চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি আবারও ক্ষমতায় আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
গতকাল সোমবার চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেসিয়াম মাঠে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ বিষয়ে কথা বলেন। ‘খেলা হবে’ স্লোগান দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, “এ খেলা হবে আগামী বছরের ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে। ফাইনাল খেলাৃ বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি আবার ক্ষমতায় আসবে।
“বিএনপি বলুক, পাকিস্তান ছাড়া পৃথিবীর আর কোনো দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আছে? আমরা সংবিধানে হাত দেব না। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। আমরা বিএনপির গণতন্ত্র দেখেছি। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কোনো দল শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি।”
বিএনপিকে ‘ভোট চোর’ আখ্যায়িত করে আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৫ ফ্রেবুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি ভোট ‘চুরি’ করেছে। তারা ১ কোটি ২৩ লাখ ‘ভুয়া ভোটার বানিয়েছিল’।
বিএনপির সাত সংসদ সদস্য পদত্যাগ করলেও সরকার পতন হবে না এবং সংসদে আরো ৩০০ সদস্য আছে বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের। সম্মেলনে প্রধান বক্তা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, ১০ তারিখের পর বিএনপি হতাশ। তারা তাদের কর্মীদের আর মাঠে আনতে পারবে না। কর্মীদের মনোবল টিকিয়ে রাখতেই তারা পদত্যাগ করেছেন। সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্য মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, “১০ ডিসেম্বর বিএনপি সরকার পতন ঘটাতে গিয়ে নিজেদের পতন ঘটিয়েছে। সরকারের পদত্যাগ চাইতে গিয়ে নিজেরা পদত্যাগ করেছে।”
তিনি বলেন, “বিএনপি মনে করল সংসদ থেকে পদত্যাগ করলে সরকারের ভিত নড়ে যাবে। কিন্তু এতে সরকারের একটু কাতুকুতু লেগেছে। এর বেশি কিছু হয় নাইৃ সরকারের পতন চাইতে এসে নিজেদের পতন ঘটিয়ে ঘরে চলে গেছে।”
“তারা যেদিন পদত্যাগ করেছে, সেদিনই সংসদ সচিবালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে দিয়েছে যে সংসদের আসন শূন্য এবং উপ-নির্বাচন হবে। এখন তারা বুঝবে কী ভুলটি তারা করেছে।”
গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশে ১০ দফা দাবি নিয়েও কথা বলেন তথ্য মন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, “বলেছিল ১০ তারিখের পর এক দফা দাবি- এখন দিল ১০ দফা দাবি। আমি পড়ে দেখেছি সেখানে নতুন কিছু নাই।
“বিএনপি বুছতে পেরেছে আওয়ামী লীগ শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে। ধাক্কা দেয়ার চেষ্টা করলে সে নিচে পড়ে যায়। কঠিন দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেলে দেয়ালের কিছু হয় না, যে ধাক্কা দেয় তার মাথা ফেটে যায়। বিএনপির তা হয়েছেৃ কঠিন দেয়াল আওয়ামী লীগকে ধাক্কা দিতে গিয়ে নিজেরাই পড়ে গেছে।” হাছান মাহমুদ বলেন, “কেউ যদি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চায়, আমরা তাদের পক্ষে। বিএনপিকেও করেছি। এ চট্টগ্রামে সমাবেশ করেছে। কোনো বাধা কোথাও দেওয়া হয়নি। সমগ্র বাংলাদেশে তারা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করেছে। কোথাও কোনো বাধা দেওয়া হয়নি।
“সোহরাওয়ার্দীতে তারা সমাবেশ করতে রাজি হয়নি। তাদের আরও চারটি মাঠ দেওয়া হয়েছে। কারণ বড় জনসভার জন্য বড় মাঠ দরকার। তারা রাজি হলো না…। হাছান মাহমুদ বলেন, “তারা বলল নয়া পল্টন ছাড়া অন্য কোথাও যাবে না। সেখানে মানুষ ধরে ১০-২০ হাজার। কিন্তু ঘোষণা দিয়েছে ১০ লাখ মানুষের সমাবেশ করবে। ৭ তারিখ থেকে সমাবেশ শুরু করল পুলিশের ওপর হামলা করল। পার্টি অফিসে পাওয়া গেল ১৫টি তাজা বোমা, ১৬০ বস্তা চাল, আড়াই লাখ পানির বোতল, লাঠিসোঁটা।
“তার মানেটা কী? তার মানে হচ্ছে তারা সন্ত্রাসী কর্মকা- করার জন্য সেখানে সমাবেশের ঘোষণা দিল।”
‘গাধার মত’ বিএনপিও জল ঘোলা করে খায় মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ নেতা হাছান বলেন, “সরকার যখন কঠোর হল, তারা আবার বসল। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হল মিরপুর বাংলা কলেজের মাঠ সেখানে যান। কিন্তু তারা বেছে নিল গোলাপবাগ মাঠ, সেখানে গরুর হাট বসে।
“এ মাঠটি ৫০ হাজার বর্গফুটের মাঠ। মানুষ দাঁড়িয়ে থাকলে তিন বর্গফুট জায়গা দরকার। তার মানে এ মাঠে জায়গা হয়েছে ১৫/২০ হাজার। আর আশপাশের রাস্তাঘাট মিলিয়ে ৫০ হাজার মানুষের একটা সমাবেশ করলেন।”
সকালে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন, অর্থ সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খানম, প্রচার সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, উত্তর জেলার সভাপতি এমএ সালাম, চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, শিক্ষা উপ-মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বক্তব্য দেন।
আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসবে: ওবায়দুল কাদের
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ