ঢাকা ০৪:০৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫

অভিনেত্রী শিমু হত্যার ‘স্বীকারোক্তি’র পর স্বামী ও গাড়িচালকের রিমান্ড

  • আপডেট সময় : ০২:৫৩:০১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২২
  • ১০৮ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : চলচ্চিত্র অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমুর (৩৫) বস্তাবন্দী মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় দুজনকে আটক করা হয়েছে। ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন সরদার দুজনকে আটকের কথা নিশ্চিত করেছেন। শিমুর স্বামী সাখাওয়াত আলী নোবেল ও গাড়িচালক এস এম ফরহাদের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
গতকাল মঙ্গলবার তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় দায়ের করা হত্যা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন ওই থানার উপ-পরিদর্শক চুন্নু মিয়া। শুনানি শেষে ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাবেয়া বেগম তাদের এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আনোয়ার কবির বাবুল বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এদিন কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় নোবেল ও তার গাড়িচালকের বিরুদ্ধে মামলা করেন শিমুর ভাই হারুনুর রশীদ। এছাড়া মামলায় বেশ কয়েকজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। এর আগে সোমবার (১৭ জানুয়ারি) ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে অজ্ঞাত হিসেবে চিত্রনায়িকা রাইমা ইসলাম শিমুর (৩৫) বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তবে তার পরিচয় মিলছিল না। পরে ওইদিন রাতে তার ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে নাম-পরিচয় শনাক্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পিবিআইয়ের ঢাকা জেলা ইউনিটের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ খোরশেদ আলম বলেন, সোমবার সকাল ১০টার দিকে কেরানীগঞ্জের হযরতপুর ব্রিজের কাছে আলিয়াপুর এলাকায় রাস্তার পাশ থেকে শিমুর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে থানা পুলিশ। অজ্ঞাত হিসেবে মরদেহ উদ্ধারের পর পরিচয় শনাক্তের চেষ্টার জন্য পিবিআইকে খবর দেওয়া হলে পিবিআইয়ের কর্মকর্তারা মরদেহের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেন। ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়ার পর তার নাম-পরিচয়, বয়স ও বাসার ঠিকানা শনাক্ত করে পিবিআই।
জানা গেছে, চিত্রনায়িকা শিমুর মরদেহ রাখা হয়েছে রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (মিটফোর্ড) মর্গে। সেখানেই শিমুর স্বামী ও গাড়িচালক ফরহাদ গেলে তাদের আটক করে র‌্যাব। জানা গেছে, স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে রাজধানীর কলাবাগান এলাকার বাসায় থাকতেন শিমু। রোববার (১৬ জানুয়ারি) সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে তিনি আর ফেরেননি। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় রাতেই কলাবাগান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছিল।
সোমবার দুপুরে ঢাকার কেরানীগঞ্জের হজরতপুর ব্রিজের কাছে আলিয়াপুর এলাকায় রাস্তার পাশ থেকে শিমুর লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশটি বস্তায় ভরে ফেলে রাখা হয়েছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে। কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাজী রমজানুল হক বলেন, লাশটি টুকরা করে দুটি বস্তায় ভরে ফেলে রাখা হয়। স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে খবর পেয়ে খ-িত অংশগুলো উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত শিমুর গলায় একটি দাগ রয়েছে।
দাম্পত্য কলহে শিমুকে খুন, বন্ধুকে নিয়ে লাশ গুম করেন স্বামী: পুলিশ : দাম্পত্য কলহের জেরে অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমুকে তাঁর স্বামী হত্যার পর বন্ধুর সহায়তা নিয়ে লাশ গুমের চেষ্টা করেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মারুফ হোসেন সরদার এ কথা বলেন। এসপি মারুফ হোসেন সরদার বলেন, দীর্ঘদিনের দাম্পত্য কলহের জেরে শিমুর স্বামী তাঁকে হত্যা করেন বলে স্বীকার করেছেন। হত্যার পর লাশ গুমে তিনি বন্ধু ফরহাদের সহযোগিতা নেন। শিমুর তাঁর স্বামী খন্দকার শাখাওয়াত আলীম নোবেল ও তাঁর বন্ধু ফরহাদকে গত সোমবার দিবাগত রাত চারটার দিকে রাজধানীর কলাবাগান থানাধীন ৩৪ গ্রীন রোড এলাকা থেকে তাঁদের দুজনকে আটক করা হয়। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে হুন্দাইয়ের ছাই রঙের একটি ব্যক্তিগত গাড়ি উদ্ধার করা হয়। শিমুর স্বামী খন্দকার শাখাওয়াত আলীমের বাড়ি ফরিদপুরের কমলপুর গ্রামে। তাঁদের ১৫ বছরের এক মেয়ে ও ৭ বছরের এক ছেলে আছে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, গত রোববার সকাল সাতটা থেকে আটটার মধ্যে কোনো এক সময়ে শিমুকে হত্যা করা হয়। যে গাড়ি ব্যবহার করে শিমুর লাশ গুমের চেষ্টা করা হয়েছে, সে গাড়ি জব্দ করে থানায় নিয়েছে পুলিশ। অন্যান্য আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বেলা দেড়টার দিকে নিহত শিমুর বড় ভাই হারুন অর রশিদ ও শহিদুল ইসলাম খোকন এবং ছোট বোন ফারজানা আক্তার লিসা কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় মামলা করতে যান। বিকেল চারটার দিকে নিহত শিমুর বড় ভাই হারুন অর রশিদ বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। নিহত শিমুর ছোট বোন ফারজানা আক্তার লিসা সাংবাদিকদের বলেন, ‘এমন কোনো দিন নেই যে বোনের সঙ্গে আমার কথা হয়নি। আমার বোনের স্বামী তাঁকে মেরেছে কি না, সেটি আমরা জানি না। ১৮ বছরের সংসারে তাঁদের মধ্যে পারিবারিক কিংবা অন্য কোনো বিষয় নিয়ে কলহ দেখিনি। আমি শিমুর স্বামীর সঙ্গে কথা বলব। তাঁকে জিজ্ঞাসা করব, কেন আপনি হত্যাকা-টি করেছেন? ভালোবেসে বোনকে বিয়ে করেছিলেন। ১৮ বছরের সংসার আপনাদের। বোনের অপরাধটা কী ছিল?’
কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু ছালাম মিয়া বলেন, গত সোমবার বেলা তিনটার দিকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (এফডিসি) থেকে এক লোক ফোন করে জানান, মিডিয়াকর্মী এক নারীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে, শিমুকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। শিমুর স্বামী ও তাঁর বন্ধু ফরহাদ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে হত্যাকা-ে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
যা বললেন শিমুর ভাই-বোন ও চিত্রনায়ক জায়েদ খান : গত সোমবার রাতে চলচ্চিত্র অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমুর বস্তাবন্দী লাশ পাওয়া গেছে। তার পর থেকেই গুজব ছড়িয়েছে, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়েছিল। সেই ঘটনায় খুন হয়েছেন এই অভিনেত্রী। এ প্রসঙ্গে অভিনেত্রী শিমুর ভাই-বোন ও অভিনেতা জায়েদ খান সম্প্রতি মুখ খুলেছেন।
শিমুর বোন ফাতিমা নিশা বলেন, ‘আমার বোন সবকিছু শেয়ার করে আমার সঙ্গে। আমাদের মধ্যে অনেক মিল। ও যেটা পরে সেটা আমি পরতাম, আমি যেটা পরতাম ও সেটা পরত। কারও বোন থাকলে এটা বুঝতে পারবে। তার সঙ্গে প্রতিদিনই কথা হতো। একদিনও বলেনি জায়েদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়েছে। এটা ভুল–বোঝাবুঝির কারণে ঘটছে। আমার বোনের সহকর্মীদের বলব, গুজব না ছড়িয়ে সত্য উদ্ঘাটনে সহযোগিতা করুন।’
আজ বেলা দেড়টার দিকে নিহত শিমুর বড় ভাই হারুন অর রশিদ ও শহিদুল ইসলাম খোকন এবং ছোট বোন ফারজানা আক্তার লিসা কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় মামলা করতে যান। এসময় নিহত শিমুর ছোট বোন ফারজানা আক্তার লিসা সাংবাদিকদের বলেন, ‘এমন কোনো দিন নেই যে বোনের সঙ্গে আমার কথা হয়নি। আমার বোনের স্বামী তাঁকে মেরেছে কি না, সেটি আমরা জানি না। ১৮ বছরের সংসারে তাঁদের মধ্যে পারিবারিক কিংবা অন্য কোনো বিষয় নিয়ে কলহ দেখিনি। আমি শিমুর স্বামীর সঙ্গে কথা বলব। তাঁকে জিজ্ঞাসা করব, কেন আপনি হত্যাকা-টি করেছেন? ভালোবেসে বোনকে বিয়ে করেছিলেন। ১৮ বছরের সংসার আপনাদের। বোনের অপরাধটা কী ছিল?’
এ সময় শিমুর ভাই শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘পেশাগত জায়গায় আমার বোনের কিছুটা ক্ষোভ ছিল। তার মানে এই নয়, সেই ঘটনায় খুন হয়েছে। ঘটনাটা আড়াল করতে জায়েদের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন কেউ কেউ। এ হত্যার সঙ্গে আমার বোনজামাই দায়ী। তিনি আমার বোনের গায়ে হাত তুলতেন। ঝগড়া করতেন।’ আপনি একবার বললেন, আপনার বোন জামাই দায়ী পরে বললেন তারা দায়ী নন, দুই রকম কথা বলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি আবেগে বলেছিলাম। তবে অপরাধী যেই হোক আইনের আওতায় তার বিচার দাবী করছি।’
করোনার মধ্যে হঠাৎ এই চিত্রনায়িকাকে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সদসদ্যপদ হারানো ১৮৪ জনের ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার আন্দোলনে সোচ্চার হতে দেখা গেছে। তিনি ছিলেন ভোটাধিকারবঞ্চিত চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির যুগ্ম আহ্বায়ক। ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে এফডিসির সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলেন অন্য সহকর্মীসহ। সে সূত্রে সোমবার রাত থেকেই গুজব ছড়ায়, ঘটনার সঙ্গে জায়েদ খান জড়িত থাকতে পারেন। এ কথা জায়েদের কানেও গেছে। তিনি বলেন, ‘আমাকে ঘিরে প্রথম থেকেই নোংরামি হচ্ছে। কোনো সুযোগ পেলেই সেখানে আমার নাম জড়ায়। অথচ আমি দুই বছর ধরে শিল্পী সমিতির নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করছিলাম। এর মধ্যে তার সঙ্গে কখনোই আমার কথা হয় নাই। দেখাও হয় নাই। অথচ অনেকে গুজব ছড়াচ্ছেন, আমার সঙ্গে ১২ তারিখে শিমুর ঝগড়া হয়েছিল। শিল্পীদের নিয়ে এমন নোংরামি বন্ধ করুন। এসব কারণে সামাজিকভাবে আমাদের হেয় হতে হয়। আমরা সংগঠন থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কথা বলেছিলাম, তারা ঘটনা তদন্ত করছে। তারা এমনটাও জানিয়েছে, শিমুর স্বামী জড়িত থাকার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।’
শিমুকে সিনেমায় এনেছিলেন মান্না : ঢাকাই চলচ্চিত্রে জনপ্রিয় অভিনেতা আসলাম তালুকদার মান্নার হাত ধরে স্বপ্নের রূপালী পর্দায় অভিষেক ঘটেছিল চলচ্চিত্র ও টিভি নাটকের অভিনয়শিল্পী রাইমা ইসলাম শিমুর; দুই দশকের ক্যারিয়ারে দুই ডজনের বেশি সিনেমায় অভিনয় করা এই অভিনেত্রীর জীবনপ্রদীপ নিভে গেল নির্মম হত্যাকা-ে। বরগুনার আমতলী উপজেলার হলদিয়ার মেয়ে শিমু দুই যুগ আগে রূপালী পর্দার নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন; কৈশোরে এফডিসির অলি-গলি ঘুরতে ঘুরতে মান্নার কল্যাণে কাজী হায়াতের ‘বর্তমান’ সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে যান। ১৯৯৮ সালে মুক্তি পাওয়া সেই সিনেমায় মান্নার ছোটবোনের চরিত্রে অভিনয় করেন কিশোরী শিমু; পরে কাজী হায়াতের আরেকটি সিনেমায় কাজ করেন তিনি। কাজী হায়াৎ বলেন, শিমুর ভাই খোকনের সঙ্গে মান্নার পরিচয় ছিল; মান্নার অনুরোধে তিনি শিমুকে সিনেমায় নিয়েছিলেন। “পরে মেয়েটি ভালো অভিনয় করেছিল; প্রতিভা ছিল। ও খুব কম কথা বলত; চুপচাপ থাকত। ফলে আমি ওকে ‘বিষ্ণুপদ’ বলে ডাকতাম। পরে ওকে আরেকটি সিনেমায় নিয়েছিলাম।”
‘বর্তমান’ সিনেমায় মান্না ও শিমুর মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন আনোয়ারা; এছাড়া মৌসুমী, ডিপজল, মিজু আহমেদ, কাবিলাসহ অনেকে অভিনয় করেন।
পরে দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, চাষি নজরুল ইসলাম, শরিফ উদ্দিন খান দিপুসহ কয়েকজন পরিচালকের প্রায় দুই ডজন সিনেমায় পার্শ্বচরিত্রে দেখা যায় শিমুকে। মান্না ছাড়াও শাকিব খান, রিয়াজের মতো তারকা শিল্পীদের সঙ্গে তিনি কাজ করেন। ২০০৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘জামাই শ্বশুর’ সিনেমায় চিত্রনায়িকা পূর্ণিমার বড় বোনের চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকমহলে বেশ পরিচিতি পান শিমু; সেই সিনেমায় তার বিপরীতে অভিনয় করেন অমিত হাসান। সেই সিনেমার শিল্পী রিয়াজ বলেন, শিমুকে হত্যার খবরটি পড়ে তিনি স্তম্ভিত হয়েছেন। তিনি দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছেন।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সহযোগী সদস্য ছিলেন শিমু; ২০১৭ সালে পূর্ণ সদস্যপদ হারানোয় সমিতির ভোটাধিকার হারান এ অভিনয়শিল্পী। পূর্ণ সদস্যপদ ফিরে পেতে সবশেষ দুই বছরে এফডিসিতে বিভিন্ন বিক্ষোভ সমাবেশে শামিল হয়েছিলেন তিনি; শিল্পী সমিতির ক্ষমতায় থাকা মিশা সওদাগর-জায়েদ খানদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তবে মিশা-জায়েদ খান বরাবরই তাদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। শিমুর হত্যাকারীদের সুষ্ঠু বিচার চেয়েছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান, কাজী হায়াৎ, ওমর সানিসহ আরও অনেকে। ঢাকাই চলচ্চিত্রের স্বর্ণালী সময় হারিয়ে যেতে থাকায় চলচ্চিত্রে শিমুর কাজও কমে এসেছিল। গত দশক থেকেই তিনি টিভি নাটকে মনোযোগ দিচ্ছিলেন। জাহিদ হাসান, মোশাররফ করিমদের মতো ছোটপর্দার তারকাদের সঙ্গে নাটকে কাজ করেছেন শিমু।
সম্প্রতি এনটিভিতে প্রচারিত ধারাবাহিক নাটক ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’-এ অভিনয় করে এই প্রজন্মের দর্শকদের কাছেও তিনি পরিচিতি পান। তার ফেইসবুক পেইজে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, একটি বাণিজ্য বিষয়ক সাময়িকী, একটি বেসরকারি টেলিভিশনের বিপণন বিভাগে কাজ করার পাশাপাশি একটি প্রডাকশন হাউজও চালাতেন এই অভিনেত্রী। স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ৩৫ বছর বয়সী শিমু থাকতেন রাজধানীর গ্রিন রোড এলাকার একটি বাসায়। শিমুর বাবা নুরুল ইসলাম আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য। ওই ইউনিয়নের বর্তমান সদস্য সৈয়দ কামরুজ্জামান চুন্নু বলেন, নুরুল ইসলাম দ্বিতীয় বিয়ে করার পর প্রায় দুই যুগ আগে মা, ভাই ও বোনের সঙ্গে ঢাকায় যান শিমু। পরে এলাকায় আর ফেরেননি। “পরে আমরা শুনেছি, ঢাকায় গিয়ে শিমু নায়িকা হয়েছেন। ছোটবেলায় তাকে দেখেছি; তারপর আর দেখিনি। তার বাবা দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে এলাকায় থাকেন।” শিমুর এক ভাই ও এক বোন আছে; ভাই শহীদুল ইসলাম খোকনও চলচ্চিত্রের পার্শ্ব শিল্পী।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সংগঠনের প্রতি উমামার কমিটমেন্ট ছিল কি না, প্রশ্ন রিফাতের

অভিনেত্রী শিমু হত্যার ‘স্বীকারোক্তি’র পর স্বামী ও গাড়িচালকের রিমান্ড

আপডেট সময় : ০২:৫৩:০১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : চলচ্চিত্র অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমুর (৩৫) বস্তাবন্দী মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় দুজনকে আটক করা হয়েছে। ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন সরদার দুজনকে আটকের কথা নিশ্চিত করেছেন। শিমুর স্বামী সাখাওয়াত আলী নোবেল ও গাড়িচালক এস এম ফরহাদের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
গতকাল মঙ্গলবার তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় দায়ের করা হত্যা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন ওই থানার উপ-পরিদর্শক চুন্নু মিয়া। শুনানি শেষে ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাবেয়া বেগম তাদের এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আনোয়ার কবির বাবুল বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এদিন কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় নোবেল ও তার গাড়িচালকের বিরুদ্ধে মামলা করেন শিমুর ভাই হারুনুর রশীদ। এছাড়া মামলায় বেশ কয়েকজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। এর আগে সোমবার (১৭ জানুয়ারি) ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে অজ্ঞাত হিসেবে চিত্রনায়িকা রাইমা ইসলাম শিমুর (৩৫) বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তবে তার পরিচয় মিলছিল না। পরে ওইদিন রাতে তার ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে নাম-পরিচয় শনাক্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পিবিআইয়ের ঢাকা জেলা ইউনিটের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ খোরশেদ আলম বলেন, সোমবার সকাল ১০টার দিকে কেরানীগঞ্জের হযরতপুর ব্রিজের কাছে আলিয়াপুর এলাকায় রাস্তার পাশ থেকে শিমুর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে থানা পুলিশ। অজ্ঞাত হিসেবে মরদেহ উদ্ধারের পর পরিচয় শনাক্তের চেষ্টার জন্য পিবিআইকে খবর দেওয়া হলে পিবিআইয়ের কর্মকর্তারা মরদেহের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেন। ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়ার পর তার নাম-পরিচয়, বয়স ও বাসার ঠিকানা শনাক্ত করে পিবিআই।
জানা গেছে, চিত্রনায়িকা শিমুর মরদেহ রাখা হয়েছে রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (মিটফোর্ড) মর্গে। সেখানেই শিমুর স্বামী ও গাড়িচালক ফরহাদ গেলে তাদের আটক করে র‌্যাব। জানা গেছে, স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে রাজধানীর কলাবাগান এলাকার বাসায় থাকতেন শিমু। রোববার (১৬ জানুয়ারি) সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে তিনি আর ফেরেননি। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় রাতেই কলাবাগান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছিল।
সোমবার দুপুরে ঢাকার কেরানীগঞ্জের হজরতপুর ব্রিজের কাছে আলিয়াপুর এলাকায় রাস্তার পাশ থেকে শিমুর লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশটি বস্তায় ভরে ফেলে রাখা হয়েছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে। কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাজী রমজানুল হক বলেন, লাশটি টুকরা করে দুটি বস্তায় ভরে ফেলে রাখা হয়। স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে খবর পেয়ে খ-িত অংশগুলো উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত শিমুর গলায় একটি দাগ রয়েছে।
দাম্পত্য কলহে শিমুকে খুন, বন্ধুকে নিয়ে লাশ গুম করেন স্বামী: পুলিশ : দাম্পত্য কলহের জেরে অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমুকে তাঁর স্বামী হত্যার পর বন্ধুর সহায়তা নিয়ে লাশ গুমের চেষ্টা করেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মারুফ হোসেন সরদার এ কথা বলেন। এসপি মারুফ হোসেন সরদার বলেন, দীর্ঘদিনের দাম্পত্য কলহের জেরে শিমুর স্বামী তাঁকে হত্যা করেন বলে স্বীকার করেছেন। হত্যার পর লাশ গুমে তিনি বন্ধু ফরহাদের সহযোগিতা নেন। শিমুর তাঁর স্বামী খন্দকার শাখাওয়াত আলীম নোবেল ও তাঁর বন্ধু ফরহাদকে গত সোমবার দিবাগত রাত চারটার দিকে রাজধানীর কলাবাগান থানাধীন ৩৪ গ্রীন রোড এলাকা থেকে তাঁদের দুজনকে আটক করা হয়। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে হুন্দাইয়ের ছাই রঙের একটি ব্যক্তিগত গাড়ি উদ্ধার করা হয়। শিমুর স্বামী খন্দকার শাখাওয়াত আলীমের বাড়ি ফরিদপুরের কমলপুর গ্রামে। তাঁদের ১৫ বছরের এক মেয়ে ও ৭ বছরের এক ছেলে আছে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, গত রোববার সকাল সাতটা থেকে আটটার মধ্যে কোনো এক সময়ে শিমুকে হত্যা করা হয়। যে গাড়ি ব্যবহার করে শিমুর লাশ গুমের চেষ্টা করা হয়েছে, সে গাড়ি জব্দ করে থানায় নিয়েছে পুলিশ। অন্যান্য আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বেলা দেড়টার দিকে নিহত শিমুর বড় ভাই হারুন অর রশিদ ও শহিদুল ইসলাম খোকন এবং ছোট বোন ফারজানা আক্তার লিসা কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় মামলা করতে যান। বিকেল চারটার দিকে নিহত শিমুর বড় ভাই হারুন অর রশিদ বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। নিহত শিমুর ছোট বোন ফারজানা আক্তার লিসা সাংবাদিকদের বলেন, ‘এমন কোনো দিন নেই যে বোনের সঙ্গে আমার কথা হয়নি। আমার বোনের স্বামী তাঁকে মেরেছে কি না, সেটি আমরা জানি না। ১৮ বছরের সংসারে তাঁদের মধ্যে পারিবারিক কিংবা অন্য কোনো বিষয় নিয়ে কলহ দেখিনি। আমি শিমুর স্বামীর সঙ্গে কথা বলব। তাঁকে জিজ্ঞাসা করব, কেন আপনি হত্যাকা-টি করেছেন? ভালোবেসে বোনকে বিয়ে করেছিলেন। ১৮ বছরের সংসার আপনাদের। বোনের অপরাধটা কী ছিল?’
কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু ছালাম মিয়া বলেন, গত সোমবার বেলা তিনটার দিকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (এফডিসি) থেকে এক লোক ফোন করে জানান, মিডিয়াকর্মী এক নারীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে, শিমুকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। শিমুর স্বামী ও তাঁর বন্ধু ফরহাদ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে হত্যাকা-ে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
যা বললেন শিমুর ভাই-বোন ও চিত্রনায়ক জায়েদ খান : গত সোমবার রাতে চলচ্চিত্র অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমুর বস্তাবন্দী লাশ পাওয়া গেছে। তার পর থেকেই গুজব ছড়িয়েছে, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়েছিল। সেই ঘটনায় খুন হয়েছেন এই অভিনেত্রী। এ প্রসঙ্গে অভিনেত্রী শিমুর ভাই-বোন ও অভিনেতা জায়েদ খান সম্প্রতি মুখ খুলেছেন।
শিমুর বোন ফাতিমা নিশা বলেন, ‘আমার বোন সবকিছু শেয়ার করে আমার সঙ্গে। আমাদের মধ্যে অনেক মিল। ও যেটা পরে সেটা আমি পরতাম, আমি যেটা পরতাম ও সেটা পরত। কারও বোন থাকলে এটা বুঝতে পারবে। তার সঙ্গে প্রতিদিনই কথা হতো। একদিনও বলেনি জায়েদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়েছে। এটা ভুল–বোঝাবুঝির কারণে ঘটছে। আমার বোনের সহকর্মীদের বলব, গুজব না ছড়িয়ে সত্য উদ্ঘাটনে সহযোগিতা করুন।’
আজ বেলা দেড়টার দিকে নিহত শিমুর বড় ভাই হারুন অর রশিদ ও শহিদুল ইসলাম খোকন এবং ছোট বোন ফারজানা আক্তার লিসা কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় মামলা করতে যান। এসময় নিহত শিমুর ছোট বোন ফারজানা আক্তার লিসা সাংবাদিকদের বলেন, ‘এমন কোনো দিন নেই যে বোনের সঙ্গে আমার কথা হয়নি। আমার বোনের স্বামী তাঁকে মেরেছে কি না, সেটি আমরা জানি না। ১৮ বছরের সংসারে তাঁদের মধ্যে পারিবারিক কিংবা অন্য কোনো বিষয় নিয়ে কলহ দেখিনি। আমি শিমুর স্বামীর সঙ্গে কথা বলব। তাঁকে জিজ্ঞাসা করব, কেন আপনি হত্যাকা-টি করেছেন? ভালোবেসে বোনকে বিয়ে করেছিলেন। ১৮ বছরের সংসার আপনাদের। বোনের অপরাধটা কী ছিল?’
এ সময় শিমুর ভাই শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘পেশাগত জায়গায় আমার বোনের কিছুটা ক্ষোভ ছিল। তার মানে এই নয়, সেই ঘটনায় খুন হয়েছে। ঘটনাটা আড়াল করতে জায়েদের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন কেউ কেউ। এ হত্যার সঙ্গে আমার বোনজামাই দায়ী। তিনি আমার বোনের গায়ে হাত তুলতেন। ঝগড়া করতেন।’ আপনি একবার বললেন, আপনার বোন জামাই দায়ী পরে বললেন তারা দায়ী নন, দুই রকম কথা বলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি আবেগে বলেছিলাম। তবে অপরাধী যেই হোক আইনের আওতায় তার বিচার দাবী করছি।’
করোনার মধ্যে হঠাৎ এই চিত্রনায়িকাকে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সদসদ্যপদ হারানো ১৮৪ জনের ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার আন্দোলনে সোচ্চার হতে দেখা গেছে। তিনি ছিলেন ভোটাধিকারবঞ্চিত চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির যুগ্ম আহ্বায়ক। ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে এফডিসির সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলেন অন্য সহকর্মীসহ। সে সূত্রে সোমবার রাত থেকেই গুজব ছড়ায়, ঘটনার সঙ্গে জায়েদ খান জড়িত থাকতে পারেন। এ কথা জায়েদের কানেও গেছে। তিনি বলেন, ‘আমাকে ঘিরে প্রথম থেকেই নোংরামি হচ্ছে। কোনো সুযোগ পেলেই সেখানে আমার নাম জড়ায়। অথচ আমি দুই বছর ধরে শিল্পী সমিতির নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করছিলাম। এর মধ্যে তার সঙ্গে কখনোই আমার কথা হয় নাই। দেখাও হয় নাই। অথচ অনেকে গুজব ছড়াচ্ছেন, আমার সঙ্গে ১২ তারিখে শিমুর ঝগড়া হয়েছিল। শিল্পীদের নিয়ে এমন নোংরামি বন্ধ করুন। এসব কারণে সামাজিকভাবে আমাদের হেয় হতে হয়। আমরা সংগঠন থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কথা বলেছিলাম, তারা ঘটনা তদন্ত করছে। তারা এমনটাও জানিয়েছে, শিমুর স্বামী জড়িত থাকার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।’
শিমুকে সিনেমায় এনেছিলেন মান্না : ঢাকাই চলচ্চিত্রে জনপ্রিয় অভিনেতা আসলাম তালুকদার মান্নার হাত ধরে স্বপ্নের রূপালী পর্দায় অভিষেক ঘটেছিল চলচ্চিত্র ও টিভি নাটকের অভিনয়শিল্পী রাইমা ইসলাম শিমুর; দুই দশকের ক্যারিয়ারে দুই ডজনের বেশি সিনেমায় অভিনয় করা এই অভিনেত্রীর জীবনপ্রদীপ নিভে গেল নির্মম হত্যাকা-ে। বরগুনার আমতলী উপজেলার হলদিয়ার মেয়ে শিমু দুই যুগ আগে রূপালী পর্দার নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন; কৈশোরে এফডিসির অলি-গলি ঘুরতে ঘুরতে মান্নার কল্যাণে কাজী হায়াতের ‘বর্তমান’ সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে যান। ১৯৯৮ সালে মুক্তি পাওয়া সেই সিনেমায় মান্নার ছোটবোনের চরিত্রে অভিনয় করেন কিশোরী শিমু; পরে কাজী হায়াতের আরেকটি সিনেমায় কাজ করেন তিনি। কাজী হায়াৎ বলেন, শিমুর ভাই খোকনের সঙ্গে মান্নার পরিচয় ছিল; মান্নার অনুরোধে তিনি শিমুকে সিনেমায় নিয়েছিলেন। “পরে মেয়েটি ভালো অভিনয় করেছিল; প্রতিভা ছিল। ও খুব কম কথা বলত; চুপচাপ থাকত। ফলে আমি ওকে ‘বিষ্ণুপদ’ বলে ডাকতাম। পরে ওকে আরেকটি সিনেমায় নিয়েছিলাম।”
‘বর্তমান’ সিনেমায় মান্না ও শিমুর মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন আনোয়ারা; এছাড়া মৌসুমী, ডিপজল, মিজু আহমেদ, কাবিলাসহ অনেকে অভিনয় করেন।
পরে দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, চাষি নজরুল ইসলাম, শরিফ উদ্দিন খান দিপুসহ কয়েকজন পরিচালকের প্রায় দুই ডজন সিনেমায় পার্শ্বচরিত্রে দেখা যায় শিমুকে। মান্না ছাড়াও শাকিব খান, রিয়াজের মতো তারকা শিল্পীদের সঙ্গে তিনি কাজ করেন। ২০০৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘জামাই শ্বশুর’ সিনেমায় চিত্রনায়িকা পূর্ণিমার বড় বোনের চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকমহলে বেশ পরিচিতি পান শিমু; সেই সিনেমায় তার বিপরীতে অভিনয় করেন অমিত হাসান। সেই সিনেমার শিল্পী রিয়াজ বলেন, শিমুকে হত্যার খবরটি পড়ে তিনি স্তম্ভিত হয়েছেন। তিনি দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছেন।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সহযোগী সদস্য ছিলেন শিমু; ২০১৭ সালে পূর্ণ সদস্যপদ হারানোয় সমিতির ভোটাধিকার হারান এ অভিনয়শিল্পী। পূর্ণ সদস্যপদ ফিরে পেতে সবশেষ দুই বছরে এফডিসিতে বিভিন্ন বিক্ষোভ সমাবেশে শামিল হয়েছিলেন তিনি; শিল্পী সমিতির ক্ষমতায় থাকা মিশা সওদাগর-জায়েদ খানদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তবে মিশা-জায়েদ খান বরাবরই তাদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। শিমুর হত্যাকারীদের সুষ্ঠু বিচার চেয়েছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান, কাজী হায়াৎ, ওমর সানিসহ আরও অনেকে। ঢাকাই চলচ্চিত্রের স্বর্ণালী সময় হারিয়ে যেতে থাকায় চলচ্চিত্রে শিমুর কাজও কমে এসেছিল। গত দশক থেকেই তিনি টিভি নাটকে মনোযোগ দিচ্ছিলেন। জাহিদ হাসান, মোশাররফ করিমদের মতো ছোটপর্দার তারকাদের সঙ্গে নাটকে কাজ করেছেন শিমু।
সম্প্রতি এনটিভিতে প্রচারিত ধারাবাহিক নাটক ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’-এ অভিনয় করে এই প্রজন্মের দর্শকদের কাছেও তিনি পরিচিতি পান। তার ফেইসবুক পেইজে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, একটি বাণিজ্য বিষয়ক সাময়িকী, একটি বেসরকারি টেলিভিশনের বিপণন বিভাগে কাজ করার পাশাপাশি একটি প্রডাকশন হাউজও চালাতেন এই অভিনেত্রী। স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ৩৫ বছর বয়সী শিমু থাকতেন রাজধানীর গ্রিন রোড এলাকার একটি বাসায়। শিমুর বাবা নুরুল ইসলাম আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য। ওই ইউনিয়নের বর্তমান সদস্য সৈয়দ কামরুজ্জামান চুন্নু বলেন, নুরুল ইসলাম দ্বিতীয় বিয়ে করার পর প্রায় দুই যুগ আগে মা, ভাই ও বোনের সঙ্গে ঢাকায় যান শিমু। পরে এলাকায় আর ফেরেননি। “পরে আমরা শুনেছি, ঢাকায় গিয়ে শিমু নায়িকা হয়েছেন। ছোটবেলায় তাকে দেখেছি; তারপর আর দেখিনি। তার বাবা দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে এলাকায় থাকেন।” শিমুর এক ভাই ও এক বোন আছে; ভাই শহীদুল ইসলাম খোকনও চলচ্চিত্রের পার্শ্ব শিল্পী।