নিজস্ব প্রতিবেদক :বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর সমর্থকদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় মামলা করেছে তার পরিবার। মামলার এজাহারে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ইন্ধনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) দিনগত রাতে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় লিখিত এজাহার দায়ের করেন আইনজীবী সাইফুল ইসলামের বাবা জামাল উদ্দিন। একই সঙ্গে এজাহারে মামলা দেরিতে করার কারণও উল্লেখ করেছেন বাদী জামাল উদ্দিন। এতে বলা হয়েছে, সাইফুল ইসলামের মরদেহ দাফন ও ঘটনার বিষয়ে আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা এবং ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামিদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করতে সময় লাগার কারণে মামলা করতে কিছুটা দেরি হয়।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) ভোরে মামলাটি রেকর্ড করা হয়। মামলায় ৩১ জনকে এজাহারনামীয় বাদে আরও ১০ থেকে ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন-চন্দন, আমান দাস, শুভ কান্তি দাস, বুঞ্জা, রনব, বিধান, বিকাশ, রমিত, রুমিত দাস, নয়ন দাস, গগন দাস, বিশাল দাস, ওমকার দাস, বিশাল, রাজকাপুর, লালা, সামির, সোহেল দাস, শিব কুমার, বিগলাল, পরাশ, গণেশ, ওম দাস, পপি, অজয়, দেবী চরণ, দেব, জয়, লালা, দুর্লভ দাস ও রাজীব ভট্টাচার্য্য। আসামিদের মধ্যে শুভ কান্তি দাসের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়ায়। তিনি বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী। ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসলে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহিষ্কার করে। অন্য আসামিরা চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার পাথরঘাটা সেবক কলোনি এবং বান্ডেল রোড এলাকায় বসবাস করেন। গত মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেফতার সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর করেন আদালত। তাকে কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলার পর হাজারের বেশি অনুসারী প্রিজন ভ্যান আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে পুলিশ, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ওইদিন কর্মস্থল আদালত পাড়া থেকে বাসায় ফেরার পথে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করেন চিন্ময় সমর্থকরা।
৬১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা: চট্টগ্রামে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানোকে কেন্দ্র করে আদালত প্রাঙ্গণে সংঘর্ষের ঘটনায় আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় ১১৬ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৫০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। ওই ঘটনায় পুলিশের ওপর আক্রমণের অভিযোগে তিনটিসহ মোট চারটি মামলা দায়ের করা হলো। গত শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) রাতে নগরীর কোতোয়ালী থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। সংঘর্ষে হত্যার শিকার আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের ভাই জানে আলম বাদী হয়ে এ মামলাটি করেন। নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি-মিডিয়া) কাজী মো. তারেক আজিজ জানিয়েছেন, মামলার এজাহারে ১১৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
ভৈরবে ইসকনের উপাসনালয়ে ভাঙচুরের অভিযোগে মামলা, ছাত্রলীগের তিন নেতা গ্রেপ্তার: কিশোরগঞ্জের ভৈরবে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) পরিচালিত একটি উপাসনালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে পৌর শহরের টিনপট্টি এলাকার নির্মল কর্মকারের ছেলে প্রণয় কর্মকার বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন।
এর আগে শুক্রবার রাণীবাজার হলুদপট্টিতে ‘শ্রী শ্রী হরে কৃষ্ণ নামহট্ট সংঘ’ নামে ইসকন পরিচালিত একটি উপাসনালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। শনিবার সকালে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী ও জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান ভৈরবে এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এ ঘটনায় শনিবার (৩০ নভেম্বর) বিকেল পর্যন্ত নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের তিন নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁরা হলেন পৌর শহরের ভৈরবপুর দক্ষিণপাড়া এলাকার হাসিবুল হাসান (২৮), মো. প্রান্ত ও পঞ্চবটি এলাকার মো. সানজিব। তাঁদের মধ্যে হাসিবুল পৌর ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সানজিব পাঠাগারবিষয়ক সম্পাদক এবং প্রান্ত উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শাহিন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ভিডিও ফুটেজ ও কিছু বিষয় বিবেচনায় রেখে ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে থানা হেফাজতে গ্রেপ্তার তিনজন হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা প্রথম আলোর কাছে অস্বীকার করেছেন। মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহারে বলা হয়, রাণীবাজার হলুদপট্টিতে ‘শ্রী শ্রী হরে কৃষ্ণ নামহট্ট সংঘ’ নামে একটি মন্দির আছে। বাদী প্রণয় সংঘের একজন সদস্য। গত বুধবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে প্রণয়সহ কয়েকজন সদস্য মন্দির পরিচ্ছন্ন করতে যান। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কাজ শেষে তালা দিয়ে তাঁরা ফিরে আসেন। শুক্রবার বিকেল পাঁচটার দিকে হামলার কথা শুনে মন্দিরে গিয়ে দেখেন, দরজা ও তালা ভাঙা। ভেতরে গিয়ে দেখতে পান, মন্দিরে রক্ষিত ভগবানের ছয়টি ছবি, শঙ্খ, আচমনপাত্র, মৃদঙ্গ, সোফা, চেয়ার, টেবিল, ঘড়ি ও ঠাকুরের সিংহাসনে ভাঙচুর করা হয়েছে। সবই মাটিতে পড়ে আছে। মন্দিরের বাক্সে রক্ষিত ঘণ্টা, কাঁসি, করতাল, ঝম্প চুরি করে নিয়ে গেছে। এতে ৪০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয় এজাহারে। বাদী প্রণয় কর্মকার বলেন, ইসকনের অনেকগুলো শাখা সংঘ আছে। শ্রী শ্রী হরে কৃষ্ণ নামহট্ট সংঘ হলো ইসকনের প্রচার শাখা। ভৈরবে সংঘটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৯ সালে। এখানে মন্দিরের কার্যক্রমও চলে। সপ্তাহের রোববার নিয়মিত প্রার্থনা হয়। ইসকন নরসিংদী শাখা থেকে ভৈরবে কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাণীবাজার হলুদপট্টিতে এক ব্যবসায়ীর একতলা ভবনে ওই সংঘের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সংঘে প্রতি রোববার প্রার্থনা ও কীর্তন হয়। এ ছাড়া অন্য দিনে সংঘের কার্যালয় খুব একটা খোলা হয় না। শুক্রবারও বন্ধ ছিল। বিকেল পাঁচটার দিকে সেখানে কয়েকজন এসে ‘ভৈরবে ইসকনের ঠাঁই নাই’ স্লোগান দিতে থাকেন। তাঁদের প্রায় সবার হাতে লাঠি ছিল। পরে ভাঙচুর করে চলে যায়। হামলাকারীদের বেশির ভাগই তরুণ। সংখ্যায় ১৫ থেকে ২০ জন ছিল। ওই ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শবনম শারমিন, থানার ওসির দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শাহিন। এ ছাড়া সেনাবাহিনী ও র্যাবের সদস্যরাও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ইউএনও শবনম শারমিন বলেন, ধর্মীয় সম্প্রতি বজায় রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। সবকিছু ঠিকঠাক রাখতে নানা শ্রেণি–পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলা হয়। এরপরও দুর্ঘটনা ঘটে গেল। তিনি বলেন, এখন তাঁরা ভিডিও ফুটেজ দেখে অভিযুক্তদের শনাক্ত করে দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় আনবেন।