বগুড়া প্রতিনিধি : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ মানুষের ভোটের অধিকার চুরি করেছে। ২০১৪ সালে ভোট চুরি করেছে, ২০১৮ সালে ভোট চুরি করেছে, ২০২৪ সালের নির্বাচনেও ভোট চুরির পাঁয়তারা করছে। কিন্তু জনগণ এবার আর ভোট চুরি করতে দেবে না। গোটা বিশ্ব এখন বিশ্বাস করে, বাংলাদেশে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে কোনো নির্বাচন হয়নি।
গতকাল রোববার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বগুড়া শহরতলির এরুলিয়া বাজারে রাজশাহী বিভাগের ‘তারুণ্যের রোডমার্চ’ কর্মসূচি উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিএনপির তিন অঙ্গসংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল এই কর্মসূচির আয়োজন করেছে। রোডমার্চ উপলক্ষে বগুড়ায় আয়োজিত সমাবেশে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বক্তব্য দেন জেলা বিএনপি, কেন্দ্রীয় যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতারা। সাড়ে ১১টার পর বক্তব্য শুরু করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাঁর বক্তব্যের পরই রাজশাহীর উদ্দেশে নেতা-কর্মীদের গাড়িবহর যাত্রা শুরু করে।
আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থ দাবি করে সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘চাল, ডাল, তেল, লবণ—প্রতিটি জিনিসের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে বলে কথা দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এখন চালের কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা। মা–বোনেরা তাঁদের ছেলেমেয়েদের পাতে ডিম দিতে পারে না। তেলের দাম, বিদ্যুতের দাম তিন থেকে চার দফা বেড়েছে। সরকারের সেদিকে খেয়াল নেই। সরকার বলে, দাম তো ফিক্সড করে দিয়েছি। ফিক্সড করলে কি দ্রব্যমূল্যের দাম কমানো যায়?’
আওয়ামী লীগের কঠোর সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার চুরি করে দেশকে ফোকলা করে দিয়েছে। চুরি করে সম্পদ বিদেশে পাঠায়। বিদেশে বাড়ি করে। সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ আবারও ভোট চুরির পাঁয়তারা করছে। ভোটচোরদের প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে। ভোটচোর কারা, তাদের চিনে রাখতে হবে। চোরদের মধ্যে আছে আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্তরা, প্রশাসনের তোষামুদে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, লুটেরারা, বিচার বিভাগের একটি অংশের লোকজন। এদের কাউকে ছাড় দেওয়া যাবে না। এদের ওপর চোখ রাখতে হবে। জেলায় জেলায় তালিকা করতে হবে। সমাবেশে যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন ওরফে টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, বিএনপির রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার, বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ও বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বাদশাহ প্রমুখ বক্তব্য দেন। সমাবেশে বগুড়া ছাড়াও নাটোর ও সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, জয়পুরহাটের নেতা-কর্মীরাও যোগ দেন। সমাবেশ শেষে মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে হাজারখানেক গাড়ি রাজশাহী অভিমুখে রওনা দেয়। বগুড়ার রোডমার্চ থেকে পর্যায়ক্রমে আদমদীঘি, সান্তাহার, নওগাঁর নওহাটা মোড়, মান্দা ফেরিঘাট ও কেশরহাটে পথসভা করে রাজশাহী নগরের লালন শাহ মুক্তমঞ্চ-সংলগ্ন রাস্তায় সমাবেশের মধ্য দিয়ে তারুণ্যের রোডমার্চ শেষ হয়। সমাবেশে রাজশাহী, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের নেতা-কর্মীরাও যোগ দেন।
বিএনপির কর্মী বোঝাই মাইক্রোবাসে দুর্বৃত্তের আগুন: নাটোরে থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ‘তারুণ্যর রোডমার্চ’ এ অংশগ্রহণ করতে যাওয়া একটি মাইক্রোবাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের ডালসড়ক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ হামলায় আহত হন বাগাতিপাড়া উপজেলা ছাত্রদলের আহŸায়ক সোহেল রানা, যুগ্ম আহŸায়ক আবু তালহা মানিক, ছাত্রদলকর্মী সম্রাট, মেহেদী হাসান, স্বপন, শিমুলসহ আরও বেশ কয়েকজন। জানা যায়, রাজশাহী বিভাগীয় তারুণ্যের রোডমার্চকে ঘিরে সকাল থেকেই নাটোরের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নেন সরকার দলীয় সমর্থকরা। তারা নাটোর-বগুড়া মহাসড়কে দিঘাপতীয়া এলাকায় যাত্রীবাহী বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে তল্লাশি চালায়। এদিকে সকালে নাটোর থেকে একটি মাইক্রোবাস বগুড়া অভিমুখে যাচ্ছিল। এ সময় একদল দুর্বৃত্ত মাইক্রোবাসটির পথ রোধ করে দাঁড়ায় এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। মুহূর্তেই আগুনে পুড়ে যায় গাড়িটি। জেলা বিএনপির আহŸায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, বগুড়ায় তারুণ্যর রোডমার্চে অংশগ্রহণের জন্য লালপুর থেকে ছাত্রদল-যুবদলের নেতাকর্মীরা মাইক্রোবাসে যাচ্ছিল। পথে আওয়ামী লীগের লোকজন পথ রুদ্ধ করে তাদেরকে মারধর করে এবং গাড়িতে আগুন দেয়। আহত নেতাকর্মীরা স্থানীয় মসজিদে আশ্রয় নিয়েছে শুনেছি। বর্তমানে কী অবস্থা জানি না। এ বিষয়ে নাটোর সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছিম আহম্মেদ বলেন, গাড়িতে আগুন লেগেছে এমন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসেছি। গাড়ির আগুন নিভিয়েছি। কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা বের করতে তদন্ত চলছে।