ভাত খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। বাচ্চাদের ডাকে উঠে দেখি তখন রাত পৌনে দুটা। রান্নাঘর ও বারান্দার এক পাশে আগুন। তা আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে। সিএনজিটিও জ্বলছে। জানি না কীভাবে আগুন লেগেছে। তবে মনে হচ্ছে চুলা থেকে ঘটেছে।’ খোকন বলেন, ঘর থেকে বের হয়ে নিজে পানি ঢেলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছেন খোকন। তখনো তাঁর পিঠে আগুন জ্বলছিল। কিন্তু স্বজনদের বাঁচাতে তাঁর সেদিকে খেয়াল ছিল না।
চমেক বার্ন ইউনিটের সহকারী রেজিস্ট্রার লিটন কুমার পালিত বলেন, খোকনের শ্বাসনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে। হাসপাতালে বুক, পিঠ ও হাতে ব্যান্ডেজ নিয়ে বসে আছেন খোকন। ছেলেমেয়েদের স্মৃতি মনে করে কাঁদছেন তিনি। শুধু মনে পড়ছে সেই ডাক, বাবা, আগুন…