ঢাকা ০৫:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫

অনেক প্রশ্ন রেখে গেলেন অবন্তিকা

  • আপডেট সময় : ০২:২৫:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ মার্চ ২০২৪
  • ১৮৪ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : ‘এটাই বুঝি আমার প্রাপ্য ছিল। আমি এখন সন্তানহারা। এর বিচার কার কাছে দেব? আজকে আল্লাহ আমার এত বড় ক্ষতি করল?’ এভাবেই আহাজারি করছেন শিক্ষক ও সহপাঠীকে দায়ী করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আত্মহত্যা করা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম।
গত শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাতে অবন্তিকার আত্মহত্যার পর সাংবাদিকদের কাছে এভাবেই নিজের কষ্ট প্রকাশ করেন তিনি। কিছুদিন আগে স্বামী হারানো তাহমিনা শবনমের আহাজারি থামছেই না। বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বনের মৃত্যু শোকে পাথর হয়ে গেছেন তিনি। তাহমিনা শবনম বলেন, ‘হায় রে অবন্তিকা তুই আমারে কত বলছিলি মা একটা জিডি করো, মা একটা জিডি করো। আমি বলেছি মা এগুলা করব না। আল্লায় বিচার করবে। আমার আল্লাহর ওপর বিশ্বাস ছিল। শেষে আল্লাহ আমার কাছ থেকে তোকেই নিয়ে গেল!
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম বলেন, ঢাকায় কিছুদিন আগে মেয়েটা কলতা বাজারে ছিল। ইউনিভার্সিটির ছেলেগুলা ওই বাসা পর্যন্ত গিয়ে জানাইছে যে ওর নামে জিডি আছে। পরে তাকে সেখান থেকে বের করে দিয়েছে। অবন্তিকা এসে বলেছে মা ওরা তো আমাকে মেন্টাল টর্চার করছে। আমি পড়তে পারি না। পরে আমি ওর সঙ্গে গেলাম ঢাকায়। আমি যখন গেলাম মেয়েরা তখন চুপ। আমি বুঝতে দেই নাই মেয়েদেরকে যে অবন্তিকার পরীক্ষা চলতেছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, অবন্তিকাকে টর্চার করার জন্য ইউনিভার্সিটি থেকে ইন্ধন দিয়ে রাখছে । অবন্তিকার আত্মহত্যার জন্য তার সহপাঠী রাফি, আম্মান, মাহিয়া, লাকি, রিমি, আঁখি, বন্যা ও সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে দায়ী করেছেন তাহমিনা শবনম।
অবন্তিকার মায়ের অভিযোগ, ‘তারা পুলিশ দিয়ে আমাকে ফোন দিয়েছে। শুনেছি ওই পুলিশ তাদের এলাকার ভাই। পরে আমি ডিআইজিকে ফোন দিয়েছি। উনি বলেছেন, ভাবী আপনি আমাকে বলতেন আমি ব্যবস্থা নিতাম। এক পর্যায়ে দেখলাম বিষয়টি ইউনিভার্সিটিতে মোটামুটি রফাদফা হয়েছে। তারপরও আমি চেয়ারম্যানের কাছে গিয়ে ১০টা নাম দিয়েছি। চেয়ারম্যান আমার সামনেই প্রক্টরকে ফোন দিয়েছেন ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। প্রক্টর কী ব্যবস্থা নিল?’
তাহমিনা শবনম বলেন, অবন্তিকার বাবা হাসপাতালে থাকার সময় তারা মেয়েটাকে বিভিন্ন কথা বলে মানসিক টর্চার করতো। তারা বলতো ‘তোর বাবার কাছে যাস নাই? ‘তোর বাবা হাসপাতালে আর তুই প্রোগ্রাম করিস?’ এভাবে মেয়েটাকে মেন্টাল টর্চারে রেখেছিল তারা। এরপর তার বাবা মারা যাওয়ার পর তারা অবন্তিকাকে দেখলে বলতো, ‘বাবা নাই মানসিক সমস্যা হচ্ছে না? ‘আহারে বাবাটা মরে গেল, মানসিক সমস্যা হচ্ছে? এই টর্চারের কী বিচার চাইব? কার কাছে চাইব?’
প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাতে সহকারী প্রক্টর ও আম্মান সিদ্দিকী নামের এক সহপাঠীকে দায়ী করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস নেন ফাইরুজ অবন্তিকা নামের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্রী। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও ‘পিসি পার্ক স্মরণিকা’ নামের ১০ তলা ভবনের দ্বিতীয় তলার বাসায় আত্মহত্যা করেন তিনি। স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনা দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের জন্ম দিয়েছে। মৃত ফাইরুজ অবন্তিকা কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকার বাসিন্দা। তিনি কুমিল্লা সরকারি কলেজের সাবেক শিক্ষক প্রয়াত অধ্যাপক জামাল উদ্দিনের মেয়ে। এদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) এক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনায় সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে অব্যাহতি ও সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকীকে বহিষ্কার করা হচ্ছে। এছাড়াও এই ঘটনায় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করার আশ্বাস দিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম। শুক্রবার মধ্যরাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি এ আশ্বাস দেন।
অবন্তিকার পরিবার মামলা করলে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ: জবি: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার ‘আত্মহত্যার’ ঘটনায় পরিবার মামলা করলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার আইনুল ইসলাম। শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অবন্তিকার মৃত্যুর ঘটনায় নাম আসা শিক্ষার্থী আম্মান সিদ্দিককে গ্রেপ্তারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। কিন্তু কোনো শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়ার এখতিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। পরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার আইনুল ইসলাম বলেন, “গ্রেপ্তারের নির্দেশ বিশ্ববিদ্যালয় আইনে নেই। গ্রেপ্তারটা হলো আইনের বিষয়। তার পরিবার থেকে যদি মামলা করে তাহলে পুলিশ মামলা সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবে। “প্রেস রিলিজে এটা দেওয়া ঠিক হয়নি। গতকাল রাতে আইন সংস্থার লোকজন ছিল, তাদের হয়ত বলেছে। এর বেশি কিছু নয়।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও তথ্য প্রকাশনা বিভাগের উপ পরিচালক মোহাম্মদ ফিরোজ আলম স্বাক্ষিরত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “ফাইরুজ অবন্তিকার মৃত্যুর কারণ হিসেবে তার সুইসাইড নোটে দেয়া আইন বিভাগের ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষের (১৪তম ব্যাচের) অভিযুক্ত শিক্ষার্থী রায়হান সিদ্দিকি আম্মান (আইডি নং-বি ১৮০৫০১০১৬)-কে সাময়িক বহিষ্কার ও দ্রুত গ্রেপ্তারে নির্দেশ এবং অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে সহায়তাকারী ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব দ্বীন ইসলাম-কে সাময়িক বরখাস্ত ও প্রক্টরিয়াল বডি থেকে তাৎক্ষণিক অব্যাহতি প্রদান করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।”
এছাড়া ঘটনা তদন্তে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক জাকির হোসেনকে আহ্বায়ক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কর্মকর্তা রঞ্জন কুমার দাসকে সদস্য সচিব করে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করার কথাও জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন। এদিকে শনিবার সকালে অবন্তিকার জানাজায় অংশ নিতে বিভাগের সহপাঠীরা তার গ্রামের বাড়ি যান। আর রাতে কুমিল্লায় গেছে প্রক্টরিয়াল বডির একটি দলও।
অবন্তিকার মৃত্যুর পর অভিযোগের আঙুল ওঠা তার সহপাঠী ও শিক্ষককে বিচারের আওতায় আনার দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার রাত ১টায় উপাচার্য সাদেকা হালিম ক্যাম্পাসে গেলে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে আটকে দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তখন সাদেকা হালিম শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ায় ঘোষণা দেন। এ সময় উপাচার্য দোষীদের শাস্তি নিশ্চিতের আশ্বাস দেন।
চিরনিদ্রায় বাবার পাশে অবন্তিকা: ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকাকে তার বাবার কবরের পাশেই দাফন করা হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকাল ৩টায় কুমিল্লা সরকারি কলেজ মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অবন্তিকার বিভাগের সহপাঠীরা ছাড়াও স্থানীয় বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নেন। অবন্তিকার মামা মাহবুবুর রহমান আগেই বাবার কবরের পাশে তার ভাগ্নিকে দাফন করার কথা জানিয়েছিলেন। এর আগে ময়নাতদন্ত শেষে দুপুর ১টার দিকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে বাগিচাগাঁওয়ের বাসার সামনে আনা হয় অবন্তিকার মরদেহ। নগরীর বাগিচাগাঁও ফায়ার সার্ভিস সংলগ্ন ‘অরনি ভবনের’ সামনে অবন্তিকার মরদেহ নিয়ে লাশবাহী গাড়ি পৌঁছালে বাসা থেকে বেরিয়ে আসেন তার মা তাহমিনা শবনম। মেয়ের মরদেহ দেখে বিলাপ করতে করতে তাহমিনা শবনম বলেন, “আল্লাহ আমার স্বামীও নিলো, মেয়েও নিলো। এই আমি কার লাশ দেখছি? এটাতো আমার তিল তিল করে গড়ে ওঠা স্বপ্নের লাশ দেখছি।” এ কথা বলেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। পরে আত্মীয়রা তাকে ধরাধরি করে বাসায় নিয়ে যান। এ সময় এলাকাজুড়ে কান্নার রোল উঠে।

কুমিল্লা সরকারি কলেজের সাবেক শিক্ষক প্রয়াত অধ্যাপক জামাল উদ্দিনের মেয়ে ফাইরুজ শুক্রবার রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও ‘পিসি পার্ক স্মরণিকা’ নামের ১০ তলা ভবনের দ্বিতীয় তলার বাসায় গলায় রশি বেঁধে ফ্যানে ঝুলে আত্মহত্যা করেন। মৃত্যুর ১০ মিনিট পূর্বে নিজের ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে তিনি এ ঘটনার জন্য আম্মান সিদ্দিকী নামে তার এক সহপাঠীকে দায়ী করেছেন। একইসঙ্গে সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকেও এ ঘটনার জন্য দায়ী করেন। এদিকে এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যানারে শনিবার বিকেল তিনটায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। অবন্তিকার মৃত্যুতে বিক্ষোভ হয়েছে কুমিল্লাতেও।
মা তাহমিনা শবনমের অভিযোগ, এক বছর আগে থেকে অবন্তিকার এক সহপাঠী নানাভাবে তাঁকে উৎপীড়ন করতেন। এ নিয়ে তাঁর মেয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের কাছে নালিশ করেন। কিন্তু সহকারী প্রক্টর ঘটনার বিচার করেননি, উল্টো মেয়েকে ডেকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। ওই ছেলের পক্ষ নেন তিনি। তখন ওই ছেলে আরও বেপরোয়া হয়ে পড়েন। আপত্তিকর মন্তব্য করতেন, হুমকি দিতেন। এসব ঘটনার বিচার চেয়ে না পেয়ে তাঁর মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। মেয়ের এমন মৃত্যু অপ্রত্যাশিত।
তাহমিনা শবনম বলেন, ‘মৃত্যুর কয়েক মিনিট আগে রাত সাড়ে ৯টার দিকে আমাকে পানি দিয়ে গেল এক গ্লাস। এর কিছুক্ষণ পর ওর রুমে ফ্যানের শব্দ না পেয়ে ডাকাডাকি করি। কোনো সাড়া মেলেনি। পরে ছেলেকে নিচে পাঠাই। ও দারোয়ানকে নিয়ে মই দিয়ে পূর্ব পাশের জানালা খুলে দেখতে পায়, ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আছে ও। এরপর পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা পুলিশের একজন সদস্যসহ আমরা ওকে নামাই। এরপর কুমিল্লা সদর হাসপাতালে নিই। সেখান থেকে মেয়েকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’
শুক্রবার ইফতারের পর মেয়েকে বিষণ্ন দেখেছিলেন মা তাহমিনা শবনম। তখন মন খারাপ কেন জানতে চেয়েছিলেন মা। অবন্তিকা শুধু বলেছিলেন, ‘এমনি।’ কিন্তু মেয়ে যে আত্মহত্যা করবে, এটা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি তিনি। অবন্তিকা নানা সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে জানালেন মা।
ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার বাবা মো. জামাল উদ্দিন মৃত্যুর আগে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। এ ছাড়া তিনি কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ ও কুমিল্লা সরকারি কলেজে দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করেছেন। ২০২৩ সালের ১২ এপ্রিল রোজার সময় তিনি মারা যান। জামাল উদ্দিনকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া সরকারি কলেজ ভোট কেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করার সময় কুপিয়ে জখম করা হয়। তাঁদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা শহরতলির শাসনগাছা মহাজন বাড়ি এলাকায়। অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম কুমিল্লা পুলিশ লাইনস উচ্চবিদ্যালয়ের খ-কালীন শিক্ষক ছিলেন। এ ছাড়া তিনি উপস্থাপনা করতেন। অবন্তিকার ছোট ভাই এসএসসি পরীক্ষার্থী।
অবন্তিকার মামা কুমিল্লা শহরতলির চাঁনপুর এলাকার বাসিন্দা এ বি এম লুৎফর আনোয়ার ভূঞা বলেন, ‘এক বছরের মাথায় আমার বোনটি স্বামী ও মেয়েকে হারাল। এ শোক কেমনে সইবে! এটা আত্মহত্যা নয়, তিলে তিলে মানসিক নির্যাতন করে মারা। এর বিচার চাই আমরা।’ কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক নিয়ামুল হোসাইন বলেন, এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।
বিক্ষোভ কুমিল্লায়: ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার মৃত্যুকে ‘হত্যা’ দাবি করে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেছে কুমিল্লার সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জোট। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে নগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড়ের পূবালী চত্বরে ঘণ্টাব্যাপী এই কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় বক্তারা জবির সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও শিক্ষার্থী আম্মান সিদ্দিকীসহ অবন্তিকার মৃত্যুর নেপথ্যে জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

অনেক প্রশ্ন রেখে গেলেন অবন্তিকা

আপডেট সময় : ০২:২৫:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ মার্চ ২০২৪

প্রত্যাশা ডেস্ক : ‘এটাই বুঝি আমার প্রাপ্য ছিল। আমি এখন সন্তানহারা। এর বিচার কার কাছে দেব? আজকে আল্লাহ আমার এত বড় ক্ষতি করল?’ এভাবেই আহাজারি করছেন শিক্ষক ও সহপাঠীকে দায়ী করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আত্মহত্যা করা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম।
গত শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাতে অবন্তিকার আত্মহত্যার পর সাংবাদিকদের কাছে এভাবেই নিজের কষ্ট প্রকাশ করেন তিনি। কিছুদিন আগে স্বামী হারানো তাহমিনা শবনমের আহাজারি থামছেই না। বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বনের মৃত্যু শোকে পাথর হয়ে গেছেন তিনি। তাহমিনা শবনম বলেন, ‘হায় রে অবন্তিকা তুই আমারে কত বলছিলি মা একটা জিডি করো, মা একটা জিডি করো। আমি বলেছি মা এগুলা করব না। আল্লায় বিচার করবে। আমার আল্লাহর ওপর বিশ্বাস ছিল। শেষে আল্লাহ আমার কাছ থেকে তোকেই নিয়ে গেল!
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম বলেন, ঢাকায় কিছুদিন আগে মেয়েটা কলতা বাজারে ছিল। ইউনিভার্সিটির ছেলেগুলা ওই বাসা পর্যন্ত গিয়ে জানাইছে যে ওর নামে জিডি আছে। পরে তাকে সেখান থেকে বের করে দিয়েছে। অবন্তিকা এসে বলেছে মা ওরা তো আমাকে মেন্টাল টর্চার করছে। আমি পড়তে পারি না। পরে আমি ওর সঙ্গে গেলাম ঢাকায়। আমি যখন গেলাম মেয়েরা তখন চুপ। আমি বুঝতে দেই নাই মেয়েদেরকে যে অবন্তিকার পরীক্ষা চলতেছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, অবন্তিকাকে টর্চার করার জন্য ইউনিভার্সিটি থেকে ইন্ধন দিয়ে রাখছে । অবন্তিকার আত্মহত্যার জন্য তার সহপাঠী রাফি, আম্মান, মাহিয়া, লাকি, রিমি, আঁখি, বন্যা ও সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে দায়ী করেছেন তাহমিনা শবনম।
অবন্তিকার মায়ের অভিযোগ, ‘তারা পুলিশ দিয়ে আমাকে ফোন দিয়েছে। শুনেছি ওই পুলিশ তাদের এলাকার ভাই। পরে আমি ডিআইজিকে ফোন দিয়েছি। উনি বলেছেন, ভাবী আপনি আমাকে বলতেন আমি ব্যবস্থা নিতাম। এক পর্যায়ে দেখলাম বিষয়টি ইউনিভার্সিটিতে মোটামুটি রফাদফা হয়েছে। তারপরও আমি চেয়ারম্যানের কাছে গিয়ে ১০টা নাম দিয়েছি। চেয়ারম্যান আমার সামনেই প্রক্টরকে ফোন দিয়েছেন ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। প্রক্টর কী ব্যবস্থা নিল?’
তাহমিনা শবনম বলেন, অবন্তিকার বাবা হাসপাতালে থাকার সময় তারা মেয়েটাকে বিভিন্ন কথা বলে মানসিক টর্চার করতো। তারা বলতো ‘তোর বাবার কাছে যাস নাই? ‘তোর বাবা হাসপাতালে আর তুই প্রোগ্রাম করিস?’ এভাবে মেয়েটাকে মেন্টাল টর্চারে রেখেছিল তারা। এরপর তার বাবা মারা যাওয়ার পর তারা অবন্তিকাকে দেখলে বলতো, ‘বাবা নাই মানসিক সমস্যা হচ্ছে না? ‘আহারে বাবাটা মরে গেল, মানসিক সমস্যা হচ্ছে? এই টর্চারের কী বিচার চাইব? কার কাছে চাইব?’
প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাতে সহকারী প্রক্টর ও আম্মান সিদ্দিকী নামের এক সহপাঠীকে দায়ী করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস নেন ফাইরুজ অবন্তিকা নামের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্রী। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও ‘পিসি পার্ক স্মরণিকা’ নামের ১০ তলা ভবনের দ্বিতীয় তলার বাসায় আত্মহত্যা করেন তিনি। স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনা দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের জন্ম দিয়েছে। মৃত ফাইরুজ অবন্তিকা কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকার বাসিন্দা। তিনি কুমিল্লা সরকারি কলেজের সাবেক শিক্ষক প্রয়াত অধ্যাপক জামাল উদ্দিনের মেয়ে। এদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) এক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনায় সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে অব্যাহতি ও সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকীকে বহিষ্কার করা হচ্ছে। এছাড়াও এই ঘটনায় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করার আশ্বাস দিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম। শুক্রবার মধ্যরাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি এ আশ্বাস দেন।
অবন্তিকার পরিবার মামলা করলে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ: জবি: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার ‘আত্মহত্যার’ ঘটনায় পরিবার মামলা করলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার আইনুল ইসলাম। শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অবন্তিকার মৃত্যুর ঘটনায় নাম আসা শিক্ষার্থী আম্মান সিদ্দিককে গ্রেপ্তারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। কিন্তু কোনো শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়ার এখতিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। পরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার আইনুল ইসলাম বলেন, “গ্রেপ্তারের নির্দেশ বিশ্ববিদ্যালয় আইনে নেই। গ্রেপ্তারটা হলো আইনের বিষয়। তার পরিবার থেকে যদি মামলা করে তাহলে পুলিশ মামলা সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবে। “প্রেস রিলিজে এটা দেওয়া ঠিক হয়নি। গতকাল রাতে আইন সংস্থার লোকজন ছিল, তাদের হয়ত বলেছে। এর বেশি কিছু নয়।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও তথ্য প্রকাশনা বিভাগের উপ পরিচালক মোহাম্মদ ফিরোজ আলম স্বাক্ষিরত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “ফাইরুজ অবন্তিকার মৃত্যুর কারণ হিসেবে তার সুইসাইড নোটে দেয়া আইন বিভাগের ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষের (১৪তম ব্যাচের) অভিযুক্ত শিক্ষার্থী রায়হান সিদ্দিকি আম্মান (আইডি নং-বি ১৮০৫০১০১৬)-কে সাময়িক বহিষ্কার ও দ্রুত গ্রেপ্তারে নির্দেশ এবং অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে সহায়তাকারী ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব দ্বীন ইসলাম-কে সাময়িক বরখাস্ত ও প্রক্টরিয়াল বডি থেকে তাৎক্ষণিক অব্যাহতি প্রদান করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।”
এছাড়া ঘটনা তদন্তে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক জাকির হোসেনকে আহ্বায়ক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কর্মকর্তা রঞ্জন কুমার দাসকে সদস্য সচিব করে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করার কথাও জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন। এদিকে শনিবার সকালে অবন্তিকার জানাজায় অংশ নিতে বিভাগের সহপাঠীরা তার গ্রামের বাড়ি যান। আর রাতে কুমিল্লায় গেছে প্রক্টরিয়াল বডির একটি দলও।
অবন্তিকার মৃত্যুর পর অভিযোগের আঙুল ওঠা তার সহপাঠী ও শিক্ষককে বিচারের আওতায় আনার দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার রাত ১টায় উপাচার্য সাদেকা হালিম ক্যাম্পাসে গেলে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে আটকে দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তখন সাদেকা হালিম শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ায় ঘোষণা দেন। এ সময় উপাচার্য দোষীদের শাস্তি নিশ্চিতের আশ্বাস দেন।
চিরনিদ্রায় বাবার পাশে অবন্তিকা: ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকাকে তার বাবার কবরের পাশেই দাফন করা হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকাল ৩টায় কুমিল্লা সরকারি কলেজ মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অবন্তিকার বিভাগের সহপাঠীরা ছাড়াও স্থানীয় বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নেন। অবন্তিকার মামা মাহবুবুর রহমান আগেই বাবার কবরের পাশে তার ভাগ্নিকে দাফন করার কথা জানিয়েছিলেন। এর আগে ময়নাতদন্ত শেষে দুপুর ১টার দিকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে বাগিচাগাঁওয়ের বাসার সামনে আনা হয় অবন্তিকার মরদেহ। নগরীর বাগিচাগাঁও ফায়ার সার্ভিস সংলগ্ন ‘অরনি ভবনের’ সামনে অবন্তিকার মরদেহ নিয়ে লাশবাহী গাড়ি পৌঁছালে বাসা থেকে বেরিয়ে আসেন তার মা তাহমিনা শবনম। মেয়ের মরদেহ দেখে বিলাপ করতে করতে তাহমিনা শবনম বলেন, “আল্লাহ আমার স্বামীও নিলো, মেয়েও নিলো। এই আমি কার লাশ দেখছি? এটাতো আমার তিল তিল করে গড়ে ওঠা স্বপ্নের লাশ দেখছি।” এ কথা বলেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। পরে আত্মীয়রা তাকে ধরাধরি করে বাসায় নিয়ে যান। এ সময় এলাকাজুড়ে কান্নার রোল উঠে।

কুমিল্লা সরকারি কলেজের সাবেক শিক্ষক প্রয়াত অধ্যাপক জামাল উদ্দিনের মেয়ে ফাইরুজ শুক্রবার রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও ‘পিসি পার্ক স্মরণিকা’ নামের ১০ তলা ভবনের দ্বিতীয় তলার বাসায় গলায় রশি বেঁধে ফ্যানে ঝুলে আত্মহত্যা করেন। মৃত্যুর ১০ মিনিট পূর্বে নিজের ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে তিনি এ ঘটনার জন্য আম্মান সিদ্দিকী নামে তার এক সহপাঠীকে দায়ী করেছেন। একইসঙ্গে সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকেও এ ঘটনার জন্য দায়ী করেন। এদিকে এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যানারে শনিবার বিকেল তিনটায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। অবন্তিকার মৃত্যুতে বিক্ষোভ হয়েছে কুমিল্লাতেও।
মা তাহমিনা শবনমের অভিযোগ, এক বছর আগে থেকে অবন্তিকার এক সহপাঠী নানাভাবে তাঁকে উৎপীড়ন করতেন। এ নিয়ে তাঁর মেয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের কাছে নালিশ করেন। কিন্তু সহকারী প্রক্টর ঘটনার বিচার করেননি, উল্টো মেয়েকে ডেকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। ওই ছেলের পক্ষ নেন তিনি। তখন ওই ছেলে আরও বেপরোয়া হয়ে পড়েন। আপত্তিকর মন্তব্য করতেন, হুমকি দিতেন। এসব ঘটনার বিচার চেয়ে না পেয়ে তাঁর মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। মেয়ের এমন মৃত্যু অপ্রত্যাশিত।
তাহমিনা শবনম বলেন, ‘মৃত্যুর কয়েক মিনিট আগে রাত সাড়ে ৯টার দিকে আমাকে পানি দিয়ে গেল এক গ্লাস। এর কিছুক্ষণ পর ওর রুমে ফ্যানের শব্দ না পেয়ে ডাকাডাকি করি। কোনো সাড়া মেলেনি। পরে ছেলেকে নিচে পাঠাই। ও দারোয়ানকে নিয়ে মই দিয়ে পূর্ব পাশের জানালা খুলে দেখতে পায়, ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আছে ও। এরপর পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা পুলিশের একজন সদস্যসহ আমরা ওকে নামাই। এরপর কুমিল্লা সদর হাসপাতালে নিই। সেখান থেকে মেয়েকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’
শুক্রবার ইফতারের পর মেয়েকে বিষণ্ন দেখেছিলেন মা তাহমিনা শবনম। তখন মন খারাপ কেন জানতে চেয়েছিলেন মা। অবন্তিকা শুধু বলেছিলেন, ‘এমনি।’ কিন্তু মেয়ে যে আত্মহত্যা করবে, এটা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি তিনি। অবন্তিকা নানা সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে জানালেন মা।
ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার বাবা মো. জামাল উদ্দিন মৃত্যুর আগে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। এ ছাড়া তিনি কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ ও কুমিল্লা সরকারি কলেজে দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করেছেন। ২০২৩ সালের ১২ এপ্রিল রোজার সময় তিনি মারা যান। জামাল উদ্দিনকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া সরকারি কলেজ ভোট কেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করার সময় কুপিয়ে জখম করা হয়। তাঁদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা শহরতলির শাসনগাছা মহাজন বাড়ি এলাকায়। অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম কুমিল্লা পুলিশ লাইনস উচ্চবিদ্যালয়ের খ-কালীন শিক্ষক ছিলেন। এ ছাড়া তিনি উপস্থাপনা করতেন। অবন্তিকার ছোট ভাই এসএসসি পরীক্ষার্থী।
অবন্তিকার মামা কুমিল্লা শহরতলির চাঁনপুর এলাকার বাসিন্দা এ বি এম লুৎফর আনোয়ার ভূঞা বলেন, ‘এক বছরের মাথায় আমার বোনটি স্বামী ও মেয়েকে হারাল। এ শোক কেমনে সইবে! এটা আত্মহত্যা নয়, তিলে তিলে মানসিক নির্যাতন করে মারা। এর বিচার চাই আমরা।’ কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক নিয়ামুল হোসাইন বলেন, এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।
বিক্ষোভ কুমিল্লায়: ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার মৃত্যুকে ‘হত্যা’ দাবি করে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেছে কুমিল্লার সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জোট। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে নগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড়ের পূবালী চত্বরে ঘণ্টাব্যাপী এই কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় বক্তারা জবির সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও শিক্ষার্থী আম্মান সিদ্দিকীসহ অবন্তিকার মৃত্যুর নেপথ্যে জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।