ঢাকা ০৯:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

অপহৃত শিশুকে প্রতিবন্ধী বানিয়ে করানো হয় ভিক্ষা

  • আপডেট সময় : ০৫:০৫:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
  • ৩ বার পড়া হয়েছে

নারী ও শিশু ডেস্ক: পাবনার শিশু সোয়াইব হোসেনের বয়স ছয় বছর। গত বছরের ২ অক্টোবর তাকে অপহরণ করা হয়। এরপর তার ওপর চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন। সারা শরীরে সিগারেট আর কয়েলের ছ্যাঁকা দেয়া হতো। হাতের নখ উপড়িয়ে, না খাইয়ে রেখে বানানো হয় প্রায় প্রতিবন্ধী। রাতে আটকে রেখে এভাবেই তার ওপর চলেছে নির্যাতন। দিনের বেলায় তাকে দিয়ে করানো হতো ভিক্ষা।

অপহরণের পর তথ্যপ্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে অবশেষে মৃতপ্রায় শিশুটিকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে অভিযুক্ত অপহরণকারী রফিকুল ইসলাম বিপ্লব (৩০)কে। সে শিশুটির মায়ের পূর্ব পরিচিত।

উদ্ধারের পর প্রথম দেখায় মা সোহানা জাহান চিনতে পারেননি তার আদরের সন্তান সোয়াইব হোসেনকে। যে ছেলে ছিল স্বাস্থ্যবান আর মাথাভর্তি ছিল চুল, মাত্র ছয় মাসে সেই সন্তান এখন কঙ্কালসার অবস্থা। এখন পাবনা জেনারেল হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় কাতড়াচ্ছে শিশু সোয়াইব।

অভিযোগে জানা গেছে, পাবনা সদর উপজেলার চক ছাতিয়ানী এলাকার আমিনুল ইসলাম ও সোহানা জাহানের সন্তান সোয়াইব। বাবা অন্যত্র বিয়ে করায় মায়ের কাছেই রয়েছে সে। গত বছরের ২ অক্টোবর একই উপজেলার শানির দিয়ার এলাকার আমজাদ হোসেনের ছেলে রফিকুল ইসলাম বিপ্লব শিশুটিকে বিস্কুট কিনে দেওয়ার কথা বলে অপহরণ করেন।

সন্তানের খোঁজ না পেয়ে ওই বছরের ৭ অক্টোবর পাবনা সদর থানায় একটি জিডি করেন তার মা সোহানা জাহান। তখন আত্মগোপনে চলে যাওয়া বিপ্লব শিশু সোয়াইবের মাকে ফোন করে অপহরণের কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু বেশির ভাগ সময় বিপ্লবের ফোন বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না সোয়াইবের মা।
জিডির পর কেটে যায় ৬টি বছর। সবশেষে ফোন নম্বর ট্র্যাকিং করে তার লোকেশন শনাক্তের পর অপহরণের ছয় মাস পর গত ১৮ এপ্রিল খুলনার রূপসা ফেরিঘাট এলাকা থেকে ভিক্ষা করানো অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার এবং অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম বিপ্লবকে আটক করে পুলিশ।

সম্প্রতি পাবনা পুলিশ শিশুটিসহ প্রতারক বিপ্লবকে পাবনায় নিয়ে আসে। গুরুতর অবস্থায় শিশুটিকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে মঙ্গলবার দুপুরে কথা হয় শিশু সোয়াইবের মা এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে। এ সময় শিশুটির মা সোহানা জাহান জানান, অপহরণের পর তার ছেলেকে বিপ্লব নির্মম নির্যাতন চালিয়ে পঙ্গু করে তাকে দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করাত। শিশু সোয়াইবের হাতে, পিঠে এবং বুকে জ্বলন্ত সিগারেট ও কয়েলের ছ্যাঁকা দেওয়া হতো। হাতের নখ উপড়ে ফেলে, না খাইয়ে রেখে বানানো হয় প্রায় প্রতিবন্ধী। প্রতিদিন রাতে এভাবেই তার ওপর নির্যাতন চালাত এবং দিনে তাকে দিয়ে করানো হতো ভিক্ষা।

গুরুতর অসুস্থ শিশু সোয়াইব জানায়, রাতে তাকে একটি কক্ষে বন্দি করে রাখা হতো এবং প্রায়ই না খাইয়ে রাখা হতো। তার শরীরে দাঁতের কামড় বসিয়ে চামড়া তুলে ফেলত। সারা শরীরে দেওয়া হতো সিগারেট ও কয়েলের আগুনের ছ্যাঁকা। শিশু সোয়াইব পাবনা জেনারেল হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগের ২৬ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন। তার বাম হাতের একটি আঙুল অপারেশন করে কেটে বাদ দেওয়া হয়।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগের প্রধান ডা. মাসুদুর রহমান প্রিন্স বলেন, শিশুটির অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। পচন ধরায় তার হাতের একটা আঙুল কেটে বাদ দিতে হয়েছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পেলে আশা করছি সে সুস্থ হবে। তবে সময় লাগবে।

পাবনা সদর থানার ওসি আব্দুস সালাম জানান, অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে শিশুটিকে প্রতিবন্ধী বানিয়ে তাকে ভিক্ষা করাতেন অভিযুক্ত বিপ্লব। বিপ্লবের হিসাবে ১০ লাখ টাকার সন্ধান পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এসব টাকা ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে জমা করেছে। এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করে অভিযুক্ত বিপ্লবকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

অপহৃত শিশুকে প্রতিবন্ধী বানিয়ে করানো হয় ভিক্ষা

আপডেট সময় : ০৫:০৫:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

নারী ও শিশু ডেস্ক: পাবনার শিশু সোয়াইব হোসেনের বয়স ছয় বছর। গত বছরের ২ অক্টোবর তাকে অপহরণ করা হয়। এরপর তার ওপর চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন। সারা শরীরে সিগারেট আর কয়েলের ছ্যাঁকা দেয়া হতো। হাতের নখ উপড়িয়ে, না খাইয়ে রেখে বানানো হয় প্রায় প্রতিবন্ধী। রাতে আটকে রেখে এভাবেই তার ওপর চলেছে নির্যাতন। দিনের বেলায় তাকে দিয়ে করানো হতো ভিক্ষা।

অপহরণের পর তথ্যপ্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে অবশেষে মৃতপ্রায় শিশুটিকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে অভিযুক্ত অপহরণকারী রফিকুল ইসলাম বিপ্লব (৩০)কে। সে শিশুটির মায়ের পূর্ব পরিচিত।

উদ্ধারের পর প্রথম দেখায় মা সোহানা জাহান চিনতে পারেননি তার আদরের সন্তান সোয়াইব হোসেনকে। যে ছেলে ছিল স্বাস্থ্যবান আর মাথাভর্তি ছিল চুল, মাত্র ছয় মাসে সেই সন্তান এখন কঙ্কালসার অবস্থা। এখন পাবনা জেনারেল হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় কাতড়াচ্ছে শিশু সোয়াইব।

অভিযোগে জানা গেছে, পাবনা সদর উপজেলার চক ছাতিয়ানী এলাকার আমিনুল ইসলাম ও সোহানা জাহানের সন্তান সোয়াইব। বাবা অন্যত্র বিয়ে করায় মায়ের কাছেই রয়েছে সে। গত বছরের ২ অক্টোবর একই উপজেলার শানির দিয়ার এলাকার আমজাদ হোসেনের ছেলে রফিকুল ইসলাম বিপ্লব শিশুটিকে বিস্কুট কিনে দেওয়ার কথা বলে অপহরণ করেন।

সন্তানের খোঁজ না পেয়ে ওই বছরের ৭ অক্টোবর পাবনা সদর থানায় একটি জিডি করেন তার মা সোহানা জাহান। তখন আত্মগোপনে চলে যাওয়া বিপ্লব শিশু সোয়াইবের মাকে ফোন করে অপহরণের কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু বেশির ভাগ সময় বিপ্লবের ফোন বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না সোয়াইবের মা।
জিডির পর কেটে যায় ৬টি বছর। সবশেষে ফোন নম্বর ট্র্যাকিং করে তার লোকেশন শনাক্তের পর অপহরণের ছয় মাস পর গত ১৮ এপ্রিল খুলনার রূপসা ফেরিঘাট এলাকা থেকে ভিক্ষা করানো অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার এবং অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম বিপ্লবকে আটক করে পুলিশ।

সম্প্রতি পাবনা পুলিশ শিশুটিসহ প্রতারক বিপ্লবকে পাবনায় নিয়ে আসে। গুরুতর অবস্থায় শিশুটিকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে মঙ্গলবার দুপুরে কথা হয় শিশু সোয়াইবের মা এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে। এ সময় শিশুটির মা সোহানা জাহান জানান, অপহরণের পর তার ছেলেকে বিপ্লব নির্মম নির্যাতন চালিয়ে পঙ্গু করে তাকে দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করাত। শিশু সোয়াইবের হাতে, পিঠে এবং বুকে জ্বলন্ত সিগারেট ও কয়েলের ছ্যাঁকা দেওয়া হতো। হাতের নখ উপড়ে ফেলে, না খাইয়ে রেখে বানানো হয় প্রায় প্রতিবন্ধী। প্রতিদিন রাতে এভাবেই তার ওপর নির্যাতন চালাত এবং দিনে তাকে দিয়ে করানো হতো ভিক্ষা।

গুরুতর অসুস্থ শিশু সোয়াইব জানায়, রাতে তাকে একটি কক্ষে বন্দি করে রাখা হতো এবং প্রায়ই না খাইয়ে রাখা হতো। তার শরীরে দাঁতের কামড় বসিয়ে চামড়া তুলে ফেলত। সারা শরীরে দেওয়া হতো সিগারেট ও কয়েলের আগুনের ছ্যাঁকা। শিশু সোয়াইব পাবনা জেনারেল হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগের ২৬ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন। তার বাম হাতের একটি আঙুল অপারেশন করে কেটে বাদ দেওয়া হয়।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগের প্রধান ডা. মাসুদুর রহমান প্রিন্স বলেন, শিশুটির অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। পচন ধরায় তার হাতের একটা আঙুল কেটে বাদ দিতে হয়েছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পেলে আশা করছি সে সুস্থ হবে। তবে সময় লাগবে।

পাবনা সদর থানার ওসি আব্দুস সালাম জানান, অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে শিশুটিকে প্রতিবন্ধী বানিয়ে তাকে ভিক্ষা করাতেন অভিযুক্ত বিপ্লব। বিপ্লবের হিসাবে ১০ লাখ টাকার সন্ধান পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এসব টাকা ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে জমা করেছে। এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করে অভিযুক্ত বিপ্লবকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।