ঢাকা ০৯:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫
গণজমায়েতে হাসনাত আবদুল্লাহ

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না চাইলে ফ্যাসিবাদী, চাইলে প্রকৃত বাংলাদেশি শক্তি

  • আপডেট সময় : ০৫:৫৯:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫
  • ১৪ বার পড়া হয়েছে

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে শনিবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েতে বক্তব্য রাখেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ -ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: জোরপূর্বক বা চাপের মুখে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ‘আন্দোলন প্রত্যাহার’ করতে বলা হলেও ছাত্র-জনতাকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘অগ্রিম ঘোষণা দিয়ে রাখলাম, যদি কোনো ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে কোনো শক্তি আমার কণ্ঠরোধ করতে চায়, তবুও আপনারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বেন না।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন দুই ভাগে বিভক্ত-একদিকে ফ্যাসিবাদী শক্তি, অন্যদিকে বাংলাদেশি শক্তি। যারা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে চায় না, তারা ফ্যাসিবাদী; আর যারা নিষিদ্ধ করতে চায়, তারা প্রকৃত বাংলাদেশি শক্তি।’
শনিবার (১০ মে) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে পূর্বঘোষিত গণজমায়েতে এসব কথা বলেন হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘২০১৩ সালের শাহবাগ থেকেই দেশে ফ্যাসিবাদের সূচনা হয়েছে, আর এই শাহবাগ থেকেই ফ্যাসিবাদের পতন ঘটবে। মত ও পথ ভিন্ন হতে পারে কিন্তু আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার প্রশ্নে আমাদের অবস্থান এক।’
দাবদাহের মধ্যেও আন্দোলনে সক্রিয় থাকার বিষয়ে হাসনাত বলেন, ‘গত দু’দিন রাস্তায় থাকায় আমি যেকোনো সময় অসুস্থ হয়ে যেতে পারি। আগেই বলে রাখছি– কোনো ষড়যন্ত্রের চাপে পড়ে যদি কেউ আমার মুখ দিয়ে জোরপূর্বক ‘আন্দোলন প্রত্যাহারের’ ঘোষণা দেওয়ায় তাও আপনারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।’

এনসিপির এ নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন দুই ভাগে বিভক্ত-একদিকে ফ্যাসিবাদী শক্তি, অন্যদিকে বাংলাদেশি শক্তি। যারা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে চায় না, তারা ফ্যাসিবাদী; আর যারা নিষিদ্ধ করতে চায়, তারা প্রকৃত বাংলাদেশি শক্তি।’
জুলাই মাসে ঘোষিত ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘যতই ষড়যন্ত্র হোক, ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে কেউ আলাদা করতে পারবে না। আমি যদি পরবর্তী কর্মসূচি নাও দিতে পারি, আপনাদের মানজিলে মাকসুদ যেন হয়– আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা।’
এর আগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগে গণজমায়েত শুরু হয়। শনিবার (১০ মে) বিকেল ৩টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এক ঘণ্টা পরে ৪টার দিকে গণজমায়েত শুরু হয়। অবশ্য ৩টার আগে থেকেই বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা সেখানে উপস্থিত হতে থাকেন।

গণজমায়েত কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবির, ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশসহ (আপ বাংলাদেশ) বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। আরো বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নেতাকর্মীদের এ জমায়েতে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শাহবাগ মোড়ে এসে অবস্থান নেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, দলের উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ, শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা সিবগাতুল্লাহসহ বেশ কয়েকজন। এদিকে, গণজমায়েতে যোগ দিতে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে গণমিছিল শুরু করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। গণমিছিলে নেতৃত্ব দেন দলটির মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা হাফেজ ইউনুছ আহমদ। অন্যদিকে, ছাত্র-জনতার অবস্থানের কারণে শাহবাগ মোড়ের প্রতিটি সড়কে ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। শুক্রবারের মতো শনিবারও শাহবাগে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

শুক্রবার বিকেল পৌনে ৫টায় শাহবাগে ব্লকেড কর্মসূচি শুরু হয়। এর আগে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ের পাশের মঞ্চ থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি শাহবাগ মোড় অবরোধের ঘোষণা দেওয়ার পর আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে শাহবাগে এসে অবরোধ শুরু করেন। সারারাত সেখানে অবস্থান করেন তারা।
রাত ১১টার দিকে হাসনাত আবদুল্লাহ পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শনিবার (১০ মে) বিকেল ৩টায় শাহবাগে গণজমায়েতের আহ্বান জানান এবং অবস্থান কর্মসূচি চলমান রাখার ঘোষণা দেন।

শাহবাগ ব্লকেডের দ্বিতীয় দিনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সংহতি: জুলাইয়ে গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো উত্তাল রাজধানীর শাহবাগ মোড়। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। ব্লকেডের কারণে আজও বন্ধ রয়েছে যান চলাচল। তবে অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি সেবার যানগুলোকে চলাচলের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।

শনিবার (১০ মে) সকাল থেকেই ছাত্র-জনতা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগে অবস্থান গ্রহণ করেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জনতার ভিড় আরো বাড়তে থাকে। সরজমিনে শাহবাগ মোড়ে দেখা যায়, শুক্রবারের মতোই হাজার হাজার ছাত্র-জনতা, নারী-শিশু, মাদ্রাসা শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনগুলো ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করছে।
এসময় তারা ‘ব্যান ব্যান আওয়ামী লীগ’, ‘লীগ ধর জেলে ভর’, ‘আওয়ামী লীগের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘কণ্ঠে আবার লাগা জোর, আওয়ামী লীগের কবর খোঁড়’, ‘গড়িমসি বন্ধ কর, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ কর’, ‘ওয়ান টু থ্রি ফর, আওয়ামী লীগ নো মোর’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
শনিবার আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও লেবার পার্টি। এছাড়াও জাতীয় নাগরিক পার্টি, বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীসহ জুলাই গণঅভ্যুত্থান সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা বিক্ষোভে অংশ নেন। বিক্ষোভে অংশ নিয়ে তরুণ আলেম রফিকুল ইসলাম মাদানি বলেন, আমাদের ২০২৫ সালের মে’তে আবার রাজপথে নামতে হতো না যদি স্বৈরাচারী হাসিনার পতনের পরই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা হতো। হাসিনার পতন না হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে দুইজন ছাত্র উপদেষ্টাকে ফাঁসি মঞ্চে উঠতে হতো। বাকিদের কোনো শাস্তির মুখে পড়তে হতো না। খুনি হাসিনা ও তার দল বিগত বছরগুলোতে ও জুলাইয়ে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে এবং দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, জুলাই পরবর্তী বাংলায় আওয়ামী লীগের ঠাঁই হবে না। তাই আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা দিল্লিতে পালিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। তারা এ দেশে রাজনীতি করার অধিকার রাখে না। এটি কোনো দল নয়, এটি সন্ত্রাসী ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী। যারা আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশে পুনর্বাসনের চেষ্টা করবে জুলাই জনতা তাদের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে রুখে দেবে।

শ্যামলীতে ব্লকেড: আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত ও দলটি নিষিদ্ধসহ ৩ দাবিতে রাজধানীর শিশুমেলা সড়ক আটকে দিয়ে আন্দোলন করেছেন জুলাই আন্দোলনে আহতরা। ফলে শ্যামলী থেকে ধানমন্ডিগামী একমুখী সড়কে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। দীর্ঘ যানজটে চরম ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ।

শনিবার (১০ মে) দুপুর ১টার পর সড়ক অবরোধ করেন তারা। এসময় আন্দোলনকারীরা সড়কে ব্যরিকেড দিয়ে আটকে দেন। ফলে যান চলাচল বন্ধে দীর্ঘ যানজটে গন্তব্যগামী সাধারণ মানুষকে গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে রওয়ানা দিতে হয়েছে।

পল্টনগামী এক যাত্রী বলেন, দুই দিন পর পর কিছু হলেই রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন। এমন ভাবে চলতে থাকলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চলাচল করবে? মানুষের প্রয়োজনীয় কাজ থাকে না?

মাহবুব শেখ নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, আন্দোলনের নামে সড়ক বন্ধ করে যা শুরু করেছে এটা কোনভাবেই মেনে নেওয়ার মতো না।

এর আগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বৃহস্পতিবার (৭ মে) রাত ১০টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নেন হাসনাত আব্দুল্লাহ। পরে সেখানে যান এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেনসহ দলটির শীর্ষ নেতারা।

এছাড়া জামায়াত, ছাত্রশিবির, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, ইনকিলাব মঞ্চ, আপ বাংলাদেশসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীরা হাসনাত আব্দুল্লার ডাকে সাড়া দিয়ে রাতেই যমুনার সামনে যান। পরে শুক্রবার দুপুরে যমুনা সংলগ্ন এলাকায় মঞ্চ বানিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধসহ তিন দফা দাবি

১। আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করতে হবে।

২। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে আওয়ামী লীগের দলগত বিচারের বিধান যুক্ত করতে হবে।

৩। জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

গণজমায়েতে হাসনাত আবদুল্লাহ

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না চাইলে ফ্যাসিবাদী, চাইলে প্রকৃত বাংলাদেশি শক্তি

আপডেট সময় : ০৫:৫৯:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: জোরপূর্বক বা চাপের মুখে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ‘আন্দোলন প্রত্যাহার’ করতে বলা হলেও ছাত্র-জনতাকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘অগ্রিম ঘোষণা দিয়ে রাখলাম, যদি কোনো ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে কোনো শক্তি আমার কণ্ঠরোধ করতে চায়, তবুও আপনারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বেন না।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন দুই ভাগে বিভক্ত-একদিকে ফ্যাসিবাদী শক্তি, অন্যদিকে বাংলাদেশি শক্তি। যারা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে চায় না, তারা ফ্যাসিবাদী; আর যারা নিষিদ্ধ করতে চায়, তারা প্রকৃত বাংলাদেশি শক্তি।’
শনিবার (১০ মে) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে পূর্বঘোষিত গণজমায়েতে এসব কথা বলেন হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘২০১৩ সালের শাহবাগ থেকেই দেশে ফ্যাসিবাদের সূচনা হয়েছে, আর এই শাহবাগ থেকেই ফ্যাসিবাদের পতন ঘটবে। মত ও পথ ভিন্ন হতে পারে কিন্তু আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার প্রশ্নে আমাদের অবস্থান এক।’
দাবদাহের মধ্যেও আন্দোলনে সক্রিয় থাকার বিষয়ে হাসনাত বলেন, ‘গত দু’দিন রাস্তায় থাকায় আমি যেকোনো সময় অসুস্থ হয়ে যেতে পারি। আগেই বলে রাখছি– কোনো ষড়যন্ত্রের চাপে পড়ে যদি কেউ আমার মুখ দিয়ে জোরপূর্বক ‘আন্দোলন প্রত্যাহারের’ ঘোষণা দেওয়ায় তাও আপনারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।’

এনসিপির এ নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন দুই ভাগে বিভক্ত-একদিকে ফ্যাসিবাদী শক্তি, অন্যদিকে বাংলাদেশি শক্তি। যারা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে চায় না, তারা ফ্যাসিবাদী; আর যারা নিষিদ্ধ করতে চায়, তারা প্রকৃত বাংলাদেশি শক্তি।’
জুলাই মাসে ঘোষিত ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘যতই ষড়যন্ত্র হোক, ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে কেউ আলাদা করতে পারবে না। আমি যদি পরবর্তী কর্মসূচি নাও দিতে পারি, আপনাদের মানজিলে মাকসুদ যেন হয়– আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা।’
এর আগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগে গণজমায়েত শুরু হয়। শনিবার (১০ মে) বিকেল ৩টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এক ঘণ্টা পরে ৪টার দিকে গণজমায়েত শুরু হয়। অবশ্য ৩টার আগে থেকেই বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা সেখানে উপস্থিত হতে থাকেন।

গণজমায়েত কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবির, ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশসহ (আপ বাংলাদেশ) বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। আরো বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নেতাকর্মীদের এ জমায়েতে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শাহবাগ মোড়ে এসে অবস্থান নেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, দলের উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ, শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা সিবগাতুল্লাহসহ বেশ কয়েকজন। এদিকে, গণজমায়েতে যোগ দিতে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে গণমিছিল শুরু করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। গণমিছিলে নেতৃত্ব দেন দলটির মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা হাফেজ ইউনুছ আহমদ। অন্যদিকে, ছাত্র-জনতার অবস্থানের কারণে শাহবাগ মোড়ের প্রতিটি সড়কে ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। শুক্রবারের মতো শনিবারও শাহবাগে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

শুক্রবার বিকেল পৌনে ৫টায় শাহবাগে ব্লকেড কর্মসূচি শুরু হয়। এর আগে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ের পাশের মঞ্চ থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি শাহবাগ মোড় অবরোধের ঘোষণা দেওয়ার পর আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে শাহবাগে এসে অবরোধ শুরু করেন। সারারাত সেখানে অবস্থান করেন তারা।
রাত ১১টার দিকে হাসনাত আবদুল্লাহ পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শনিবার (১০ মে) বিকেল ৩টায় শাহবাগে গণজমায়েতের আহ্বান জানান এবং অবস্থান কর্মসূচি চলমান রাখার ঘোষণা দেন।

শাহবাগ ব্লকেডের দ্বিতীয় দিনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সংহতি: জুলাইয়ে গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো উত্তাল রাজধানীর শাহবাগ মোড়। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। ব্লকেডের কারণে আজও বন্ধ রয়েছে যান চলাচল। তবে অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি সেবার যানগুলোকে চলাচলের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।

শনিবার (১০ মে) সকাল থেকেই ছাত্র-জনতা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগে অবস্থান গ্রহণ করেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জনতার ভিড় আরো বাড়তে থাকে। সরজমিনে শাহবাগ মোড়ে দেখা যায়, শুক্রবারের মতোই হাজার হাজার ছাত্র-জনতা, নারী-শিশু, মাদ্রাসা শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনগুলো ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করছে।
এসময় তারা ‘ব্যান ব্যান আওয়ামী লীগ’, ‘লীগ ধর জেলে ভর’, ‘আওয়ামী লীগের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘কণ্ঠে আবার লাগা জোর, আওয়ামী লীগের কবর খোঁড়’, ‘গড়িমসি বন্ধ কর, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ কর’, ‘ওয়ান টু থ্রি ফর, আওয়ামী লীগ নো মোর’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
শনিবার আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও লেবার পার্টি। এছাড়াও জাতীয় নাগরিক পার্টি, বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীসহ জুলাই গণঅভ্যুত্থান সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা বিক্ষোভে অংশ নেন। বিক্ষোভে অংশ নিয়ে তরুণ আলেম রফিকুল ইসলাম মাদানি বলেন, আমাদের ২০২৫ সালের মে’তে আবার রাজপথে নামতে হতো না যদি স্বৈরাচারী হাসিনার পতনের পরই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা হতো। হাসিনার পতন না হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে দুইজন ছাত্র উপদেষ্টাকে ফাঁসি মঞ্চে উঠতে হতো। বাকিদের কোনো শাস্তির মুখে পড়তে হতো না। খুনি হাসিনা ও তার দল বিগত বছরগুলোতে ও জুলাইয়ে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে এবং দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, জুলাই পরবর্তী বাংলায় আওয়ামী লীগের ঠাঁই হবে না। তাই আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা দিল্লিতে পালিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। তারা এ দেশে রাজনীতি করার অধিকার রাখে না। এটি কোনো দল নয়, এটি সন্ত্রাসী ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী। যারা আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশে পুনর্বাসনের চেষ্টা করবে জুলাই জনতা তাদের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে রুখে দেবে।

শ্যামলীতে ব্লকেড: আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত ও দলটি নিষিদ্ধসহ ৩ দাবিতে রাজধানীর শিশুমেলা সড়ক আটকে দিয়ে আন্দোলন করেছেন জুলাই আন্দোলনে আহতরা। ফলে শ্যামলী থেকে ধানমন্ডিগামী একমুখী সড়কে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। দীর্ঘ যানজটে চরম ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ।

শনিবার (১০ মে) দুপুর ১টার পর সড়ক অবরোধ করেন তারা। এসময় আন্দোলনকারীরা সড়কে ব্যরিকেড দিয়ে আটকে দেন। ফলে যান চলাচল বন্ধে দীর্ঘ যানজটে গন্তব্যগামী সাধারণ মানুষকে গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে রওয়ানা দিতে হয়েছে।

পল্টনগামী এক যাত্রী বলেন, দুই দিন পর পর কিছু হলেই রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন। এমন ভাবে চলতে থাকলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চলাচল করবে? মানুষের প্রয়োজনীয় কাজ থাকে না?

মাহবুব শেখ নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, আন্দোলনের নামে সড়ক বন্ধ করে যা শুরু করেছে এটা কোনভাবেই মেনে নেওয়ার মতো না।

এর আগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বৃহস্পতিবার (৭ মে) রাত ১০টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নেন হাসনাত আব্দুল্লাহ। পরে সেখানে যান এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেনসহ দলটির শীর্ষ নেতারা।

এছাড়া জামায়াত, ছাত্রশিবির, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, ইনকিলাব মঞ্চ, আপ বাংলাদেশসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীরা হাসনাত আব্দুল্লার ডাকে সাড়া দিয়ে রাতেই যমুনার সামনে যান। পরে শুক্রবার দুপুরে যমুনা সংলগ্ন এলাকায় মঞ্চ বানিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধসহ তিন দফা দাবি

১। আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করতে হবে।

২। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে আওয়ামী লীগের দলগত বিচারের বিধান যুক্ত করতে হবে।

৩। জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে।