ঢাকা ০৮:২৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫
মিছিলে লাঠিচার্জ, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান, আহত ১২০

অনির্দিষ্টকাল কর্মবিরতির ডাক প্রাথমিক শিক্ষকদের

  • আপডেট সময় : ০৯:৪৯:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ নভেম্বর ২০২৫
  • ৪৬ বার পড়া হয়েছে

বেতন গ্রেড বাড়ানোর দাবিতে শনিবার বিকেলে ঢাকার শাহবাগে আন্দোলনরত প্রাথমিক শিক্ষকদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ -ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দাবিতে আন্দোলনকারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের মিছিলে লাঠিচার্জসহ সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান নিক্ষেপে করেছে পুলিশ, এ বাধার কারণে কারণে তারা শাহবাগে ‘কলম সমর্পণ’ পালন করতে পারেননি। এতে অন্তত ১২০ জন শিক্ষক আহত হয়েছেন। এই হামলার প্রতিবাদে রোববার (৯ নভেম্বর) থেকে সারাদেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছে।

শনিবার (৮ নভেম্বর) বিকেলে আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১২০ জন শিক্ষক আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে এসেছেন। অনেকের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা চলছে। আবার কিছু শিক্ষক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন।

অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি: দশম গ্রেডসহ তিন দফা দাবি বাস্তবায়ন ও পুলিশের হামলার প্রতিবাদে রোববার (৯ নভেম্বর) থেকে সারাদেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন সহকারী শিক্ষকরা।

শনিবার (৮ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘোষণা দেন প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক ও প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি শামসুদ্দিন মাসুদ। তিনি বলেন, দশম গ্রেডসহ তিন দফা দাবি বাস্তবায়ন ও পুলিশের হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল (রোববার) থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থানের পাশাপাশি সারাদেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি চলবে।

শনিবার যা ঘটেছে: শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ১০ম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবিতে ‘কলম বিসর্জন কর্মসূচি’ পালন করতে শাহবাগে অবস্থান নিতে গেলে প্রাথমিকের শিক্ষকদের ওপর সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এর আগে দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন শেষে ‘কলম বিসর্জন কর্মসূচি’র ঘোষণা দেন শিক্ষকরা। এরপর তিন দফা দাবিতে তারা শাহবাগের দিকে যাত্রা শুরু করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে অনেক শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আশ্রয় নেন।

শিক্ষকদের দাবিগুলো হলো-সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণ, ১০ ও ১৬ বছর চাকরি পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড সংক্রান্ত জটিলতার স্থায়ী সমাধান এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা প্রদান।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৭টি এবং শিক্ষক সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ৮৪ হাজার। গত ২৪ এপ্রিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১১তম থেকে ১০ম এবং ১৩তম থেকে ১২তম গ্রেডে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয়। তবে এতে সহকারী শিক্ষকরা বঞ্চিত হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা। অন্যদিকে, প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের আরেক অংশ ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’-এর ব্যানারে একাদশ গ্রেডে বেতন, উচ্চতর গ্রেডের জটিলতা নিরসন ও শতভাগ পদোন্নতির দাবিতে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা দিয়েছে। তাদের দাবি মানা না হলে ২৩ ও ২৪ নভেম্বর অর্ধদিবস কর্মবিরতি, ২৫ ও ২৬ নভেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং ২৭ নভেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।
এ ছাড়া ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে দাবি বাস্তবায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে পরীক্ষা বর্জন ও আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে তারা।

আন্দোলনরত শিক্ষক সংগঠন প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ এর তরফে সংগঠনের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাছুদ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, পুলিশের হামলায় শাহবাগে অনেক শিক্ষক আহত হয়েছেন। শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মনসুর বলেন, শিক্ষকরা যমুনার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল, তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আহত হওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য এখনো আমরা পাইনি।

পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হন অনেক শিক্ষক -ছবি সংগৃহীত

ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বিকাল ৫টায় দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, কিছু আন্দোলনকারী ‘কলম সমর্পণের’ নামে শাহবাগ থানার সামনে জড়ো হয়। আনুমানিক ৪টার সময় আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে একটা দল পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে শাহবাগ মোড় পার হয়ে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ বাধা প্রদান করলে তারা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়। পুলিশের নির্দেশনা অমান্যকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পরবর্তীতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান নিক্ষেপ করে।

বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও সংলগ্ন এলাকায় সব প্রকার সভা-সমাবেশ, মিছিল, গণজমায়েত নিষিদ্ধ করা হলেও আন্দোলনকারীরা তা উপেক্ষা করে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে যে সব এলাকায় ঢাকা মহানগর পুলিশ-ডিএমপি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তা মেনে চলার জন্য সবাইকে আবার অনুরোধ করা হয়েছে ডিএমপি ডিসির বিবৃতিতে।
লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করা প্রাথমিকের শিক্ষকদের দশম গ্রেডে বেতন ছাড়াও বাকি দুই দাবি হলো- চাকরির ১০ ও ১৬ বছরে উচ্চতর গ্রেড পাওয়া নিয়ে জটিলতা নিরসন এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা।
‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ নামে চারটি শিক্ষক সংগঠনের মোর্চার ব্যানারে এসব কর্মসূচি পালন করছেন তারা।

‘প্রাথমিক শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ’ ছাড়াও এ মোর্চায় আছে, ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (কাশেম-শাহিন)’, ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি’ এবং ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (শাহিন-লিপি)’। দুপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক হান্নান মাসউদ শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচিতে এসে সংহতি প্রকাশ করেন। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে অবস্থান কর্মসূচি থেকে শিক্ষকরা ‘কলম সমর্পণ’ কর্মসূচি পালনে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে এগিয়ে যাওয়া শুরু করেন।
এর আগে শিক্ষক নেতা মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাছুদ বলেছিলেন, দীর্ঘদিনের ন্যায্য তিন দফা দাবি এখনো পূরণ হয়নি। তাই বাধ্য হয়েই আমরা শান্তিপূর্ণ কলম সমর্পণ কর্মসূচি পালন করবো। কর্মসূচি শেষে আমরা শহীদ মিনারে ফিরে আসবো।
দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৭টি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এসব বিদ্যালয়ে ৩ লাখ ৮৪ হাজার শিক্ষক কর্মরত আছেন।

গত ২৪ এপ্রিল ১১তম গ্রেডে বেতন পাওয়া প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১০ম গ্রেডে এবং ১৩তম গ্রেডে বেতন পাওয়া শিক্ষকদের বেতন ১২তম গ্রেডে উন্নিত করার উদ্যোগ নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে এ উদ্যোগে সন্তুষ্ট নন সহকারী শিক্ষকরা। পরে শনিবার থেকে দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দাবিতে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেয় ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’।

এদিকে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের আরেকাংশ ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের’ ব্যানারে একাদশ গ্রেডে বেতন, উচ্চতর গ্রেড নিয়ে জটিলতা নিরসন ও শতভাগ পদোন্নতি নিশ্চিত করতে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারকে সময় বেঁধে দিয়েছেন। এর তিন দাবি মানা না হলে ২৩ ও ২৪ নভেম্বর অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে, ২৫ ও ২৬ নভেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং ২৭ নভেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন এই সময়ের মধ্যে দাবি আদায়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি বা ঘোষণা না আসলে পরীক্ষা বর্জন এবং ১১ ডিসেম্বর থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালনের ঘোষণাও দিয়েছেন তারা।

সানা/আপ্র/০৮/১১/২০২৫

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

অনির্দিষ্টকাল কর্মবিরতির ডাক প্রাথমিক শিক্ষকদের

মিছিলে লাঠিচার্জ, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান, আহত ১২০

অনির্দিষ্টকাল কর্মবিরতির ডাক প্রাথমিক শিক্ষকদের

আপডেট সময় : ০৯:৪৯:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ নভেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক: দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দাবিতে আন্দোলনকারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের মিছিলে লাঠিচার্জসহ সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান নিক্ষেপে করেছে পুলিশ, এ বাধার কারণে কারণে তারা শাহবাগে ‘কলম সমর্পণ’ পালন করতে পারেননি। এতে অন্তত ১২০ জন শিক্ষক আহত হয়েছেন। এই হামলার প্রতিবাদে রোববার (৯ নভেম্বর) থেকে সারাদেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছে।

শনিবার (৮ নভেম্বর) বিকেলে আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১২০ জন শিক্ষক আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে এসেছেন। অনেকের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা চলছে। আবার কিছু শিক্ষক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন।

অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি: দশম গ্রেডসহ তিন দফা দাবি বাস্তবায়ন ও পুলিশের হামলার প্রতিবাদে রোববার (৯ নভেম্বর) থেকে সারাদেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন সহকারী শিক্ষকরা।

শনিবার (৮ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘোষণা দেন প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক ও প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি শামসুদ্দিন মাসুদ। তিনি বলেন, দশম গ্রেডসহ তিন দফা দাবি বাস্তবায়ন ও পুলিশের হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল (রোববার) থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থানের পাশাপাশি সারাদেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি চলবে।

শনিবার যা ঘটেছে: শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ১০ম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবিতে ‘কলম বিসর্জন কর্মসূচি’ পালন করতে শাহবাগে অবস্থান নিতে গেলে প্রাথমিকের শিক্ষকদের ওপর সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এর আগে দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন শেষে ‘কলম বিসর্জন কর্মসূচি’র ঘোষণা দেন শিক্ষকরা। এরপর তিন দফা দাবিতে তারা শাহবাগের দিকে যাত্রা শুরু করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে অনেক শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আশ্রয় নেন।

শিক্ষকদের দাবিগুলো হলো-সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণ, ১০ ও ১৬ বছর চাকরি পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড সংক্রান্ত জটিলতার স্থায়ী সমাধান এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা প্রদান।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৭টি এবং শিক্ষক সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ৮৪ হাজার। গত ২৪ এপ্রিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১১তম থেকে ১০ম এবং ১৩তম থেকে ১২তম গ্রেডে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয়। তবে এতে সহকারী শিক্ষকরা বঞ্চিত হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা। অন্যদিকে, প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের আরেক অংশ ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’-এর ব্যানারে একাদশ গ্রেডে বেতন, উচ্চতর গ্রেডের জটিলতা নিরসন ও শতভাগ পদোন্নতির দাবিতে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা দিয়েছে। তাদের দাবি মানা না হলে ২৩ ও ২৪ নভেম্বর অর্ধদিবস কর্মবিরতি, ২৫ ও ২৬ নভেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং ২৭ নভেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।
এ ছাড়া ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে দাবি বাস্তবায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে পরীক্ষা বর্জন ও আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে তারা।

আন্দোলনরত শিক্ষক সংগঠন প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ এর তরফে সংগঠনের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাছুদ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, পুলিশের হামলায় শাহবাগে অনেক শিক্ষক আহত হয়েছেন। শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মনসুর বলেন, শিক্ষকরা যমুনার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল, তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আহত হওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য এখনো আমরা পাইনি।

পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হন অনেক শিক্ষক -ছবি সংগৃহীত

ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বিকাল ৫টায় দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, কিছু আন্দোলনকারী ‘কলম সমর্পণের’ নামে শাহবাগ থানার সামনে জড়ো হয়। আনুমানিক ৪টার সময় আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে একটা দল পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে শাহবাগ মোড় পার হয়ে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ বাধা প্রদান করলে তারা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়। পুলিশের নির্দেশনা অমান্যকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পরবর্তীতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান নিক্ষেপ করে।

বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও সংলগ্ন এলাকায় সব প্রকার সভা-সমাবেশ, মিছিল, গণজমায়েত নিষিদ্ধ করা হলেও আন্দোলনকারীরা তা উপেক্ষা করে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে যে সব এলাকায় ঢাকা মহানগর পুলিশ-ডিএমপি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তা মেনে চলার জন্য সবাইকে আবার অনুরোধ করা হয়েছে ডিএমপি ডিসির বিবৃতিতে।
লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করা প্রাথমিকের শিক্ষকদের দশম গ্রেডে বেতন ছাড়াও বাকি দুই দাবি হলো- চাকরির ১০ ও ১৬ বছরে উচ্চতর গ্রেড পাওয়া নিয়ে জটিলতা নিরসন এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা।
‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ নামে চারটি শিক্ষক সংগঠনের মোর্চার ব্যানারে এসব কর্মসূচি পালন করছেন তারা।

‘প্রাথমিক শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ’ ছাড়াও এ মোর্চায় আছে, ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (কাশেম-শাহিন)’, ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি’ এবং ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (শাহিন-লিপি)’। দুপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক হান্নান মাসউদ শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচিতে এসে সংহতি প্রকাশ করেন। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে অবস্থান কর্মসূচি থেকে শিক্ষকরা ‘কলম সমর্পণ’ কর্মসূচি পালনে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে এগিয়ে যাওয়া শুরু করেন।
এর আগে শিক্ষক নেতা মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাছুদ বলেছিলেন, দীর্ঘদিনের ন্যায্য তিন দফা দাবি এখনো পূরণ হয়নি। তাই বাধ্য হয়েই আমরা শান্তিপূর্ণ কলম সমর্পণ কর্মসূচি পালন করবো। কর্মসূচি শেষে আমরা শহীদ মিনারে ফিরে আসবো।
দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৭টি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এসব বিদ্যালয়ে ৩ লাখ ৮৪ হাজার শিক্ষক কর্মরত আছেন।

গত ২৪ এপ্রিল ১১তম গ্রেডে বেতন পাওয়া প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১০ম গ্রেডে এবং ১৩তম গ্রেডে বেতন পাওয়া শিক্ষকদের বেতন ১২তম গ্রেডে উন্নিত করার উদ্যোগ নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে এ উদ্যোগে সন্তুষ্ট নন সহকারী শিক্ষকরা। পরে শনিবার থেকে দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দাবিতে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেয় ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’।

এদিকে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের আরেকাংশ ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের’ ব্যানারে একাদশ গ্রেডে বেতন, উচ্চতর গ্রেড নিয়ে জটিলতা নিরসন ও শতভাগ পদোন্নতি নিশ্চিত করতে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারকে সময় বেঁধে দিয়েছেন। এর তিন দাবি মানা না হলে ২৩ ও ২৪ নভেম্বর অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে, ২৫ ও ২৬ নভেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং ২৭ নভেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন এই সময়ের মধ্যে দাবি আদায়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি বা ঘোষণা না আসলে পরীক্ষা বর্জন এবং ১১ ডিসেম্বর থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালনের ঘোষণাও দিয়েছেন তারা।

সানা/আপ্র/০৮/১১/২০২৫