আঃ জলিল মন্ডল, গাইবান্ধা : অনিবন্ধিত ইজিবাইকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া এবং অব্যবস্থাপনার কারণে গাইবান্ধা শহরে যানজট বেড়ে গেছে। শহরের ব্রিজ রোড এলাকায় অবৈধ যানবাহনে তীব্র যানজট লেগেই থাকে। জানা গেছে, জেলা শহরে প্রায় ৩০ হাজার অবৈধ যানবাহন চলাচল করছে। এতে ব্রিজরোডসহ তিন সড়কে বেশি যানজট হচ্ছে।
৫ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে লাগছে দেড় ঘণ্টা। গাইবান্ধা পূর্বপাড়া থেকে জেলা জজ আদালত প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে। সাধারণত রিকশায় যেতে ১০-১৫ মিনিট সময় লাগার কথা থাকলেও এইটুকু পথ ৩০ মিনিটে পৌঁছানো যায়না। শহরে অবৈধ ইজিবাইকসহ অন্যান্য যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় সড়কগুলোতে অসহনীয় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। শহরের মাষ্টার পাড়ার বাসিন্দা জাহীদ হাসান বলেন, অবৈধ ইজিবাইকের বেপরোয়া চলাচলে কয়েক লাখ মানুষ প্রতিদিন ভোগান্তি পোহাচ্ছে।
বৈধ যানবাহনের চেয়ে অবৈধ যানবাহন চলাচল করছে বেশি। এতে বিভিন্ন সড়কে ভয়াবহ যানজট হওয়ায় মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। ব্যস্ততম সড়কের মোড়ে মোড়ে যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে। সড়কে বের হলেই বিরক্ত বোধ করছে সাধারন মানুষ। ছোট্ট শহরেও বড় শহরের মতো যানজট। ট্রাফিক পুলিশের অব্যবস্থাপনা তো আছেই।
এর ফলে আগেভাগেই বাসা থেকে বের হতে হচ্ছে। গাইবান্ধা পৌরসভা কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলা শহরে লাইসেন্স করা ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান ও মিশুক ৫ হাজার ৫১টি। এর মধ্যে ৩ হাজার ৬০০টি ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, ৩৫১টি ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান এবং ১ হাজার ১০০টি মিশুক। বাস্তবে শহরে ছয় গুণের বেশি এ ধরনের যানবাহন চলাচল করছে। এতে অসহনীয় যানজটে দুর্ভোগে পড়ছে সাধারণ মানুষ। বিশেষত জেলা শহরের ব্যস্ততম ডিবি রোড, বালাসি রোড, ব্রিজ রোড এবং প্রধান ডাকঘরসংলগ্ন রোডে সব সময় যানজট তো লেগেই আছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, ব্যস্ততম সড়কের পাশে দূরপাল্লার বাস-ট্রাক থেমে আছে। মোড়ে মোড়ে আটকে আছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, রিকশা-ভ্যান।
এর ফলে কিছুক্ষণ পরপর তীব্র যানজট তৈরি হচ্ছে। দীর্ঘ সময় যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকায় যানজটের লাইন লম্বা হচ্ছে। দুই পাশে যত্রতত্র যানবাহন রাখায় বিভিন্ন সড়ক সংকুচিত হয়েছে। যানবাহন চলাচলের কারণে ধুলাবালু উড়ছে। এর ফলে শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। পথচারীরাও ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পারপার হচ্ছে। ব্রিজ রোডটি শহরের প্রবেশপথ। এই রোড ধরে গাইবান্ধা সদর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার মোট ২২টি ইউনিয়নের ১০ লক্ষাধিক মানুষ শহরে প্রবেশ করে। এ রোডে দিনরাত যানজট লেগেই থাকে। ফলে ৫-১০ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে এক-দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। শহরের সড়ক ঘেঁষে দোকান তো রয়েছেই। বিশেষত সড়ক ঘেঁষে পশ্চিম পাশে বিএম ল্যাবরেটরি স্কুল। শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ব্যস্ততম সড়ক পারাপার হতে হচ্ছে। উপজেলা থেকে শহরে প্রবেশের সময় ব্রিজ রোডে যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে।
যানজট নিরসনে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন? জানতে চাইলে গাইবান্ধা জেলা ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিদর্শক শাহ আলম বলেন, সড়কের যানজটের অন্যতম কারণ হলো যানবাহনের সংখ্যাবৃদ্ধি। এ ক্ষেত্রে পৌরসভা থেকে নিবন্ধন নেওয়া অটোরিকশা ও রিকশা চিহ্নিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এতে বাইরের অটোরিকশা শহরে ঢুকতে পারবে না। তখন ব্যস্ততম সড়কের যানজট কমবে। বিষয়টি একাধিকবার পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। গাইবান্ধা পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক একেএম হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শহরের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা একটি নির্দিষ্ট রঙের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হবে। চিহ্নিত অটোরিকশাগুলোই শহরে চলাচল করবে। অবৈধ ইজিবাইকের ব্যাপারে ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতা দেখা যায় না। এনিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।