ক্রীড়া ডেস্ক: ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে চলমান সংঘাতের মধ্যে স্থগিত হয়ে যাওয়া আইপিএল ফের শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। শনিবার বিকেলে দুই দেশের মধ্যে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির পরপরই বিসিসিআই টুর্নামেন্ট চালু করতে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে।
গত শুক্রবার সীমান্তে পাল্টাপাল্টি হামলার তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় আইপিএল এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেছিল বিসিসিআই। এমনকি ৮ মে ধর্মশালায় পাঞ্জাব কিংস ও দিল্লি ক্যাপিটালসের ম্যাচটিও ম্যাচ চলাকালেই বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১০.১ ওভারের পর খেলা বন্ধ হয়ে যায় নিরাপত্তা শঙ্কায়।
তবে যুদ্ধবিরতির পর পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ায় বিসিসিআই দ্রুত টুর্নামেন্ট আবার চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ১৫ মে’র আগে-পরে পুনরায় মাঠে গড়াতে পারে আইপিএলের বাকি অংশ। তবে এর জন্য ভারত সরকারের চূড়ান্ত অনুমতির অপেক্ষায় আছে বোর্ড।
বিদেশি খেলোয়াড় ফেরাতে জোর তৎপরতা
এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিদেশি খেলোয়াড় ও কোচদের ফিরিয়ে আনা। সংঘাতের কারণে অনেক বিদেশি ক্রিকেটার ভারত ছেড়ে নিজ দেশে ফিরে গেছেন। শনিবারই একটি বড় অংশ দেশ ত্যাগ করেছে। কিছু ফ্র্যাঞ্চাইজি ইতিমধ্যেই তাদের খেলোয়াড় ও সাপোর্ট স্টাফদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত ফিরে আসতে বলেছে।
যেসব খেলোয়াড়ের ভ্রমণপথে ট্রানজিট ছিল, তাদের আপাতত যাত্রা স্থগিত রেখে অপেক্ষায় থাকতে বলা হয়েছে। এমনকি রোববার ভারত ছাড়ার কথা ছিল এমন কয়েকজন কোচের টিকিটও বাতিল করতে বলেছে একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি। তবে কিছু দল তুলনামূলক ভালো অবস্থানে আছে। যেমন- গুজরাট টাইটান্সের কেবল দুজন বিদেশি খেলোয়াড়-জস বাটলার ও জেরাল্ড কুটসিয়া ভারত ছেড়েছেন। ফ্র্যাঞ্চাইজিটি তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লড়াই
এখনো আইপিএলের ১২টি লিগ ম্যাচ ও ৪টি প্লে-অফ ম্যাচ বাকি রয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এগুলো দক্ষিণ ভারতের তিনটি শহর-বেঙ্গালুরু, চেন্নাই ও হায়দরাবাদে আয়োজন করা হতে পারে।
নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এই শহরগুলোকেই বেশি নিরাপদ ভাবা হচ্ছে। বর্তমানে সাতটি দল এখনো প্লে-অফের দৌড়ে আছে। চেন্নাই সুপার কিংস, সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ও রাজস্থান রয়্যালস ইতোমধ্যেই বাদ পড়ে গেছে। তাই প্লে-অফে যাওয়ার জন্য বাকি দলগুলোর লড়াই এখন আরো উত্তেজনাকর হয়ে উঠছে।
সময়ের অভাবে নতুন শঙ্কা
বেশির ভাগ ফ্র্যাঞ্চাইজি আশাবাদী, মে মাসেই টুর্নামেন্ট চালু হলে বিদেশি খেলোয়াড়রা ফিরে আসবেন। তবে যদি কোনো কারণে টুর্নামেন্ট ২৫ মে’র পরেও গড়ায়, তাহলে অনেক খেলোয়াড়কে হয়তো পাওয়া যাবে না।
কারণ, জুনে শুরু হচ্ছে বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক সিরিজ এবং সবচেয়ে বড় বিষয়, ১১ জুন লর্ডসে শুরু হবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল, যেখানে অংশ নেবে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা।
বর্তমান পরিস্থিতিতে এখনো পর্যন্ত আইপিএলের ৫৭টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৫৮তম ম্যাচ, যা পাঞ্জাব ও দিল্লির মধ্যে হওয়ার কথা ছিল, সেটি বাতিল হওয়ার পর তা পুনরায় অনুষ্ঠিত হবে কি না তা নিয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেয়নি আয়োজকরা।
নিরাপত্তা, সূচি আর আন্তর্জাতিক কমিটমেন্ট-সবই চ্যালেঞ্জ
বিসিসিআই এখন এক কঠিন সমীকরণের মুখে দাঁড়িয়ে। একদিকে যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্ব নিয়ে অনিশ্চয়তা, অন্যদিকে বিদেশি খেলোয়াড়দের উপস্থিতি, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ভেন্যু নির্বাচন এবং আন্তর্জাতিক সিরিজের সময়সূচি-সবকিছুই মিলিয়ে পরিস্থিতি বেশ জটিল।
তবে বোর্ড সূত্রের মতে, যত দ্রুত সম্ভব পরিস্থিতির উন্নতি হলে মাঠে আইপিএল ফেরানো হবে। এক্ষেত্রে সময়ের সঙ্গেই লড়তে হচ্ছে বোর্ডকে।
দর্শকদের আগ্রহ, ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর প্রস্তুতি ও খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা-সব মিলিয়ে সামনে আছে একটি চ্যালেঞ্জিং সময়।