ঢাকা ১০:১৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৫

আগামী বছর বিশ্বব্যাপী মহাসংকট : প্রধানমন্ত্রী

  • আপডেট সময় : ০২:৫২:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ অক্টোবর ২০২২
  • ৯৪ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক :২০২৩ সালে বিশ্বের সবার জন্য অত্যন্ত দুর্যোগময় সময় আসছে বলে আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী একটা মহাসংকট দেখা দেবে আগামী বছর। তাই প্রস্তুতি নিতে হবে। এর মধ্যে আমাদের খাদ্য বিষয়ে বেশি নিরাপত্তা দরকার।’
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল চারটায় গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে ১৮ দিনের সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন সরকারপ্রধান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতিসংঘ বা এসব অনুষ্ঠানে অফিসিয়াল এবং আনঅফিসিয়ালি অনেকের সঙ্গে কথা হয়। বিশ্বের বহু দেশের রাষ্ট্র প্রধানরাও এসেছিলেন, তাদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। সবার মধ্যেই কিন্তু একটা অসন্তোষ বিরাজ করছে।’
‘২০২৩ সালে সবার জন্য অত্যন্ত দুর্যোগময় একটি সময় এগিয়ে আসছে। এমনকি বিশ্বব্যাপী দুর্যোগও দেখা দিতে যাচ্ছে। এই বিষয় তারা ব্যক্ত করেছেন। আর আমাদের দেশ দুর্যোগময় দেশ। আমরা কিন্তু দুর্যোগ মোকাবিলা করেই তিন টার্ম সময় ধরে এগিয়ে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আমাদের প্রচেষ্টা একটাই, উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাওয়ার জন্য যা যা করার দরকার তা আমরা করে এগিয়ে যাচ্ছিলাম, কিন্তু করোনা চলে আসছে। তাই আমরা আরও দুই বছর সময় নিয়েছি, অর্থাৎ ২০২৪ সাল থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত সময় নেওয়া হয়েছে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্বের যে অর্থনৈতিক সংকট, এর মধ্যেও আমরা যে বাজেট দিয়েছি, গত বছরের যে বেশি এবং আমাদের যে উন্নয়নমুখী বাজেট, তাও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশে সফরে থাকাকালে যাদের সঙ্গে দেখা হয়েছে বা আমাদের বিদেশি নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা হয়েছে সবাইকে বলেছি আপনাদের যার যতটুকু জমি আছে, তাতে চাষাবাদ করে কিছু যেন তারা উৎপাদন করেন। বিশ্বব্যাপী একটা মহাসংকট দেখা দেবে আগামী বছর। তাই একটা প্রস্তুতি নিতে হবে। এর মধ্যে আমাদের খাদ্য বিষয়ে বেশি নিরাপত্তা দরকার।’
সংবাদ সম্মেলনে সরকারের একাধিক মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম এবং বেসরকারি টেলিভিশনগুলো এ সংবাদ সম্মেলন সরাসরি সম্প্রচার করেছে। ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্যে অংশ নিতে ১৫ সেপ্টেম্বর লন্ডনে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখান থেকে জাতিসংঘের ৭৭তম সাধারণ অধিবেশনে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যান সরকারপ্রধান। জাতিসংঘের অধিবেশন শেষে ওয়াশিংটন ডিসিতে কয়েক দিন কাটিয়ে মঙ্গলবার দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী। এর এক দিন পর সংবাদ সম্মেলনে এলেন সরকারপ্রধান। যেকোনো দেশে রাষ্ট্রীয় সফর শেষে দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলন করে থাকেন। এর আগে সবশেষ ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন সরকারপ্রধান।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী লিখিত বক্তব্য দেন। জাতিসংঘে তার ভাষণের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘রোহিঙ্গারা যাতে সম্মানের সঙ্গে ও নিরাপদে তাদের নিজ দেশে ফিরতে পারে সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কিন্তু মিয়ানমার সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করার জন্য জাতিসংঘকে কার্যকর ও জোরালো ভূমিকা রাখার জন্য আহ্বান জানিয়েছি।’
র‌্যাব সন্ত্রাস দমন করায় যুক্তরাষ্ট্র নাখোশ? প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর : যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণে র‌্যাব গঠনের কথা তুলে ধরে এলিট এই বাহিনীর উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরতে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে এসে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “স্যাংকশন তারা কতটুকু তুলবে জানি না। তবে স্যাংশন দিয়ে তারা ক্ষতি যেটা করেছে, আমরা যাদের দিয়ে এ দেশের সন্ত্রাস দমন করেছি, তাদের উপর স্যাংশন দেওয়ার অর্থটা কি? সন্ত্রাসীদের মদদ দেওয়া। “আমার এটাও প্রশ্ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে, তাহলে কি তারা সন্ত্রাস দমনে নাখোশ?”
‘গুরুতর’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‌্যাব ও এর সাবেক-বর্তমান সাত কর্মকর্তার উপর ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও পুলিশের তখনকার আইজিপি বেনজীর আহমেদের পাশাপাশি র‌্যাবের তখনকার মহাপরিচালক ও নতুন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এর নামও সেই নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে সরকারের প্রতিনিধিদের যে কোনো বৈঠকেই এখন সেই নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গ আসছে। যুক্তরাষ্ট্র বলে আসছে, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয় ‘জটিল ও কঠিন’ একটি প্রক্রিয়া। র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছিলেন, জবাবদিহিতা ও সংস্কার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। এর মধ্যে সেপ্টেম্বরের শেষে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি ওয়াশিংটন ডিসি সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় বিভিন্ন বৈঠকে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আলোচনায় আসে বলে প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে জানান। তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র সময়ে সময়ে আমাদের উপর নানা ধরনের স্যাংশন, অথবা এক সময় জিএসপি বাদ দিল, নানা রকমের ঘটনা ঘটায়।”
র‌্যাব গঠনের শুরু থেকেই সংস্থাটির সাথে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাজ করার কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “র‌্যাবের উপরে তারা যখন স্যাংশন দিল, আমরা প্রশ্নটা হল, র‌্যাব সৃষ্টি করেছে কে? র‌্যাব সৃষ্টিতো আমেরিকার পরামর্শে। “আমেরিকাই র‌্যাব সৃষ্টি করতে পরামর্শ দিয়েছে, আমেরিকা তাদের ট্রেইনিং দেয়, তাদের অস্ত্রশস্ত্র, তাদের হেলিকপ্টার, এমনকি তাদের ডিজিটাল সিস্টেম, আইসিটি সিস্টেম– সবই আমেরিকার দেওয়া। “তো, আমেরিকা যখন স্যাংকশন দেয় বা আর কোনো কথা বলে বা অভিযোগ আনে, আমার একটাই কথা– যেমন আপনারা ট্রেইনিং দিয়েছেন, তেমন তারা কার্যক্রম করেছে। কাজেই আমাদের করার কী আছে? আপনাদের ট্রেইনিংটা যদি একটু ভালো হত, তাহলে না কথা ছিল।”
র‌্যাব-পুলিশসহ যে কোনো আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ এলে, বাংলাদেশে তার বিচার হয় মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আপনারা দেখেছেন যে পুলিশ ইচ্ছামত গুলি করে মারলেও তাদের সহসা বিচার হয় না। শুধু একটা বিচার হল, যখন আমেরিকার লোক সবাই আন্দোলনে নামল, তখন ওই একটা বিচারই সারাজীবনে তারা করতে পেরেছে।”
যুক্তরাষ্ট্র সফরে র‌্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন বিষয় জোরালোভাবে তুলে ধরা হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের কতজন বাঙালি মারা গেছে, সেখানে কিন্তু তারা কিছু করে না। সেই কথাগুলো স্পষ্ট আমি তাদেরকে বলেছি। আমি কিন্তু বসে থাকিনি।”
র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞার পেছেনে কিছু প্রবাসী বাংলাদেশিরও ‘ভূমিকা’ রয়েছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “এটাই হচ্ছে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক, আমাদের দেশের কিছু লোক তাদের যেসব স্টেটে থাকে, তারা যেখানে যেখানে থাকে, সেখানকার স্থানীয় সেনেটর, কংগ্রেসম্যান অনেকের কাছে বানোয়াট ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকে। দিয়ে দিয়ে একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে।”
এসব বাংলাদেশিরা ‘কোনো না কোনো অপরাধে অপরাধী বা চাকরিচ্যুত’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “এটা শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র না, পৃথিবীর অন্যান্য কয়েক দেশেওৃ দেখবেন কোনো না কোনো একটা অঘটন, কোনো না কোনো একটা খারাপ কাজ করে কিন্তু গেছে।”

তিনি বলেন, সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানেরাও এসব অপপ্রচারের সঙ্গে জড়িত। জাতিসংঘের কাছ থেকে পাওয়া ‘গুমের’ শিকার ৭৬ ব্যক্তির তালিকায় বিভিন্ন রকমের ‘গলদ’ থাকার কথা সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “কয়েকটা আন্তর্জাতিক সংস্থা খুব তুলল, ‘গুম খুন’, ‘খুন গুম’, ‘খুন গুম’ করল। গুমের হিসাব যখন বের হতে শুরু করল, তখনতো দেখা গেল সবচেয়ে বেশি গুম জিয়াউর রহমানের আমলে হয়েছে। আর তারপর থেকেতো চলছে।
“এরপর আমরা যখন তালিকা চাইলাম, ৭৬ জনের তালিকা পাওয়া গেল। আর এই ৭৬ জনের মধ্যে কি পাওয়া গেছে, সেটাতো আপনারা নিজেরাই ভালো জানেন।” সেই তালিকায় ‘ভারতের পলাতক আসামির’ নাম থাকার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “এই রকম কেমন করে হয়? সেখানে কয়েকটা চরমপন্থি, তারা ভারত থেকে পালিয়েছে, কারণ সেখানে তাদের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারিৃ ওই তালিকার মধ্যে তাদেরও নাম দেওয়া। “এইরকমভাবে আরও বেশ কিছু নাম, এমনকি নামের তালিকায় কোনো কোনো ব্যক্তি নিজেই লুকিয়ে আছে। সে রকম তথ্যওতো আছে।”
নিজে থেকে ‘লুকিয়ে’ থাকার উদাহরণ দিতে গিয়ে ‘প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মাকে গুম করা’ এবং নাম না করে ফরহাদ মাজহারের নিখোঁজ হওয়ার প্রসঙ্গ টানেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “আমাদের দেশে এমনও আছে, মাকে লুকিয়ে রেখে আরেকজনকে শায়েস্তা করতেও মাকে ‘খুন করেছে, গুম করেছে’, সেই ঘটনাও বের হয়েছে। “ভালো একজন আঁতেলের কথাৃ নাম আর বলতে চাই না। ঢাকা থেকে তিনি চলে গেলেন খুলনা, বলে গেলেন তাকে গুম করা হয়েছেৃ দেখা গেল খুলনা নিউ মার্কেটে ঘুরে বেড়াচ্ছে।”
একজন কাউন্সিলরও যদি বলে আমাকে চায় না, আমি থাকব না: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগের আগামী সম্মেলনে একজন কাউন্সিরও যদি তাকে দলের নেতৃত্বে দেখতে না চান, তাহলে তিনি বিদায় নিতে প্রস্তুত আছেন। সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন টানা চার দশক ধরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়ে আসা শেখ হাসিনা। গত দুটি সম্মেলনের আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি নিজেই তার বয়সের কথা তুলে ধরে বলেছিলেন, নতুন নেতৃত্বের হাতে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে পারলে তিনি খুশি হবেন। তবে প্রতিবার সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুকন্যাকেই নেতৃত্বে রেখেছেন নেতাকর্মীরা।
সে বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়ে ওই সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, এবার কোনো চমক সম্মেলনে থাকবে কি না, শেখ হাসিনা কোনো নতুন নেতৃত্বকে সামনে নিয়ে আসবেন কি না। উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, “আওয়ামী লীগের একটি কাউন্সিলর যদি বলে যে, আমাকে চায় না, আমি কোনদিনই থাকব না। যেদিন থেকে আমাকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট করেছিল, সেদিন থেকেই এই শর্তটা মেনে যাচ্ছি।”
৪১ বছর ধরে আওয়ামী লীগের সভাপতি থাকা শেখ হাসিনা আগেও দলকে নতুন নেতৃত্ব খুঁজে নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। আগামী ডিসেম্বরে আওয়ামী লগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন হবে বলে তিনি সংবাদ সম্মেলনে জানান। শেখ হাসিনা বলেন, “এটা ঠিক, দীর্ঘদিন হয়ে গেছে। অবশ্যই আমি চাই নতুন নেতৃত্ব আসুক।” নেতৃত্ব কাউন্সিলররা নির্বাচন করেন এবং কাউন্সিলরদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “আমার তো আসলে সময় হয়ে গেছে। আমার যেটা লক্ষ্য ছিল, জাতির পিতা বাংলাদেশ স্বাধীন করে একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে আর্থ সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অগ্রগতি করে স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা অর্জন করে দিয়ে যান। জাতিসংঘই স্বল্পোন্নত দেশের স্বীকৃতি দিয়েছিল।
“এরপর দেশে হত্যা-ষড়যন্ত্রের রাজনীতি চলেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ক্ষমতা ছিল বন্দিখানায়। গণতন্ত্র ছিল না, তার পরিবর্তে ছিল মার্শাল ল বা মিলিটারি শাসক। এবং সেখানে কার্ফু গণতন্ত্র ইত্যাদি ইত্যাদি ছিল। অনেক চড়াই-উৎরাই পাপর করে আমরা গণতন্ত্র উদ্ধার করি।”
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “একটানা তিনবার, অর্থাৎ ২০০৮ এর নির্বাচন থেকে শুরু করে ২০২২ সালের নির্বাচন পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম একটানা গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে। এর মাঝে অনেক খুন-খারাপি অগ্নি সংযোগ-নানা কিছু ঘটেছে। তারপরেও কিন্তু আমরা ক্ষমতায় একটানা ছিলাম বলে আজকে উন্নয়নশীল দেশে আমরা উন্নীত হয়েছি। আমার তো লক্ষ্য ছিল-২০২০ এ জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এখন বিদায় নেয়ার জন্য আমি প্রস্তুত।”
বিএনপির খুঁটিতে জোর থাকলে বিদেশিদের কাছে যেতে হতো না : নিজের দেশের মাটিতেই যদি বিএনপির সমর্থন থাকত, যদি তাদের খুঁটিতে জোর থাকত, তাহলে বিদেশিদের কাছে ধরনা দেওয়ার প্রয়োজন হতো না বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনসমর্থন ও জনগণের ওপর আস্থা থাকলে, বিশ্বাস থাকলে তারা (বিএনপি) জনগণের কাছে যেত; বিদেশিদের কাছে দৌড়ে বেড়াত না। এটাই হলো বাস্তবতা। সংবাদ সম্মেলনে বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলের এক সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রশ্ন করেন, বিএনপি প্রতি সপ্তাহে কোনো না কোনো বিদেশি রাষ্ট্রদূতের কাছে যাচ্ছে; নির্বাচন নিয়ে কথা বলছে। নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন হবে, নাকি বিদেশি দূতাবাসের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হবে?
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপিকে জিজ্ঞেস করলে ভালো হয়, নির্বাচনটা কে করে দিয়ে যাবে। বিএনপি ভুলে গেছে তাদের অতীতের কথা। বিএনপির সৃষ্টি যেভাবে, একটি মিলিটারি ডিকটেটরের পকেট থেকে বিএনপির সৃষ্টি। তারপর নির্বাচনের যে প্রহসন, এটা তো তাদেরই সৃষ্টি। বরং আমরা নির্বাচনটাকে এখন জনগণের কাছে নিয়ে গেছি।’ তিনি বলেন, ছবিসহ ভোটার তালিকা হচ্ছে। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স দেওয়া হচ্ছে। মানুষ যেন তার ভোটটা দিতে পারে, সে পরিবেশ বা ভোট সম্পর্কে মানুষের যে সচেতনতা, এটা কিন্তু আওয়ামী লীগই সৃষ্টি করেছে।
জনসমর্থন, জনগণের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস-এই শক্তি বিএনপির নেই বলে মনে করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তারা কোন মুখে জনগণের কাছে ভোট চাইতে যাবে। আগুন দিয়ে পোড়ানো, মানুষ খুন করা, বোমা মারা, গ্রেনেড মারা—সব জায়গায় তো আছে। তারা যদি সামনে এসে দাঁড়ায়, তখন কী জবাব দেবে বিএনপি। এ জন্যই তারা বিদেশিদের কাছে ধরনা দিয়ে বেড়ায়। দেশের মানুষের কাছে যায় না।
গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিএনপিকে বাধা দেওয়া হচ্ছে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা তো বাধা দিচ্ছি না। আন্দোলন করেন, সংগ্রাম করেন। যত আন্দোলন করবেন তত ভালো। কিন্তু পারে না তো। কী করব।’
সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে, ভোটের মাধ্যমেই এসেছে; নির্বাচনের মাধ্যমেই এসেছে। এ দেশে নির্বাচনের যতটুকু উন্নতি, যতটুকু সংস্কার, এটা আওয়ামী লীগ সবাইকে নিয়েই করে দিয়েছে।
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এরপরও যদি কেউ না আসে, সেখানে আমাদের কী করণীয়। হারার ভয়ে আসবে না। একেবারে সবাইকে লোকমা তুলে খাইয়ে দিতে হবে; জিতিয়ে দিতে হবে; তবেই আসব। এটা তো হয় না।’ তিনি বলেন, ‘এটা আগে করেছে। মিলিটারি ডিক্টেটররা ওভাবেই করেছে। যাদের ওই অভ্যাস, তারা তো জনগণের কাছে যেতেই ভয় পায়। জনগণের সামনে ভোট চাইতে ভয় পায়।’
প্রধানমন্ত্রীর কাছে এক সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল-সামনে নির্বাচন। সবকিছু মিলিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে এবারও চায়ের আমন্ত্রণ জানাবেন কি না? জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সময় তো নিমন্ত্রণ–আমন্ত্রণ একটু কমই হচ্ছে। প্রায়ই করোনা দেখা দিচ্ছে। তাই সাংবাদিকদের এর মধ্যে আসতেই দিত না। এইবার আমি একটু জোর করেই বলেছি, কত দিন এভাবে আর দূরে থাকা যায়। করোনার কারণে এবার একটু চিন্তা করতে হবে। অনেকে আসবেও না, আসতেও পারবে না। এটা একটা সমস্যা।’
নির্বাচনে কে অংশ নেবে, কে নেবে না, সেটি যেকোনো রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা তো কিছু চাপিয়ে দিতে পারি না। রাজনীতি করতে হলে দলগুলো নিজে সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা অবশ্যই চাই সব দল অংশগ্রহণ করুক। এত দিন কাজ করার পর নিশ্চয়ই আমরা চাইব, সবাই আসুক।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গতবার যে সবার সঙ্গে বৈঠক করলাম, আলোচনা করলাম, নির্বাচনে এসে দেখা গেল, তিন শ সিটে সাত শ নমিনেশন দিয়ে যখন নিজেরা হেরে গেল তখন সব দোষ কার, আমাদের। জনগণের কাজ করে, জনগণের মন জয় করে, জনগণের ভোট নিয়েই আওয়ামী লীগ বারবার ক্ষমতায় এসেছে। আওয়ামী লীগ কখনো কোনো মিলিটারি ডিক্টেটরের পকেট থেকে বের হয়নি বা ইমার্জেন্সি দিয়ে কখনো ক্ষমতায় আসেনি।’
অগ্নিসন্ত্রাস করে যারা মানুষ হত্যা করেছে, তাদের কি মানুষ ভোট দেবে? কখনো দিতে পারে না। সেই পোড়া ঘা তো এখনো সবার শুকায়নি। এখনো তারা কষ্ট পাচ্ছে। গ্রেনেড হামলায় যারা আহত বা এ দেশে যারা লুটপাট করে খেয়েছে, সে কথাগুলোও ভাবতে হবে—বলেন, শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমরা তো চাই–ই সব দল আসুক, ইলেকশন করুক; কার কোথায় কতটুকু যোগ্যতা আছে। অন্তত আওয়ামী লীগ কখনোই ভোট চুরি করে ক্ষমতায় আসবে না; আসেও নাই। আওয়ামী লীগ কিন্তু জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েই ক্ষমতায় আসছে।’
সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে জোর প্রধানমন্ত্রীর : সাইবার জগতে ভালো অনেক কিছুর পাশপাশি খারাপ দিকও যে আছে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার গণভবনে ‘জাতীয় ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিল’ এর সভায় তিনি সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন দিক নির্দেশনাও দেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পরিকল্পনাতেই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বলেন, “সারাবিশ্ব এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে চলে। এর সুফলটা করোনাভাইরাসের সময় যেমন আমরা পেয়েছি, আবার সাথে সাথে এর কতগুলো খারাপ দিক আছে।”
সাইবার অপরাধ যে সব দেশেই মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে, সে কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, “এটা একটা বিরাট সমস্যা। এখানে নানা ধরনের সামাজিক সমস্যা অথবা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের বিকাশৃ নানা ধরনের ঘটনা কিন্তু ঘটে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এ বিষয়ে আমাদের নিরাপত্তার দিকটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।” শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব এখন একটি ‘গ্লোবাল ভিলেজে’ পরিণত হয়েছে এবং এখানে কেউ একা চলতে পারবে না। “সবাই একে অপরের ওপর নির্ভরশীল, সেটা আমরা খুব ভালোভাবে টের পেয়েছি এক হল করোনার সময়, দ্বিতীয় হল ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের সময়।” তিনি বলেন, ওই যুদ্ধ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোকেও আর্থসামাজিকভাবে প্রভাবিত করেছে।
“সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদেরকে চলতে হচ্ছে খুব কঠিন একটা সময়ের মধ্য দিয়ে। হয়ত ভবিষ্যতে আরো খারাপ সময় আসতে পারে। তবে আমাদের যেটা সব থেকে বেশি প্রয়োজন, সেটা হচ্ছে নিরাপত্তা।” প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশে যখন চারদিকে সন্ত্রাসের একটা প্রভাব শুরু হয়েছিল, আমরা কিন্তু খুব সফলভাবে সেটা দমন করে রাখতে পেরেছিলাম। আমরা সেটাকে জিরো টলারেন্স ঘোষণা দিয়ে মানুষকে সাথে নিয়ে, মানুষকে সম্পৃক্ত করে করতে পেরেছি। “কিন্তু তারপরও আজকে প্রযুক্তির প্রভাব এখন এত বেশি, আর এটা বিশ্বকে আরো কাছে নিয়ে আসে। এর যেমন ভালো দিক আছে, খারাপ দিকও আছে। সেই দিকে আমরা লক্ষ্য রেখেই এই ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিলটা গঠন করা হয়েছে।” এ সভায় ডিজিটাল নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে এবং সেসব বিষয়ে অভিজ্ঞরা তাদের মতামত দেবেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যারা কাজ করেন, তাদেরও এ বিষয় সম্পর্কে আরো জানা প্রয়োজন আছে এবং ভবিষ্যতে আমাদের কি করণীয়, আর এ ক্ষেত্রে কাদের সঙ্গে আমরা সমঝোতা করতে পারি, সম্পৃক্ত থাকতে পারি বা কাদের কাছ থেকে আমরা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারি বা কীভাবে আমরা তা কাজে লাগাতে পারি– সে বিষয়গুলোও আমাদের ভাবতে হবে।”

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সাংবাদিক হত্যার দায় এড়াতে পারি না, আমাদের ব্যর্থতা আছে

আগামী বছর বিশ্বব্যাপী মহাসংকট : প্রধানমন্ত্রী

আপডেট সময় : ০২:৫২:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ অক্টোবর ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :২০২৩ সালে বিশ্বের সবার জন্য অত্যন্ত দুর্যোগময় সময় আসছে বলে আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী একটা মহাসংকট দেখা দেবে আগামী বছর। তাই প্রস্তুতি নিতে হবে। এর মধ্যে আমাদের খাদ্য বিষয়ে বেশি নিরাপত্তা দরকার।’
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল চারটায় গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে ১৮ দিনের সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন সরকারপ্রধান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতিসংঘ বা এসব অনুষ্ঠানে অফিসিয়াল এবং আনঅফিসিয়ালি অনেকের সঙ্গে কথা হয়। বিশ্বের বহু দেশের রাষ্ট্র প্রধানরাও এসেছিলেন, তাদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। সবার মধ্যেই কিন্তু একটা অসন্তোষ বিরাজ করছে।’
‘২০২৩ সালে সবার জন্য অত্যন্ত দুর্যোগময় একটি সময় এগিয়ে আসছে। এমনকি বিশ্বব্যাপী দুর্যোগও দেখা দিতে যাচ্ছে। এই বিষয় তারা ব্যক্ত করেছেন। আর আমাদের দেশ দুর্যোগময় দেশ। আমরা কিন্তু দুর্যোগ মোকাবিলা করেই তিন টার্ম সময় ধরে এগিয়ে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আমাদের প্রচেষ্টা একটাই, উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাওয়ার জন্য যা যা করার দরকার তা আমরা করে এগিয়ে যাচ্ছিলাম, কিন্তু করোনা চলে আসছে। তাই আমরা আরও দুই বছর সময় নিয়েছি, অর্থাৎ ২০২৪ সাল থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত সময় নেওয়া হয়েছে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্বের যে অর্থনৈতিক সংকট, এর মধ্যেও আমরা যে বাজেট দিয়েছি, গত বছরের যে বেশি এবং আমাদের যে উন্নয়নমুখী বাজেট, তাও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশে সফরে থাকাকালে যাদের সঙ্গে দেখা হয়েছে বা আমাদের বিদেশি নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা হয়েছে সবাইকে বলেছি আপনাদের যার যতটুকু জমি আছে, তাতে চাষাবাদ করে কিছু যেন তারা উৎপাদন করেন। বিশ্বব্যাপী একটা মহাসংকট দেখা দেবে আগামী বছর। তাই একটা প্রস্তুতি নিতে হবে। এর মধ্যে আমাদের খাদ্য বিষয়ে বেশি নিরাপত্তা দরকার।’
সংবাদ সম্মেলনে সরকারের একাধিক মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম এবং বেসরকারি টেলিভিশনগুলো এ সংবাদ সম্মেলন সরাসরি সম্প্রচার করেছে। ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্যে অংশ নিতে ১৫ সেপ্টেম্বর লন্ডনে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখান থেকে জাতিসংঘের ৭৭তম সাধারণ অধিবেশনে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যান সরকারপ্রধান। জাতিসংঘের অধিবেশন শেষে ওয়াশিংটন ডিসিতে কয়েক দিন কাটিয়ে মঙ্গলবার দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী। এর এক দিন পর সংবাদ সম্মেলনে এলেন সরকারপ্রধান। যেকোনো দেশে রাষ্ট্রীয় সফর শেষে দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলন করে থাকেন। এর আগে সবশেষ ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন সরকারপ্রধান।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী লিখিত বক্তব্য দেন। জাতিসংঘে তার ভাষণের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘রোহিঙ্গারা যাতে সম্মানের সঙ্গে ও নিরাপদে তাদের নিজ দেশে ফিরতে পারে সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কিন্তু মিয়ানমার সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করার জন্য জাতিসংঘকে কার্যকর ও জোরালো ভূমিকা রাখার জন্য আহ্বান জানিয়েছি।’
র‌্যাব সন্ত্রাস দমন করায় যুক্তরাষ্ট্র নাখোশ? প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর : যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণে র‌্যাব গঠনের কথা তুলে ধরে এলিট এই বাহিনীর উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরতে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে এসে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “স্যাংকশন তারা কতটুকু তুলবে জানি না। তবে স্যাংশন দিয়ে তারা ক্ষতি যেটা করেছে, আমরা যাদের দিয়ে এ দেশের সন্ত্রাস দমন করেছি, তাদের উপর স্যাংশন দেওয়ার অর্থটা কি? সন্ত্রাসীদের মদদ দেওয়া। “আমার এটাও প্রশ্ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে, তাহলে কি তারা সন্ত্রাস দমনে নাখোশ?”
‘গুরুতর’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‌্যাব ও এর সাবেক-বর্তমান সাত কর্মকর্তার উপর ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও পুলিশের তখনকার আইজিপি বেনজীর আহমেদের পাশাপাশি র‌্যাবের তখনকার মহাপরিচালক ও নতুন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এর নামও সেই নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে সরকারের প্রতিনিধিদের যে কোনো বৈঠকেই এখন সেই নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গ আসছে। যুক্তরাষ্ট্র বলে আসছে, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয় ‘জটিল ও কঠিন’ একটি প্রক্রিয়া। র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছিলেন, জবাবদিহিতা ও সংস্কার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। এর মধ্যে সেপ্টেম্বরের শেষে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি ওয়াশিংটন ডিসি সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় বিভিন্ন বৈঠকে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আলোচনায় আসে বলে প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে জানান। তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র সময়ে সময়ে আমাদের উপর নানা ধরনের স্যাংশন, অথবা এক সময় জিএসপি বাদ দিল, নানা রকমের ঘটনা ঘটায়।”
র‌্যাব গঠনের শুরু থেকেই সংস্থাটির সাথে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাজ করার কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “র‌্যাবের উপরে তারা যখন স্যাংশন দিল, আমরা প্রশ্নটা হল, র‌্যাব সৃষ্টি করেছে কে? র‌্যাব সৃষ্টিতো আমেরিকার পরামর্শে। “আমেরিকাই র‌্যাব সৃষ্টি করতে পরামর্শ দিয়েছে, আমেরিকা তাদের ট্রেইনিং দেয়, তাদের অস্ত্রশস্ত্র, তাদের হেলিকপ্টার, এমনকি তাদের ডিজিটাল সিস্টেম, আইসিটি সিস্টেম– সবই আমেরিকার দেওয়া। “তো, আমেরিকা যখন স্যাংকশন দেয় বা আর কোনো কথা বলে বা অভিযোগ আনে, আমার একটাই কথা– যেমন আপনারা ট্রেইনিং দিয়েছেন, তেমন তারা কার্যক্রম করেছে। কাজেই আমাদের করার কী আছে? আপনাদের ট্রেইনিংটা যদি একটু ভালো হত, তাহলে না কথা ছিল।”
র‌্যাব-পুলিশসহ যে কোনো আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ এলে, বাংলাদেশে তার বিচার হয় মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আপনারা দেখেছেন যে পুলিশ ইচ্ছামত গুলি করে মারলেও তাদের সহসা বিচার হয় না। শুধু একটা বিচার হল, যখন আমেরিকার লোক সবাই আন্দোলনে নামল, তখন ওই একটা বিচারই সারাজীবনে তারা করতে পেরেছে।”
যুক্তরাষ্ট্র সফরে র‌্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন বিষয় জোরালোভাবে তুলে ধরা হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের কতজন বাঙালি মারা গেছে, সেখানে কিন্তু তারা কিছু করে না। সেই কথাগুলো স্পষ্ট আমি তাদেরকে বলেছি। আমি কিন্তু বসে থাকিনি।”
র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞার পেছেনে কিছু প্রবাসী বাংলাদেশিরও ‘ভূমিকা’ রয়েছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “এটাই হচ্ছে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক, আমাদের দেশের কিছু লোক তাদের যেসব স্টেটে থাকে, তারা যেখানে যেখানে থাকে, সেখানকার স্থানীয় সেনেটর, কংগ্রেসম্যান অনেকের কাছে বানোয়াট ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকে। দিয়ে দিয়ে একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে।”
এসব বাংলাদেশিরা ‘কোনো না কোনো অপরাধে অপরাধী বা চাকরিচ্যুত’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “এটা শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র না, পৃথিবীর অন্যান্য কয়েক দেশেওৃ দেখবেন কোনো না কোনো একটা অঘটন, কোনো না কোনো একটা খারাপ কাজ করে কিন্তু গেছে।”

তিনি বলেন, সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানেরাও এসব অপপ্রচারের সঙ্গে জড়িত। জাতিসংঘের কাছ থেকে পাওয়া ‘গুমের’ শিকার ৭৬ ব্যক্তির তালিকায় বিভিন্ন রকমের ‘গলদ’ থাকার কথা সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “কয়েকটা আন্তর্জাতিক সংস্থা খুব তুলল, ‘গুম খুন’, ‘খুন গুম’, ‘খুন গুম’ করল। গুমের হিসাব যখন বের হতে শুরু করল, তখনতো দেখা গেল সবচেয়ে বেশি গুম জিয়াউর রহমানের আমলে হয়েছে। আর তারপর থেকেতো চলছে।
“এরপর আমরা যখন তালিকা চাইলাম, ৭৬ জনের তালিকা পাওয়া গেল। আর এই ৭৬ জনের মধ্যে কি পাওয়া গেছে, সেটাতো আপনারা নিজেরাই ভালো জানেন।” সেই তালিকায় ‘ভারতের পলাতক আসামির’ নাম থাকার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “এই রকম কেমন করে হয়? সেখানে কয়েকটা চরমপন্থি, তারা ভারত থেকে পালিয়েছে, কারণ সেখানে তাদের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারিৃ ওই তালিকার মধ্যে তাদেরও নাম দেওয়া। “এইরকমভাবে আরও বেশ কিছু নাম, এমনকি নামের তালিকায় কোনো কোনো ব্যক্তি নিজেই লুকিয়ে আছে। সে রকম তথ্যওতো আছে।”
নিজে থেকে ‘লুকিয়ে’ থাকার উদাহরণ দিতে গিয়ে ‘প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মাকে গুম করা’ এবং নাম না করে ফরহাদ মাজহারের নিখোঁজ হওয়ার প্রসঙ্গ টানেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “আমাদের দেশে এমনও আছে, মাকে লুকিয়ে রেখে আরেকজনকে শায়েস্তা করতেও মাকে ‘খুন করেছে, গুম করেছে’, সেই ঘটনাও বের হয়েছে। “ভালো একজন আঁতেলের কথাৃ নাম আর বলতে চাই না। ঢাকা থেকে তিনি চলে গেলেন খুলনা, বলে গেলেন তাকে গুম করা হয়েছেৃ দেখা গেল খুলনা নিউ মার্কেটে ঘুরে বেড়াচ্ছে।”
একজন কাউন্সিলরও যদি বলে আমাকে চায় না, আমি থাকব না: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগের আগামী সম্মেলনে একজন কাউন্সিরও যদি তাকে দলের নেতৃত্বে দেখতে না চান, তাহলে তিনি বিদায় নিতে প্রস্তুত আছেন। সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন টানা চার দশক ধরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়ে আসা শেখ হাসিনা। গত দুটি সম্মেলনের আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি নিজেই তার বয়সের কথা তুলে ধরে বলেছিলেন, নতুন নেতৃত্বের হাতে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে পারলে তিনি খুশি হবেন। তবে প্রতিবার সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুকন্যাকেই নেতৃত্বে রেখেছেন নেতাকর্মীরা।
সে বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়ে ওই সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, এবার কোনো চমক সম্মেলনে থাকবে কি না, শেখ হাসিনা কোনো নতুন নেতৃত্বকে সামনে নিয়ে আসবেন কি না। উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, “আওয়ামী লীগের একটি কাউন্সিলর যদি বলে যে, আমাকে চায় না, আমি কোনদিনই থাকব না। যেদিন থেকে আমাকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট করেছিল, সেদিন থেকেই এই শর্তটা মেনে যাচ্ছি।”
৪১ বছর ধরে আওয়ামী লীগের সভাপতি থাকা শেখ হাসিনা আগেও দলকে নতুন নেতৃত্ব খুঁজে নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। আগামী ডিসেম্বরে আওয়ামী লগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন হবে বলে তিনি সংবাদ সম্মেলনে জানান। শেখ হাসিনা বলেন, “এটা ঠিক, দীর্ঘদিন হয়ে গেছে। অবশ্যই আমি চাই নতুন নেতৃত্ব আসুক।” নেতৃত্ব কাউন্সিলররা নির্বাচন করেন এবং কাউন্সিলরদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “আমার তো আসলে সময় হয়ে গেছে। আমার যেটা লক্ষ্য ছিল, জাতির পিতা বাংলাদেশ স্বাধীন করে একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে আর্থ সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অগ্রগতি করে স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা অর্জন করে দিয়ে যান। জাতিসংঘই স্বল্পোন্নত দেশের স্বীকৃতি দিয়েছিল।
“এরপর দেশে হত্যা-ষড়যন্ত্রের রাজনীতি চলেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ক্ষমতা ছিল বন্দিখানায়। গণতন্ত্র ছিল না, তার পরিবর্তে ছিল মার্শাল ল বা মিলিটারি শাসক। এবং সেখানে কার্ফু গণতন্ত্র ইত্যাদি ইত্যাদি ছিল। অনেক চড়াই-উৎরাই পাপর করে আমরা গণতন্ত্র উদ্ধার করি।”
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “একটানা তিনবার, অর্থাৎ ২০০৮ এর নির্বাচন থেকে শুরু করে ২০২২ সালের নির্বাচন পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম একটানা গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে। এর মাঝে অনেক খুন-খারাপি অগ্নি সংযোগ-নানা কিছু ঘটেছে। তারপরেও কিন্তু আমরা ক্ষমতায় একটানা ছিলাম বলে আজকে উন্নয়নশীল দেশে আমরা উন্নীত হয়েছি। আমার তো লক্ষ্য ছিল-২০২০ এ জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এখন বিদায় নেয়ার জন্য আমি প্রস্তুত।”
বিএনপির খুঁটিতে জোর থাকলে বিদেশিদের কাছে যেতে হতো না : নিজের দেশের মাটিতেই যদি বিএনপির সমর্থন থাকত, যদি তাদের খুঁটিতে জোর থাকত, তাহলে বিদেশিদের কাছে ধরনা দেওয়ার প্রয়োজন হতো না বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনসমর্থন ও জনগণের ওপর আস্থা থাকলে, বিশ্বাস থাকলে তারা (বিএনপি) জনগণের কাছে যেত; বিদেশিদের কাছে দৌড়ে বেড়াত না। এটাই হলো বাস্তবতা। সংবাদ সম্মেলনে বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলের এক সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রশ্ন করেন, বিএনপি প্রতি সপ্তাহে কোনো না কোনো বিদেশি রাষ্ট্রদূতের কাছে যাচ্ছে; নির্বাচন নিয়ে কথা বলছে। নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন হবে, নাকি বিদেশি দূতাবাসের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হবে?
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপিকে জিজ্ঞেস করলে ভালো হয়, নির্বাচনটা কে করে দিয়ে যাবে। বিএনপি ভুলে গেছে তাদের অতীতের কথা। বিএনপির সৃষ্টি যেভাবে, একটি মিলিটারি ডিকটেটরের পকেট থেকে বিএনপির সৃষ্টি। তারপর নির্বাচনের যে প্রহসন, এটা তো তাদেরই সৃষ্টি। বরং আমরা নির্বাচনটাকে এখন জনগণের কাছে নিয়ে গেছি।’ তিনি বলেন, ছবিসহ ভোটার তালিকা হচ্ছে। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স দেওয়া হচ্ছে। মানুষ যেন তার ভোটটা দিতে পারে, সে পরিবেশ বা ভোট সম্পর্কে মানুষের যে সচেতনতা, এটা কিন্তু আওয়ামী লীগই সৃষ্টি করেছে।
জনসমর্থন, জনগণের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস-এই শক্তি বিএনপির নেই বলে মনে করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তারা কোন মুখে জনগণের কাছে ভোট চাইতে যাবে। আগুন দিয়ে পোড়ানো, মানুষ খুন করা, বোমা মারা, গ্রেনেড মারা—সব জায়গায় তো আছে। তারা যদি সামনে এসে দাঁড়ায়, তখন কী জবাব দেবে বিএনপি। এ জন্যই তারা বিদেশিদের কাছে ধরনা দিয়ে বেড়ায়। দেশের মানুষের কাছে যায় না।
গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিএনপিকে বাধা দেওয়া হচ্ছে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা তো বাধা দিচ্ছি না। আন্দোলন করেন, সংগ্রাম করেন। যত আন্দোলন করবেন তত ভালো। কিন্তু পারে না তো। কী করব।’
সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে, ভোটের মাধ্যমেই এসেছে; নির্বাচনের মাধ্যমেই এসেছে। এ দেশে নির্বাচনের যতটুকু উন্নতি, যতটুকু সংস্কার, এটা আওয়ামী লীগ সবাইকে নিয়েই করে দিয়েছে।
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এরপরও যদি কেউ না আসে, সেখানে আমাদের কী করণীয়। হারার ভয়ে আসবে না। একেবারে সবাইকে লোকমা তুলে খাইয়ে দিতে হবে; জিতিয়ে দিতে হবে; তবেই আসব। এটা তো হয় না।’ তিনি বলেন, ‘এটা আগে করেছে। মিলিটারি ডিক্টেটররা ওভাবেই করেছে। যাদের ওই অভ্যাস, তারা তো জনগণের কাছে যেতেই ভয় পায়। জনগণের সামনে ভোট চাইতে ভয় পায়।’
প্রধানমন্ত্রীর কাছে এক সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল-সামনে নির্বাচন। সবকিছু মিলিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে এবারও চায়ের আমন্ত্রণ জানাবেন কি না? জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সময় তো নিমন্ত্রণ–আমন্ত্রণ একটু কমই হচ্ছে। প্রায়ই করোনা দেখা দিচ্ছে। তাই সাংবাদিকদের এর মধ্যে আসতেই দিত না। এইবার আমি একটু জোর করেই বলেছি, কত দিন এভাবে আর দূরে থাকা যায়। করোনার কারণে এবার একটু চিন্তা করতে হবে। অনেকে আসবেও না, আসতেও পারবে না। এটা একটা সমস্যা।’
নির্বাচনে কে অংশ নেবে, কে নেবে না, সেটি যেকোনো রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা তো কিছু চাপিয়ে দিতে পারি না। রাজনীতি করতে হলে দলগুলো নিজে সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা অবশ্যই চাই সব দল অংশগ্রহণ করুক। এত দিন কাজ করার পর নিশ্চয়ই আমরা চাইব, সবাই আসুক।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গতবার যে সবার সঙ্গে বৈঠক করলাম, আলোচনা করলাম, নির্বাচনে এসে দেখা গেল, তিন শ সিটে সাত শ নমিনেশন দিয়ে যখন নিজেরা হেরে গেল তখন সব দোষ কার, আমাদের। জনগণের কাজ করে, জনগণের মন জয় করে, জনগণের ভোট নিয়েই আওয়ামী লীগ বারবার ক্ষমতায় এসেছে। আওয়ামী লীগ কখনো কোনো মিলিটারি ডিক্টেটরের পকেট থেকে বের হয়নি বা ইমার্জেন্সি দিয়ে কখনো ক্ষমতায় আসেনি।’
অগ্নিসন্ত্রাস করে যারা মানুষ হত্যা করেছে, তাদের কি মানুষ ভোট দেবে? কখনো দিতে পারে না। সেই পোড়া ঘা তো এখনো সবার শুকায়নি। এখনো তারা কষ্ট পাচ্ছে। গ্রেনেড হামলায় যারা আহত বা এ দেশে যারা লুটপাট করে খেয়েছে, সে কথাগুলোও ভাবতে হবে—বলেন, শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমরা তো চাই–ই সব দল আসুক, ইলেকশন করুক; কার কোথায় কতটুকু যোগ্যতা আছে। অন্তত আওয়ামী লীগ কখনোই ভোট চুরি করে ক্ষমতায় আসবে না; আসেও নাই। আওয়ামী লীগ কিন্তু জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েই ক্ষমতায় আসছে।’
সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে জোর প্রধানমন্ত্রীর : সাইবার জগতে ভালো অনেক কিছুর পাশপাশি খারাপ দিকও যে আছে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার গণভবনে ‘জাতীয় ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিল’ এর সভায় তিনি সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন দিক নির্দেশনাও দেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পরিকল্পনাতেই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বলেন, “সারাবিশ্ব এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে চলে। এর সুফলটা করোনাভাইরাসের সময় যেমন আমরা পেয়েছি, আবার সাথে সাথে এর কতগুলো খারাপ দিক আছে।”
সাইবার অপরাধ যে সব দেশেই মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে, সে কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, “এটা একটা বিরাট সমস্যা। এখানে নানা ধরনের সামাজিক সমস্যা অথবা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের বিকাশৃ নানা ধরনের ঘটনা কিন্তু ঘটে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এ বিষয়ে আমাদের নিরাপত্তার দিকটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।” শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব এখন একটি ‘গ্লোবাল ভিলেজে’ পরিণত হয়েছে এবং এখানে কেউ একা চলতে পারবে না। “সবাই একে অপরের ওপর নির্ভরশীল, সেটা আমরা খুব ভালোভাবে টের পেয়েছি এক হল করোনার সময়, দ্বিতীয় হল ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের সময়।” তিনি বলেন, ওই যুদ্ধ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোকেও আর্থসামাজিকভাবে প্রভাবিত করেছে।
“সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদেরকে চলতে হচ্ছে খুব কঠিন একটা সময়ের মধ্য দিয়ে। হয়ত ভবিষ্যতে আরো খারাপ সময় আসতে পারে। তবে আমাদের যেটা সব থেকে বেশি প্রয়োজন, সেটা হচ্ছে নিরাপত্তা।” প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশে যখন চারদিকে সন্ত্রাসের একটা প্রভাব শুরু হয়েছিল, আমরা কিন্তু খুব সফলভাবে সেটা দমন করে রাখতে পেরেছিলাম। আমরা সেটাকে জিরো টলারেন্স ঘোষণা দিয়ে মানুষকে সাথে নিয়ে, মানুষকে সম্পৃক্ত করে করতে পেরেছি। “কিন্তু তারপরও আজকে প্রযুক্তির প্রভাব এখন এত বেশি, আর এটা বিশ্বকে আরো কাছে নিয়ে আসে। এর যেমন ভালো দিক আছে, খারাপ দিকও আছে। সেই দিকে আমরা লক্ষ্য রেখেই এই ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিলটা গঠন করা হয়েছে।” এ সভায় ডিজিটাল নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে এবং সেসব বিষয়ে অভিজ্ঞরা তাদের মতামত দেবেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যারা কাজ করেন, তাদেরও এ বিষয় সম্পর্কে আরো জানা প্রয়োজন আছে এবং ভবিষ্যতে আমাদের কি করণীয়, আর এ ক্ষেত্রে কাদের সঙ্গে আমরা সমঝোতা করতে পারি, সম্পৃক্ত থাকতে পারি বা কাদের কাছ থেকে আমরা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারি বা কীভাবে আমরা তা কাজে লাগাতে পারি– সে বিষয়গুলোও আমাদের ভাবতে হবে।”