ঢাকা ১০:৫৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫
টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদন

আওয়ামী আমলে জলবায়ু প্রকল্পে ২১১০ কোটি টাকার বেশি দুর্নীতি

  • আপডেট সময় : ০৫:১৮:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫
  • ৩৫ বার পড়া হয়েছে

মঙ্গলবার ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে টিআইবি আয়োজিত ‘বাংলাদেশে জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্টরা -ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিগত আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশে জলবায়ু অর্থায়নে জাতীয় তহবিল থেকে যে পরিমাণ বরাদ্দ ছিল তার অর্ধেকের বেশি দুর্নীতিতে নষ্ট হয়েছে বলে এক গবেষণা প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

সংস্থাটির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড (বিসিসিটি) থেকে প্রকল্পগুলোতে ৪৫৮ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এ সময়কালে মোট দুর্নীতির যে প্রাক্কলন করা হয়েছে, তার আর্থিক মূল্য ২৪৮ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ১১০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রকল্পগুলোর বরাদ্দের ৫৪ শতাংশ দুর্নীতিতে নষ্ট হয়েছে বলে টিআইবির ভাষ্য।

মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে টিআইবি আয়োজিত ‘বাংলাদেশে জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব প্রকল্প ‘রাজনৈতিক বিবেচনা, যোগসাজশ ও স্বজনপ্রীতির’ মাধ্যমে অনুমোদনের প্রবণতা স্পষ্ট। অথচ তহবিল ব্যবস্থাপক হিসেবে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের কর্মকর্তারা অনিয়ম রোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেননি।

টিআইবির গবেষণায় ২০০৩ সাল থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে বাস্তবায়িত ১২টি জলবায়ু তহবিলের আওতায় ৯৪২টি প্রকল্পের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০১০ থেকে ২০২৪ সময়ের তথ্য আলাদাভাবে তুলে ধরা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে ২০০৯ সালে। এরপর টানা সাড়ে ১৫ বছর বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় ছিল দলটি। ২০২৪ সালের আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগ আমলের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সামনে আনা হচ্ছে। সে সময় বিভিন্ন প্রকল্প রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়ার পর্যবেক্ষণ দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার সেগুলো বাতিল করেছে।

টিআইবির প্রতিবেদন বলছে, জলবায়ু অভিঘাত মোকাবেলায় দেশে প্রতিবছর ১২ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হলেও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক তহবিল থেকে ২০১৫-২০২৩ সময়ে গড়ে মাত্র ৮৬ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ প্রয়োজনের তুলনায় বরাদ্দ মিলেছে দশমিক ৭ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৫৮৫টি সমাপ্ত প্রকল্পের মধ্যে ৯০টির (১৫ দশমিক ৪ শতাংশ) সংক্ষিপ্ত মূল্যায়ন সম্পন্ন হয়েছে। অধিকাংশ প্রকল্পে ‘মূল্যায়নের ঘাটতি’ রয়েছে। ৪৯৫টি (৮৪ দশমিক ৬ শতাংশ) সমাপ্ত প্রকল্পের প্রভাব যাচাই করা হয়নি।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাংলাদেশ প্রতিবছর জলবায়ু ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। কিন্তু ২০০৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পেয়েছি মাত্র ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার-যা একেবারেই নগণ্য।

সানা/আপ্র/০৪/১১/২০২৫

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদন

আওয়ামী আমলে জলবায়ু প্রকল্পে ২১১০ কোটি টাকার বেশি দুর্নীতি

আপডেট সময় : ০৫:১৮:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিগত আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশে জলবায়ু অর্থায়নে জাতীয় তহবিল থেকে যে পরিমাণ বরাদ্দ ছিল তার অর্ধেকের বেশি দুর্নীতিতে নষ্ট হয়েছে বলে এক গবেষণা প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

সংস্থাটির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড (বিসিসিটি) থেকে প্রকল্পগুলোতে ৪৫৮ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এ সময়কালে মোট দুর্নীতির যে প্রাক্কলন করা হয়েছে, তার আর্থিক মূল্য ২৪৮ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ১১০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রকল্পগুলোর বরাদ্দের ৫৪ শতাংশ দুর্নীতিতে নষ্ট হয়েছে বলে টিআইবির ভাষ্য।

মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে টিআইবি আয়োজিত ‘বাংলাদেশে জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব প্রকল্প ‘রাজনৈতিক বিবেচনা, যোগসাজশ ও স্বজনপ্রীতির’ মাধ্যমে অনুমোদনের প্রবণতা স্পষ্ট। অথচ তহবিল ব্যবস্থাপক হিসেবে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের কর্মকর্তারা অনিয়ম রোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেননি।

টিআইবির গবেষণায় ২০০৩ সাল থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে বাস্তবায়িত ১২টি জলবায়ু তহবিলের আওতায় ৯৪২টি প্রকল্পের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০১০ থেকে ২০২৪ সময়ের তথ্য আলাদাভাবে তুলে ধরা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে ২০০৯ সালে। এরপর টানা সাড়ে ১৫ বছর বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় ছিল দলটি। ২০২৪ সালের আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগ আমলের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সামনে আনা হচ্ছে। সে সময় বিভিন্ন প্রকল্প রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়ার পর্যবেক্ষণ দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার সেগুলো বাতিল করেছে।

টিআইবির প্রতিবেদন বলছে, জলবায়ু অভিঘাত মোকাবেলায় দেশে প্রতিবছর ১২ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হলেও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক তহবিল থেকে ২০১৫-২০২৩ সময়ে গড়ে মাত্র ৮৬ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ প্রয়োজনের তুলনায় বরাদ্দ মিলেছে দশমিক ৭ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৫৮৫টি সমাপ্ত প্রকল্পের মধ্যে ৯০টির (১৫ দশমিক ৪ শতাংশ) সংক্ষিপ্ত মূল্যায়ন সম্পন্ন হয়েছে। অধিকাংশ প্রকল্পে ‘মূল্যায়নের ঘাটতি’ রয়েছে। ৪৯৫টি (৮৪ দশমিক ৬ শতাংশ) সমাপ্ত প্রকল্পের প্রভাব যাচাই করা হয়নি।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাংলাদেশ প্রতিবছর জলবায়ু ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। কিন্তু ২০০৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পেয়েছি মাত্র ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার-যা একেবারেই নগণ্য।

সানা/আপ্র/০৪/১১/২০২৫