নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ জামায়াতে ইসলামীর বিষয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। গতকাল রোববার রাজধানীর রাজারবাগে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই মন্তব্য বলেন। হাইওয়ে পুলিশের ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়ামে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এক দশকের বেশি সময় পর জামায়াতে ইসলামী পুলিশের মৌখিক অনুমতি পেয়ে গতকাল শনিবার ঢাকায় সমাবেশ করে। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এই সমাবেশ হয়। সমাবেশে জামায়াতের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী উপস্থিত হয়েছিলেন। জাতীয় নির্বাচনের মাত্র ছয় মাস আগে সরকারের অনুমতি পেয়ে জামায়াতের সমাবেশ করার ঘটনা রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার সৃষ্টি করেছে। রাজারবাগের অনুষ্ঠান শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন রাখেন, প্রায় ১০ বছর পর জামায়াতকে ঢাকায় সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এটি আওয়ামী লীগের নীতির কোনো পরিবর্তন কি না। জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, জামায়াত একটি অনিবন্ধিত দল। তারা মাঝেমধ্যেই বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে অনুষ্ঠান করে। বিভিন্ন ইনডোরেও তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে। দলটি অনুষ্ঠান করতে মাঠের জন্য আবেদন করেছিল। কিন্তু তারা অনুমতি দেননি। দলটি আবদ্ধ স্থানে ইনডোরে মিটিং করতে চেয়েছে, তাঁরা তা দেননি। পরে মৌখিকভাবে কমিশনার (ডিএমপির) অনুমতি দিয়েছেন। এতে আওয়ামী লীগের নীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য শাজাহান খান, বেনজীর আহমদ, মো. মসিউর রহমান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন।
আইনমন্ত্রী যা বললেন: প্রায় ১০ বছর পর শনিবার সমাবেশের অনুমতি পেয়েছে নিবন্ধনহীন রাজনৈতিক দল জামায়াত। এই প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন না থাকা সত্ত্বেও কেন তাদের সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হলো, সেটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ই বলতে পারবে।’ তিনি বলেন, ‘জামায়াতের রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন নেই। উচ্চ আদালতেও এই বিষয়ে বিচার চলমান। জামায়াতকে যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে ঘোষণা করতে সংসদে শিগগিরই আইন পাস হবে। এর মধ্যে দলটিকে সমাবেশ করার অনুমতি কেন দেওয়া হলো, সেটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রশ্ন করেন।’
জামায়াত নিষিদ্ধ নয়, তাই সমাবেশের অনুমতি পেয়েছে: তথ্যমন্ত্রী: জামায়াত যেহেতু নিষিদ্ধ দল নয়, তাই তাদের সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তবে তারা যে বক্তব্য দিয়েছে, সেগুলো বিএনপিরও বক্তব্য বলে মন্তব্য করেন তিনি। রোববার সচিবালয়ে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান শেষে এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। গত শনিবার রাজধানীতে অনুষ্ঠিত জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশ নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘জামায়াত এখনো যেহেতু নিষিদ্ধ হয়নি, রাজনৈতিক দল হিসেবে আবেদন করেছে, সে জন্য তাদেরকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে গতকাল তাদের সমাবেশ থেকে আস্ফালন করে যেভাবে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, এগুলো আসলে বিএনপিরই বক্তব্য। ২০১৪ সালে তারা যেভাবে নির্বাচন প্রতিহত করতে গিয়ে শত শত মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছিল, সেটারই ইঙ্গিত তারা দিয়েছে। বিএনপি জোটের প্রধান শরিক জামায়াতকে দিয়ে তারা এই কথাগুলো বলিয়েছে। তাদেরকে সুযোগ দিলে তারা কী করতে পারে, সেটি তাদের বক্তব্যে পরিষ্কার হয়েছে।’
জামায়াতকে সভা করার অনুমতি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত: কৃষিমন্ত্রী: জামায়াতে ইসলামীকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘অপেক্ষা করেন, আরও দেখবেন কী হয়।’
গতকাল রোববার সচিবালয়ে জার্মান দূতাবাসের চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স ফার্ডিনান্ড ফন ভেইহের সঙ্গে সৌজন্য বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। জামায়াতকে সভা করার অনুমতির বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘এটি রাজনৈতিক ব্যাপার। রাজনৈতিক কারণে, দেখা যাক। এটা একটা পলিটিক্যাল ডিসিশন, এটি সময়ই আমাদের বলে দেবে।’ আওয়ামী লীগের এ প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ‘তারা রাজনৈতিক দল, হাইকোর্টের ই-ছিল (পর্যবেক্ষণ) সংবিধানের সঙ্গে তাদের গঠনতন্ত্র সাংঘর্ষিক, গ্রহণযোগ্য না। তাদের তো অনেক জনসমর্থনও আছে। এ পরিস্থিতির আলোকে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। আপনারা একটু অপেক্ষা করেন, আরও দেখবেন কী হয়।’
‘আমরা অনেক সময় রাজনীতিতে অনেক পদক্ষেপ নিই, এটি নিতে হয়। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অনেক প্রতিকূলতার মাঝে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র সুপরিকল্পিতভাবে, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধংস করার জন্য, দেশটিকে পাকিস্তানের ধারায় নেওয়ার জন্য অনেক কিছু করেছে। এদেশে জয় বাংলা স্লোগান দেওয়া যায়নি, বঙ্গবন্ধুর নাম মুখে আনা যায়নি। এমন পরিস্থিতি ছিল যে সামরিক স্বৈরাচাররা এরশাদের আমলে, জিয়ার আমলে এগুলো করেছে। তখন আমাদের পরিস্থিতির আলোকে অনেক পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। সেটিই আমি বলতে চেয়েছি।’ বলেন মন্ত্রী।
বিএনপির সঙ্গে সংলাপ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘সংলাপের সুযোগ নেই কেন? আন্তর্জাতিক ই-হলো (রাজনীতি) যে পৃথিবীতে যেকোনো সমস্যা সমাধানের জন্য সংলাপ হতে পারে। কিন্তু এ মুহূর্তে তো ওই রকম কোনো ই-সৃষ্টি (পরিস্থিতি) হয়নি যে বিএনপির সঙ্গে কোনো সংলাপ হবে। তারা আন্দোলন করছে। আন্দোলন করতে করতে যখন তারা এক্সজস্টেড (ক্লান্ত) হয়ে যাবে তখন তারাই বলবে একটা কিছু করা দরকার। আমরা সাধারণত তাই করি।’