নিজস্ব প্রতিবেদক: জুলাই বিপ্লবে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সাড়া প্রদান-এ তিন গুণ জনসচেতনতার মূল সুরে পরিণত হয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
তিনি বলেছেন, অনিশ্চয়তার সেই মাসগুলোতে বিচার বিভাগ ছিল একমাত্র পূর্ণ কার্যকর সাংবিধানিক অঙ্গ; ফলে তাকে একইসঙ্গে বিনয়ী ও দৃঢ় অবস্থান নিতে হয়েছিল। এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর- সংস্কার রোডম্যাপের জন্ম, একটি জাতীয় আকাঙ্ক্ষাকে কাঠামো দেওয়ার প্রয়াস, যার লক্ষ্য ছিল সাংবিধানিক স্বাভাবিকত্বে প্রত্যাবর্তন।
শনিবার (২২ নভেম্বর) ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন ২০২৫’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, গত কয়েক মাসে আমরা দেশে অভূতপূর্ব বিচারিক রোডশোর মাধ্যমে এই রোডম্যাপ দেশজুড়ে পৌঁছে দিয়েছি। এতে আমরা প্রত্যক্ষ করেছি এক অনুপ্রেরণাদায়ী দৃশ্য-একটি বিচার বিভাগ, যে তার প্রাতিষ্ঠানিক নিয়তির অভিভাবকত্ব পুনরুদ্ধারে সংকল্পবদ্ধ এবং একটি আইনজীবী সমাজ, যারা তাদের নাগরিক দায়িত্ব নতুন করে উপলব্ধি করছে।
আধুনিক বিচার বিভাগীয় সংস্কারের আলোচনায় মাসদার হোসেন মামলাকে এড়িয়ে যাওয়া যায় না মন্তব্য করে প্রধান বিচারপতি বলেন, সেই ঐতিহাসিক রায় বিচার বিভাগের সাংবিধানিক স্বায়ত্তশাসনকে চিহ্নিত করেছে এবং রাষ্ট্রের তিন স্তম্ভের একটিতে পরিণত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পেশাদার কাঠামোর ভিত্তি গড়ে দিয়েছে।
গত এক বছরে আমরা এই বিচারব্যবস্থাকে সক্রিয় করতে চেয়েছি-সার্ভিস কাঠামোয় প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, ক্যারিয়ার পথের স্বাভাবিকীকরণ এবং সুপ্রিম কোর্ট সেক্রেটারিয়েট অর্ডিন্যান্স প্রণয়নের ভিত্তি স্থাপনের মাধ্যমে। এগুলো শুধুই আমলাতান্ত্রিক পুনর্বিন্যাস নয়-এগুলো সাংবিধানিক পুনর্র্নিমাণ, যার লক্ষ্য ভারসাম্য, স্বাধীনতা ও প্রশাসনিক শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। গত বছরের প্রতিটি রায় শুধু বিচারিক ঘোষণা নয়, এটি একটি বীজ, যা আমরা প্রতিষ্ঠানগত সংস্কারের উর্বর মাটিতে রোপণ করেছি। আশা করছি এটি ভবিষ্যতে দৃঢ়তর সাংবিধানিক সংস্কৃতিতে পরিণত হবে। তবুও এখানে এক ধরনের বৈপরীত্য আছে-যখন আদালত বিদ্যমান সংবিধানকে রূপান্তরকালীন ন্যায়বিচারের নোঙর হিসেবে পুনর্ব্যক্ত করছে; তখন জনগণ-যাদের হাতে নিহিত মৌলিক ক্ষমতা-একসময় হয়তো সেই সংবিধানকেই পুনর্গঠন করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। বিচার বিভাগকে এই সত্যকে হুমকি নয়, বরং এক গভীর গণতান্ত্রিক বাস্তবতা হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।
এই অস্থিরতার যুগে বিচার বিভাগের সংযম, সততা, শিষ্টতা ও সাহসই জাতির দীর্ঘস্থায়ী স্থিতিশীলতার প্রধান ভরসা হতে পারে বলে মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি।
সানা/আপ্র/২২/১১/২০২৫




















