ঢাকা ০৮:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫

আগামী বাজেটে ভ্যাট কমানোর ইঙ্গিত

  • আপডেট সময় : ০৮:০১:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫
  • ৯ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেছেন, আগামী বাজেট উচ্চাভিলাষী হবে না। তিনি জানান, আগামী বাজেটে কর হার যৌক্তিক করা হবে। ব্যবসায়ীদের চাপ দেওয়া হবে না; প্রয়োজনে ভ্যাটের হার কমানো হবে।

গতকাল বুধবার প্রথম আলো আয়োজিত ‘ডিজিটাল লেনদেনের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা: প্রেক্ষিত ভ্যাট বৃদ্ধি’ গোলটেবিল আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। কাওরান বাজার প্রথম আলো ভবনে এই আলোচনা সভা হয়। আবদুর রহমান খান বলেন, করদাতারা আমাদের ডিম পাড়া মুরগি।

একবারে ধরে সব ডিম বের করে নিতে গেলে ওই মুরগি মরে যাবে। তিনি কর কর্মকর্তাদের বলেছি, ‘আইনকানুন মেনে যারা নিয়মিত কর দেন, করের জন্য তাদের পেইন (ব্যথা) দাও, কিন্তু কিল (মেরে) ফেল না। তিনি উল্লেখ করেন, ব্যবসা মরে যাচ্ছে, কিন্তু ব্যবসায়ী মরে যাচ্ছে না। যার একটা মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি আছে, তাঁর পাঁচটি মার্সিডিজ গাড়ি লাগবে।

সম্প্রতি ভ্যাট বাড়ানোর ফলে বিভিন্ন খাতে যে প্রভাব পড়ছে, অনুষ্ঠানে উপস্থিত ব্যবসায়ীরা তা তুলে ধরেন। পোশাক, জুস, বিস্কুট, আকাশপথে টিকিটসহ বিভিন্ন খাতে শুল্ক-কর বাড়ানোর প্রভাব তুলে ধরেন। আবার পর্যটন বা ভ্রমণের টিকিটের কমিশনের ওপর অযৌক্তিক হারে উৎসে কর কেটে রাখার কথাও তুলে ধরেন তারা। এনবিআর চেয়ারম্যান ব্যবসায়ীদের এসব যুক্তির সঙ্গে একমত হন। বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীদের জন্য আগামী বাজেট কী উদ্যোগ নেওয়া হবে, তার কিছু ধারণা দেন এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের যেন কষ্ট না হয়, তাই বিভিন্ন ক্ষেত্রে আয়কর ও ভ্যাট হার যৌক্তিক করা হবে। আমদানি পর্যায়ে শুল্ক হারও যৌক্তিক করা হবে।

শুল্ক-কর হারে বড় পরিবর্তন আসবে। যেখানে শুল্ক-কর আদায়ের সুযোগ আছে, সেখানে করের জাল বাড়ানো হবে। এনবিআর চেয়ারম্যান উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর (অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের এমডি) ভাইদের কাছে বারবার কর চাইবো। আবার আরেকজন ব্যবসায়ী কর দেবে না, তা হবে না। এনবিআর চেয়ারম্যান আরও বলেন, ব্যাংকের টাকা লুট করে রিসোর্ট করেছেন একজন করদাতা। কর ফাঁকি দিতে এই রিসোর্টের তিনটি পুকুরে ৫০০ কোটি টাকার মাছ দেখিয়েছেন-এমন কর নথিও দেখেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বাজেটের আকার অনেক বড় করে ফেলেছি। এনবিআর কতটা রাজস্ব আদায় করতে পারবে- এর ওপর ভিত্তি করে বাজেট করা হচ্ছে না। বাজেটের খরচ নিয়েও প্রশ্ন আছে। এনবিআরের ওপর বাড়তি রাজস্ব আদায়ের চাপের কারণে নিয়মিত করদাতাদের ওপর চাপ পড়ছে। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের বাজেট নিয়ে সভা হবে। সেখানে এসব নিয়ে কথা হবে।’

ভ্যাটের চালান নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘কিছুদিন আগে একটি বড় মিষ্টির দোকান থেকে মিষ্টি কিনলাম। বিল পরিশোধের সময় আমাকে ভ্যাটের চালান দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে দোকানি জানান, ভ্যাটের মেশিন কাজ করে না, মাঝে মাঝে ডিস্টার্ব করে।’ তিনি আরও বলেন, বাজারে গেলে মনেই হয় না দেশে ভ্যাট বলে কিছু আছে; এতে যারা নিয়মিত ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠান, তারা চাপে পড়ে যায়।

ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে এনবিআর চেয়ারম্যানের অভিযোগ, সুযোগ পেলে তারাও ভেতরে-ভেতরে অনেক কিছু করেন। ব্যবসায়ী ও কর কর্মকর্তা-উভয়ের মধ্যে বিশ্বাস-অবিশ্বাস আছে বলে মনে করেন এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘কর কর্মকর্তারা যদি ব্যবসায়ীদের সক্ষমতার চেয়ে বেশি কর আরোপ করেন, তাহলে ব্যবসায়ীরা কি বাপ-দাদার জমি বিক্রি করে কর দেবেন?’

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আগামী বছর থেকে কোম্পানি করদাতাদের অনলাইনে রিটার্ন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ১৪টি ভালো প্রতিষ্ঠানকে অথরাইজড ইকোনমিক অপারেটর (এইও) সনদ দেওয়া হচ্ছে, যারা জাহাজ থেকে সরাসরি পণ্য খালাস করে গুদামে নিয়ে যাবেন।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

আগামী বাজেটে ভ্যাট কমানোর ইঙ্গিত

আপডেট সময় : ০৮:০১:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেছেন, আগামী বাজেট উচ্চাভিলাষী হবে না। তিনি জানান, আগামী বাজেটে কর হার যৌক্তিক করা হবে। ব্যবসায়ীদের চাপ দেওয়া হবে না; প্রয়োজনে ভ্যাটের হার কমানো হবে।

গতকাল বুধবার প্রথম আলো আয়োজিত ‘ডিজিটাল লেনদেনের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা: প্রেক্ষিত ভ্যাট বৃদ্ধি’ গোলটেবিল আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। কাওরান বাজার প্রথম আলো ভবনে এই আলোচনা সভা হয়। আবদুর রহমান খান বলেন, করদাতারা আমাদের ডিম পাড়া মুরগি।

একবারে ধরে সব ডিম বের করে নিতে গেলে ওই মুরগি মরে যাবে। তিনি কর কর্মকর্তাদের বলেছি, ‘আইনকানুন মেনে যারা নিয়মিত কর দেন, করের জন্য তাদের পেইন (ব্যথা) দাও, কিন্তু কিল (মেরে) ফেল না। তিনি উল্লেখ করেন, ব্যবসা মরে যাচ্ছে, কিন্তু ব্যবসায়ী মরে যাচ্ছে না। যার একটা মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি আছে, তাঁর পাঁচটি মার্সিডিজ গাড়ি লাগবে।

সম্প্রতি ভ্যাট বাড়ানোর ফলে বিভিন্ন খাতে যে প্রভাব পড়ছে, অনুষ্ঠানে উপস্থিত ব্যবসায়ীরা তা তুলে ধরেন। পোশাক, জুস, বিস্কুট, আকাশপথে টিকিটসহ বিভিন্ন খাতে শুল্ক-কর বাড়ানোর প্রভাব তুলে ধরেন। আবার পর্যটন বা ভ্রমণের টিকিটের কমিশনের ওপর অযৌক্তিক হারে উৎসে কর কেটে রাখার কথাও তুলে ধরেন তারা। এনবিআর চেয়ারম্যান ব্যবসায়ীদের এসব যুক্তির সঙ্গে একমত হন। বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীদের জন্য আগামী বাজেট কী উদ্যোগ নেওয়া হবে, তার কিছু ধারণা দেন এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের যেন কষ্ট না হয়, তাই বিভিন্ন ক্ষেত্রে আয়কর ও ভ্যাট হার যৌক্তিক করা হবে। আমদানি পর্যায়ে শুল্ক হারও যৌক্তিক করা হবে।

শুল্ক-কর হারে বড় পরিবর্তন আসবে। যেখানে শুল্ক-কর আদায়ের সুযোগ আছে, সেখানে করের জাল বাড়ানো হবে। এনবিআর চেয়ারম্যান উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর (অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের এমডি) ভাইদের কাছে বারবার কর চাইবো। আবার আরেকজন ব্যবসায়ী কর দেবে না, তা হবে না। এনবিআর চেয়ারম্যান আরও বলেন, ব্যাংকের টাকা লুট করে রিসোর্ট করেছেন একজন করদাতা। কর ফাঁকি দিতে এই রিসোর্টের তিনটি পুকুরে ৫০০ কোটি টাকার মাছ দেখিয়েছেন-এমন কর নথিও দেখেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বাজেটের আকার অনেক বড় করে ফেলেছি। এনবিআর কতটা রাজস্ব আদায় করতে পারবে- এর ওপর ভিত্তি করে বাজেট করা হচ্ছে না। বাজেটের খরচ নিয়েও প্রশ্ন আছে। এনবিআরের ওপর বাড়তি রাজস্ব আদায়ের চাপের কারণে নিয়মিত করদাতাদের ওপর চাপ পড়ছে। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের বাজেট নিয়ে সভা হবে। সেখানে এসব নিয়ে কথা হবে।’

ভ্যাটের চালান নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘কিছুদিন আগে একটি বড় মিষ্টির দোকান থেকে মিষ্টি কিনলাম। বিল পরিশোধের সময় আমাকে ভ্যাটের চালান দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে দোকানি জানান, ভ্যাটের মেশিন কাজ করে না, মাঝে মাঝে ডিস্টার্ব করে।’ তিনি আরও বলেন, বাজারে গেলে মনেই হয় না দেশে ভ্যাট বলে কিছু আছে; এতে যারা নিয়মিত ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠান, তারা চাপে পড়ে যায়।

ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে এনবিআর চেয়ারম্যানের অভিযোগ, সুযোগ পেলে তারাও ভেতরে-ভেতরে অনেক কিছু করেন। ব্যবসায়ী ও কর কর্মকর্তা-উভয়ের মধ্যে বিশ্বাস-অবিশ্বাস আছে বলে মনে করেন এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘কর কর্মকর্তারা যদি ব্যবসায়ীদের সক্ষমতার চেয়ে বেশি কর আরোপ করেন, তাহলে ব্যবসায়ীরা কি বাপ-দাদার জমি বিক্রি করে কর দেবেন?’

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আগামী বছর থেকে কোম্পানি করদাতাদের অনলাইনে রিটার্ন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ১৪টি ভালো প্রতিষ্ঠানকে অথরাইজড ইকোনমিক অপারেটর (এইও) সনদ দেওয়া হচ্ছে, যারা জাহাজ থেকে সরাসরি পণ্য খালাস করে গুদামে নিয়ে যাবেন।