ঢাকা ০৯:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫
বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস

আইএমএফ জানালো ৩.৮ শতাংশ, বিশ্বব্যাংক ৩.৩

  • আপডেট সময় : ০৩:৫৮:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫
  • ১২ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

প্রত্যাশা ডেস্ক: চলতি বছর বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৮ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। আর বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে বলে কয়েক ঘণ্টা পর পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) রাতে প্রকাশিত আইএমএফের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকে এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকের প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন দেশের তথ্য হালনাগাদ করা হয়।

বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে বলে জানিয়েছে আইএমএফ। বিশ্ব অর্থনীতির ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতির প্রভাবের কথা উল্লেখ করে এমন তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি। আইএমএফের পূর্বাভাসে চলতি বছর বিশ্ব অর্থনীতিতে ২ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে, যা জানুয়ারিতে প্রকাশ করা পূর্বাভাসের তুলনায় শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ কম। তাছাড়া আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৬ সালের জন্য ৩ দশমিক শূন্য শতাংশের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। যা জানুয়ারির তুলনায় শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ কম।

আইএমএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ পিয়েরে-অলিভিয়ার গৌরিনচাস বলেছন, আমরা একটি নতুন যুগে প্রবেশ করছি কারণ গত ৮০ বছর ধরে পরিচালিত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পুনর্র্নিমাণ করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা চীনা পণ্যের ওপর মোট শুল্ক এখন ১৪৫ শতাংশ। যা বেড়ে ২৪৫ শতাংশ পর্যন্ত যেতে পারে। হোয়াইট হাউজ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এর পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে চীনও। দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করেছে। তাছাড়া বিভিন্ন দেশের ওপর যে প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়াও গাড়ি, অ্যালুমিনিয়াম ও স্পাতের আমাদানির ওপর আলাদা শুল্ক আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

এদিকে বাংলাদেশের জন্য ২০২৫ সালের জিডিপির নতুন পূর্বাভাসে আইএমএফ জানিয়েছে, আগামী বছর প্রবৃদ্ধি বেড়ে সাড়ে ৬ শতাংশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আইএমএফ বলছে, চলতি বছর বাংলাদেশে গড় মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ হবে। ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফের বসন্তকালীন যৌথ সভার দ্বিতীয় দিনে ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। আগামী ২১ এপ্রিল এই সভা শুরু হয়েছে এবং ২৬ এপ্রিল শেষ হবে।

বিশ্বব্যাংক বলছে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩.৩ শতাংশ: চলতি বছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। একই সঙ্গে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা বেড়ে যাওয়ায় দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা দুর্বল হবে বলেও পূর্বাভাস দিয়েছে তারা।

পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০২৫ সালে দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধি কমে ৫ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়াবে, যা গত অক্টোবরে করা পূর্বাভাসের চেয়ে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ কম। তবে ২০২৬ সালে এটি আবার ৬ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। অঞ্চলটির বেশিরভাগ দেশের প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস কমে এসেছে। এই প্রেক্ষাপটে রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানোই ভবিষ্যতের ঝুঁকি মোকাবিলায় অর্থনীতিকে আরো সহনশীল করতে সহায়ক হতে পারে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক।

বিশ্বব্যাংকের দ্বিবার্ষিক প্রতিবেদন ‘সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট: ট্যাক্সিং টাইমস’ বুধবার (২৩ এপ্রিল) প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও আর্থিক চাপের কারণে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি কমে ৩ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়াবে। তবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এটি ৪ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত হলেও পূর্বাভাস কমানো হয়েছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতের প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ, যা ২০২৫-২৬ অর্থবছরে কিছুটা কমে ৬ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে আসবে। আফগানিস্তানে আন্তর্জাতিক সহায়তা হ্রাস পাওয়ায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে, যা জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার থেকেও কম। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এটি আরো কমে ২ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে। ভুটানে কৃষি খাতে দুর্বলতার কারণে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। তবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জলবিদ্যুৎ নির্মাণ খাতে গতি আসায় এটি ৭ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। মালদ্বীপে নতুন বিমানবন্দর টার্মিনাল উদ্বোধনের ফলে ২০২৫ সালে প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৭ শতাংশ হতে পারে। তবে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ নিয়ে উদ্বেগ রয়ে গেছে। নেপালে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বন্যা ও ভূমিধসের কারণে প্রবৃদ্ধি কমে ৪ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়াবে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এটি ৫ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বৈদেশিক চাপ ও মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব কাটিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পাকিস্তানে প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৭ শতাংশ এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৩ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। ঋণ পুনর্গঠনের অগ্রগতির কারণে ২০২৫ সালে শ্রীলঙ্কার প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। তবে ২০২৬ সালে এটি কিছুটা কমে ৩ দশমিক ১ শতাংশ হবে বলে অনুমান করা হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজার বলেন, ‘গত এক দশকে একাধিক ধাক্কা অঞ্চলটিকে দুর্বল করে দিয়েছে। এখনই সময় বাণিজ্যের দ্বার উন্মুক্ত করা, কৃষি খাত আধুনিকীকরণ এবং বেসরকারি খাতকে আরো সক্রিয় করে দ্রুত প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার।’
প্রতিবেদন অনুসারে, টেকসই অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য ঘরোয়া রাজস্ব বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। যদিও দক্ষিণ এশিয়ায় করের হার অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় তুলনামূলকভাবে বেশি, কিন্তু প্রকৃত কর আদায় অনেক কম। ২০১৯-২০২৩ সময়কালে দক্ষিণ এশিয়ার গড় সরকারি রাজস্ব ছিল জিডিপির মাত্র ১৮ শতাংশ, যেখানে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে এটি ২৪ শতাংশ। কর রাজস্ব এখনো জিডিপির তুলনায় ১ থেকে ৭ শতাংশ কম, যা মূলত অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতি ও কৃষি খাতের আধিপত্যের কারণে। তবে এসব বিষয় বিবেচনায় নিলেও কর আদায়ে উল্লেখযোগ্য ঘাটতি রয়েছে, যা কর ব্যবস্থাপনা ও নীতিতে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।

বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ ফ্রানজিস্কা ওন্সর্জ বলেন, ‘নিম্ন রাজস্ব দক্ষিণ এশিয়ার আর্থিক দুর্বলতার মূল কারণ এবং এটি অনিশ্চিত বৈশ্বিক পরিবেশে স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।’

প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে কর ব্যবস্থায় সংস্কার, ফাঁকফোকর বন্ধ, কর বিধিমালা সরলীকরণ, কর আদায়ে প্রযুক্তি ব্যবহার, কর অব্যাহতি হ্রাস এবং দূষণমূল্য আরোপ করার মাধ্যমে রাজস্ব বাড়ানোর পরিকল্পনা।

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস

আইএমএফ জানালো ৩.৮ শতাংশ, বিশ্বব্যাংক ৩.৩

আপডেট সময় : ০৩:৫৮:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: চলতি বছর বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৮ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। আর বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে বলে কয়েক ঘণ্টা পর পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) রাতে প্রকাশিত আইএমএফের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকে এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকের প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন দেশের তথ্য হালনাগাদ করা হয়।

বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে বলে জানিয়েছে আইএমএফ। বিশ্ব অর্থনীতির ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতির প্রভাবের কথা উল্লেখ করে এমন তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি। আইএমএফের পূর্বাভাসে চলতি বছর বিশ্ব অর্থনীতিতে ২ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে, যা জানুয়ারিতে প্রকাশ করা পূর্বাভাসের তুলনায় শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ কম। তাছাড়া আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৬ সালের জন্য ৩ দশমিক শূন্য শতাংশের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। যা জানুয়ারির তুলনায় শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ কম।

আইএমএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ পিয়েরে-অলিভিয়ার গৌরিনচাস বলেছন, আমরা একটি নতুন যুগে প্রবেশ করছি কারণ গত ৮০ বছর ধরে পরিচালিত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পুনর্র্নিমাণ করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা চীনা পণ্যের ওপর মোট শুল্ক এখন ১৪৫ শতাংশ। যা বেড়ে ২৪৫ শতাংশ পর্যন্ত যেতে পারে। হোয়াইট হাউজ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এর পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে চীনও। দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করেছে। তাছাড়া বিভিন্ন দেশের ওপর যে প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়াও গাড়ি, অ্যালুমিনিয়াম ও স্পাতের আমাদানির ওপর আলাদা শুল্ক আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

এদিকে বাংলাদেশের জন্য ২০২৫ সালের জিডিপির নতুন পূর্বাভাসে আইএমএফ জানিয়েছে, আগামী বছর প্রবৃদ্ধি বেড়ে সাড়ে ৬ শতাংশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আইএমএফ বলছে, চলতি বছর বাংলাদেশে গড় মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ হবে। ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফের বসন্তকালীন যৌথ সভার দ্বিতীয় দিনে ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। আগামী ২১ এপ্রিল এই সভা শুরু হয়েছে এবং ২৬ এপ্রিল শেষ হবে।

বিশ্বব্যাংক বলছে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩.৩ শতাংশ: চলতি বছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। একই সঙ্গে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা বেড়ে যাওয়ায় দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা দুর্বল হবে বলেও পূর্বাভাস দিয়েছে তারা।

পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০২৫ সালে দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধি কমে ৫ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়াবে, যা গত অক্টোবরে করা পূর্বাভাসের চেয়ে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ কম। তবে ২০২৬ সালে এটি আবার ৬ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। অঞ্চলটির বেশিরভাগ দেশের প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস কমে এসেছে। এই প্রেক্ষাপটে রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানোই ভবিষ্যতের ঝুঁকি মোকাবিলায় অর্থনীতিকে আরো সহনশীল করতে সহায়ক হতে পারে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক।

বিশ্বব্যাংকের দ্বিবার্ষিক প্রতিবেদন ‘সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট: ট্যাক্সিং টাইমস’ বুধবার (২৩ এপ্রিল) প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও আর্থিক চাপের কারণে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি কমে ৩ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়াবে। তবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এটি ৪ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত হলেও পূর্বাভাস কমানো হয়েছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতের প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ, যা ২০২৫-২৬ অর্থবছরে কিছুটা কমে ৬ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে আসবে। আফগানিস্তানে আন্তর্জাতিক সহায়তা হ্রাস পাওয়ায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে, যা জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার থেকেও কম। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এটি আরো কমে ২ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে। ভুটানে কৃষি খাতে দুর্বলতার কারণে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। তবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জলবিদ্যুৎ নির্মাণ খাতে গতি আসায় এটি ৭ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। মালদ্বীপে নতুন বিমানবন্দর টার্মিনাল উদ্বোধনের ফলে ২০২৫ সালে প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৭ শতাংশ হতে পারে। তবে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ নিয়ে উদ্বেগ রয়ে গেছে। নেপালে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বন্যা ও ভূমিধসের কারণে প্রবৃদ্ধি কমে ৪ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়াবে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এটি ৫ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বৈদেশিক চাপ ও মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব কাটিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পাকিস্তানে প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৭ শতাংশ এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৩ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। ঋণ পুনর্গঠনের অগ্রগতির কারণে ২০২৫ সালে শ্রীলঙ্কার প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। তবে ২০২৬ সালে এটি কিছুটা কমে ৩ দশমিক ১ শতাংশ হবে বলে অনুমান করা হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজার বলেন, ‘গত এক দশকে একাধিক ধাক্কা অঞ্চলটিকে দুর্বল করে দিয়েছে। এখনই সময় বাণিজ্যের দ্বার উন্মুক্ত করা, কৃষি খাত আধুনিকীকরণ এবং বেসরকারি খাতকে আরো সক্রিয় করে দ্রুত প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার।’
প্রতিবেদন অনুসারে, টেকসই অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য ঘরোয়া রাজস্ব বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। যদিও দক্ষিণ এশিয়ায় করের হার অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় তুলনামূলকভাবে বেশি, কিন্তু প্রকৃত কর আদায় অনেক কম। ২০১৯-২০২৩ সময়কালে দক্ষিণ এশিয়ার গড় সরকারি রাজস্ব ছিল জিডিপির মাত্র ১৮ শতাংশ, যেখানে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে এটি ২৪ শতাংশ। কর রাজস্ব এখনো জিডিপির তুলনায় ১ থেকে ৭ শতাংশ কম, যা মূলত অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতি ও কৃষি খাতের আধিপত্যের কারণে। তবে এসব বিষয় বিবেচনায় নিলেও কর আদায়ে উল্লেখযোগ্য ঘাটতি রয়েছে, যা কর ব্যবস্থাপনা ও নীতিতে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।

বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ ফ্রানজিস্কা ওন্সর্জ বলেন, ‘নিম্ন রাজস্ব দক্ষিণ এশিয়ার আর্থিক দুর্বলতার মূল কারণ এবং এটি অনিশ্চিত বৈশ্বিক পরিবেশে স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।’

প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে কর ব্যবস্থায় সংস্কার, ফাঁকফোকর বন্ধ, কর বিধিমালা সরলীকরণ, কর আদায়ে প্রযুক্তি ব্যবহার, কর অব্যাহতি হ্রাস এবং দূষণমূল্য আরোপ করার মাধ্যমে রাজস্ব বাড়ানোর পরিকল্পনা।