নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশসংক্রান্ত জটিলতা অবশেষে কাটতে যাচ্ছে। খুব শিগগির নতুন নীতিমালা অনুযায়ী সাংবাদিকদের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে।
নতুন নীতিমালা অনুযায়ী ১১ সদস্যের ‘প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই বৈঠকে বসছে এ কমিটি। কমিটি প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড ইস্যুর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন তথ্য অধিদপ্তরের (পিআইডি) একটি সূত্র জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) তারা তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে এ কমিটির বিষয়ে অবগত হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে রোববার (১৩ জুলাই) উদ্যোগ শুরু করেছে তারা। আগামী বুধবার (১৬ জুলাই) কমিটির বৈঠক হতে পারে। অবশ্য কমিটির অনুমোদন হয়েছে গত মাসেই।
নতুন নীতিমালা অনুযায়ী দুটি কমিটি গঠন করার বিধান আছে। একটি প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কমিটি, যারা কার্ড ইস্যুর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। আরেকটি অ্যাক্রিডিটেশন আপিল কমিটি। নীতিমালায় কমিটির রূপরেখাও দেওয়া আছে।
একটি শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম তাদের অনলাইন প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় গঠিত ১১ সদস্যের এ কমিটির সভাপতি হিসেবে আছেন প্রধান তথ্য কর্মকর্তা। সদস্য হিসেবে আছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি অনুবিভাগের মহাপরিচালক, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের (ডিএফপি) মহাপরিচালক, তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মো. মাসুদ খান, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবালয় নিরাপত্তা শাখার উপসচিব, জিটিভির জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কাজী জেসিন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, আমার দেশ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক ইলিয়াস হোসেন, ইনডিপেনডেন্ট টিভির যুগ্ম সম্পাদক শামীম আবদুল্লাহ জাহেদী, জাগো নিউজের সম্পাদক কে এম জিয়াউল হক।
নতুন কমিটি তিনটি কাজ করবে। প্রথমত, প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড ইস্যু বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া; দ্বিতীয়ত, অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডসংক্রান্ত আপত্তি বা অভিযোগের শুনানি ও নিষ্পত্তির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া এবং তৃতীয়ত, প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন নীতিমালায় প্রয়োজনীয় সংযোজন, সংশোধন ও পরিমার্জনের বিষয়ে সুপারিশ করা।
কমিটির সদস্যসচিব হিসেবে থাকবেন পিআইডির জ্যেষ্ঠ উপপ্রধান তথ্য কর্মকর্তা (প্রটোকল)। এ কমিটি গঠনের ফলে আগের কমিটি বাতিল করা হয়েছে। নতুন কমিটি তিনটি কাজ করবে। প্রথমত, প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড ইস্যু বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া; দ্বিতীয়ত, অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডসংক্রান্ত আপত্তি বা অভিযোগের শুনানি ও নিষ্পত্তির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া এবং তৃতীয়ত, প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন নীতিমালায় প্রয়োজনীয় সংযোজন, সংশোধন ও পরিমার্জনের বিষয়ে সুপারিশ করা।
বর্তমানে পিআইডির দেওয়া প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড থাকলেও অনেক পেশাদার সাংবাদিক সেই কার্ড দেখিয়ে সচিবালয়ে ঢুকতে পারছেন না। একটি অস্থায়ী তালিকায় নাম থাকা সাংবাদিকেরা প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছেন। সাংবাদিকেরা বলে আসছিলেন, মাসের পর মাস ধরে এ জটিলতা চললেও এর কার্যকর সমাধান না হওয়ায় তাঁরা পেশাগত কাজে প্রতিবন্ধকতায় পড়ছেন।
সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দিয়ে আসছে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন পিআইডি। তাদের তথ্য অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ সরকার আমলের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডধারীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে সাত হাজার। যদিও পরে আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিটি গণমাধ্যমের কার্ডের কোটা কমিয়ে দিয়েছিল। পরে বৈধ কার্ডের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ২ হাজার ৯০০।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিন দফায় মোট ১৬৭ জনের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করে পিআইডি। বিপুলসংখ্যক অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিলের পদক্ষেপ সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য হুমকি ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতের অন্তরায় বলে প্রতিবাদ জানায় সম্পাদক পরিষদ।
সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশসহ (নোয়াব) সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনও উদ্বেগ প্রকাশ করে। তবে সমালোচনার মুখে গত ডিসেম্বরে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, পিআইডি যেসব সাংবাদিকের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করেছে, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে তা পুনর্বিবেচনা করা হবে। কোনো পেশাদার সাংবাদিক তাঁর কার্ড বাতিলের বিষয়টি ন্যায়সংগত মনে না করলে তিনি লিখিতভাবে জানাতে পারবেন। এরপর অধিদপ্তর আবেদন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
এর মধ্যে গত ডিসেম্বরে সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের পর নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়। অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দিয়ে সচিবালয়ে ঢোকার অনুমতি বাতিল করা হয়। এরপর তথ্য অধিদপ্তর জানায়, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অস্থায়ী পাস দেওয়া হবে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার পর নির্ধারিত–সংখ্যক সাংবাদিকের একটি তালিকা করা হয়। তাতে ৬১৫ জন সাংবাদিকের নাম রয়েছে, যাঁরা সচিবালয়ে প্রবেশ করতে পারছেন। অন্যরা কার্ড থাকলেও প্রবেশ করতে পারছেন না। এ নিয়ে অনেক সাংবাদিক ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন নীতিমালা, ২০২২ পুনর্মূল্যায়নে গত জানুয়ারিতে ১৭ সদস্যের কমিটি গঠন করে সরকার। সেই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী বাংলাদেশে কর্মরত দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিকদের জন্য নতুন প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন নীতিমালা জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে জারি করা এই নীতিমালা অনুযায়ী, গণমাধ্যমের সম্পাদক, নির্বাহী সম্পাদক, উপসম্পাদক, বার্তা সম্পাদক, বিভাগীয় সম্পাদক, প্রতিবেদক, আলোকচিত্রী ও ভিডিওগ্রাফারের মোট সংখ্যার আনুপাতিক হারে কার্ড দেওয়ার কথা আছে। তবে কার্ডের সংখ্যা মোট সংখ্যার ৩০ শতাংশের বেশি নয় এবং একক কোনো প্রতিষ্ঠান ১৫টির বেশি কার্ড পাবে না। বর্তমানে স্থায়ী ও অস্থায়ী- এ দুই ধরনের কার্ড দেওয়া হয়। স্থায়ী কার্ডের মেয়াদ তিন বছর এবং অস্থায়ী কার্ডের মেয়াদ এক বছর। নতুন নীতিমালায় সবাই একই ধরনের কার্ড পাবেন। মেয়াদ হবে তিন বছর।
অবসরপ্রাপ্ত অভিজ্ঞ সম্পাদক, বিশিষ্ট সাংবাদিক বা কলামিস্টরা ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড পাবেন। এ ক্ষেত্রে মূলধারার গণমাধ্যমে কমপক্ষে ২০ বছরের সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা ও মূলধারার গণমাধ্যমে বছরে অন্তত ১০টি প্রতিবেদন প্রচার বা প্রকাশের প্রমাণ দাখিল করতে হবে। অবশ্য সাড়ে চার মাস হতে চললেও এ নীতিমালা কার্যকর হয়নি। সেটিই কার্যকর হতে যাচ্ছে এবার।