ঢাকা ০৫:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫

অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তে নৌকায় ভোট চাইলেন শেখ হাসিনা

  • আপডেট সময় : ০২:২৫:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ নভেম্বর ২০২৩
  • ৮৯ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের নগরী কক্সবাজারে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সড়ক ও বিমান পথে এতদিন আসা গেলেও গতকাল শনিবার থেকে যুক্ত হলো নতুন এক পথ। বাংলাদেশের রেলওয়ে নেটওয়ার্কে ৪৮তম জেলা হিসেবে যুক্ত হয়েছে কক্সবাজার। সমুদ্রের শহরে গিয়ে শনিবার চট্টগ্রাম (দোহাজারী)-কক্সবাজার রেলপথের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধন করেন সেখানে স্থাপিত আইকনিক রেল স্টেশনও। দুপুর ১টায় উদ্বোধনের পর আইকনিক রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টার থেকে ১টা ২১ মিনিটে টিকিট কাটেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর সবুজ পতাকা উড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর হুইসেল বাজানোর মাধ্যমে ১টা ২৭ মিনিটে কক্সবাজার থেকে রামুর উদ্দেশে ছেড়ে যায় একটি ট্রেন। রামুতে পৌঁছে সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা।
নৌকায় ভোট চাইলেন শেখ হাসিনা: আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাতেই ১৫ বছরে বাংলাদেশের আমূল পরিবর্তন এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি এ সময়ের অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে নৌকায় ভোট চেয়েছেন তিনি।
গতকাল শনিবার কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে জনসভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, “আগামীতে নির্বাচন, সেই নির্বাচনে আমি আপনাদের কাছে চাইব-নৌকা মার্কায় ভোট দিবেন, যাতে আপনাদের সেবা করতে পারি।
“আর যে কাজগুলো বাকি তার জন্য আপনাদের কাছে নৌকায় ভোট চাই। আপনারা কি নৌকা মার্কায় ভোট দিবেন? হাত তুলে দেখান।”
এদিন বিকালে মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের টাউনশিপ মাঠে মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য দিচ্ছিলেন সরকারপ্রধান। সেখানে ১৪টি সমাপ্ত প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৪টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরে তিনি মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রথম টার্মিনালের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও এই সমুদ্রবন্দরের চ্যানেল উদ্বোধন করেন। এর আগে পর্যটকদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণে দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর তিনি নতুন ট্রেনে চেপে রামুতে যান। সেখান থেকে মাতারবাড়ী আসেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি জনসভাস্থলে পৌঁছালে মুহুর্মুহু স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। তিনি জনসভা মঞ্চে উঠে হাত নেড়ে নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দনের জবাব দেন।
জনসভায় শেখ হাসিনা বলেন, “১৫ বছর আগের বাংলাদেশ আর এখন যে বাংলাদেশ-আমরা পরিবর্তন করেছি; আজকে যার বয়স ১৫ বছর সে মনে করবে, এটা তো এমনই ছিল, কিন্তু তা না। “এমনকি ২০-২৫ বছরের যে সন্তান, সে চিন্তা করে দেখুক-বাংলাদেশ এখন কোন জায়গায় আছে? কারণটা হলো আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই হয়েছে।”
বঙ্গবন্ধু যে ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত উন্নত বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছিলেন, তা গড়তে যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত রয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বাবা-মা সব হারিয়েছি। হারাবার কিছু নাই, পাওয়ারও কিছু নাই। একটাই কাজ- বাংলাদেশের মানুষ যাতে ভালো থাকে, উন্নত থাকে।
“যেভাবে আমার বাবা ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই বাংলাদেশ আমি গড়তে চাই। বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই।”
কেবল মানুষের কল্যাণ করাই তার কাজ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশের মানুষকে আমি পরিবার হিসেবে নিয়েছি। আপনাদের মাঝেই ফিরে পেয়েছি বাবার স্নেহ, মায়ের স্নেহ, ভাইয়ের স্নেহ।
“আপনাদের কল্যাণের জন্য, আপনাদের উন্নয়নের জন্য আমি যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। প্রয়োজনে বাবার মতো বুকের রক্ত দিতেও আমি প্রস্তুত। শুধু আপনাদের কল্যাণ করাই আমার একমাত্র কাজ। আপনাদের কাছে দোয়া চাই।”
একপর্যায়ে জনসভায় উপস্থিত লোকজন নৌকার পক্ষে সমর্থনের কথা জানিয়ে ‘নৌকা, নৌকা’ স্লোগানে পুরো এলাকা মুখরিত করে তোলেন। সেসময় কিছুক্ষণের জন্য বক্তব্য বন্ধ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও তাদের উল্লাস, ভালোবাসা আর সমর্থন প্রত্যক্ষ করেন। পরে তিনি বলেন, “আপনারা বিভিন্ন এলাকা থেকে কষ্ট করে এসেছেন আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আপনাদের সঙ্গে অনেকদিন পর দেখা হলো, আমি খুব আনন্দিত।”
তিন দশক আগে ঘূর্ণিঝড় দুর্গত মাতারবাড়ীর বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়ানোর স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, “কক্সবাজারে যা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর সময়ে। ’৯১ সালে ঘূর্ণিঝড় হয়, তাতে পুরো এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জলোচ্ছ্বাসে কতো মানুষ জীবন হারায়, কতো জীবন নষ্ট হয়। তখন ক্ষমতায় খালেদা জিয়া, তিনি কিন্তু আসেননি।
“এসেছিলাম আমি আর আমার নেতাকর্মীরা। আমরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেই। সেই দিন কেউ আপনাদের পাশে দাঁড়ায়নি। এ কথা চিন্তা করে এই এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কাজ হাতে নিয়েছি। এসেছি আপনাদের কিছু উপহার দিতে।”
কয়েক ঘণ্টা আগে কক্সবাজার-দোহাজারী রেলপথ উদ্বোধন করার প্রসঙ্গ টেনে সরকারপ্রধান বলেন, “একানব্বইয়ের ঘূর্ণিঝড়ে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল কক্সবাজারে, তারা বস্তি করে থাকতো- তাদের জন্য খুরুশকুলে সকলের জন্য বহুতল ভবন করে ফ্ল্যাট করে দিচ্ছি। কেউ ভূমিহীন থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না।”
দ্বীপ এলাকায় সরকার এখন সাবমেরিনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সেবা পৌঁছে দিচ্ছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বিশেষ করে দ্বীপ অঞ্চলগুলো অনেকেই ভেবেছিল এখানে কিছুই হবে না। এখন আলোকিত মহেশখালী, আলোকিত কুতুবদিয়া, আলোকিত মাতারবাড়ি।”
সাক্ষরতার হার বাড়াতে আওয়ামী লীগ সরকারের বিনা বেতনে শিক্ষা ও বৃত্তি দেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বিভিন্ন ধরনের ভাতা দেওয়া হচ্ছে, যাতে মানুষ ভালো থাকে। কৃষক যাতে সহজে চাষাবাদ করতে পারে, সেজন্য সারে ব্যাপক ভর্তুকি, বীজ কেনা সহজীকরণ করেছে সরকার।”
রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সেটাও আমরা নিয়ন্ত্রণের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ইনশাল্লাহ সেটাও খুব শিগগিরই হ্রাস পাবে। মানুষ আরও ভালোভাবে চলতে পারবে। এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখবেন না, যে যা পারেন চাষ করবেন। আমাদের দেশকে আমরাই এগিয়ে নিয়ে যাব।
“আজকে দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেছে, আমরা উপকারভোগী কার্ড দিচ্ছি। ভিজিএফ-ভিজিডির মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছি। যখন সমুদ্রে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে- আমরা জেলেদের কার্ড দিয়েছি, খাদ্য সহায়তা দিয়ে থাকি, বিকল্প কাজের ব্যবস্থা করে দিয়ে থাকি; যাতে মানুষ কষ্ট না পায়।”
কক্সবাজারের উন্নয়নে সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, “কক্সবাজারে সম্পূর্ণ একটা ক্রীড়া কমপ্লেক্স হবে। এরইমধ্যে ক্রিকেট স্টেডিয়াম করেছি, ফুটবল স্টেডিয়ামও করব। প্রতিটি এলাকায় মিনি স্টেডিয়িাম করেছি, যাতে সবাই খেলাধুলা করতে পারে।
“লবণ চাষীরা যাতে লবণ চাষ করতে পারেন-যাদের এখান থেকে সরানো হয়েছে, তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। লবণ উৎপাদনের জন্য আধুনিক প্রক্রিয়া এব যাতে ন্যায্যমূল্য পায়, সেই ব্যবস্থা করছি।” শেখ হাসিনা বলেন, “একটা কথা মনে রাখতে হবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। মানুষের জন্য আমরা কাজ করি। আর অন্য একটি দল আছে, এরা মানুষের সম্পদ লুটে খায়। খুন-হত্যা-বোমাবাজি-গ্রেনেড হামলা-চোরাকারবারি-অস্ত্র চোরাকারবারি-এইগুলো তারা জানে। মানুষের কল্যাণে তারা কাজ করতে পারে না। সেটাই হচ্ছে বাস্তবতা।”
সম্প্রতি সৌদি আরব সফরে গিয়ে দেশের মানুষের সুন্দর জীবনের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া চেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “আপনাদের জন্য আমার বাবা সারাজীবন কষ্ট করেছেন। আমি তার কন্যা, আমার একটাই দায়িত্ব বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ ঘর পাবে, রোগে চিকিৎসা পাবে, লেখাপড়া শিখবে। বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ হবে, বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে চলবে।
“তার (বঙ্গবন্ধু) পদাঙ্ক অনুসরণ করে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত হয়েছি। সেটা বাস্তবায়ন করতে হবে। এটা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করতে হবে। আওয়ামী লীগ ছাড়া কেউ পারবে না। কারণ তাদের কোনো দেশপ্রেম নাই। মানুষর প্রতিও তাদের কোনো দায়িত্ববোধ নেই।”
বিএনপি-জামায়াতের কর্মকা- তুলে ধরতে গিয়ে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, “কোনো মানুষের ভেতর যদি মনুষ্যত্ববোধ থাকে, তাহলে জীবন্ত মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মারতে পারে না? জীবন্ত মানুষগুলোকে বিএনপি-জামায়াত পুড়িয়ে হত্যা করছে। গাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে। মানুষকে পুড়িয়ে মারা, সম্পদ পুড়িয়ে নষ্ট করা এটাই তাদের কাজ। “আমরা উন্নয়ন করি, সৃষ্টি করি। ওরা ভাঙে, ওরা নস্যাৎ করে। ওরা ধ্বংস করতে জানে, মানুষের কল্যাণ করতে জানে না। কাজেই এদের থেকে জনগণকে সাবধান থাকত হবে।”
চোখ থাকতে যারা অন্ধ, তাদের আর কী বলব: সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- যেসব বিরোধী দলীয় নেতাদের চোখে পড়ে না, তাদের ডাক্তার দেখানোর পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সঙ্গে প্রথমবারের মত রেল সংযোগের উদ্বোধন করে তিনি বলেছেন, “আমি জানি যে আমাদের বিরোধী দল, তারা আমাদের উন্নয়নটা চোখে দেখে না, এগুলো বলার কিছু নাই। চোখ থাকতে যারা অন্ধ হয় তাদের আর কী বলব। “তাদের একটা পরামর্শ দিতে পারি- আমি কিন্তু ঢাকায় খুব আধুনিক আই ইন্সটিটিউট করেছি, চোখ থাকতেও যারা অন্ধ তারা সেই আধুনিক আই ইন্সটিটিউটে যেয়ে চোখটা দেখিয়ে আসতে পারেন। মাত্র ১০ টাকার টিকিট লাগে, বেশি লাগে না। আসলে তাদের চোখের দোষ না, মনের দোষ।”
শনিবার কক্সবাজারের আইকনিক রেলস্টেশন থেকে ১০২ কিলোমিটার দীর্ঘ দোহাজারী-কক্সবাজার সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ রেলপথের উদ্বোধন করেন সরকারপ্রধান। বাঁশি বাজিয়ে ও সবুজ পতাকা নেড়ে নতুন ট্রেনের যাত্রা উদ্বোধন করেন। এর মাধ্যমে ট্রেনযোগে কক্সবাজার যেতে দেশবাসীর দীর্ঘদিনের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, সেটিই বাস্তবে রূপ পেল। কক্সবাজার রেল স্টেশন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় এই রেলযোগাযোগের সুদূরপ্রাসারী তাৎপর্য তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এর মাধ্যমে দেশের পর্যটনের ক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন আসবে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি মনে করি আজকের দিনটা বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটা গর্বের দিন। রেল সংযোগ করতে পেরে সত্যিই আমি খুব আনন্দিত। আমি জানি, দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলের মানুষের একটা দাবি ছিল।
“রেলে কক্সবাজার আসা যাবে এটা অনেকের আকাঙ্ক্ষা ছিল। আজকে আমরা সেটা করেছি, এটা হবে প্রথম মর্যাদার প্রকল্প।” তিনি বলেন, “যমুনা সেতুর উপর দিয়ে সড়কের সঙ্গে যেহেতু রেল করে দিয়েছি, আমরা চাই উত্তরবঙ্গ পঞ্চগড় থেকে কক্সবাজার, কক্সবাজার থেকেও পঞ্চগড় যেন রেলে আসতে পারে। সেই ব্যবস্থাটাও করতে হবে। সুন্দরবন থেকেও যেন কক্সবাজার আসতে পারে সেই ব্যবস্থাও করতে পারব।” শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা এখন অপেক্ষা করে থাকব, পঞ্চগড় থেকে কক্সবাজার, অথবা রাজশাহী থেকে কক্সবাজার আবার দক্ষিণ অঞ্চলের সুন্দরবন থেকে কক্সবাজার, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুরই বাদ যাবে কেন, সমগ্র বাংলাদেশ থেকেই যেন আসা যায়, সেই ব্যবস্থাটা আমরা নেব। কক্সবাজারবাসীকে আমরা বলব আমাদের অঞ্চলেও যাবেন, বেড়াতে যাবেন, ঘুরতে যাবেন। আমি বিশ্বাস করি পর্যটন ক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন আসবে।”
সরকারপ্রধান বলেন, “সেই ছোট বেলা থেকে শুনতাম চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রেললাইন ছিল, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রেললাইন কবে আসবে। আজকে কক্সবাজার পর্যন্ত করা হয়েছে, এটা রামু পর্যন্ত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বা আঞ্চলিক যোগাযোগের মাধ্যমে আসতে চাই, ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সাথে আমরা সংযুক্ত হতে চাই। কাজেই সেটা মাথায় রেখে পরিকল্পনাটা নেওয়া হয়েছে।” রেলপথ ব্যবহারে যতœবান হওয়ার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশ গত পনের বছরে বদলে গেছে। রেল থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট সবকিছুই কিন্তু উন্নয়ন করেছিলাম। রেলকে আমরা গুরুত্ব দিয়েছি, যেন খুব অল্প খরচে সাধারণ মানুষ চলাফেরা করতে পারে। সেভাবে চিন্তা করেই রেলকে গুরুত্ব দিয়েছি।
“আমি অনুরোধ করব, অত্যন্ত আধুনিক রেলস্টেশন করে দিয়েছি, যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে। যেখানে-সেখানে যত্রতত্র ময়লা না ফেলা, রেলস্টেশন যেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে। কোনো জিনিস যেন হাত দিয়ে নষ্ট না করে। নিজেদের আপন সম্পদ মনে করে যতœ নিয়ে ব্যবহার করবেন।” বিরোধীদলের আন্দোলনে যানবাহনে আগুন দেওয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “এই দুর্বৃত্ত, তাদের আসলে চোখ না, তাদের মনই অন্ধকার। কাজেই এদের ব্যাপারে সকলকে সাবধান থাকতে হবে। এরা ধ্বংস জানে, সৃষ্টি করতে পারে না। আমরা সৃষ্টি করি, ওরা ধ্বংস করে। কিন্তু এই ধ্বংস যেন করতে না পারে। মানুষকে পুড়িয়ে মারবে এটা সহ্য করা যায় না।” রেলসম্পদ একসময় অবহেলিত ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশটা আমাদের, দেশটাকে আমরা চিনি, আমরা জানি এর কী উন্নতি করতে হবে। ওই একজন-দুজন বাইরে থেকে এসেই আমাদের উপর খবরদারি আর আমাদেরকে পরামর্শ দেবে, সেটা হয় না। রেলে ওয়াইফাই দিয়ে দেব, রেলে বসে বসে যাতে কাজ করতে পারে। “এই রেল সম্পদ অবহেলিত ছিল, আমরা এসে দেখলাম অনেকগুলো রেললাইন বন্ধ, রেল স্টেশন বন্ধ। কারণ পদ্মাসেতুর অর্থ যখন বন্ধ করে দিয়েছিল, তাদেরই উপদেশ ছিল এই দেশে রেল চলবে না, রেল লাভজনক না। রেলে সাধারণ মানুষ চলে, সস্তায় পণ্য পরিবহন হয়, এই ক্ষেত্রে সবসময় লাভ-লোকসানের হিসাব করা যায় না, মানুষের সেবাটাই বড়।” মানুষের সেবার বিষয়টি বিবেচনা করেই সরকার কাজ করে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা যখনই কোনো কাজ করি আমরা সেটাই বিবেচনা করি, মানুষকে আমরা কতটা সেবা দিতে পারি। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম রেলের আলাদা মন্ত্রণালয় করব, কারণ এটা ছিল সড়ক সেতুর সঙ্গে সংযুক্ত। আলাদা মন্ত্রণালয় করে আলাদা বাজেট দেওয়া শুরু করলাম। সারা বাংলাদেশকে এই নেটওয়ার্কে নিয়ে আসলাম। “পয়ষট্টি সালে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ হয় সেই সময় বাংলাদেশ কিন্তু সম্পূর্ণ অরক্ষিতই ছিল। তার পরেও বাংলাদেশের সাথে রেলের সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তার ফলে আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, কক্সবাজারের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, রেলপথ মন্ত্রণালয় বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব হুমায়ুন কবির, রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল হাসান, দোহাজারী কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণকাজের প্রকল্প পরিচালক মো. সুবক্তগীন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন জিন্টিং।
মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর চ্যানেল উদ্বোধন: কক্সবাজারের মহেশখালীতে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রথম টার্মিনালের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং চ্যানেলের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে দুপুরে কক্সবাজারে আইকনিক রেলস্টেশন ও দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথের উদ্বোধন করে ট্রেনে করে রামুতে আসেন প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের টাউনশিপ মাঠে মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় পৌঁছান তিনি। সেখানে ১৪টি সমাপ্ত প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৪টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রথম টার্মিনালের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও এই সমুদ্রবন্দরের চ্যানেল উদ্বোধন করেন। এদিন প্রধানমন্ত্রী আরো যেসব প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তার মধ্যে আছে- কক্সবাজার বিমান বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বাঁকখালী নদীর উপর সেতু ও অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ, ২১২ একর ভূমি ভরাট, ৪ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার স্লোপ প্রটেকশন বাঁধ নির্মাণ, সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ডিজাইন ও স্থাপনাকরণ প্রকল্প এবং গোরকঘাটা-শাপলাপুর সড়ক প্রশস্তকরণ। পাশাপাশি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে কুতুবদিয়া দ্বীপকে জাতীয় গ্রিডে সংযুক্তকরণ প্রকল্পও উদ্বোধন করেন তিনি। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে কক্সবাজারের রামু উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) নির্মাণ প্রকল্পটিও আছে উদ্বোধনের তালিকায়। এছাড়া কৈয়ারবিল থেকে চৌকিদারপাড়া পর্যন্ত সিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ, বীর মুক্তিযোদ্ধা পৌর বাস টার্মিনাল সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন কাজ এবং জাহানারা ইসলাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ইউনুছখালী নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, রতœা পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় এবং মরিচ্যা পালং উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়। টেকনাফ উপজেলার মাল্টিপারপাস ডিজাস্টার রিসিলেন্ট শেল্টার কাম আইসোলেশন সেন্টার, রামুর জোয়ারিনালা ইউনিয়নের মহসীনা বাজার ভায়া নন্দখালী সড়কে আর্চ ও আরসিসি গার্ডার ব্রিজ এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে কাব স্কাউটিং সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় ভবন নির্মাণ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে জনসভায় ব্ক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, মহেশখালী-কুতুবদিয়ার সংসদ সদস্য আশেকউল্লাহ রফিক ও জনসভার সভাপতি মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার পাশা চৌধুরী। জনসভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই এলাহী চৌধুরী, জ্বলানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, কক্সবাজারের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, চিফ হুইপ নূরে আলম চৌধুরী লিটন প্রমুখ।

 

 

 

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তে নৌকায় ভোট চাইলেন শেখ হাসিনা

আপডেট সময় : ০২:২৫:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ নভেম্বর ২০২৩

প্রত্যাশা ডেস্ক : পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের নগরী কক্সবাজারে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সড়ক ও বিমান পথে এতদিন আসা গেলেও গতকাল শনিবার থেকে যুক্ত হলো নতুন এক পথ। বাংলাদেশের রেলওয়ে নেটওয়ার্কে ৪৮তম জেলা হিসেবে যুক্ত হয়েছে কক্সবাজার। সমুদ্রের শহরে গিয়ে শনিবার চট্টগ্রাম (দোহাজারী)-কক্সবাজার রেলপথের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধন করেন সেখানে স্থাপিত আইকনিক রেল স্টেশনও। দুপুর ১টায় উদ্বোধনের পর আইকনিক রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টার থেকে ১টা ২১ মিনিটে টিকিট কাটেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর সবুজ পতাকা উড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর হুইসেল বাজানোর মাধ্যমে ১টা ২৭ মিনিটে কক্সবাজার থেকে রামুর উদ্দেশে ছেড়ে যায় একটি ট্রেন। রামুতে পৌঁছে সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা।
নৌকায় ভোট চাইলেন শেখ হাসিনা: আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাতেই ১৫ বছরে বাংলাদেশের আমূল পরিবর্তন এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি এ সময়ের অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে নৌকায় ভোট চেয়েছেন তিনি।
গতকাল শনিবার কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে জনসভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, “আগামীতে নির্বাচন, সেই নির্বাচনে আমি আপনাদের কাছে চাইব-নৌকা মার্কায় ভোট দিবেন, যাতে আপনাদের সেবা করতে পারি।
“আর যে কাজগুলো বাকি তার জন্য আপনাদের কাছে নৌকায় ভোট চাই। আপনারা কি নৌকা মার্কায় ভোট দিবেন? হাত তুলে দেখান।”
এদিন বিকালে মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের টাউনশিপ মাঠে মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য দিচ্ছিলেন সরকারপ্রধান। সেখানে ১৪টি সমাপ্ত প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৪টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরে তিনি মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রথম টার্মিনালের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও এই সমুদ্রবন্দরের চ্যানেল উদ্বোধন করেন। এর আগে পর্যটকদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণে দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর তিনি নতুন ট্রেনে চেপে রামুতে যান। সেখান থেকে মাতারবাড়ী আসেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি জনসভাস্থলে পৌঁছালে মুহুর্মুহু স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। তিনি জনসভা মঞ্চে উঠে হাত নেড়ে নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দনের জবাব দেন।
জনসভায় শেখ হাসিনা বলেন, “১৫ বছর আগের বাংলাদেশ আর এখন যে বাংলাদেশ-আমরা পরিবর্তন করেছি; আজকে যার বয়স ১৫ বছর সে মনে করবে, এটা তো এমনই ছিল, কিন্তু তা না। “এমনকি ২০-২৫ বছরের যে সন্তান, সে চিন্তা করে দেখুক-বাংলাদেশ এখন কোন জায়গায় আছে? কারণটা হলো আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই হয়েছে।”
বঙ্গবন্ধু যে ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত উন্নত বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছিলেন, তা গড়তে যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত রয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বাবা-মা সব হারিয়েছি। হারাবার কিছু নাই, পাওয়ারও কিছু নাই। একটাই কাজ- বাংলাদেশের মানুষ যাতে ভালো থাকে, উন্নত থাকে।
“যেভাবে আমার বাবা ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই বাংলাদেশ আমি গড়তে চাই। বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই।”
কেবল মানুষের কল্যাণ করাই তার কাজ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশের মানুষকে আমি পরিবার হিসেবে নিয়েছি। আপনাদের মাঝেই ফিরে পেয়েছি বাবার স্নেহ, মায়ের স্নেহ, ভাইয়ের স্নেহ।
“আপনাদের কল্যাণের জন্য, আপনাদের উন্নয়নের জন্য আমি যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। প্রয়োজনে বাবার মতো বুকের রক্ত দিতেও আমি প্রস্তুত। শুধু আপনাদের কল্যাণ করাই আমার একমাত্র কাজ। আপনাদের কাছে দোয়া চাই।”
একপর্যায়ে জনসভায় উপস্থিত লোকজন নৌকার পক্ষে সমর্থনের কথা জানিয়ে ‘নৌকা, নৌকা’ স্লোগানে পুরো এলাকা মুখরিত করে তোলেন। সেসময় কিছুক্ষণের জন্য বক্তব্য বন্ধ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও তাদের উল্লাস, ভালোবাসা আর সমর্থন প্রত্যক্ষ করেন। পরে তিনি বলেন, “আপনারা বিভিন্ন এলাকা থেকে কষ্ট করে এসেছেন আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আপনাদের সঙ্গে অনেকদিন পর দেখা হলো, আমি খুব আনন্দিত।”
তিন দশক আগে ঘূর্ণিঝড় দুর্গত মাতারবাড়ীর বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়ানোর স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, “কক্সবাজারে যা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর সময়ে। ’৯১ সালে ঘূর্ণিঝড় হয়, তাতে পুরো এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জলোচ্ছ্বাসে কতো মানুষ জীবন হারায়, কতো জীবন নষ্ট হয়। তখন ক্ষমতায় খালেদা জিয়া, তিনি কিন্তু আসেননি।
“এসেছিলাম আমি আর আমার নেতাকর্মীরা। আমরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেই। সেই দিন কেউ আপনাদের পাশে দাঁড়ায়নি। এ কথা চিন্তা করে এই এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কাজ হাতে নিয়েছি। এসেছি আপনাদের কিছু উপহার দিতে।”
কয়েক ঘণ্টা আগে কক্সবাজার-দোহাজারী রেলপথ উদ্বোধন করার প্রসঙ্গ টেনে সরকারপ্রধান বলেন, “একানব্বইয়ের ঘূর্ণিঝড়ে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল কক্সবাজারে, তারা বস্তি করে থাকতো- তাদের জন্য খুরুশকুলে সকলের জন্য বহুতল ভবন করে ফ্ল্যাট করে দিচ্ছি। কেউ ভূমিহীন থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না।”
দ্বীপ এলাকায় সরকার এখন সাবমেরিনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সেবা পৌঁছে দিচ্ছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বিশেষ করে দ্বীপ অঞ্চলগুলো অনেকেই ভেবেছিল এখানে কিছুই হবে না। এখন আলোকিত মহেশখালী, আলোকিত কুতুবদিয়া, আলোকিত মাতারবাড়ি।”
সাক্ষরতার হার বাড়াতে আওয়ামী লীগ সরকারের বিনা বেতনে শিক্ষা ও বৃত্তি দেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বিভিন্ন ধরনের ভাতা দেওয়া হচ্ছে, যাতে মানুষ ভালো থাকে। কৃষক যাতে সহজে চাষাবাদ করতে পারে, সেজন্য সারে ব্যাপক ভর্তুকি, বীজ কেনা সহজীকরণ করেছে সরকার।”
রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সেটাও আমরা নিয়ন্ত্রণের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ইনশাল্লাহ সেটাও খুব শিগগিরই হ্রাস পাবে। মানুষ আরও ভালোভাবে চলতে পারবে। এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখবেন না, যে যা পারেন চাষ করবেন। আমাদের দেশকে আমরাই এগিয়ে নিয়ে যাব।
“আজকে দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেছে, আমরা উপকারভোগী কার্ড দিচ্ছি। ভিজিএফ-ভিজিডির মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছি। যখন সমুদ্রে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে- আমরা জেলেদের কার্ড দিয়েছি, খাদ্য সহায়তা দিয়ে থাকি, বিকল্প কাজের ব্যবস্থা করে দিয়ে থাকি; যাতে মানুষ কষ্ট না পায়।”
কক্সবাজারের উন্নয়নে সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, “কক্সবাজারে সম্পূর্ণ একটা ক্রীড়া কমপ্লেক্স হবে। এরইমধ্যে ক্রিকেট স্টেডিয়াম করেছি, ফুটবল স্টেডিয়ামও করব। প্রতিটি এলাকায় মিনি স্টেডিয়িাম করেছি, যাতে সবাই খেলাধুলা করতে পারে।
“লবণ চাষীরা যাতে লবণ চাষ করতে পারেন-যাদের এখান থেকে সরানো হয়েছে, তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। লবণ উৎপাদনের জন্য আধুনিক প্রক্রিয়া এব যাতে ন্যায্যমূল্য পায়, সেই ব্যবস্থা করছি।” শেখ হাসিনা বলেন, “একটা কথা মনে রাখতে হবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। মানুষের জন্য আমরা কাজ করি। আর অন্য একটি দল আছে, এরা মানুষের সম্পদ লুটে খায়। খুন-হত্যা-বোমাবাজি-গ্রেনেড হামলা-চোরাকারবারি-অস্ত্র চোরাকারবারি-এইগুলো তারা জানে। মানুষের কল্যাণে তারা কাজ করতে পারে না। সেটাই হচ্ছে বাস্তবতা।”
সম্প্রতি সৌদি আরব সফরে গিয়ে দেশের মানুষের সুন্দর জীবনের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া চেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “আপনাদের জন্য আমার বাবা সারাজীবন কষ্ট করেছেন। আমি তার কন্যা, আমার একটাই দায়িত্ব বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ ঘর পাবে, রোগে চিকিৎসা পাবে, লেখাপড়া শিখবে। বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ হবে, বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে চলবে।
“তার (বঙ্গবন্ধু) পদাঙ্ক অনুসরণ করে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত হয়েছি। সেটা বাস্তবায়ন করতে হবে। এটা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করতে হবে। আওয়ামী লীগ ছাড়া কেউ পারবে না। কারণ তাদের কোনো দেশপ্রেম নাই। মানুষর প্রতিও তাদের কোনো দায়িত্ববোধ নেই।”
বিএনপি-জামায়াতের কর্মকা- তুলে ধরতে গিয়ে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, “কোনো মানুষের ভেতর যদি মনুষ্যত্ববোধ থাকে, তাহলে জীবন্ত মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মারতে পারে না? জীবন্ত মানুষগুলোকে বিএনপি-জামায়াত পুড়িয়ে হত্যা করছে। গাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে। মানুষকে পুড়িয়ে মারা, সম্পদ পুড়িয়ে নষ্ট করা এটাই তাদের কাজ। “আমরা উন্নয়ন করি, সৃষ্টি করি। ওরা ভাঙে, ওরা নস্যাৎ করে। ওরা ধ্বংস করতে জানে, মানুষের কল্যাণ করতে জানে না। কাজেই এদের থেকে জনগণকে সাবধান থাকত হবে।”
চোখ থাকতে যারা অন্ধ, তাদের আর কী বলব: সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- যেসব বিরোধী দলীয় নেতাদের চোখে পড়ে না, তাদের ডাক্তার দেখানোর পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সঙ্গে প্রথমবারের মত রেল সংযোগের উদ্বোধন করে তিনি বলেছেন, “আমি জানি যে আমাদের বিরোধী দল, তারা আমাদের উন্নয়নটা চোখে দেখে না, এগুলো বলার কিছু নাই। চোখ থাকতে যারা অন্ধ হয় তাদের আর কী বলব। “তাদের একটা পরামর্শ দিতে পারি- আমি কিন্তু ঢাকায় খুব আধুনিক আই ইন্সটিটিউট করেছি, চোখ থাকতেও যারা অন্ধ তারা সেই আধুনিক আই ইন্সটিটিউটে যেয়ে চোখটা দেখিয়ে আসতে পারেন। মাত্র ১০ টাকার টিকিট লাগে, বেশি লাগে না। আসলে তাদের চোখের দোষ না, মনের দোষ।”
শনিবার কক্সবাজারের আইকনিক রেলস্টেশন থেকে ১০২ কিলোমিটার দীর্ঘ দোহাজারী-কক্সবাজার সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ রেলপথের উদ্বোধন করেন সরকারপ্রধান। বাঁশি বাজিয়ে ও সবুজ পতাকা নেড়ে নতুন ট্রেনের যাত্রা উদ্বোধন করেন। এর মাধ্যমে ট্রেনযোগে কক্সবাজার যেতে দেশবাসীর দীর্ঘদিনের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, সেটিই বাস্তবে রূপ পেল। কক্সবাজার রেল স্টেশন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় এই রেলযোগাযোগের সুদূরপ্রাসারী তাৎপর্য তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এর মাধ্যমে দেশের পর্যটনের ক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন আসবে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি মনে করি আজকের দিনটা বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটা গর্বের দিন। রেল সংযোগ করতে পেরে সত্যিই আমি খুব আনন্দিত। আমি জানি, দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলের মানুষের একটা দাবি ছিল।
“রেলে কক্সবাজার আসা যাবে এটা অনেকের আকাঙ্ক্ষা ছিল। আজকে আমরা সেটা করেছি, এটা হবে প্রথম মর্যাদার প্রকল্প।” তিনি বলেন, “যমুনা সেতুর উপর দিয়ে সড়কের সঙ্গে যেহেতু রেল করে দিয়েছি, আমরা চাই উত্তরবঙ্গ পঞ্চগড় থেকে কক্সবাজার, কক্সবাজার থেকেও পঞ্চগড় যেন রেলে আসতে পারে। সেই ব্যবস্থাটাও করতে হবে। সুন্দরবন থেকেও যেন কক্সবাজার আসতে পারে সেই ব্যবস্থাও করতে পারব।” শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা এখন অপেক্ষা করে থাকব, পঞ্চগড় থেকে কক্সবাজার, অথবা রাজশাহী থেকে কক্সবাজার আবার দক্ষিণ অঞ্চলের সুন্দরবন থেকে কক্সবাজার, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুরই বাদ যাবে কেন, সমগ্র বাংলাদেশ থেকেই যেন আসা যায়, সেই ব্যবস্থাটা আমরা নেব। কক্সবাজারবাসীকে আমরা বলব আমাদের অঞ্চলেও যাবেন, বেড়াতে যাবেন, ঘুরতে যাবেন। আমি বিশ্বাস করি পর্যটন ক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন আসবে।”
সরকারপ্রধান বলেন, “সেই ছোট বেলা থেকে শুনতাম চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রেললাইন ছিল, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রেললাইন কবে আসবে। আজকে কক্সবাজার পর্যন্ত করা হয়েছে, এটা রামু পর্যন্ত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বা আঞ্চলিক যোগাযোগের মাধ্যমে আসতে চাই, ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সাথে আমরা সংযুক্ত হতে চাই। কাজেই সেটা মাথায় রেখে পরিকল্পনাটা নেওয়া হয়েছে।” রেলপথ ব্যবহারে যতœবান হওয়ার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশ গত পনের বছরে বদলে গেছে। রেল থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট সবকিছুই কিন্তু উন্নয়ন করেছিলাম। রেলকে আমরা গুরুত্ব দিয়েছি, যেন খুব অল্প খরচে সাধারণ মানুষ চলাফেরা করতে পারে। সেভাবে চিন্তা করেই রেলকে গুরুত্ব দিয়েছি।
“আমি অনুরোধ করব, অত্যন্ত আধুনিক রেলস্টেশন করে দিয়েছি, যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে। যেখানে-সেখানে যত্রতত্র ময়লা না ফেলা, রেলস্টেশন যেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে। কোনো জিনিস যেন হাত দিয়ে নষ্ট না করে। নিজেদের আপন সম্পদ মনে করে যতœ নিয়ে ব্যবহার করবেন।” বিরোধীদলের আন্দোলনে যানবাহনে আগুন দেওয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “এই দুর্বৃত্ত, তাদের আসলে চোখ না, তাদের মনই অন্ধকার। কাজেই এদের ব্যাপারে সকলকে সাবধান থাকতে হবে। এরা ধ্বংস জানে, সৃষ্টি করতে পারে না। আমরা সৃষ্টি করি, ওরা ধ্বংস করে। কিন্তু এই ধ্বংস যেন করতে না পারে। মানুষকে পুড়িয়ে মারবে এটা সহ্য করা যায় না।” রেলসম্পদ একসময় অবহেলিত ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশটা আমাদের, দেশটাকে আমরা চিনি, আমরা জানি এর কী উন্নতি করতে হবে। ওই একজন-দুজন বাইরে থেকে এসেই আমাদের উপর খবরদারি আর আমাদেরকে পরামর্শ দেবে, সেটা হয় না। রেলে ওয়াইফাই দিয়ে দেব, রেলে বসে বসে যাতে কাজ করতে পারে। “এই রেল সম্পদ অবহেলিত ছিল, আমরা এসে দেখলাম অনেকগুলো রেললাইন বন্ধ, রেল স্টেশন বন্ধ। কারণ পদ্মাসেতুর অর্থ যখন বন্ধ করে দিয়েছিল, তাদেরই উপদেশ ছিল এই দেশে রেল চলবে না, রেল লাভজনক না। রেলে সাধারণ মানুষ চলে, সস্তায় পণ্য পরিবহন হয়, এই ক্ষেত্রে সবসময় লাভ-লোকসানের হিসাব করা যায় না, মানুষের সেবাটাই বড়।” মানুষের সেবার বিষয়টি বিবেচনা করেই সরকার কাজ করে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা যখনই কোনো কাজ করি আমরা সেটাই বিবেচনা করি, মানুষকে আমরা কতটা সেবা দিতে পারি। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম রেলের আলাদা মন্ত্রণালয় করব, কারণ এটা ছিল সড়ক সেতুর সঙ্গে সংযুক্ত। আলাদা মন্ত্রণালয় করে আলাদা বাজেট দেওয়া শুরু করলাম। সারা বাংলাদেশকে এই নেটওয়ার্কে নিয়ে আসলাম। “পয়ষট্টি সালে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ হয় সেই সময় বাংলাদেশ কিন্তু সম্পূর্ণ অরক্ষিতই ছিল। তার পরেও বাংলাদেশের সাথে রেলের সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তার ফলে আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, কক্সবাজারের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, রেলপথ মন্ত্রণালয় বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব হুমায়ুন কবির, রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল হাসান, দোহাজারী কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণকাজের প্রকল্প পরিচালক মো. সুবক্তগীন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন জিন্টিং।
মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর চ্যানেল উদ্বোধন: কক্সবাজারের মহেশখালীতে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রথম টার্মিনালের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং চ্যানেলের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে দুপুরে কক্সবাজারে আইকনিক রেলস্টেশন ও দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথের উদ্বোধন করে ট্রেনে করে রামুতে আসেন প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের টাউনশিপ মাঠে মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় পৌঁছান তিনি। সেখানে ১৪টি সমাপ্ত প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৪টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রথম টার্মিনালের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও এই সমুদ্রবন্দরের চ্যানেল উদ্বোধন করেন। এদিন প্রধানমন্ত্রী আরো যেসব প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তার মধ্যে আছে- কক্সবাজার বিমান বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বাঁকখালী নদীর উপর সেতু ও অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ, ২১২ একর ভূমি ভরাট, ৪ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার স্লোপ প্রটেকশন বাঁধ নির্মাণ, সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ডিজাইন ও স্থাপনাকরণ প্রকল্প এবং গোরকঘাটা-শাপলাপুর সড়ক প্রশস্তকরণ। পাশাপাশি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে কুতুবদিয়া দ্বীপকে জাতীয় গ্রিডে সংযুক্তকরণ প্রকল্পও উদ্বোধন করেন তিনি। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে কক্সবাজারের রামু উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) নির্মাণ প্রকল্পটিও আছে উদ্বোধনের তালিকায়। এছাড়া কৈয়ারবিল থেকে চৌকিদারপাড়া পর্যন্ত সিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ, বীর মুক্তিযোদ্ধা পৌর বাস টার্মিনাল সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন কাজ এবং জাহানারা ইসলাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ইউনুছখালী নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, রতœা পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় এবং মরিচ্যা পালং উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়। টেকনাফ উপজেলার মাল্টিপারপাস ডিজাস্টার রিসিলেন্ট শেল্টার কাম আইসোলেশন সেন্টার, রামুর জোয়ারিনালা ইউনিয়নের মহসীনা বাজার ভায়া নন্দখালী সড়কে আর্চ ও আরসিসি গার্ডার ব্রিজ এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে কাব স্কাউটিং সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় ভবন নির্মাণ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে জনসভায় ব্ক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, মহেশখালী-কুতুবদিয়ার সংসদ সদস্য আশেকউল্লাহ রফিক ও জনসভার সভাপতি মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার পাশা চৌধুরী। জনসভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই এলাহী চৌধুরী, জ্বলানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, কক্সবাজারের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, চিফ হুইপ নূরে আলম চৌধুরী লিটন প্রমুখ।