ঢাকা ০৪:৪৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫

অনেক মায়ের কোল বাঁচিয়ে চলে গেলেন মাহেরীন, ঘরে রইল দুই সন্তান

  • আপডেট সময় : ০৯:২৩:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫
  • ২৯ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঘড়ির কাঁটা তখন দুপুর সোয়া একটা থেকে দেড়টার ঘরে; রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিকট শব্দ করে আছড়ে পড়ে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান।
মুহূর্তেই প্রতিষ্ঠানটির ‘হায়দার আলী’ নামে দ্বিতল ওই ভবন দাউ-দাউ করে জ্বলে ওঠে। আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করে নেয় শ্রেণিকক্ষে থাকা ছোট ছোট শিশুকে। এদের বেশির ভাগই ছিল তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, এত ক্ষিপ্র গতিতে বিমানটি আছড়ে পড়ে যে, আশপাশের এলাকাও কেঁপে ওঠে।
সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরের এ বিভীষিকায় মুহূর্তেই প্রাণ হারায় অনেক শিশু। তাদের সঙ্গে মারা যান আরেকজন- মাহেরীন চৌধুরী, যিনি মাইলস্টোনের ওই শাখায় কো-অর্ডিনেটর ছিলেন। সেখানে থাকা এবং পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ব্যক্তিরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে গিয়ে মাহেরিন নিজে বের হতে দেরি করেন। তার ভাই মুনাফ মুজিব চৌধুরী বলছিলেন, তার বোনের মনে জোর ছিল অনেক বেশি। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, বিমান দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ পর ঠিক কে ফোন করেছিল বলতে পারব না। ফোন করে আমাদের পরিবারের একজনকে বলল, ‘ওনার অবস্থা গুরুতর। ওনাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে’। আমাদেরকে যেতে বলেন। ফোন পাওয়ার পরেই আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে যোগাযোগ করে সবাই মিলে হাসপাতালে যান মুনাফ। তিনি বলছিলেন, বার্ন ইন্সটিটিউটে তারা যাওয়ার পরও জীবিত ছিলেন তার বোন। বার্ন ইন্সটিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাকে। গিয়ে আমরা তাকে পাই। তখনও উনি জীবিত ছিলেন; কথা বলছিলেন। কিন্তু তার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। আসলে ওনার মানসিক জোর ছিল অনেক। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে মুনাফ বলছিলেন, আগে বের হওয়ার সুযোগ থাকলেও মাহেরিন বের হননি। ওখানে যারা ছিলেন, তারা আমাদের বলেছেন, উনি তো আসলে আগে বের হতে পারতেন। উনি আগে বের হননি। ওনার শিক্ষার্থী যারা ছিল, উনি তাদের আগে বের করার জন্য চেষ্টা করেছেন।

পরিবারের সঙ্গে মাইলস্টোনের নিহত শিক্ষক মাহেরীন চৌধুরী -ছবি সংগৃহীত

তিনি বলেন, এতে করি যেটা হয়েছে, উনি এত বেশি ধোঁয়া আর আগুনে আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিলেন যে, উনার শ্বাসনালি পুরোপুরি পুড়ে গিয়েছিল। পরে আইসিউতে নেওয়ার পর নিশ্চিত হতে পারি যে, উনার শ্বাসনালি পুরোপুরি পুড়ে গেছে। দগ্ধ হওয়ার পর তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে তাকে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, তার শরীরের শতভাগই দগ্ধ হয়েছিল। আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছিলেন তিনি। সোমবার রাত ৯টার কিছু আগে আইসিউতেই মারা যান মাহেরীন চৌধুরী। মঙ্গলবার গ্রামের বাড়ি নীলফামারির জলঢাকা উপজেলার বগুলাগাড়িতে তার লাশ নিয়ে যান স্বজনরা। সেখানে জানাজার পর তার দাফন হয়। এর আগে ভোরে ঢাকার উত্তরায় গাউছুল আজম জামে মসজিদে তার জানাজা হয়। লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার আগে স্বামীর সঙ্গে খুবই অল্প সময় কথা হয় মাহেরীনের। তার স্বামী মনসুর হেলাল বলছিলেন, মাহরিন বলেছেন- স্কুল ছুটির পর বাচ্চাদের নিয়ে বের হচ্ছিলেন। ঠিক তখনই গেটের সামনে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। নিজে দগ্ধ হলেও সেসময় তিনি বাচ্চাদের বাঁচানোর চেষ্টা করেন।
তার স্বামী মনসুর হেলাল বেসরকারি চাকরিজীবী। এই দম্পতির এক ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। তারা দুজনে স্কুলে পড়াশোনা করেন। তারা থাকতেন উত্তরাতেই। একজনের বয়স ১৪ বছর; সে নবম শ্রেণিতে উঠেছিল কেবল। আরেকজন ছিল ও লেভেলের শিক্ষার্থী; যার বয়স ১৫ কি ১৬। অল্প বয়সেই মা হারা হল বাচ্চা দুটি।

শহীদ জিয়াউর রহমানের ভাতিজি মাহেরীন: আত্মত্যাগ ও সাহসিকতার আলোকবর্তিকা শিক্ষক মাহেরীন চৌধুরী। তিনি নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বগুলাগাড়ি এলাকার মেয়ে। তিনি স্থানীয় বগুলাগাড়ি স্কুল অ্যান্ড কলেজের নির্বাহী কমিটির সভাপতি ছিলেন। পাশাপাশি মাহেরীন চৌধুরীর পারিবারিক পরিচয়ও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাতিজি। মাহেরীন চৌধুরীর বাবার নাম মহিতুর রহমান চৌধুরী ও মা সাবেরা চৌধুরী। মাহেরীনের দাদি রওশানারা চৌধুরী ছিলেন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের খালা।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনবহুল এলাকায় যুদ্ধবিমানের প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন

অনেক মায়ের কোল বাঁচিয়ে চলে গেলেন মাহেরীন, ঘরে রইল দুই সন্তান

আপডেট সময় : ০৯:২৩:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঘড়ির কাঁটা তখন দুপুর সোয়া একটা থেকে দেড়টার ঘরে; রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিকট শব্দ করে আছড়ে পড়ে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান।
মুহূর্তেই প্রতিষ্ঠানটির ‘হায়দার আলী’ নামে দ্বিতল ওই ভবন দাউ-দাউ করে জ্বলে ওঠে। আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করে নেয় শ্রেণিকক্ষে থাকা ছোট ছোট শিশুকে। এদের বেশির ভাগই ছিল তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, এত ক্ষিপ্র গতিতে বিমানটি আছড়ে পড়ে যে, আশপাশের এলাকাও কেঁপে ওঠে।
সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরের এ বিভীষিকায় মুহূর্তেই প্রাণ হারায় অনেক শিশু। তাদের সঙ্গে মারা যান আরেকজন- মাহেরীন চৌধুরী, যিনি মাইলস্টোনের ওই শাখায় কো-অর্ডিনেটর ছিলেন। সেখানে থাকা এবং পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ব্যক্তিরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে গিয়ে মাহেরিন নিজে বের হতে দেরি করেন। তার ভাই মুনাফ মুজিব চৌধুরী বলছিলেন, তার বোনের মনে জোর ছিল অনেক বেশি। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, বিমান দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ পর ঠিক কে ফোন করেছিল বলতে পারব না। ফোন করে আমাদের পরিবারের একজনকে বলল, ‘ওনার অবস্থা গুরুতর। ওনাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে’। আমাদেরকে যেতে বলেন। ফোন পাওয়ার পরেই আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে যোগাযোগ করে সবাই মিলে হাসপাতালে যান মুনাফ। তিনি বলছিলেন, বার্ন ইন্সটিটিউটে তারা যাওয়ার পরও জীবিত ছিলেন তার বোন। বার্ন ইন্সটিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাকে। গিয়ে আমরা তাকে পাই। তখনও উনি জীবিত ছিলেন; কথা বলছিলেন। কিন্তু তার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। আসলে ওনার মানসিক জোর ছিল অনেক। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে মুনাফ বলছিলেন, আগে বের হওয়ার সুযোগ থাকলেও মাহেরিন বের হননি। ওখানে যারা ছিলেন, তারা আমাদের বলেছেন, উনি তো আসলে আগে বের হতে পারতেন। উনি আগে বের হননি। ওনার শিক্ষার্থী যারা ছিল, উনি তাদের আগে বের করার জন্য চেষ্টা করেছেন।

পরিবারের সঙ্গে মাইলস্টোনের নিহত শিক্ষক মাহেরীন চৌধুরী -ছবি সংগৃহীত

তিনি বলেন, এতে করি যেটা হয়েছে, উনি এত বেশি ধোঁয়া আর আগুনে আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিলেন যে, উনার শ্বাসনালি পুরোপুরি পুড়ে গিয়েছিল। পরে আইসিউতে নেওয়ার পর নিশ্চিত হতে পারি যে, উনার শ্বাসনালি পুরোপুরি পুড়ে গেছে। দগ্ধ হওয়ার পর তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে তাকে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, তার শরীরের শতভাগই দগ্ধ হয়েছিল। আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছিলেন তিনি। সোমবার রাত ৯টার কিছু আগে আইসিউতেই মারা যান মাহেরীন চৌধুরী। মঙ্গলবার গ্রামের বাড়ি নীলফামারির জলঢাকা উপজেলার বগুলাগাড়িতে তার লাশ নিয়ে যান স্বজনরা। সেখানে জানাজার পর তার দাফন হয়। এর আগে ভোরে ঢাকার উত্তরায় গাউছুল আজম জামে মসজিদে তার জানাজা হয়। লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার আগে স্বামীর সঙ্গে খুবই অল্প সময় কথা হয় মাহেরীনের। তার স্বামী মনসুর হেলাল বলছিলেন, মাহরিন বলেছেন- স্কুল ছুটির পর বাচ্চাদের নিয়ে বের হচ্ছিলেন। ঠিক তখনই গেটের সামনে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। নিজে দগ্ধ হলেও সেসময় তিনি বাচ্চাদের বাঁচানোর চেষ্টা করেন।
তার স্বামী মনসুর হেলাল বেসরকারি চাকরিজীবী। এই দম্পতির এক ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। তারা দুজনে স্কুলে পড়াশোনা করেন। তারা থাকতেন উত্তরাতেই। একজনের বয়স ১৪ বছর; সে নবম শ্রেণিতে উঠেছিল কেবল। আরেকজন ছিল ও লেভেলের শিক্ষার্থী; যার বয়স ১৫ কি ১৬। অল্প বয়সেই মা হারা হল বাচ্চা দুটি।

শহীদ জিয়াউর রহমানের ভাতিজি মাহেরীন: আত্মত্যাগ ও সাহসিকতার আলোকবর্তিকা শিক্ষক মাহেরীন চৌধুরী। তিনি নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বগুলাগাড়ি এলাকার মেয়ে। তিনি স্থানীয় বগুলাগাড়ি স্কুল অ্যান্ড কলেজের নির্বাহী কমিটির সভাপতি ছিলেন। পাশাপাশি মাহেরীন চৌধুরীর পারিবারিক পরিচয়ও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাতিজি। মাহেরীন চৌধুরীর বাবার নাম মহিতুর রহমান চৌধুরী ও মা সাবেরা চৌধুরী। মাহেরীনের দাদি রওশানারা চৌধুরী ছিলেন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের খালা।