নারী ও শিশু ডেস্ক: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের সহজলভ্যতার কারণে অনেক নারী উদ্যোক্তা এখন নিজেদের ব্যবসাকে সুসংগঠিতভাবে পরিচালনা করছেন। করোনা মহামারির পর থেকে এই প্রবণতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি শুধু অর্থনৈতিক স্বাধীনতাই নয়, বরং বাড়াচ্ছে নারীদের আত্মবিশ্বাসও।
নিজের দক্ষতা ও সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার আগ্রহ থেকেই অনলাইন ব্যবসা শুরু করেন নারীরা। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের ফলে বড় মূলধনের প্রয়োজন হয় না। ছোট আকারে শুরু করা যায়।
উদ্যোক্তারা জানান, বিক্রির জন্য কোথাও যেতে হয় না। অনলাইনের মাধ্যমে সহজেই পণ্য প্রচার করা সম্ভব হচ্ছে।
সফল নারী উদ্যোক্তাদের কেউ কেউ নিজস্ব কর্মদক্ষতা, আগ্রহ, সৃজনশীলতা ও ভালো লাগা থেকে অনলাইনে তাদের ব্যবসা শুরু করেন। ভোক্তাদের চাহিদা ও ভালো লাগার জায়গা থেকে কাজ শুরু করে দ্রুতই সফলতা পান অনেকেই।
সফল নারী উদ্যোক্তাদের একজন হলেন ‘সুতলি’ ব্র্যান্ডের স্বত্বাধিকারী রিফাত আনোয়ার লোপা। পোশাক নিয়ে কাজ করছেন তিনি। তার শুরুটা ছিল মনে পুষে রাখা একটি ইচ্ছা থেকে। ২০০২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন নানা কারণে ওই ইচ্ছার বাস্তবায়ন হয়নি। তবে ছয় বছর আগে নিজস্ব নকশায় পোশাক তৈরি শুরু করেছিলেন; যা দ্রুত অনলাইন ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
রিফাত লোপা বলেন, ‘শুরুতে অনলাইন বিজনেস নিয়ে ভাবতে হয়েছে। কাছের মানুষের সাপোর্ট পেয়েছি। প্রথম বছর ধৈর্য ধরে থাকতে হয়েছে, বিক্রি কম ছিল। মনে আশঙ্কা ছিল চালিয়ে যেতে পারবো কি না। তবে সবাই বলেছিলেন অন্তত এক বছর দেখে নিতে। সেই থেকেই শুরু, ধীরে ধীরে সফলতা আসতে থাকে। এখন আমি অন্যদের জন্যও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছি—এটাই আমার সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয়।’
সব সময় ভিন্ন কিছু করার তাগিদ থেকে উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা খাদিজাতুল কোবরার। ‘চিত্রাঙ্গদা’ পেজের মাধ্যমে ব্লাউজ নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। এখন অফলাইনেও রয়েছে তার ঠিকানা।
খাদিজাতুল কোবরা বলেন, তিনি বলেন, ‘করোনার সময় আমাদের চলাচলে সীমাবদ্ধতা চলে আসে। তখন ভাবতে থাকি কী করা যায়। অনলাইনে ঘাটাঘাটি করে খেয়াল করলাম, শাড়ির একটি বড় বাজার থাকলেও শাড়ির সবচেয়ে প্রয়োজনীয় একটি অংশ- ব্লাউজের জন্য তেমন নির্দিষ্ট স্টোর নেই। অথচ ব্লাউজ নিয়ে নারীরা সব সময় সমস্যায় থাকেন। হয়তো ব্লাউজ তাদের সঠিক মাপে হয় না অথবা ভিন্ন ডিজাইনের ব্লাউজ পাওয়া যায় না। তখন আমি এই পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করি এবং শুরুতেই ভালো সাড়া পাই। প্রথমে আমার কার্যক্রম শুধুমাত্র অনলাইনে ছিল, পরে নিজের বাসায় একটি রুমে স্টোর চালু করি। সেখানেও অনেকে আসতে শুরু করেন।’
অনলাইনে ব্যবসা করতে গিয়ে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন নারী উদ্যোক্তারা। তারা জানান, অনেকেই অনলাইনে উদ্যোক্তা হতে চান। কিন্তু ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম সম্পর্কে তেমন ধারণা রাখেন না। ডিজিটাল মার্কেটিং, অনলাইন পেমেন্ট ও গ্রাহকসেবা সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান না থাকায় অনেক উদ্যোক্তা শুরুতেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। অনেক সময় পরিবার বা সমাজ থেকে নারী উদ্যোক্তাদের পর্যাপ্ত সহযোগিতা মেলে না। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার জন্য নারীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ, সরকারি সহায়তা ও সামাজিক সচেতনতার প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।