নিজস্ব প্রতিবেদক : মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবা (এমএফএস) জনপ্রিয়তা পাওয়ায় আগামীতে ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’ গড়ে তোলাই মূল লক্ষ্য হবে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
গতকাল শনিবার টেলিকম খাতের প্রতিবেদকদের সংগঠন টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) আয়োজিত ‘ভাতা বিতরণে ডিজিটাল প্রযুক্তি: স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার নিশ্চয়তা’ শীর্ষক ওয়েবেনিয়ারে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, “আমরা যে অবস্থায় বিরাজ করছি টাকাকে কাগজের নোটে লেনদেন করার চিন্তাভাবনা করি না। আমাদের ক্যাশলেস সোসাইটির দিকে এগিয়ে যেতে হবে, এটিই মূল লক্ষ্য।”
মোস্তাফা জব্বারমোস্তাফা জব্বারআজকের বাংলাদেশ পুরো বিশ্বের কাছে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে জানিয়ে টেলিযোগাযোগমন্ত্রী বলেন, “অনেক দেশই এমএফএসকে এত জনপ্রিয় করতে পারেনি।
“আমাদের দেশে তৃণমূলের হতদরিদ্র, যারা ডিজিটাল শব্দও বুঝে না তাদের কাছে এমএফএস সেবাদাতারা সেবা পৌছানোর ব্যবস্থা করেছে।”
এমএফএসগুলোতে ‘ইন্টার-অপারেবিলিটি’ থাকলে মানুষের জীবন আরো সহজলভ্য হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “এমএফএস যে বৃত্ত তৈরি করেছে প্রকৃত এমএফএস সবার কাছে পৌঁছে দিতে চাই।
“প্রচলিত ব্যাংকের ফর্ম ফিলাপের প্রক্রিয়া পরিহার করা শুরু করে এখন অ্যাপের মাধ্যমে হচ্ছে। এমএফএসগুলোতে ইন্টার-অপারেবিলিটিতে মানুষের জীবন আরও সহজ হবে, এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংককে এগিয়ে আসতে হবে।”
এমএফএসে ভাতা পৌঁছানোকে চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, “প্রাথমিকে বৃত্তি দেওয়ার সময় একটির পর একটি সমস্যা ছিল। বড় সমস্যা ছিল উপবৃত্তি বা ভাতার টাকা এমন মানুষদের কাছে যাচ্ছে তারা পিন নম্বরটা সংরক্ষণ করা দরকার তাও বুঝতে সক্ষম হয়নি।”
ডাক বিভাগের মাধ্যমে তৃণমূলে সেবা পৌঁছে দেওয়া হবে জানিয়ে বলেন, “তৃণমূলের কৃষকরাও যাতে ডাক সেবা নিতে পারে সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে, কারণ ডাক বিভাগের মত এতবড় নেটওয়ার্ক কারো নেই।”
চলতি বছরের মধ্যে দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন উচ্চগতির ইন্টারনেটের আওতায় আসবে বলেও জানান টেলিযোগাযোগমন্ত্রী।
টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের (টিআরএনবি) সভাপতি রাশেদ মেহেদীর সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সমীর কুমার দে।
মূল প্রবন্ধে জানানো হয়, ২০২১-২২ অর্থবছরেরে বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ প্রায় ১ লাখ ৮ হাজার কোটি টাকা। গত বছর প্রধানমন্ত্রী ৫০ লাখ পরিবারকে উপহার পাঠাতে চাইলেও দেওয়া গেছে ৩৪ লাখ পরিবারকে।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, গত বছর ঈদের আগে যে ১৬ লাখ মানুষকে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার দেওয়া যায়নি বলে হিসেব এসেছে সেগুলো ছিল ভুয়া নাম। ডিজিটালাইজেশনের কারণেই সেবা বিতরণে সরকারের ৩৮৫ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।
প্রাথমিকের ১ কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি ও শিক্ষা উপকরণ কেনার ভাতা বিতরণ করছে ডাক বিভাগের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় শিক্ষার্থীদের মায়ের মোবাইলে উপবৃত্তির টাকা পাঠানো হয়েছে।
আগে উপবৃত্তির টাকা পাঠাতে সরকারের খরচ হতো প্রতি হাজারে ২২ টাকা, এখন সেখানে খরচ হচ্ছে ৭ টাকা। সরকারের অর্থেরও সাশ্রয় হয়েছে।
সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে মাত্র তিন মাসে চার প্রান্তিকের উপবৃত্তি ও শিক্ষা উপকরণ কেনার ভাতা ‘নগদ’ এর মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে।
মাধ্যমিক পর্যায়ের ৪০ লাখ শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি বিতরণ করছে বেসরকারি এমএফএস অপারেটর বিকাশ। ৩০০ কারিগরী ও মাদ্রাসা এবং আট হাজার শিক্ষক-কর্মচারী-ছাত্রকে সাড়ে ৫ কোটি টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে ‘নগদ’-এর মাধ্যমে।
একইভাবে সরকার ‘নগদ’ এর মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি- ভিজিএফ বিতরণের পরীক্ষামূলক কার্যক্রমেও সফলতা পেয়েছে বলে মূল প্রবন্ধে উপস্থাপন করা হয়।
সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ বলেন, “প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি ক্ষেত্রে উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রেখেছেন। মহামারীতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এক কোটিরও বেশি ভাতাভোগীদের ভাতা দিতে সক্ষম হয়েছি।”
স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ভাতা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে ‘নগদ’ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক বলেন, “এমএফএসে ভাতা দেওয়ার মাধ্যমে সঠিক ব্যক্তির কাছে ভাতা দেওয়া সম্ভব হয়েছে, এর ফলে অনেক টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব হয়েছে।
“যাদের ভুয়া ঠিকানা ছিল বা এনআইডি ম্যাচ করেনি তারা পায়নি। প্রতিটি মানুষের ডেটা যাচাই করে সঠিক মানুষকে টাকা পৌঁছে দিতে চাই।”
সফটওয়্যার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির বলেন, “ডাকঘরের বড় নেটওয়ার্ক কাজে লাগিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা তৃণমূল পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারছে। ক্যাশলেস সোসাইটিতে পরিণত হতে চাই।
“আমরা চাই টাকাটা ক্যাশ আউট করবে না তার ওয়ালেটে থাকবে, যে খরচটা করবে সেটি ডিজিটাল মাধ্যমে করবে। এর জন্য ইন্টার-অপারেবিলিটি দরকার, আশা করছি এটি হলে ডিজিটাল ক্যাশলেস সোসাইটি গড়ে তোলা সম্ভব হবে।”
সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, “ভাতাভোগীদের অনেকেই এফএএফএস প্রযুক্তিটা বুঝে না। তার পিককোড বা এর গোপনীয়তা বুঝে না, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও তারা দেখে না। এসব কাজে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বার্তা পাঠাতে হয় যা আমাদের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ।” ওয়েবেনিয়ারে আরো বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক শিক্ষার উপবৃত্তি প্রকল্প পরিচালক মো. ইউসুফ আলী, অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) সাবেক মহাসচিব টিআইএম নুরুল কবীর।