প্রত্যাশা ডেস্ক : করোনা মোকাবেলায় বিপর্যস্ততার জন্য ভারত সরকারের সমালোচনা করতে গিয়ে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন যে শব্দ ব্যবহার করেছেন তা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন মনোবিদরা। করোনা মোকাবেলায় সরকার কম বুদ্ধির পরিচয় দিচ্ছে বুঝাতে রাষ্ট্রীয় সেবাদলের একটি অনুষ্ঠানে ‘স্কিৎজোফ্রেনিয়া’ শব্দ ব্যবহার করেন অমর্ত্য।
তার এই শব্দচয়ন নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। অমর্ত্য এই শব্দ ব্যবহার করে মানসিক রোগীদের অপমান করেছেন বলে অভিযোগ অনেকের। পশ্চিমবঙ্গের মনোবিদদের একাংশ মনে করছেন, অমর্ত্যর বক্তব্য মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যায় ভুগছেন এমন মানুষদের আঘাত করতে পারে। এই মানসিক স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে কেউ কেউ অমর্ত্যরে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি শ্লেষকে সমর্থন করলেও সমর্থন করছেন না এই শব্দের ব্যবহারটি।
মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘আমরা যখন এই কথা বলি, তখন আদতে ওই মানুষটিকে বা প্রতিষ্ঠানটির সমালোচনা করা হয় না। কারণ, রোগ তো কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বাধায় না। এই শব্দটা বলে আমরা কোথাও যেন তার অন্যায়টাকে লঘু করে দিচ্ছি একটা রোগের আড়াল দিয়ে। এই কথায় মানসিক রোগাক্রান্তদের অনেক বেশি অপমান করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিরাট একটা তাত্ত্বিক ভুলের জায়গাও রয়েছে। আরও একটা কথা, ‘স্কিৎজোফ্রেনিয়া’ মানেই অলীক কল্পনা বা কম বুদ্ধি নয়।’
অমর্ত্য সেন এই শব্দ ব্যবহার করায় বিস্ময় প্রকাশ করেন মনোবিদ ও সমাজকর্মী রতœাবলী রায়। তিনি বলেন, ‘আমি আশাহত। অমর্ত্য সেনের তো শব্দের কমতি নেই। কেন্দ্রীয় নীতির সমালোচনা করা প্রয়োজন। কিন্তু সেই সমালোচনা করতে গিয়ে মানসিক রোগের লব্জ কেন বারবার আনতে হয়? তার মতো বিদ্বান প-িত যদি এই শব্দটি ব্যবহার করেন তা হলে তো আমরা রাজনীতিবিদদের কিছু বলতেই পারব না। ‘কম বুদ্ধি’ শব্দগুচ্ছটিও ব্যবহার করা হয়েছে। এতে সরকারকে আক্রমণ করতে গিয়ে মানসিক রোগে আক্রান্তদেরই আক্রমণ করা হচ্ছে।’
সমাজকর্মী দোলন গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, ‘কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দিতে হলে, আমরা অনেক সময় মানসিক রোগীদের কথা টেনে আনি। আমরা বলি, ‘পাগল নাকি!’ এই অভ্যাসের প্রতিবাদ করছি আমি। সামাজিকভাবে মানসিক রোগীদের নেতিবাচকভাবে দেখা এবং কেউ সমাজবিরোধী কাজ করলে তার সঙ্গে মানসিক রোগীদের যোগাযোগ করিয়ে দেয়ার যে অভ্যাস আমাদের আছে, তার প্রতিবাদ করছি।’ তবে অমর্ত্য কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনায় যা বলেছেন তার সমর্থন করছেন দোলন। বলছেন, ‘পাশাপাশি অমর্ত্য সেন কেন্দ্রীয় সরকার সম্পর্কে যা বলেছেন, তার সঙ্গে আমি ১০০ শতাংশেরও বেশি একমত।’
তবে কমবেশি সকলেই মনে করছেন, অমর্ত্য এই শব্দ ব্যবহার করে মানসিক রোগীদের অপমান করেছেন। মনোবিদ সাহেলী গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তার আপত্তিও এই ‘স্কিৎজোফ্রেনিয়া’ শব্দটি ব্যবহার করা নিয়ে। তিনি বলেছেন, ‘স্কিৎজোফ্রেনিয়া শব্দটি ব্যবহার করা হলে, যারা মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যায় জর্জরিত, তাদের প্রত্যেককে অপমান করা হয়। এটি ‘স্টিগমাটাইজেশন’-কে আরও ইন্ধন দেয়। আর অমর্ত্য সেন বলেছেন বলে আলাদা কথা নয়, আমার পাড়ার লোক বললেও যে ভাবে আমি প্রতিবাদ করতাম, এ ক্ষেত্রেও তাই করব। মানসিক স্বাস্থ্যজনিত শব্দের ব্যবহার অত্যন্ত সচেতনতার সঙ্গে করা উচিত।’- আনন্দবাজার।
অমর্ত্য সেনের শব্দচয়ন নিয়ে হতাশ মনোবিদরা
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ