প্যাডেল
আশ্বিনের দুপুরের সূর্য মাঝে মধ্যে বেশ তাপ ছড়ায়। গায়ে লাগে। আবার মাখতেও ইচ্ছে করে। এ রকম এক দুপুরে কাজ শেষে হেঁটে বাড়ি ফিরছি। কর্মস্থল থেকে বাড়ির দূরত্ব মিনিট বিশেক হাঁটা পথ। আমি হাঁটছি। বাজারের ভেতর এসে একটু থামি। একটা পান কিনি।
পেছন থেকে হঠাৎ আমার নাম ধরে কেউ ডাকে। পেছনে তাকিয়ে দেখি ফরিদ রিকশার সিটে বসে ডাকছে। আমার বন্ধু। একসাথেই স্কুলে পড়েছি। এখন যে যার পথে। অনেক দিন দেখা নেই।
আমি ওর দিকে হেঁটে যাই। হাত বাড়িয়ে দিই। ফরিদ ইতস্তত করে। বুঝি এটা সময়ের দূরত্ব। দীর্ঘদিন ঢাকায় রিকশা চালিয়েছে। সেখানে সুবিধা না হওয়ায় এখন গ্রামেই আছে।
আমি জিজ্ঞেস করি, ‘কেমন আছিস?’
ফরিদ মাথা নিচু করে। অস্ফূট স্বরে বলে, ‘রিকশা চালিয়ে এই যুগে আর কত ভালো থাকা যায়? তোরা তো আছিস ভালোই।’ আমি আর কী বলি! সত্যিই তো। ওর থেকে ভালো হয়তো আছি।
ফরিদকে বলি, ‘তুই তো প্রতিদিন রিকশার প্যাডেল ঘোরাস আর আমি জীবনের প্যাডেল! এই জীবনটাই মূলত একটা প্যাডেল। প্রতিনিয়ত ঘোরাতে হয়। থেমে যাবার জো নেই। ভালো থাকিস।’
আমি হাঁটতে থাকি।
লাভের অঙ্ক
মাঝরাতে আলতাব হোসেনের ঘুম ভেঙে যায় স্ত্রী ফাতেমা বেগমের ডাকে।
আলতাব হোসেনের ওষুধের দোকান বন্ধ হয় রাত বারোটার দিকে। সেসব শেষ করে সবেমাত্র ঘুমিয়েছেন। এই সময় স্ত্রীর ডাকাডাকিতে ধরফর করে উঠে বসলেন- ‘কী হয়েছে?’
ফাতেমা উত্তেজিতভাবে জানালো, ‘তুহিন কাঁদছে’ (তুহিন আলতাবের একমাত্র ছেলে)।
– ‘তুহিন কাঁদছে? কেন?’
‘পেটে ব্যথা।’
– ‘বলো কী! ওধুধ-টষুধ কিছু দিয়েছ?’
‘না। ঘরে তো ওষুধ নেই। তুমি দোকানে যাও। ট্যাবলেট আনো। তাড়াতাড়ি যাও।’
আলতাবও দ্রুত জামা পরে নেয়। গ্যাস্ট্রিক আর ব্যথার ওষুধ আনতে হবে।
ঘর থেকে বেরোতেই তার মনে পড়ে অন্য কথা। সে কথা শুধু আলতাব জানে। দোকানে যেসব ওষুধ আছে; সেসব তো দুই নাম্বার। মানে ভেজাল ওষুধ।
আজকেই নতুন চালান এসেছে। এই কারবার করেই তো লাভ আর লাভ! ছেলেটার আর পেট ব্যথা হওয়ার সময় পায় না! কিন্তু এত রাতে ওষুধ পায় কোথায়? চোখে অন্ধকার দেখতে থাকে আলতাব। অন্ধকার রাস্তা ভেদ করে এগিয়ে যায়।
আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ


























