নিজস্ব প্রতিবেদক : কলেজ পরিচালনার লাভের ভাগ নিয়ে বিরোধ এবং প্রাইভেট টিউশনে সাফল্যের কারণে ঈর্ষান্বিত হয়ে দেড় বছর আগে আশুলিয়ার কলেজ অধ্যক্ষ মিন্টু চন্দ্র বর্মনকে হত্যা করার পর লাশ ছয় টুকরো করে পুঁতে ফেলা হয় বলে অভিযোগপত্র দিয়েছে র‌্যাব।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাব-৪ এর কর্মরত উপপরিদর্শক মো. রাশেদুল ইসলাম ডিসেম্বরের শুরুতে ঢাকার মুখ্য বিচারিক আদালতে তিনজনকে আসামি করে এ অভিযোগপত্র জমা দেন। বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে পারেন গতকাল রোববার।
প্রসিকউশন পুলিশের পরিদর্শক মতিউর রহমান মিঞা বলেন, আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকার ‘রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ’ এর শিক্ষক মো. আবু মোতালেব ও মো. রবিউল ইসলাম এবং রবিউলের ভাগনে মো. আব্দুর রহিম বাদশাকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। মিন্টু চন্দ্র বর্মন ছিলেন ওই স্কুলের অধ্যক্ষ। ২০২১ সালের ১৩ জুলাই আশুলিয়ার জামগড়া সংলগ্ন বেরন এলাকার রূপায়ন মাঠে নিজের বাসা থেকে নিখোঁজ হন মিন্টু চন্দ্র বর্মণ। কোথাও তার খোঁজ না পেয়ে ছোট ভাই দীপক চন্দ্র বর্মণ ২২ জুলাই আশুলিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করলে র‌্যাব তদন্ত শুরু করে। পরে ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ৯ আগস্ট রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ প্রঙ্গণের মাটি খুঁড়ে ৩৬ বছর বয়সী মিন্টুর দেহের পাঁচটি খ- উদ্ধার করা হয়। আর রাজধানীর আশকোনার একটি ডোবা থেকে উদ্ধার করা হয় তার খ-িত মাথা।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, তিন আসামি এবং ভিকটিম-এই চারজনের মালিকানায় পরিচালিত হতো ‘রেসিডেন্সিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ’
“কলেজ পরিচালনার লভ্যাংশ বণ্টন, প্রাইভেট পড়ানোকে কেন্দ্র করে পেশাগতভাবে ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে মিন্টুকে হত্যা করেন আসামিরা।”
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালের ৭ জুলাই রবিউল, বাদশা ও মোতালেব মিলে ‘হত্যাকা-ের পরিকল্পনা চূড়ান্ত’ করেন। রবিউল পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে দা, হাতুড়ি ও শাবল কিনে স্কুলের সিঁড়ির নিচে রেখে দেন। স্কুলে গেটের একটি ডুপ্লিকেট চাবি তৈরি করে নেন। ১৩ জুলাই রবিউল ও রহিম বাদশা যান। রাত ১১টার দিকে মিন্টুকে কৌশলে একটি শ্রেণিকক্ষে নিয়ে যান রবিউল। সেখানে বাদশা প্রথমে হাতুড়ি দিয়ে মিন্টুর মাথায় আঘাত করেন। মিন্টু ঠেকানোর চেষ্টা করলে রবিউল তাকে পেছন থেকে জাপটে ধরেন বলে র‌্যাবের ভাষ্য। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বাদশা হাতুড়ি দিয়ে কয়েকটি আঘাত করলে অধ্যক্ষ মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তখন রবিউল দা দিয়ে মাথা বিচ্ছিন্ন করেন এবং দেহ ছয়টি অংশে বিচ্ছিন্ন করেন। শরীরের অংশগুলো তারা কলেজ বাউন্ডারির ভেতরে মাটি চাপা দেন। হত্যায় ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র পাশেই একটি স্থানে বালুচাপা দিয়ে শাবল পার্শ্ববর্তী এলাকায় ফেলে দেন তারা। পরে মিন্টুর জামাকাপড় এবং মাথা প্যাকেট করে একটি ব্যাগে নিয়ে আশকোনায় একটি ডোবায় ফেলে দেন আসামিরা। আশকোনার একটি রাস্তার পাশে ফেলে দেন হাতুড়ির ব্যাগ। এছাড়া মিন্টুর মোবাইলটি ভেঙে বিমানবন্দর রেলস্টেশনের কাছাকাছি এলাকায় ফেলে দেন। পরে তারা আত্মগোপনে চলে যান। প্রসিকউশন পুলিশের পরিদর্শক মতিউর রহমান মিঞা বলেন, “অভিযোগপত্রটি এখনো যাচাই বাছাই করে বিচারে পাঠানো হয়নি।”