নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণার দাবিতে পঞ্চম দিনের মতো আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি বাঁশ দিয়ে কলেজের সামনের রাস্তা অবরোধ করেছেন তারা।
রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা মহাখালী-গুলশান সড়কের তিতুমীর কলেজের সামনে বাঁশ দিয়ে রাস্তা অবরোধ করেন। এতে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে দেখা গেছে। রাস্তা অবরোধের কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। বাস থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে বেশ কয়েকজনকে।
তাইমুর নামে বেসরকারি চাকরিজীবী এক ব্যক্তি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন নাটক করছে। তাদের কারণে ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে। তারা জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করছে না। সরকার হাত-পা গুটিয়ে বসে আছে। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন তা বোধগম্য নয়।’
রোববার পঞ্চম দিনের মতো অনশনও চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। রোববার সকাল ১১টা পর্যন্ত চার শির্ক্ষাথী অসুস্থ হয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে জানা গেছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
এদিনও আমরণ অনশনের পাশাপাশি ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি’ কর্মসূচি পালন করবেন শিক্ষার্থীরা। এই কর্মসূচির আওতায় ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশনের সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করা হবে। অনির্দিষ্টকালের জন্য এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। তবে বিশ্ব ইজতেমা ও আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে এই কর্মসূচি শিথিল থাকবে।
অনশনরত ৩ শিক্ষার্থীর অবস্থা ‘আশঙ্কাজনক’: সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপান্তরের দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা ‘আশঙ্কাজনক’ বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
ওই তিন শিক্ষার্থীর শরীরে ‘রক্তচাপ কমে যাচ্ছে’ বলে সরকারি
কর্মচারী হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. রাসেল আহমেদ জানিয়েছেন।
তিন শিক্ষার্থী হলেন- গণিত বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রায়হান, বাংলা বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের রানা আহমেদ এবং অর্থনীতির অনার্স তৃতীয় বর্ষের ইউসুফ।
রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে তিতুমীর কলেজের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন এই চিকিৎসক। এর আগে তিনি কলেজের মূল ফটকের সামনে অনশনরত শিক্ষার্থীদের শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করেন।
চিকিৎসক রাসেল আহমেদ বলেন, অনশনরত শিক্ষার্থীদের তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। শরীরে পানি শূন্যতার কারণে তাদের ব্লাড প্রেসার কমে যাচ্ছে। এদের মধ্যে একজনের একদম প্রসাব হচ্ছে না। এই চিকিৎসাটা হাসপাতালে না নিয়ে এখানে করা সম্ভব হচ্ছে না।
তিন শিক্ষার্থীকে যদি দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া না হয়, তাহলে তাদের শরীরে স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক সমস্যা তৈরি হতে পারে বলে জানিয়েছেন রাসেল আহমেদ।
শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, পর্যাপ্ত রক্তসঞ্চালন না হয়ে তাদের কিডনির কর্মক্ষমতা কমে যাচ্ছে। ফলে তাদের অবস্থা অবনতি দিকে যাচ্ছে।
অনশনে বসা সবার সার্বিক পরিস্থিতি জানিয়ে আন্দোলনরত ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, ৯ জন শিক্ষার্থী অনশনরত আছেন, তারা সবাই অসুস্থ। বাংলা বিভাগের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বেল্লাল হাসানও পানি শূন্যতায় ভুগছেন।
এর আগে গত ২৭ জানুয়ারি রাতে ‘তিতুমীর ঐক্যর তরফে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামো গঠনে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়। দাবি মানা না হলে বৃহস্পতিবার থেকে অবরোধের ঘোষণাও দেওয়া হয় তখন।
ওই রাতেই ‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে আমরণ অনশন’ লেখা ব্যানার টাঙিয়ে কলেজের মূল ফটকের সামনে অনশন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম ‘তিতুমীর ঐক্যর’ সাত দফার মধ্যে রয়েছে, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ; ‘বিশ্ববিদ্যালয়’প্রশাসন গঠন করে ২৪-২৫ সেশনের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা এবং শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা কিংবা শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসিক খরচ বহন করা।
এছাড়া ২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে ন্যূনতম আইন এবং সাংবাদিকতা বিষয় সংযোজন; অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনায় যোগ্যতাসম্পন্ন পিএইচডিধারী শিক্ষক নিয়োগ: শিক্ষার গুণগতমান বাড়াতে আসন সংখ্যা সীমিত করা এবং আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাগার নির্মাণে জমি ও আর্থিক বরাদ্দ নিশ্চিত করার দাবিও রয়েছে শিক্ষার্থীদের।
এর আগে গত ২৭ জানুয়ারি রাতে ‘তিতুমীর ঐক্যর তরফে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামো গঠনে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়। দাবি মানা না হলে বৃহস্পতিবার থেকে অবরোধের ঘোষণাও দেওয়া হয় তখন।
ওই ঘোষণা অনুযায়ী কলেজের সামনে সড়ক অবরোধ করে বৃহস্পতিবার থেকে দফায় দফায় তাদের কর্মসূচি চলছে। সড়ক অবরোধের কারণে যানজটে ভুগতে হচ্ছে ওই পথ দিয়ে যাওয়া যানবাহন ও যাত্রীদের। রোববারও বেলা ১২টার থেকে মহাখালীতে কলেজের সামনের সড়কে বাঁশ দিয়ে রাস্তা আটকে অবস্থান নিয়েছেন তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা। এতে করে মহাখালী-গুলশান সড়কের দুইপাশেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। তবে এদিন তবে বিশ্ব ইজতেমার কথা বিবেচনায় এনে পূর্ব ঘোষিত ‘বারাসাত বেরিকেড টু ঢাকা নর্থ সিটি’ কর্মসূচি শিথিল করেছেন আন্দোলনরতরা।