বিশেষ সংবাদদাতা : বাংলাদেশকে দেওয়া ঋণের শর্ত অনুযায়ী আর্থিক খাতের সংস্কারের প্রস্তাবনাগুলো প্রকাশ্যে এনেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ। এসব প্রস্তাবনায় সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়, জ্বালানি বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি র্নিধারনি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। সংস্কারের ক্ষেত্রে আর্থিক খাতের ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলোতে অগ্রাধিকার দিতে ব্যাংকিং খাতের সুশাসন জোরদার করতে নীতিমালার প্রয়োগ ও তদারকি শক্তিশালী করতে বলেছে সংস্থাটি। রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের জন্য বিশেষ কৌশল প্রণয়ণ, রাজস্ব ছাড়ের প্রতিবেদন তৈরি, অর্থায়নের উৎস হিসেবে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বাজেট ঘাটতি কমিয়ে আনতে সরকারি অর্থ ব্যয় ও বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি সংস্থাটি মুদ্রানীতি সংস্কার ও বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় আরো জোর দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাইরের ও অভ্যন্তরীণ নীতি দুর্বলতার নানা কারণে অর্থনীতিতে যে চাপ তৈরি হয়েছে, সংস্কারগুলো বাস্তবায়িত হলে চাপ সামলানোর সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে বাংলাদেশের। গত ১২ ডিসেম্বর ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি অনুমোদনের দুই দিন পরে বাংলাদেশে আসা রিভিউ মিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রদিবেদন প্রকাশ করেছে আইএমএফ। সেখানে ঋণের আওতায় বাংলাদেশকে দেয়া সংস্কারের শর্তগুলো ও বাস্তবায়নের সময় বেঁধে দেয়ার তথ্য রয়েছে। ঋণের বিপরীতে দেয়া সংস্কারের এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে বাংলাদশকে সময় দেয়া হয়েছে ২০২৬ সাল পর্যন্ত।
প্রথমবার সংস্কারের ধাপ
ঋণের প্রথম কিস্তি ছাড়ের অগ্রগতি দেখতে করা রিভিউ শেষে কয়েকটি ছাড়া সার্বিকভাবে সব শর্ত বাংলাদেশ পূরণ করতে পেরেছে বলে জানিয়েছে আইএমএফ। এক খাতে তিনটি শর্তের মধ্যে দুটি ও আরেক খাতে চারটির মধ্যে তিনটি শর্ত পূরণ করে বাংলাদেশ। ইসিএফ ও ইএফএফের আওতায় দেয়া ঋণের বিপরীতে আর্থিক খাতের কাঠামোগত সাতটি বিষয়ে সংস্কারের শর্তের মধ্যে ছয়টি পূরণ করতে পেরেছে বাংলাদেশ।
সংস্কারের আলোচনার দিকগুলো
রিভিউ মিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, আর্টিকেল-৪ এর আলোচনার বিষয় ছিল সামাজিক ও উন্নয়নমূলক খাতে খরচ বাড়াতে রাজস্বনীতিতে বহুমুখী সংস্কার। দ্বিতীয়ত, সামষ্টিক অর্থনীতি ও আর্থিক খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে মুদ্রানীতি, রাজস্ব ও আর্থিক খাতের কাঠামোর আধুনিকায়ন। তৃতীয়ত, প্রবৃদ্ধির জন্য কাঠামোগত সংস্কার ও চতুর্থত, জলবায়ু সংক্রান্ত নীতিতেও সংস্কার আনা।
মূল্যস্ফীতির হার কমিয়ে আনতে আটোঁসাট মুদ্রানীতি অব্যাহত রাখার পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ।
স্বল্প মেয়াদী সংস্কারের সুপারিশে বলা হয়, উচ্চ মূল্যস্ফীতির হার কমিয়ে আনতে আটোঁসাট মুদ্রানীতি অব্যাহত রাখতে হবে। নিরপেক্ষ রাজস্বনীতি ও বিনিময় হারে নমনিয়তা আনতে হবে।
রাজস্বনীতির সংস্কারের বিষয়ে বলা হয়, রাজস্ব আয় বাড়ানো ও কর ছাড়- যা রাজস্ব খরচ নামে পরিচিত তা যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসা। অর্থাৎ প্রতিবছর কর্পোরেট ও ব্যক্তি পর্যায়ে যে পরিমাণ কর ছাড় দিচ্ছে বাংলাদেশ তা প্রয়োজন অনুযায়ী বর্তমানের চেয়ে সীমিত করা।
সংস্কার শর্ত ও যেসব উদ্যোগ নেয়া হয়
কর আওতা বাড়াতে কর হার যৌক্তিককরণ, রিটার্ন জমা দেয়ার প্রক্রিয়া সহজ করতে অনলাইন পদ্ধতি চালু, সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান বাড়ানো, কর আইন সংস্কার, ভ্যাট ও কাস্টম বিভাগ ডিজিটাইজেশন করার মতো কাজগুলে সম্পন্ন করা হয় বলে জানিয়েছে আইএমএফ।
এনবিআরে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি ‘কমপ্লায়েন্স রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইউনিট (সিএমআরইউ)’ চালু করার কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। ইতোমধ্যে কাস্টমস বিভাগে সিএমআরইউ চালু হয়েছে। ভ্যাট ও আয়কর বিভাগে চলুর পরিকল্পনা নিয়েছে এনবিআর।
এনবিআরের পর্যবেক্ষণ ও তথ্য আদান প্রদান করার ক্ষমতা বৃদ্ধি, ‘স্বল্প মেয়াদী রাজস্ব আদায় কৌশল (মিডিয়াম টার্ম রেভিনিউ স্ট্র্যাটেজি)’ প্রণয়ন করতে বলেছে আন্তজাতিক সংস্থাটি।
বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হওয়ার পরও নীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন করেছে জানিয়ে আইএমএফ বলেছে, ২০২১-৪১ সালের পরিকল্পনায় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলা ও খাপখাইয়ে নেয়ার মতো বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এনবিআরকে ‘স্বল্প মেয়াদী রাজস্ব আদায় কৌশল’ প্রণয়ন করতে বলেছে আন্তজাতিক সংস্থাটি।
অর্থ পাচার রোধে আন্তর্জাতিক চর্চা অনুসরণের পরামর্শও দেয়া হয়েছে।
ব্যাংকিং খাত
ব্যাংক কোম্পানি আইন-২০২৩ ও ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন-২০২৩ সংশোধন করা হয়েছে জানিয়ে আইএমএফ বলেছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমানত সংরক্ষণ আইন সংশোধনের জন্য সংসদে উত্থাপন, ২০২৬ সালের মধ্যে মূলধন ঘাটতি পূরণ ও খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে চুক্তি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়িয়ে আর্থিক প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে আইএফআরএস অনুসরণ ও আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে মেনে ‘আনুষ্ঠানিক রিজার্ভ তথ্য প্রকাশ’ করতে হবে।
স্বল্প মেয়াদী কৌশলের অংশ হিসেবে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণের হার চলতি ডিসেম্বরের মধ্যে এক চতুর্থাংশে নামিয়ে আনার পরামর্শ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে সরকারকে।
অর্থনীতি ও আর্থিক খাতে নীতি র্নিধারণী সংস্কারেও ভালো অগ্রগতি হওয়ার কথা জানিয়েছে আইএমএফ। যার মধ্যে রয়েছে সবার জন্য বিনিময় হার এক দরে নিয়ে আসা, নীতি সুদহার অপারেশনভিত্তিক করা, জলবায়ু বিষয়ে ক্লাইমেট স্ট্রেস টেস্ট ফ্রেমওয়ার্ক প্রণয়ন ও সামষ্টিক অর্থনীতির পরিসংখ্যান উন্নত করতে দেয়া সুপারিশ বাস্তবায়ন।
ব্যাংকিং খাতে উচ্চ খেলাপির বিষয়ে বলা হয়, সার্বিকভাবে খেলাপির হার ১০ শতাংশের ঘরে থাকলেও রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকে তা ২৫ শতাংশ। এছাড়াও রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকে মূলধন ঘাটতিও রয়েছে।
খেলাপির হার কমিয়ে আনার কৌশল প্রণয়ন, পুনঃতফসিলের পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশ, প্রভিশন ও ঋণ শ্রেণিকরণের নীতিমালা আরো শক্তিশালী করা, রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের খেলাপি কমানো ও মূলধন ঘাটতি পুনরুদ্ধার করতে যৌথ উদ্যোগের কৌশল নির্ধারণ করতে বলেছে আইএমএফ।
এছাড়াও ব্যাংকরাপটসি (সংশোধন) আইন ২০২০, অর্থঋণ আদালত (সংশোধন) আইন ২০০৩ ও নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট (সংশোধন) আইন ২০২০ সংশোধন করতে সংসদে পাঠোনোর শর্ত দেয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী, রিজার্ভ থেকে সকল প্রকার দায় বাদ দিয়ে নীট হিসাব করার পদ্ধতি অনুসরণ করতে বলেছে আইএমএফ।
শর্তের পর্যালোচনায় আইএমএফ জানিয়েছে, গত জুন পর্যন্ত দেয়া আন্তর্জাতিক লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি বাংলাদেশ। গত জুন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্য ছিল ২৩ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার। এই সময়ে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৫৬ বিলিয়নে ডলার। গত সেপ্টেম্বর শেষেও লক্ষ্য পূরণ করা যায়নি।
আইএমএফের হিসাবে, গত অক্টোবর শেষে নীট আন্তর্জাতিক রিজার্ভ (এনআইআর) ছিল ১৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার, এ সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঠিক করা বিপিএম৬ পদ্ধতিতে গ্রস আন্তর্জাতিক রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার।
সে হিসাবে, বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রস ও আইএমএফের নীট হিসাবের মধ্যে রিজার্ভের ব্যবধান ছিল ৪ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার।
আগের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় চলতি ডিসেম্বর শেষে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে নীট রিজার্ভের পরিমাণ ১৭ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করে দিয়েছে আইএমএফ, আগে যা ছিল ২৬ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার।
দ্বিতীয় কিস্তির শর্তে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের মার্চে নীট রিজার্ভ ১৯ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ও জুন শেষে তা ২০ দশমিক এক বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে হবে,যা দিয়ে প্রায় তিন মাসের (২.৮ মাস) আমদানি দায় মেটানোর সক্ষমতায় যেতে পারবে বাংলাদেশ।
ঋণ সহায়তা অব্যাহত থাকলে আগামী জুন শেষে আরএসএফ ফান্ডসহ বাংলাদেশের গ্রস আন্তর্জাতিক রিজার্ভ হবে ২৪ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার। এই পরিমাণ রিজার্ভ প্রায় সাড়ে তিন মাসের (৩.৪ মাস) আমদানি দায় মেটানোর সক্ষমতা প্রকাশ করে। আরএসএফ তহবিল বাদ দিলে রিজার্ভ কত হবে সেই ঘর ফাঁকা রেখেছে আইএমএফ।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত জুলাই থেকে গ্রস আন্তর্জাতিক রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করছে বিপিএম৬ পদ্ধতি মেনে।
আইএমএফ বলেছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অব্যাহত রাখতে হবে। এছাড়াও বিনিময় হার পুরোদমে বাজারমুখী না হওয়া পর্যন্ত আপাতত ‘ক্রাউলিং ব্যবস্থাপনা’ মডেলে যেতে হবে। এ পদ্ধতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে দর ঠিক করে দিবে ওই দরের সঙ্গে সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ একটি সীমায় ডলারের দর নির্ধারণ করে লেনদেন করবে ব্যাংকগুলো।
জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে দেয়া নতুন শর্তে বলা হয়েছে, প্রতি প্রান্তিক অন্তর জ্বালানি তেলের মূল্য সন্বয়য়ের একটি পরিকল্পনা নিতে হবে ডিসেম্বরের মধ্যে। সরকারের পক্ষ থেকে এটি করাও হয়েছে বলে জানিয়েছে আইএমএফ।
আইএমএফ বলেছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অব্যাহত রাখতে হবে। ।ফাইল ছবি
২০২২ সালের মতো ২০২৩ সালেও জ্বালানি, প্রাকৃতিক গ্যাস ও বিদ্যুতে দেয়া ভর্তুকি কমিয়ে আনার পাশাপাশি ভর্তূকি শূন্যে নামিয়ে আনতে প্রতি প্রান্তিক শেষেই আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে দর সমন্বয় করতে হবে। বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করে ভর্তুকি বন্ধ করা হবে। বিদ্যুৎ বিক্রি করে উৎপাদনের খরচ ওঠানোর পরিকলন্পনা করা, ক্যাপাসিটি চার্জ বন্ধ করতে বিদ্যমান বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে চুক্তি হালনাগাদ করার সময়ে।
প্রতি তিন মাস অন্তর জিডিপির তথ্য প্রকাশ করবে বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিকটিস (পরিসংখ্যান ব্যুরো)। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি প্রকাশের শর্ত দিয়ে আইএমএফ জানিয়েছে, এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি ও নীতিমালা তৈরির সক্ষমতা বাড়াবে। ইতোমধ্যে এটিও করেছে সরকার।
সরকারি সম্পদের হিসাব সংরক্ষণে তথ্য ভা-ারের সঙ্গে আইবাস++ এর তথ্য সমন্বয় করার মডিউল তৈরি করতে হবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে। গ্রিন বন্ড অর্থায়ন নীতিমালাও একই সময়ে হালনাগাদ করতে হবে।
রাজস্ব খাতের বিষয়ে এতে বলা হয়েছে, গত জুন শেষে রিজার্ভ মানি রাখার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৪ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা, কিন্তু হয়েছিল ৩২ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। এর কারণ হিসেবে বলা হয়, প্রত্যাশার চেয়েও আয় কম হয়েছে। আবার আমদানি কমে যাওয়ায় কর আদায় কমেছে। অবশ্য রিজার্ভ মানি, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সামাজিক নিরাপত্তা ব্যয় ও সরকারের অর্থ ব্যয়ের ঠিক করা লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয় এ সময়ে।
সামষ্টিক অর্থনীতির কাঠামোগত সংস্কারের বিষয়ে আইএমএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাণিজ্য উদারিকরণ, বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন, বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে জলবায়ুতে বিনিয়োগ করতে পারলে রপ্তানিতে বৈচিত্র এনে সামষ্টিক অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে।
আইএমএফের দেখানো পথের আগেই অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, আইএমএফ যেসব বিষয় বলেছে তা প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমটি হচ্ছে, তথ্যগত প্রতিবেদন তৈরি। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, কিছু সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন।
“রাজস্ব আয় বাড়ানোর কৌশলে তারা বলেছে কর ছাড় দেয়া সংক্রান্ত প্রতিবেদন তৈরি করতে। যেটিকে আইএমএফ বলছে, ট্যাক্স এক্সেপেন্ডিচার যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসা। এটি করতে তো সময় লাগার কথা না। এনবিআরের কাছে সব তথ্যই আছে। এই তথ্য পর্যালোচনা করেই সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারে কোন কোন খাতকে আর ছাড় দেয়া যাবে না।” তিনি বলেন, “আরেকটি হচ্ছে, এনবিআরে লোকবল বাড়ানো। যেটির দ্রুত করাই সম্ভব। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনা। এখানে বিনিময় হার বাজারমুখী করা। তাহলে বৈদেশিক মুদ্রার যোগান বাড়বে। তখন চাপ এমনিতেই কমে আসবে। আর জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় ও সরকারের অর্থ ব্যবস্থাপনার যে কথা তারা বলেছে, তা তো শুধু নীতি নির্ধারনি সিদ্ধান্তের বিষয়।”