নিজস্ব প্রতিবেদক : ভোট বর্জন করা বিএনপি অসহযোগের ডাক দেওয়ার পর পাল্টা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ধানম-িতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমরাও বলব, অসহযোগ আন্দোলন করবেন, ট্যাক্স যাদের বাকি, ট্যাক্স আদায় করুন। কর্তৃপক্ষকে বলব, ট্যাক্স যাদের বাকি, টেক্স আদায় করুন। যাদের বিল বাকি, তাদের বিল আদায় করুন।” কেবল তাই নয়, ব্যাংক থেকে যারা ঋণ নিয়ে ‘টাকা পাচার’ করেছেন, তালিকা করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কাদের।
তিনি বলেন, “বাড়িভাড়া যাদের বাকি, বাড়ি ভাড়া আদায় করতে বলছি। এদেরকে আর প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। ট্যাক্স ফাঁকি দিয়েছেন যারা, তাদের ট্যাক্স আদায় করতে হবে, সাজাও দিতে হবে। আমরাও সেই পথে আছি।” ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ অধিকাংশ নিবন্ধিত দল যখন ৭ জানুয়ারি ভোট সামনে রেখে প্রচারে ব্যস্ত, বিএনপি ও সমমনা দলগুলো তখন নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে। এই আন্দোলনের অংশ হিসেবে বুধবার এক ব্রিফিংয়ে অসহযোগের ডাক দেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তিনি নির্বাচনি দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকতে বলেন। পাশাপাশি সরকারকে কর, খাজনা এবং বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানির বিল পরিশোধ বন্ধ করে দেওয়ার এবং ব্যাংকে আমানত না রাখার আহ্বান জানান। তবে ওবায়দুল কাদের বলছেন, জনগণ বিএনপির বিরুদ্ধেই অসহযোগ শুরু করে দিয়েছে। “তার প্রমাণ হল, আপনারা হাট বাজার, দোকান পাট, মার্কেটে গিয়ে দেখুন, রাস্তাঘাটে গাড়ি চলছে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক। এর অর্থ বিএনপির ডাকে জনগণ সাড়া দেয়নি। বিএনপি যতই গুপ্ত হামলা, ট্রেনে আগুন, বাস পোড়াচ্ছে জনগণের উপস্থিতি আরও বাড়ছে। মানুষ নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে।” দেশে উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচনি প্রচার চলছে দাবি করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “নির্বাচনে প্রচার প্রচারণায় বিপুল জনসাধারণের উপস্থিতি প্রমাণ করে, ৭ জানুয়ারি জনতার জয় হবে।” বিএনপির সমালোচনা করে কাদের বলেন, “আন্দোলন করতে গিয়ে পালিয়ে গেছে, তারা আবার উঁচু গলায় কথা বলে। এই বিএনপি নেতারা বলতেন শেখ হাসিনা পালিয়ে যাচ্ছেন, মন্ত্রী এমপিরা পালিয়ে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল ২৮ তারিখে তাদের কি যে দৌড়…। পলাতক দল এখন অসহযোগ আন্দোলন করবে, যে দল আন্দোলনের কথা বলে পালিয়ে গেল, তারা আবার করবে অসহযোগ। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “একজন তারেক রহমান, টেমস নদীর তীরে বসে হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। সাহস থাকলে আসেন। রিমোট কন্ট্রোলে কেন, রাজপথে এসে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিন। জেলে যাওয়ার সাহস নিয়ে আসুন, তা না হলে নেতা হতে পারবেন না। রিমোট কন্ট্রোলে আন্দোলন হয় না।” বিএনপির কর্মসূচির মধ্যে ‘গুপ্ত হামলা’ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ” তা না হলে দেশের জনগণ ধরে ধরে বিচার করবে, জনগণই প্রতিহত করবে। জনগণ নির্বাচনের দিকে, আর আপনারা নির্বাচন বন্ধ করতে চান। সেই খায়েস আপনাদের পূরণ হবে না।” বিভিন্ন আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের কারণে শরিক দলের প্রার্থিরা যে সমস্যায় পড়ছেন, সে বিষয়ে ওবায়দুল কাদেরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন একজন সাংবাদিক। জবাবে তিনি বলেন, “নির্বাচনে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে, স্বতন্ত্র নির্বাচন করছে, তাদের বাধা দেব না। তাদের জোর করে সরিয়ে নেওয়া আচরণ বিধি লঙ্গন করা হবে। আমি মনে করি তাদের নির্বাচনে জেতার ব্যাপারে জনগণের সমর্থন যে যা পাবেন তাই। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হারলে হারবেন, আর জিতলে জিতবেন। কে হারবে কে জিতবে এই দায়িত্ব আমাদের না।”
‘ডামি’ প্রার্থিদের নিয়ে নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না বলে যে মন্তব্য বিএনপি নেতারা করছেন, সে বিষয়ে প্রশ্ন করলে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আসলে বিএনপি হল একটা ডামি দল। বাংলাদেশে প্রথম কিংস পার্টি বিএনপি। জন্মগতভাবেই বিএনপি গণতন্ত্র হত্যাকারী নির্বাচন বিরোধী দল।” অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাপা, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা, উপ প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল শামীম, উপ দপ্তর সায়েম খান, কার্যানির্বাহী সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী, আনোয়ার হোসেন, তারানা হালিম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।