ঢাকা ১১:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
প্রশ্ন দেবপ্রিয় ভট্টাচায ভট্টাচার্যের

অন্তর্বর্তী সরকার কি পথ হারাইয়াছে?

  • আপডেট সময় : ০৯:১১:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ৩ বার পড়া হয়েছে

ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য -ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: সংস্কার কার্যক্রমের শুরুর সেই উচ্ছ্বাস কেন স্তিমিত হয়ে গেল, কেন বিভিন্ন কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের পথে গেল না, সেই প্রশ্ন তুলে হতাশা প্রকাশ করেছেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

তিনি বলেছেন, এই অঅন্তর্বর্তীকালীন সরকার কি পথ হারাইয়াছে? এই প্রশ্নটি এখন আমাদের মনের ভেতর বড়ভাবে আসছে।

সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ওয়াচ’ নামের একটি নতুন সংগঠনের ব্যনারে আয়োজিত আলোচনা সভায় কথা বলছিলেন দেবপ্রিয়। তিনি বলেন, অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে ‘বৈষম্যবিরোধী চেতনা’ বাংলাদেশের মানুষ পেয়েছে, তা এই মুহূর্তে ‘সবচেয়ে বড় সম্পদ’ এবং তা রক্ষা করা জরুরি। আমরা যে উচ্ছ্বাস নিয়ে বর্তমান সরকারের সাথে সংস্কারের কার্যক্রম নিয়ে যুক্ত হয়েছিলাম, আজকে সেই উচ্ছ্বাস অনেকটা স্তিমিত হয়ে গেছে। এটা একটা অভিজ্ঞতার বিষয় ছিল। আমরা দেখেছি, যেই সংস্কার প্রক্রিয়ার কথা আমরা বললাম, যেই সংস্কারের প্রক্রিয়ার কথা বলে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিল, তার ভিতরে যে সমস্ত কমিটি হল, কমিশন হল, তার ভিতরে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব যথাযথভাবে ছিল না।

সরকার গঠিত এসব কমিটি ও কমিশনের সংস্কারের প্রস্তাব কোথায় গেল -সেই প্রশ্ন তুলে দেবপ্রিয় বলেন, সেগুলো কোথায় যেন.. মাঠে আর আগাতে পারল না। এটা কি তাদের (সরকার) আকাঙ্ক্ষা অভাব? এটা কি তাদের যোগ্যতার অভাব? এটা কি তাদের সক্ষমতার অভাব? নাকি এটার ভেতরে আরো কোনো ধরনের, বড় ধরনের স্বার্থের সংঘাত লুকিয়ে ছিল ।

নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়া লক্ষ্য করার কথা তুলে ধরে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো বলেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ঝড় যাচ্ছে, এই ঝড়ের মধ্যে আমাদের সম্পদগুলোকে রক্ষা করতে হবে। সরকার আসে, সরকার যায়। জনগণ থাকবে, দেশ থাকবে। এইটাকে মনে রেখে আমরাদের আগামীর কাজের জন্য আমরা আগাচ্ছি।

আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধে সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী সময়ে সবার প্রত্যাশা ছিল বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার। এক বছরে সেই সংস্কার কার্যক্রম কত দূর এগোল?
অন্তর্বর্তী সরকার তার অবশিষ্ট সময়ে সংস্কারকে আর কতটুকু এগিয়ে নিতে পারবে– সেই প্রশ্ন এখন সামনে আসছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। সানেমের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, “সংস্কারের আলোচনা দীর্ঘদিন ধরেই আছে। কিন্তু যারা সংস্কার করবেন, তারা কতটা অনুধাবন করছেন? এখানে রাষ্ট্র ও সরকারের সক্ষমতা ও ইচ্ছার বড় বিষয় জড়িত। তা ছাড়া আমলা, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক এলিটদের সংস্কারবিরোধিতার বিষয় রয়েছে। তাই সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক দলগুলো কতটা অঙ্গীকারাবদ্ধ, সেটাও দেখতে হবে। আরেক আলোচক সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “আগের অনেক সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়নি। এবার কি হবে, সেটার জবাব জরুরি। তবে এবার আমরা সাফল্যের বিষয়ে আশাবাদী। তাই সবাইকে এ কার্যক্রমে যুক্ত করেছি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও দেশে সংস্কারের গ্রহণযোগ্য কোনো পদ্ধতি তৈরি হয়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ছয় মাসও বাকি নেই, এখনো প্রক্রিয়া শেষ না করলে সংস্কার কীভাবে বাস্তবায়িত হবে। কী কী সংস্কার হবে, সেটা এখনো আমরা জানি না। তিনি বলেন, একটি লিখিত কাগজে ৩০টি দল স্বাক্ষর করে দিলেই সংস্কার হয় না। সুপারিশ বাস্তবানে নির্বাহী আদেশ লাগে, অধ্যাদেশ, নির্দিষ্ট বাজেট লাগে। কিছু কিছু দল বলছে, সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না। কিন্তু কী সংস্কার হবে, কীভাবে হবে, সেটা এখনো আমরা জানি না।’ সুশীল সমাজের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে রেহমান সোবহান বলেন, এই সমাজ যদি শুধু সেমিনার আয়োজন ছেড়ে আরেকটু এগিয়ে আসে, তাহলে তা মানুষের জন্য বেশি কাজে লাগবে।

 

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রশ্ন দেবপ্রিয় ভট্টাচায ভট্টাচার্যের

অন্তর্বর্তী সরকার কি পথ হারাইয়াছে?

আপডেট সময় : ০৯:১১:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: সংস্কার কার্যক্রমের শুরুর সেই উচ্ছ্বাস কেন স্তিমিত হয়ে গেল, কেন বিভিন্ন কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের পথে গেল না, সেই প্রশ্ন তুলে হতাশা প্রকাশ করেছেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

তিনি বলেছেন, এই অঅন্তর্বর্তীকালীন সরকার কি পথ হারাইয়াছে? এই প্রশ্নটি এখন আমাদের মনের ভেতর বড়ভাবে আসছে।

সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ওয়াচ’ নামের একটি নতুন সংগঠনের ব্যনারে আয়োজিত আলোচনা সভায় কথা বলছিলেন দেবপ্রিয়। তিনি বলেন, অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে ‘বৈষম্যবিরোধী চেতনা’ বাংলাদেশের মানুষ পেয়েছে, তা এই মুহূর্তে ‘সবচেয়ে বড় সম্পদ’ এবং তা রক্ষা করা জরুরি। আমরা যে উচ্ছ্বাস নিয়ে বর্তমান সরকারের সাথে সংস্কারের কার্যক্রম নিয়ে যুক্ত হয়েছিলাম, আজকে সেই উচ্ছ্বাস অনেকটা স্তিমিত হয়ে গেছে। এটা একটা অভিজ্ঞতার বিষয় ছিল। আমরা দেখেছি, যেই সংস্কার প্রক্রিয়ার কথা আমরা বললাম, যেই সংস্কারের প্রক্রিয়ার কথা বলে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিল, তার ভিতরে যে সমস্ত কমিটি হল, কমিশন হল, তার ভিতরে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব যথাযথভাবে ছিল না।

সরকার গঠিত এসব কমিটি ও কমিশনের সংস্কারের প্রস্তাব কোথায় গেল -সেই প্রশ্ন তুলে দেবপ্রিয় বলেন, সেগুলো কোথায় যেন.. মাঠে আর আগাতে পারল না। এটা কি তাদের (সরকার) আকাঙ্ক্ষা অভাব? এটা কি তাদের যোগ্যতার অভাব? এটা কি তাদের সক্ষমতার অভাব? নাকি এটার ভেতরে আরো কোনো ধরনের, বড় ধরনের স্বার্থের সংঘাত লুকিয়ে ছিল ।

নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়া লক্ষ্য করার কথা তুলে ধরে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো বলেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ঝড় যাচ্ছে, এই ঝড়ের মধ্যে আমাদের সম্পদগুলোকে রক্ষা করতে হবে। সরকার আসে, সরকার যায়। জনগণ থাকবে, দেশ থাকবে। এইটাকে মনে রেখে আমরাদের আগামীর কাজের জন্য আমরা আগাচ্ছি।

আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধে সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী সময়ে সবার প্রত্যাশা ছিল বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার। এক বছরে সেই সংস্কার কার্যক্রম কত দূর এগোল?
অন্তর্বর্তী সরকার তার অবশিষ্ট সময়ে সংস্কারকে আর কতটুকু এগিয়ে নিতে পারবে– সেই প্রশ্ন এখন সামনে আসছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। সানেমের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, “সংস্কারের আলোচনা দীর্ঘদিন ধরেই আছে। কিন্তু যারা সংস্কার করবেন, তারা কতটা অনুধাবন করছেন? এখানে রাষ্ট্র ও সরকারের সক্ষমতা ও ইচ্ছার বড় বিষয় জড়িত। তা ছাড়া আমলা, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক এলিটদের সংস্কারবিরোধিতার বিষয় রয়েছে। তাই সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক দলগুলো কতটা অঙ্গীকারাবদ্ধ, সেটাও দেখতে হবে। আরেক আলোচক সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “আগের অনেক সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়নি। এবার কি হবে, সেটার জবাব জরুরি। তবে এবার আমরা সাফল্যের বিষয়ে আশাবাদী। তাই সবাইকে এ কার্যক্রমে যুক্ত করেছি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও দেশে সংস্কারের গ্রহণযোগ্য কোনো পদ্ধতি তৈরি হয়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ছয় মাসও বাকি নেই, এখনো প্রক্রিয়া শেষ না করলে সংস্কার কীভাবে বাস্তবায়িত হবে। কী কী সংস্কার হবে, সেটা এখনো আমরা জানি না। তিনি বলেন, একটি লিখিত কাগজে ৩০টি দল স্বাক্ষর করে দিলেই সংস্কার হয় না। সুপারিশ বাস্তবানে নির্বাহী আদেশ লাগে, অধ্যাদেশ, নির্দিষ্ট বাজেট লাগে। কিছু কিছু দল বলছে, সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না। কিন্তু কী সংস্কার হবে, কীভাবে হবে, সেটা এখনো আমরা জানি না।’ সুশীল সমাজের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে রেহমান সোবহান বলেন, এই সমাজ যদি শুধু সেমিনার আয়োজন ছেড়ে আরেকটু এগিয়ে আসে, তাহলে তা মানুষের জন্য বেশি কাজে লাগবে।