প্রযুক্তি ডেস্ক: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ব্যবহার করে নির্মিত সিনেমাও অস্কারের শীর্ষ পুরস্কার জিততে পারে বলে নিয়ম করেছেন অ্যাকাডেমির আয়োজকরা।
সোমবার (২১ এপ্রিল) নতুন নিয়ম জারি করেছে ‘অ্যাকাডেমি অফ মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস’, যারা অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসের আয়োজক সংস্থা। অ্যাকাডেমি বলেছে, এআই ও অন্যান্য ডিজিটাল টুলের ব্যবহার অস্কারের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনায় সাহায্য বা ক্ষতি করবে না।
জেনারেটিভ এআই সাধারণ টেক্সট প্রম্পটের সাহায্যে টেক্সট, ছবি, অডিও ও ভিডিও তৈরি করতে পারে, যা মার্চে শিল্পের শীর্ষস্থানীয় পুরষ্কারপ্রাপ্ত কিছু সিনেমায় ব্যবহৃত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
তবে অ্যাকাডেমি বলেছে, অস্কার বিজয়ীদের বাছাইয়ের সময় মানুষের সম্পৃক্ততার বিষয়টিও বিবেচনা করবে তারা।
অ্যাকাডেমি আরো বলেছে, জেনারেটিভ এআই টুল ব্যবহার করে তৈরি বিভিন্ন সিনেমার পুরস্কার দেওয়ার বিষয়টি সুপারিশ করেছে তাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কাউন্সিল। এ ছাড়াও সোমবারের এ ঘোষণায় আরো কিছু নিয়ম পরিবর্তন করেছে অ্যাকাডেমি। যার মধ্যে রয়েছে, অ্যাকাডেমি সদস্যদের এখন থেকে প্রতিটি বিভাগে মনোনীত সকল সিনেমা দেখতে হবে। যাতে চূড়ান্ত রাউন্ডের ভোটে অংশ নিতে পারেন তারা। আর তাদের এই ভোটই বাছাই করবে অস্কার পুরস্কার বিজয়ীদের।
এ বছরের মার্চে অস্কার অনুষ্ঠানে ‘ব্রুটালিস্ট’ ছবিতে সেরা অভিনেতার পুরস্কার জিতেছেন অ্যাড্রিয়ান ব্রডি। এরপরই সিনেমাতে এআই ব্যবহারের বিষয়টি আলোচিত হয়ে ওঠে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
এ সিনেমাটিতে হাঙ্গেরিয়ান ভাষায় কথা বলার জন্য অভিনেতার উচ্চারণ উন্নত করতে জেনারেটিভ এআই ব্যবহৃত হয়েছে। এরপর গানের কণ্ঠ উন্নত করতে একই ধরনের ভয়েস ক্লোনিং প্রযুক্তি ব্যবহার করতে দেখা গিয়েছিল অস্কারজয়ী সংগীতশিল্পী এমিলিয়া পেরেজে’কেও।
এ প্রযুক্তির সক্ষমতা হচ্ছে, এটি কোনো শিল্পীর সুর ও শৈলী দ্রুত পরিবর্তন করতে বা মেলাতে পারে। এমনকি সূক্ষ্মভাবে কারও চেহারা পরিবর্তন, সংগীত ও সিনেমা নির্মাণের সক্ষমতাও রয়েছে এর। ফলে প্রযোজনার জন্য আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে প্রযুক্তিটি।
এসবের পাশাপাশি এটাও সত্য যে, সিনেমায় এআইয়ের ব্যবহারের বিষয়টি বড় ধরনের বিতর্ক তৈরি করেছে। বিশেষ করে, এ ধরনের টুলের প্রশিক্ষণে ব্যবহৃত উপাদান ও কর্মীদের জীবিকার ওপর এর প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিল্পী ও অভিনেতারা।
উদ্বেগ ও সীমাবদ্ধতা: এর আগে ২০২৩ সালে ধর্মঘটের সময় এআইয়ের কারণে নিজেদের কাজ হারানোর আশঙ্কা তুলে ধরেছিলেন হলিউডে অভিনয় শিল্পী ও চিত্রনাট্যকাররা।
এ বিষয়ে অস্কারজয়ী অভিনেত্রী সুসান সারানডন বলেছেন, আপনি যদি আমার মুখ, শরীর ও কণ্ঠস্বর নিতে পারেন এবং আমাকে এমন কিছু বলতে বা করতে বাধ্য করেন যার সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই বা এ নিয়ে আমার পছন্দ অপছন্দের কোনো মূল্য নেই, তবে কিন্তু কাজটি একদমই ভালো কিছু হলো না।
বিভিন্ন স্টুডিও মানুষের বদলে গবেষণা, চিকিৎসা ও স্ক্রিপ্ট লেখার মতো কাজের জন্য ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটির মতো নানা টুল ব্যবহার করে ব্যয় কমিয়ে আনতে ও সময় সাশ্রয় করতে চাইবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চিত্রনাট্যকাররা। এদিকে, কিছু অভিনেতা আপাতদৃষ্টিতে এআই প্রযুক্তিকে গ্রহণ করলেও এ সময়ে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেত্রী স্কারলেট জোহানসন বলেছেন, অনুমতি না নিয়ে তাদের ভাবমূর্তি বা উপমার অপব্যবহার করা যাবে না। এ নিয়ে সতর্কও করেছেন তিনি।