নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা আইনজীবী সমিতির (ঢাকা বার) নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ তুলে এর ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল। তারা একজন নিরপেক্ষ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের অধীনে আবার ভোটগ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
গতকাল রোববার ঢাকা আইনজীবী সমিতি ভবনের চতুর্থ তলায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপিপন্থীরা এই দাবি জানান। নীল প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী খোরশেদ মিয়া আলম ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বক্তব্য পাঠ করেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার।এসময় প্যানেলের অন্য নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার বলেন, ‘গত ২৩ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা আইনজীবী সমিতির কার্যকরী কমিটির ২০২২-২০২৩ সালের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে সাদা প্যানেল ও নীল প্যানেল অংশগ্রহণ করেন। নীল প্যানেলে সভাপতি পদে খোরশেদ মিয়া আলম ও সাধারণ সম্পাদক পদে সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রার্থী হন। নীল প্যানেল জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী আইনজীবীদের নিয়ে এবং সাদা প্যানেল আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের নিয়ে গঠিত প্যানেল। নির্বাচনে ঢাকার মেট্রোপলিটন পাবলিক প্রসিকিউটর এবং আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আবুকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা হয়। তার নিয়োগে সকল সাধারণ আইনজীবীর আপত্তি ছিল।তার বিরুদ্ধে গত ঢাকা বারের ২০২১-২২ এর নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম এবং দুর্নীতির মাধ্যমে নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তন করার অভিযোগ ছিল। তারপরও এ বছর নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আব্দুল্লাহ আবুর নানারূপ বিতর্কিত ভূমিকা প্রমাণিত হওয়ার পরও তাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা হয়। তার নিয়োগের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী আইনজীবীরাসহ সাধারণ আইনজীবীরা তার ২০২১-২২ সালের নির্বাচনে অনিয়ম করার কারণে প্রতিবাদ করেন। সভা-সমাবেশ করে তার পদত্যাগ দাবি করেন।’
এই আইনজীবী অভিযোগ করেন, ‘নির্বাচনের দুই দিন নির্বাচন কমিশনের ব্যাচ পরে নির্বাচনী বুথের মধ্যে প্রবেশ করে সাদা প্যানেলের প্রার্থীর পক্ষে বলপূর্বক প্রায় সব ভোটারের ভোট কেটে দিয়েছে। ভোটাররা প্রতিবাদ করলে তাদেরও নানাভাবে অপমান-অপদস্থ করা হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি রহস্যজনক কারণে নীরব ভূমিকা পালন করেন। বহিরাগতরা ভোটার স্লিপ ও ব্যালট বলপূর্বক সংগ্রহ করে। ব্যালট বই ছিনতাই করেন। তাতে সাদা প্যানেলের প্রার্থীদের পক্ষে ভোট দেওয়া হয়। জাল ভোটের এক মহাউৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা বারে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আব্দুল্লাহ আবু সম্পূর্ণ ব্যর্থ হওয়ায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ঢাকা ইউনিট এবং নীল প্যানেলের পক্ষে ভোটে অংশ গ্রহণকারী প্রার্থীরা সম্পূর্ণ অনাস্থা প্রদর্শন করেছেন।তাই সঙ্গত কারণে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ঢাকা বার ইউনিট ও সাধারণ আইনজীবীদের পক্ষে এ প্রহসনের নির্বাচন ও ঘোষিত ফলাফল সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখান করা হলো। একই সঙ্গে একজন নিরপেক্ষ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের অধীনে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানানো হলো।’
অভিযোগ সম্পর্কে ঢাকার মেট্রোপলিটন পাবলিক প্রসিকিউটর এবং নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার আব্দুল্লাহ আবু বলেন, ‘অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে নির্বাচন চলাকালীন এবং গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। নির্বাচনে তারা হেরে যাওয়ায় এখন তিন দিন পর মনোবেদনা থেকে অভিযোগ করেছেন।’
ঢাকা আইনজীবী সমিতির এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের সাদা প্যানেল ২৩টি পদের মধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১৭টি পদে জয় পেয়ে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করেছে।অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্যের নীল প্যানেল দুটি সম্পাদকীয় পদসহ ছয়টি পদে জয়লাভ করেছে।
গত বুধ ও বৃহস্পতিবার দুই দিনে অনুষ্ঠিত হয় এশিয়ার সবচেয়ে বড় আইনজীবী সমিতির নির্বাচন। প্রায় দুই দিন ধরে ভোট গণনার পর শনিবার সকালে ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
অনিয়মের অভিযোগ, ঢাকা বারে পুনঃনির্বাচন চান বিএনপিন্থীরা
ট্যাগস :
অনিয়মের অভিযোগ
জনপ্রিয় সংবাদ