ঢাকা ১২:৪৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫

অ্যাপে বিক্রি করা হচ্ছিল ‘মুসলিম নারী’

  • আপডেট সময় : ১২:৩৩:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ জুলাই ২০২১
  • ৭২ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : ভারতে মুসলিম নারীদের বিক্রি করা হচ্ছিল অনলাইনে। গোটা কাজটি করা হয়েছে ‘সালি ডিলস’ নামের এক অ্যাপের মাধ্যমে। যে যে নারীর নাম ছিল, তারা জানতেন-ই না যে তাদেরকে এভাবে নিলামের জন্য তোলা হয়েছে।
প্রায় কয়েক ডজন নারী গত রোববারের এই ঘটনার শিকার হয়েছেন। এরকমই একজন হানা খান। পেশায় তিনি বাণিজ্যিক পাইলট। বন্ধুর পাঠানো এক টুইটের বরাতে জানতে পারেন তার নাম দেখা গেছে একটি অ্যাপে এবং তাকে অনলাইনে বিক্রির জন্য নিলামে তোলা হয়েছে।
ওই টুইট অনুসরণ করে তিনি পৌঁছে যান সালি ডিলস নামের এক অ্যাপ ও ওয়েবসাইটে। সেখানে হানা খান দেখতে পান, তার ছবি অনলাইনে প্রকাশ্যে দিয়ে রাখা হয়েছে। এ সময় তিনি অন্যান্য নারীদের ছবি ও নাম দিয়ে তৈরি প্রোফাইলও দেখতে পান। নারীদেরকে ‘ডিলস অফ দ্য ডে’ বা ‘আজকের সেরা’ আখ্যা দিয়ে রাখার বিষয়টিও নজরে আসে তার।
বিবিসি’র এক প্রতিবেদন বলছে, অ্যাপের ল্যান্ডিং পেইজে এক অপরিচিত নারীর ছবি দেওয়া ছিল। পরবর্তী দুই পেইজে খান নিজের বন্ধুদের ছবি খুঁজে পান। এর ঠিক এক পেইজ পরে নিজের ছবি দেখতে পান তিনি।
এ প্রসঙ্গে হানা খান বলেছেন, “আমি ৮৩টি নাম গুণেছি। আরও থাকতে পারে। তারা আমার ছবি টুইটার থেকে নিয়েছে এবং আমরা ইউজার নেম ব্যবহার করেছে। অ্যাপটি ২০ দিন ধরে চলছে এবং আমরা কেউ এর ব্যাপারে জানি-ই না। আমি শিউরে উঠেছি এ ঘটনায়।”
অ্যাপের গোটা বিষয়টিই ছিল এমন যে তারা নিজ ব্যবহারকারীদের ‘সালি’ কেনার সুযোগ করে দিচ্ছে। বিবিসি জানিয়েছে, ‘সালি’ একটি অবমাননাকর শব্দ যা উগ্রপন্থী হিন্দুরা মুসলিম নারীদেরকে হয়রানি করতে ব্যবহার করে থাকে। আদতে কোনো নিলাম চলছিল না অ্যাপটিতে। এর মূল উদ্দেশ্যই ছিল অবমাননা ও অপমান করা।
হানা খান জানিয়েছেন, তাকে তার ধর্মের জন্য লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছিল। “আমি একজন মুসলিম নারী যে কিছু অর্জন করেছে এবং স্বীকৃতি পেয়েছে। তারা আমাদের দমাতে চান।”
ওপেন সোর্স ওই অ্যাপটিকে হোস্ট করেছিল গিটহাব। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তারা অভিযোগ পাওয়ার পরপরই অ্যাপটিকে বন্ধ করে দিয়েছে। “আমরা এ ধরনের কর্মকা- যা আমাদের নীতিমালা লঙ্ঘন করছে সেগুলোর ব্যাপারে তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরপরই ব্যবহারকারী অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছি।” – এক বিবৃতিতে বলেছে প্রতিষ্ঠানটি।
অ্যাপে যাদের নাম দেখা গেছে, তারা সবাই সক্রিয় মুসলিম নারী। এদের মধ্যে রয়েছেন সাংবাদিক, সক্রিয় কর্মী, শিল্পী, গবেষকসহ ভিন্ন ভিন্ন পেশাজীবি। কিছু নারীকে এ ঘটনার পর সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলতে দেখা গেছে। অনেকেই জানিয়েছেন, তারা আরও হয়রানির শিকার হওয়ার আশঙ্কা করছেন।
“আপনি কতোটা দৃঢ় তা আসলে ব্যাপার না, আপনার ছবি ও অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ্যে নিয়ে আসা হলে, এটি আপনার মধ্যে ভীতি সঞ্চার করবে, আপনাকে অশান্ত রাখবে।” – ভুক্তভোগী এক নারী এভাবেই ব্যাখ্যা করেছেন বিষয়টিকে।
অনেক ভুক্তভোগী নারী আবার সামাজিক মাধ্যমের মাধ্যমেই এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন। এক ডজন নারী মিলে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলেছেন নিজেদেরকে সমর্থন ও সাহস যোগাতে। হানা খানের মতো অনেক ভুক্তভোগী আবার পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

প্রধান উপদেষ্টা হতাশ-ক্ষুব্ধ, ‘পদত্যাগ’ নিয়ে আলোচনা

অ্যাপে বিক্রি করা হচ্ছিল ‘মুসলিম নারী’

আপডেট সময় : ১২:৩৩:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ জুলাই ২০২১

প্রত্যাশা ডেস্ক : ভারতে মুসলিম নারীদের বিক্রি করা হচ্ছিল অনলাইনে। গোটা কাজটি করা হয়েছে ‘সালি ডিলস’ নামের এক অ্যাপের মাধ্যমে। যে যে নারীর নাম ছিল, তারা জানতেন-ই না যে তাদেরকে এভাবে নিলামের জন্য তোলা হয়েছে।
প্রায় কয়েক ডজন নারী গত রোববারের এই ঘটনার শিকার হয়েছেন। এরকমই একজন হানা খান। পেশায় তিনি বাণিজ্যিক পাইলট। বন্ধুর পাঠানো এক টুইটের বরাতে জানতে পারেন তার নাম দেখা গেছে একটি অ্যাপে এবং তাকে অনলাইনে বিক্রির জন্য নিলামে তোলা হয়েছে।
ওই টুইট অনুসরণ করে তিনি পৌঁছে যান সালি ডিলস নামের এক অ্যাপ ও ওয়েবসাইটে। সেখানে হানা খান দেখতে পান, তার ছবি অনলাইনে প্রকাশ্যে দিয়ে রাখা হয়েছে। এ সময় তিনি অন্যান্য নারীদের ছবি ও নাম দিয়ে তৈরি প্রোফাইলও দেখতে পান। নারীদেরকে ‘ডিলস অফ দ্য ডে’ বা ‘আজকের সেরা’ আখ্যা দিয়ে রাখার বিষয়টিও নজরে আসে তার।
বিবিসি’র এক প্রতিবেদন বলছে, অ্যাপের ল্যান্ডিং পেইজে এক অপরিচিত নারীর ছবি দেওয়া ছিল। পরবর্তী দুই পেইজে খান নিজের বন্ধুদের ছবি খুঁজে পান। এর ঠিক এক পেইজ পরে নিজের ছবি দেখতে পান তিনি।
এ প্রসঙ্গে হানা খান বলেছেন, “আমি ৮৩টি নাম গুণেছি। আরও থাকতে পারে। তারা আমার ছবি টুইটার থেকে নিয়েছে এবং আমরা ইউজার নেম ব্যবহার করেছে। অ্যাপটি ২০ দিন ধরে চলছে এবং আমরা কেউ এর ব্যাপারে জানি-ই না। আমি শিউরে উঠেছি এ ঘটনায়।”
অ্যাপের গোটা বিষয়টিই ছিল এমন যে তারা নিজ ব্যবহারকারীদের ‘সালি’ কেনার সুযোগ করে দিচ্ছে। বিবিসি জানিয়েছে, ‘সালি’ একটি অবমাননাকর শব্দ যা উগ্রপন্থী হিন্দুরা মুসলিম নারীদেরকে হয়রানি করতে ব্যবহার করে থাকে। আদতে কোনো নিলাম চলছিল না অ্যাপটিতে। এর মূল উদ্দেশ্যই ছিল অবমাননা ও অপমান করা।
হানা খান জানিয়েছেন, তাকে তার ধর্মের জন্য লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছিল। “আমি একজন মুসলিম নারী যে কিছু অর্জন করেছে এবং স্বীকৃতি পেয়েছে। তারা আমাদের দমাতে চান।”
ওপেন সোর্স ওই অ্যাপটিকে হোস্ট করেছিল গিটহাব। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তারা অভিযোগ পাওয়ার পরপরই অ্যাপটিকে বন্ধ করে দিয়েছে। “আমরা এ ধরনের কর্মকা- যা আমাদের নীতিমালা লঙ্ঘন করছে সেগুলোর ব্যাপারে তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরপরই ব্যবহারকারী অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছি।” – এক বিবৃতিতে বলেছে প্রতিষ্ঠানটি।
অ্যাপে যাদের নাম দেখা গেছে, তারা সবাই সক্রিয় মুসলিম নারী। এদের মধ্যে রয়েছেন সাংবাদিক, সক্রিয় কর্মী, শিল্পী, গবেষকসহ ভিন্ন ভিন্ন পেশাজীবি। কিছু নারীকে এ ঘটনার পর সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলতে দেখা গেছে। অনেকেই জানিয়েছেন, তারা আরও হয়রানির শিকার হওয়ার আশঙ্কা করছেন।
“আপনি কতোটা দৃঢ় তা আসলে ব্যাপার না, আপনার ছবি ও অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ্যে নিয়ে আসা হলে, এটি আপনার মধ্যে ভীতি সঞ্চার করবে, আপনাকে অশান্ত রাখবে।” – ভুক্তভোগী এক নারী এভাবেই ব্যাখ্যা করেছেন বিষয়টিকে।
অনেক ভুক্তভোগী নারী আবার সামাজিক মাধ্যমের মাধ্যমেই এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন। এক ডজন নারী মিলে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলেছেন নিজেদেরকে সমর্থন ও সাহস যোগাতে। হানা খানের মতো অনেক ভুক্তভোগী আবার পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন।