অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : চলমান মহামারি কোভিড-১৯ এর মধ্যেও দেশে রাজস্ব আদায়ে অনেকটাই সফল হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ দশমিক ২২ শতাংশ। গত অর্থবছরে একই সময়ে এই হার ছিল মাত্র ৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এ অবস্থায় রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ অর্জন করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ও এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে প্রথম ছয় মাসের জন্য রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ৪৩ হাজার ২৯০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে এক লাখ ২৬ হাজার ২০৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের হার ৮৮ ভাগ। এ সময়ে কাস্টমসের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছে ৮৫ ভাগ, ভ্যাট বা মূসকে ৮৮ দশমিক ৭৭ ভাগ এবং আয়কর খাতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ৯০ দশমিক ৬০ ভাগ। সূত্র জানায়, চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত রয়েছে তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে রাজস্ব আদায়ের বিষয়ে এনবিআর-এর একটি সূত্র জানায়, ছয় মাসে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে কাস্টমস খাতে। এ খাতে প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ।
এরপরই রয়েছে আয়কর খাত। প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ। কাস্টমস খাতে প্রবৃদ্ধি হওয়ার মূল কারণ অর্থবছরের ছয় মাসে দেশে বিপুল পরিমাণ পণ্য আমদানি হয়েছে। এ খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৫৪ শতাংশ। ফলে আমদানি খাত থেকে আমরা প্রচুর শুল্ক পেয়েছি। আশা করি অর্থবছরে বাকি ছয় মাসেও এ খাত থেকে ভালো রাজস্ব আদায় হবে। ফলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও এবার বছর শেষে মোট রাজস্ব আদায় তিন লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এ দিকে এনবিআরসহ বাজেটে রাজস্ব আদায়ের যে টার্গেট দেওয়া হয় এই লক্ষ্যমাত্রা কোনো বছরই আদায় করা সম্ভব হয় না। এমনকি রাজস্ব আদায়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রাও আদায় করা যায় না। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট নির্ধারণ করা হয়, তিন লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। পরে তা সংশোধন করে তিন লাখ ৪৮ হাজার ৬৯ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। কিন্তু বছর শেষে সেটাও আদায় করা সম্ভব হয়নি। সে বছর রাজস্ব আদায় হয়েছিল মাত্র দুই লাখ ৬৫ হাজার ৯০৯ কোটি টাকা। একইভাবে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট তিন লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা ধরা হলেও পরে তা সংশোধন করে তিন লাখ ৫১ হাজার ৫৩২ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। অর্থবছর শেষে সেটিও আদায় করা সম্ভব হয়নি।
এর আগে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের বাজেটে এনবিআর কর্তৃক রাজস্ব আদায়ের টার্গেট দেওয়া ছিল দুই লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা। কিন্তু বছরের মাঝামাঝি সময় এসে দেখা যায় কোনোভাবেই এই টার্গেট অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবে না। ফলে টার্গেট থেকে ১৬ হাজার ২১০ কোটি টাকা কাটছাট করে সংশোধিত আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় দুই লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ধারে-কাছেও যাওয়া সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি অর্থবিভাগের এক প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে এনবিআর খাতে রাজস্ব আদায়ের প্রকৃত পরিসংখ্যান হচ্ছে দুই লাখ ২৫ হাজার ৯১৯ কোটি টাকা, যা সংশোধিত রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫৪ হাজার ৮১ কোটি টাকা কম। এবং মূল লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭০ হাজার ২৮২ কোটি টাকা কম। এর আগের ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের বাজেটে এনবিআর অংশে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল দুই লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। পরে তা সংশোধন করে দুই লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। কিন্তু সে বছরও এনবিআর সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রকৃত রাজস্ব আদায় করেছে এক লাখ ৯৬ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা, যা সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৮ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা কম।
অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ১৪.২২ শতাংশ
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ