নিজস্ব প্রতিবেদক : নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেছেন, ‘নভেম্বর প্রথম সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা হবে, জানুয়ারিতে ভোট। জানুয়ারির ২৯ তারিখের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। ভোটের দিন সকালে যাবে ব্যালট পেপার।’
গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় গাজীপুরের শ্রীপুরে ভোটারদের স্মার্ট কার্ড বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবুল ফাতেহ মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম এতে সভাপতিত্ব করেন। ইসি আনিছুর রহমান বলেন, ‘এবার সংসদ নির্বাচনে ভোটের দিন সকালে ব্যালট পেপার কেন্দ্রে যাবে। গত এক বছর সাত মাসে হাজার খানেক নির্বাচন করেছি। সিসি ক্যামেরা ছিল। সংসদ নির্বাচনে সিসি ক্যামেরা নাও থাকতে পারে। তবে নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় অ্যাপস তৈরি হচ্ছে। অ্যাপসে ভোট কাস্টিং ঘণ্টায় ঘণ্টায় জানা যাবে।’ তিনি বলেন, ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের আগ্রহ থাকতে হবে। জোর করে কাউকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করানো যাবে না। কেউ নির্বাচনে না এলে সেই দায়িত্ব আমাদের না। তবে সব রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানাই।’
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘আপনারা জেনে নিন, স্মার্ট কার্ড সামগ্রিক কাজে ব্যবহার করা যাবে। তবে যারা স্মার্ট কার্ড পাননি, তাদেরকে আশ্বস্ত করছি, অবশ্য কার্ড পাবেন।’ প্রকল্প পরিচালক আবুল হাসনাত মোহাম্মদ সায়েম বলেন, ‘স্মার্ট কার্ড মাদার ডকুমেন্ট। দেশে ৩৮৫ উপজেলায় সাত কোটি ৬০ মানুষকে দেওয়া হয়েছে।’ জেলা নির্বাচন কমিশনার কর্মকর্তা এ এইচ এম কামরুল হাসান বলেন, ‘চলতি বছরের জুলাই নাগাদ উপজেলায় মোট ভোটার তিন লাখ ৯০ হাজার ৭১১ জন। মোট ভোটারের দুই লাখ ৮৫ হাজার স্মার্ট কার্ড বিতরণ হবে। কিছু ভোটার আপাতত তথ্য সংক্রান্ত জটিলতায় কার্ড পাবে না। কারণ এখনও প্রিন্ট হয়নি।’
অভিজ্ঞতা না থাকলে অনুমতি পাবে না বিদেশি পর্যবেক্ষক: নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষক নীতিমালার সংশোধনী জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কেবল অভিজ্ঞদেরই ভোট পর্যবেক্ষণের সুযোগ রাখা হয়েছে। আর সুষ্ঠু নির্বাচন পরিপন্থি কাজ করলে নির্বাচনি এলাকা থেকে বহিষ্কারসহ পর্যবেক্ষণের অনুমতি বাতিলের কথাও বলা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার এই নীতিমালা জারি করেছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। বিদেশি পর্যবেক্ষক বা গণমাধ্যমকর্মীদের যোগ্যতা, করণীয়, ভিসা প্রক্রিয়া ইত্যাদি সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে নীতিমালায়।
যোগ্যতা: পর্যবেক্ষক সংস্থাকে নির্বাচনি কাজ, সুশাসন, গণতন্ত্র, শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার সম্পর্কিত কার্যক্রমের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। সংশ্লিষ্ট দেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষ থেকে নিবন্ধিত হতে হবে এবং তার প্রমাণপত্র দাখিল করতে হবে। বাংলাদেশের নির্বাচনি আইন মেনে চলতে হবে। নির্বাচনি অপরাধ কিংবা জাল-জালিয়াতি বা অসততাজনিত কোনও অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি পর্যবেক্ষক হওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য হবেন।
ওযসব তথ্য দাখিল করতে হবে: অভিজ্ঞতার সনদসহ সিভি। মেয়াদ আছে এমন পাসপোর্টের কপি। ইসি নির্ধারিত ঘোষণাপত্র স্বাক্ষরসহ জমা। কভার লেটারসহ আবেদনপত্র যেখানে নামের তালিকা থাকতে হবে।
দোভাষী নিলে তার জন্য সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করতে হবে। নির্বাচন কমিশন বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে আবেদন করতে হবে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের মাধ্যমে। আবেদনপত্র বাছাইয়ের পর তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে অনাপত্তি পত্রের জন্য পাঠাবে ইসি, যার অনুলিপি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের মতামত বা অনাপত্তির বিষয় সাত দিনের মধ্যে সরাসরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ইসিতে পাঠাবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অনাপত্তি মিললে নির্বাচন কমিশন বিদেশি পর্যবেক্ষক হিসেবে ভোট পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যবেক্ষক কার্ড দেবে।
পর্যবেক্ষকদের দায়িত্ব: নির্বাচনি প্রতিবেদন ভোটের দিন থেকে পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে ই-মেইল বা ডাকে করে পাঠাবে। এক্ষেত্রে প্রতিবেদনে ভোটের আগে, ভোটের দিন ও ভোটের পরের পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। নির্বাচনি অনিয়মের ওপর প্রতিবেদন হতে হবে। পর্যবেক্ষণ হতে পক্ষপাতহীন, ফলপ্রসূ ও সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন। ভোটগণনার সময় থাকার জন্য প্রতিটি সংস্থা থেকে একজন মনোনয়ন দিতে পারবে। বিদেশি গণমাধ্যমকেও পর্যবেক্ষকদের সব নিয়ম মেনে চলতে হবে। বিদেশি গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের ইংরেজি ‘জে’ ক্যাটাগরির ভিসা দেওয়া হবে। আর পর্যবেক্ষকরা পাবেন ‘টি’ ক্যাটাগরির ভিসা। বিদেশি গণমাধ্যমকে প্রয়োজনীয় তথ্য দেওয়ার জন্য এবং সম্প্রচার করার জন্য আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন একটি মিডিয়া সেন্টার স্থাপন করবে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। পর্যবেক্ষকদের সহায়তার জন্য এয়ারপোর্ট হেল্প ডেস্ক থাকবে। মিডিয়া সেন্টারের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন থেকে তাদের পর্যবেক্ষক কার্ড গাড়ির স্টিকার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেওয়া হবে। বিদেশি পর্যবেক্ষকরা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করলে, পক্ষপাতমূলক আচরণ করলে পর্যবেক্ষক বা বিদেশি গণমাধ্যমকর্মীর কার্ড বাতিল করতে পারবে কমিশন। এছাড়া রিটার্নিং কর্মকর্তাও সংশ্লিষ্ট পর্যবেক্ষক বা গণমাধ্যমকর্মীকে ভোটকেন্দ্র বা পুরো আসন থেকে বহিষ্কার করতে পারবেন।
যন্ত্রপাতি আনতে যা করতে হবে: পর্যবেক্ষকরা অস্থায়ীভাবে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং উপকরণ আমদানি বা আনতে পারবেন। এজন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। শুল্ক অব্যাহতির জন্য দাখিল করতে হবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। নির্বাচনের পর তারা তাদের যন্ত্রপাতি বা উপকরণ নিয়ে যেতে পারবেন। নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের জন্য সংবিধান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, নির্বাচনি আচরণবিধি, নির্বাচনি বিশেষ ক্ষমতা আইন, স্থানীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক নীতিমালা, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্র্নিধারণ আইনসহ প্রভৃতি আইন মেনে চলতে হবে।
মোটরসাইকেল ব্যবহার করতে পারবেন সাংবাদিকরা: নির্বাচনী কাজে ‘সীমিত পর্যায়ে’ মোটরসাইকেল ব্যবহারে সাংবাদিকদের অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে এক্ষেত্রে মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন, ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
গতকাল মঙ্গলবার আগের নীতিমালায় সংশোধন এনে এমন নির্দেশনা জারি করেছে ইসি। নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটির জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক মো. আশাদুল হক জানিয়েছেন, নীতিমালার ৬ নম্বর নির্দেশনায় সংশোধন আনা হয়েছে। আগে যেখানে বলা হয়েছিল সাংবাদিকরা ভোটের কাজে মোটরসাইকেল ব্যবহার করতে পারবেন না। সংশোধনের পর এখন বলা হলো- সাংবাদিকদের যাতায়াতের জন্য যৌক্তিক সংখ্যক গাড়ির স্টিকার প্রদান করা হবে। প্রয়োজনীয়তার নিরীখে ও বাস্তবতার আলোকে স্থানীয় প্রশাসন (রিটার্নিং অফিসার, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সুপার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার সমন্বিতভাবে) প্রকৃত সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রে গমনাগমন করে সংবাদ সংগ্রহের লক্ষ্যে সীমিত পর্যায়ে মোটরসাইকেল ব্যবহারের অনুমতি দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিককে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের নিয়োগপত্র, প্রেস আইডির কপি, এনআইডির কপি এবং যে মোটরসাইকেল ব্যবহার করা হবে সেই মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশনের কাগজপত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাগজপত্র রিটার্নিং/সহকারী রিটার্নিং অফিসারের নিকট জমা দিতে হবে। রিটার্নিং অফিসার বা রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোটরসাইকেল ব্যবহারের অনুমতি দেবেন। কোনো সাংবাদিকের জন্য গাড়ির স্টিকার প্রদান করা হলে স্টিকারের ক্রমিক নম্বর রেজিস্ট্রারে লিখে রাখতে হবে। এছাড়া নীতিমালার অন্যান্য বিষয় আগের মতোই আছে।
অভিজ্ঞতা না থাকলে অনুমতি পাবে না বিদেশি পর্যবেক্ষক
জনপ্রিয় সংবাদ