ঢাকা ১২:২২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ইফতার তৈরি ও বিক্রি

  • আপডেট সময় : ০১:৩৩:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩
  • ৭৬ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর সরকারি কবি নজরুল কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের পাশেই খোলা জায়গায় ময়লার ভাগাড়ের সামনে বিক্রি হচ্ছে বাহারি রকমের ইফতার। নাক মুখ চেপে ধরে রাস্তার পাশে ধূলোবালির মধ্যে ইফতার সামগ্রী কিনতে এসেছেন নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আলিফ। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খেজুর ও ইফতার বিক্রি দেখে ইতস্তত বোধ করে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন। কাছে গিয়ে ইফতার না কিনে কেন দাঁড়িয়ে আছে সেই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, এমন পরিবেশে ইফতারি বিক্রি দেখে কিছুটা অবাক হয়েছি। এটা খেলে হয়তো নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হবো। কিন্তু এছাড়া তো আর কোনও উপায়ও নেই এখন। বাসায় গ্যাস নেই। গ্যাস থাকলে মা বাসায় ইফতারি তৈরি করতো। এখন উপায় না দেখে বাইরে থেকে ইফতারের জন্য খাবার কিনতে এসেছি।
শুধু পুরান ঢাকা নয়, রাজধানীজুড়ে ফুটপাতে এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি ও বিক্রি করা হচ্ছে ইফতার সামগ্রী। রাস্তার ধুলাবালি সব যেন ইফতারির অংশ। এছাড়া খাবার দেখতে আকর্ষণীয় করার জন্য এসব বাহারি ইফতার সামগ্রী তৈরিতে মেশানো হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য ও রঙ। হোটেল-রেস্তোরাঁর পাশাপাশি রাজধানীজুড়ে অস্থায়ী দোকানে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ইফতার তৈরি হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা যায়, পুরান ঢাকার সদরঘাট থেকে শুরু করে লক্ষ্মীবাজার, কলতাবাজার, রায়সাহেব বাজার, ধোলাইখাল, টায়ারপট্টি, ইসলামপুর, বংশাল, নয়াবাজার, সিদ্দিকবাজার, নাজিরাবাজার, চকবাজারসহ পুরান ঢাকার প্রায় সব এলাকায় অলিগলিতে উন্মুক্ত জায়গায় ধুলাবালির মধ্যে নানা রকমের ইফতার সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে।
ইফতারি কিনতে আসা কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম বলেন, কলেজ বন্ধ দিয়েছে। কিন্তু টিউশনি আছে। তাই রমজানেও ঢাকায় থাকতে হচ্ছে। মেসে ইফতারি তৈরির সেরকম কোনও ব্যবস্থা নেই। তাই সবাই মিলে বাইরে থেকে ইফতারি কেনা। দুপুরে দেখলাম অনেকেই নোংরা পরিবেশে ইফতারসামগ্রী তৈরি করছে। আবার এগুলো বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে খোলা জায়গায় ধুলাবালির মধ্যে বিক্রি করছে। রোজা মাত্র শুরু হলো, তাই এদিকে তেমন কেউ নজর দেয়নি। এখানে প্রশাসনের তদারকি করা প্রয়োজন।
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ইফতার তৈরি ও বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করে নাজিরাবাজারের ইফতারসামগ্রী বিক্রেতা মো. সবুজ বলেন, সবাই তাদের দোকানে ইফতারি বানিয়ে বাইরে বিক্রি করছে। অনেক আইটেমের ইফতারি বানানো হয়। এজন্য দোকানের মধ্যে তা সুন্দর দেখায় না। তাছাড়া অনেক ক্রেতা ভিড় জমায়। এজন্য সবার সুবিধার্থে তা বাইরে বিক্রি করা হয়। আর খোলা না রাখলে বেচাকেনা কেমনে করবো। বাইরে তো ধুলাবালি বা মশামাছি আসবেই। তবে সেটা যেন ইফতারির ওপর না পড়ে সেদিকে আমরা খেয়াল রাখি।
খোলা পরিবেশে বিক্রির উদ্দেশ্যে রাখা খাবারগুলো কতটা স্বাস্থ্যসম্মত থাকছে তা জানতে কথা হয় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বিপ্লব বড়ুয়া মঙ্গে। তিনি জানান, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার কখনও খোলা পরিবেশে বিক্রি করা যাবে না। যদিও বিক্রি করা হয় এতে যথাযথ আবরণ বা ঢাকনা ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় (৬০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড) রাখতে হবে। এতে কোনও ব্যাকটেরিয়া থাকলে তা নষ্ট হয়ে যায়। এসব খোলামেলা রাখা খাবার থেকে বায়ুবাহিত রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়া খাবারের মান যাচাইয়ে অবশ্যই প্রতিনিয়ত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা দরকার।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান জানান, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বানানো ও বিক্রি করা ইফতার সামগ্রী খেলে নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যারা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ইফতার সামগ্রী বিক্রি করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ইফতার তৈরি ও বিক্রি

আপডেট সময় : ০১:৩৩:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর সরকারি কবি নজরুল কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের পাশেই খোলা জায়গায় ময়লার ভাগাড়ের সামনে বিক্রি হচ্ছে বাহারি রকমের ইফতার। নাক মুখ চেপে ধরে রাস্তার পাশে ধূলোবালির মধ্যে ইফতার সামগ্রী কিনতে এসেছেন নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আলিফ। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খেজুর ও ইফতার বিক্রি দেখে ইতস্তত বোধ করে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন। কাছে গিয়ে ইফতার না কিনে কেন দাঁড়িয়ে আছে সেই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, এমন পরিবেশে ইফতারি বিক্রি দেখে কিছুটা অবাক হয়েছি। এটা খেলে হয়তো নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হবো। কিন্তু এছাড়া তো আর কোনও উপায়ও নেই এখন। বাসায় গ্যাস নেই। গ্যাস থাকলে মা বাসায় ইফতারি তৈরি করতো। এখন উপায় না দেখে বাইরে থেকে ইফতারের জন্য খাবার কিনতে এসেছি।
শুধু পুরান ঢাকা নয়, রাজধানীজুড়ে ফুটপাতে এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি ও বিক্রি করা হচ্ছে ইফতার সামগ্রী। রাস্তার ধুলাবালি সব যেন ইফতারির অংশ। এছাড়া খাবার দেখতে আকর্ষণীয় করার জন্য এসব বাহারি ইফতার সামগ্রী তৈরিতে মেশানো হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য ও রঙ। হোটেল-রেস্তোরাঁর পাশাপাশি রাজধানীজুড়ে অস্থায়ী দোকানে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ইফতার তৈরি হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা যায়, পুরান ঢাকার সদরঘাট থেকে শুরু করে লক্ষ্মীবাজার, কলতাবাজার, রায়সাহেব বাজার, ধোলাইখাল, টায়ারপট্টি, ইসলামপুর, বংশাল, নয়াবাজার, সিদ্দিকবাজার, নাজিরাবাজার, চকবাজারসহ পুরান ঢাকার প্রায় সব এলাকায় অলিগলিতে উন্মুক্ত জায়গায় ধুলাবালির মধ্যে নানা রকমের ইফতার সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে।
ইফতারি কিনতে আসা কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম বলেন, কলেজ বন্ধ দিয়েছে। কিন্তু টিউশনি আছে। তাই রমজানেও ঢাকায় থাকতে হচ্ছে। মেসে ইফতারি তৈরির সেরকম কোনও ব্যবস্থা নেই। তাই সবাই মিলে বাইরে থেকে ইফতারি কেনা। দুপুরে দেখলাম অনেকেই নোংরা পরিবেশে ইফতারসামগ্রী তৈরি করছে। আবার এগুলো বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে খোলা জায়গায় ধুলাবালির মধ্যে বিক্রি করছে। রোজা মাত্র শুরু হলো, তাই এদিকে তেমন কেউ নজর দেয়নি। এখানে প্রশাসনের তদারকি করা প্রয়োজন।
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ইফতার তৈরি ও বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করে নাজিরাবাজারের ইফতারসামগ্রী বিক্রেতা মো. সবুজ বলেন, সবাই তাদের দোকানে ইফতারি বানিয়ে বাইরে বিক্রি করছে। অনেক আইটেমের ইফতারি বানানো হয়। এজন্য দোকানের মধ্যে তা সুন্দর দেখায় না। তাছাড়া অনেক ক্রেতা ভিড় জমায়। এজন্য সবার সুবিধার্থে তা বাইরে বিক্রি করা হয়। আর খোলা না রাখলে বেচাকেনা কেমনে করবো। বাইরে তো ধুলাবালি বা মশামাছি আসবেই। তবে সেটা যেন ইফতারির ওপর না পড়ে সেদিকে আমরা খেয়াল রাখি।
খোলা পরিবেশে বিক্রির উদ্দেশ্যে রাখা খাবারগুলো কতটা স্বাস্থ্যসম্মত থাকছে তা জানতে কথা হয় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বিপ্লব বড়ুয়া মঙ্গে। তিনি জানান, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার কখনও খোলা পরিবেশে বিক্রি করা যাবে না। যদিও বিক্রি করা হয় এতে যথাযথ আবরণ বা ঢাকনা ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় (৬০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড) রাখতে হবে। এতে কোনও ব্যাকটেরিয়া থাকলে তা নষ্ট হয়ে যায়। এসব খোলামেলা রাখা খাবার থেকে বায়ুবাহিত রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়া খাবারের মান যাচাইয়ে অবশ্যই প্রতিনিয়ত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা দরকার।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান জানান, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বানানো ও বিক্রি করা ইফতার সামগ্রী খেলে নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যারা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ইফতার সামগ্রী বিক্রি করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।