ঢাকা ০৯:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫

অ্যান্ড্রয়েড ফোনেই মিলবে ভূমিকম্পের আগাম সতর্কবার্তা

  • আপডেট সময় : ০৯:৩৫:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫
  • ৭ বার পড়া হয়েছে

প্রযুক্তি ডেস্ক: অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনকে ভূমিকম্প শনাক্তকারী যন্ত্রে রূপান্তর করতে পারবে এমন প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। এ প্রযুক্তি প্রবল ভূমিকম্প আঘাত হানার আগেই মানুষকে সতর্ক করার একটি উপায় হতে পারে।

গুগল, যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ও অন্যান্য গবেষকদের মাধ্যমে তৈরি উন্নত এই প্রযুক্তি লাখ লাখ স্মার্টফোন থেকে সংগৃহীত তথ্য ব্যবহার করে ভূমিকম্পের প্রাথমিক কম্পনের সংকেত শনাক্ত করে। এর মাধ্যমে আরো দ্রুত ও বিস্তৃতভাবে ভূমিকম্পের আগাম সতর্কতা দেওয়া সম্ভব হতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট।

যখন একাধিক ডিভাইস একই ধরনের কম্পন অনুভব করে, তখন সিস্টেমটি সেটিকে একটি সম্ভাব্য ভূমিকম্পের সংকেত হিসেবে চিহ্নিত করে আশপাশের এলাকার ব্যবহারকারীদের সতর্কবার্তা পাঠায়।

সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা বলছে, এই নেটওয়ার্ক প্রতি মাসে ৩০০টিরও বেশি ভূমিকম্প শনাক্ত করতে পেরেছে। যেসব এলাকায় সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছিল, সেসব স্থানে ৮৫ শতাংশ মানুষ যারা পরে ভূমিকম্প অনুভব করেছেন, বলেছেন তারা সতর্কবার্তা পেয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ৩৬ শতাংশ কম্পন শুরুর আগেই বার্তাটি পেয়েছেন, ২৮ শতাংশ পেয়েছেন কম্পনের সময়, এবং ২৩ শতাংশ বার্তাটি পেয়েছেন কম্পনের পরে।

গবেষণায় আরো বলছে, যদিও এই সিস্টেমটি প্রচলিত ভূকম্প সেন্সরের বিকল্প নয়, তবে এটি এমন একটি বিস্তৃতভাবে ব্যবহারযোগ্য এবং স্বল্প-ব্যয়ে কার্যকর আগাম সতর্কতার হাতিয়ার হতে পারে, বিশেষ করে যেসব অঞ্চলে বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা ভালো নয়। গবেষণাটির লেখকরা উল্লেখ করেছেন, এ প্রযুক্তিটি উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য আশার আলো, যেখানে স্মার্টফোনের ব্যবহার ব্যাপক হলেও, সিসমোমিটার বা ভূমিকম্প পরিমাপক যন্ত্রের অভাব রয়েছে। গুগল বলেছে, এই সিস্টেমটি মানুষকে কম্পন শুরুর আগে কয়েক সেকেন্ডের সতর্কবার্তা দিতে পারে। কোম্পানিটির ভাষ্যমতে, এই কয়েক সেকেন্ডই যথেষ্ট হতে পারে মই থেকে নেমে আসা, বিপজ্জনক বস্তু থেকে সরে যাওয়া বা আশ্রয় নেওয়ার জন্য।

এই সতর্কবার্তাগুলো নির্ভর করে ভূমিকম্পের সময় প্রথমে ছুটে আসা দ্রুতগামী ‘পি-তরঙ্গ’ শনাক্ত করার ওপর, যেগুলো ধ্বংসাত্মক ‘এস-তরঙ্গে’র আগে আসে। যদি পর্যাপ্ত সংখ্যক ফোন ‘পি-তরঙ্গ’ শনাক্ত করে, তাহলে সিস্টেমটি সেই ব্যবহারকারীদের কাছে সতর্কবার্তা পাঠায় যারা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই কম্পন অনুভব করতে পারেন। এই কয়েক সেকেন্ডের সময়ই আশ্রয় নেওয়া, অপারেশন বন্ধ করা কিংবা জরুরি কোনো অবকাঠামো সাময়িকভাবে থামিয়ে রাখার জন্য যথেষ্ট হতে পারে।

‘অ্যান্ড্রয়েড আর্থকুইক অ্যালার্ট সিস্টেম’ ২০২০ সালে চালু হয়, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, গ্রিস, তুরস্ক এবং ইন্দোনেশিয়াসহ একাধিক দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই সিস্টেমটি সরাসরি অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের অন্তর্ভুক্ত, ফলে ব্যবহারকারীদের আলাদা করে কোনো অ্যাপ ডাউনলোড করার প্রয়োজন হয় না।

যদিও এর নির্ভুলতা বৈজ্ঞানিক সেন্সরের মতো উচ্চ নয়, গবেষকরা দেখেছেন শহুরে এলাকায়, যেখানে ফোনের ঘনত্ব বেশি এবং ডেটা সংযোগ নির্ভরযোগ্য, সেখানে এই সতর্কবার্তাগুলো সবচেয়ে কার্যকর। গ্রামীণ এলাকায় কভারেজ তুলনামূলকভাবে দুর্বল এবং শনাক্তকরণেও দেরি হয়। এই গবেষণাটি আগের কিছু ‘ক্রাউডসোর্সড ভূমিকম্প প্রকল্প’, যেমন ‘মাইশেইক’ অ্যাপের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হলেও, এটি অনেক বেশি সুবিধাজনক কারণ এটি লাখ লাখ ডিভাইসে স্থানীয়ভাবে যুক্ত আছে যা বিস্তৃততর ও দ্রুততর সাড়া নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। গবেষকরা লিখেন, আমরা বিশ্বাস করি ক্রাউডসোর্সড সিস্টেমগুলো ভবিষ্যতে ক্রমাগত আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। প্রচলিত সেন্সরের সঙ্গে ব্যক্তিগত ডিভাইসের তথ্য একত্র করে এমন একটি আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা তৈরি করা সম্ভব যা আরো টেকসই, অংশগ্রহণমূলক এবং বিস্তৃত।

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

অ্যান্ড্রয়েড ফোনেই মিলবে ভূমিকম্পের আগাম সতর্কবার্তা

আপডেট সময় : ০৯:৩৫:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

প্রযুক্তি ডেস্ক: অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনকে ভূমিকম্প শনাক্তকারী যন্ত্রে রূপান্তর করতে পারবে এমন প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। এ প্রযুক্তি প্রবল ভূমিকম্প আঘাত হানার আগেই মানুষকে সতর্ক করার একটি উপায় হতে পারে।

গুগল, যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ও অন্যান্য গবেষকদের মাধ্যমে তৈরি উন্নত এই প্রযুক্তি লাখ লাখ স্মার্টফোন থেকে সংগৃহীত তথ্য ব্যবহার করে ভূমিকম্পের প্রাথমিক কম্পনের সংকেত শনাক্ত করে। এর মাধ্যমে আরো দ্রুত ও বিস্তৃতভাবে ভূমিকম্পের আগাম সতর্কতা দেওয়া সম্ভব হতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট।

যখন একাধিক ডিভাইস একই ধরনের কম্পন অনুভব করে, তখন সিস্টেমটি সেটিকে একটি সম্ভাব্য ভূমিকম্পের সংকেত হিসেবে চিহ্নিত করে আশপাশের এলাকার ব্যবহারকারীদের সতর্কবার্তা পাঠায়।

সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা বলছে, এই নেটওয়ার্ক প্রতি মাসে ৩০০টিরও বেশি ভূমিকম্প শনাক্ত করতে পেরেছে। যেসব এলাকায় সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছিল, সেসব স্থানে ৮৫ শতাংশ মানুষ যারা পরে ভূমিকম্প অনুভব করেছেন, বলেছেন তারা সতর্কবার্তা পেয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ৩৬ শতাংশ কম্পন শুরুর আগেই বার্তাটি পেয়েছেন, ২৮ শতাংশ পেয়েছেন কম্পনের সময়, এবং ২৩ শতাংশ বার্তাটি পেয়েছেন কম্পনের পরে।

গবেষণায় আরো বলছে, যদিও এই সিস্টেমটি প্রচলিত ভূকম্প সেন্সরের বিকল্প নয়, তবে এটি এমন একটি বিস্তৃতভাবে ব্যবহারযোগ্য এবং স্বল্প-ব্যয়ে কার্যকর আগাম সতর্কতার হাতিয়ার হতে পারে, বিশেষ করে যেসব অঞ্চলে বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা ভালো নয়। গবেষণাটির লেখকরা উল্লেখ করেছেন, এ প্রযুক্তিটি উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য আশার আলো, যেখানে স্মার্টফোনের ব্যবহার ব্যাপক হলেও, সিসমোমিটার বা ভূমিকম্প পরিমাপক যন্ত্রের অভাব রয়েছে। গুগল বলেছে, এই সিস্টেমটি মানুষকে কম্পন শুরুর আগে কয়েক সেকেন্ডের সতর্কবার্তা দিতে পারে। কোম্পানিটির ভাষ্যমতে, এই কয়েক সেকেন্ডই যথেষ্ট হতে পারে মই থেকে নেমে আসা, বিপজ্জনক বস্তু থেকে সরে যাওয়া বা আশ্রয় নেওয়ার জন্য।

এই সতর্কবার্তাগুলো নির্ভর করে ভূমিকম্পের সময় প্রথমে ছুটে আসা দ্রুতগামী ‘পি-তরঙ্গ’ শনাক্ত করার ওপর, যেগুলো ধ্বংসাত্মক ‘এস-তরঙ্গে’র আগে আসে। যদি পর্যাপ্ত সংখ্যক ফোন ‘পি-তরঙ্গ’ শনাক্ত করে, তাহলে সিস্টেমটি সেই ব্যবহারকারীদের কাছে সতর্কবার্তা পাঠায় যারা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই কম্পন অনুভব করতে পারেন। এই কয়েক সেকেন্ডের সময়ই আশ্রয় নেওয়া, অপারেশন বন্ধ করা কিংবা জরুরি কোনো অবকাঠামো সাময়িকভাবে থামিয়ে রাখার জন্য যথেষ্ট হতে পারে।

‘অ্যান্ড্রয়েড আর্থকুইক অ্যালার্ট সিস্টেম’ ২০২০ সালে চালু হয়, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, গ্রিস, তুরস্ক এবং ইন্দোনেশিয়াসহ একাধিক দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই সিস্টেমটি সরাসরি অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের অন্তর্ভুক্ত, ফলে ব্যবহারকারীদের আলাদা করে কোনো অ্যাপ ডাউনলোড করার প্রয়োজন হয় না।

যদিও এর নির্ভুলতা বৈজ্ঞানিক সেন্সরের মতো উচ্চ নয়, গবেষকরা দেখেছেন শহুরে এলাকায়, যেখানে ফোনের ঘনত্ব বেশি এবং ডেটা সংযোগ নির্ভরযোগ্য, সেখানে এই সতর্কবার্তাগুলো সবচেয়ে কার্যকর। গ্রামীণ এলাকায় কভারেজ তুলনামূলকভাবে দুর্বল এবং শনাক্তকরণেও দেরি হয়। এই গবেষণাটি আগের কিছু ‘ক্রাউডসোর্সড ভূমিকম্প প্রকল্প’, যেমন ‘মাইশেইক’ অ্যাপের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হলেও, এটি অনেক বেশি সুবিধাজনক কারণ এটি লাখ লাখ ডিভাইসে স্থানীয়ভাবে যুক্ত আছে যা বিস্তৃততর ও দ্রুততর সাড়া নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। গবেষকরা লিখেন, আমরা বিশ্বাস করি ক্রাউডসোর্সড সিস্টেমগুলো ভবিষ্যতে ক্রমাগত আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। প্রচলিত সেন্সরের সঙ্গে ব্যক্তিগত ডিভাইসের তথ্য একত্র করে এমন একটি আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা তৈরি করা সম্ভব যা আরো টেকসই, অংশগ্রহণমূলক এবং বিস্তৃত।