নারী ও শিশু প্রতিবেদন : আমরিন হকের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা ঢাকায়। শান্তিনগরের বাসিন্দা আমরিন পড়াশোনা শেষ করে চাকরির পেছনে না ছুটে চেয়েছেন নিজে কিছু করতে। উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। নানা চরাই-উৎড়াই পেরিয়ে তিনি আজ সফল উদ্যোক্তা।
২০১৬ সালে অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা শুরু করেন আমরিন। ‘পার্পেল গ্ল্যামার’ নামে একটি ফেইসবুক পেইজ থেকে তিনি ব্যবসা পরিচালনা করতেন। ইংল্যান্ড থেকে স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টসহ পোশাক কিনে এনে বিক্রি করতেন। ধীরে ধীরে ব্যবসায় নানা ধরনের পণ্যের সংযোজন বিয়োজন করেছেন। ২০১৮ সাল থেকে তিনি ব্যাগ, জুতো এবং জুয়েলারি সামগ্রী অনলাইনে বিক্রি শুরু করেন। অনলাইনে সাড়া ফেলে আমরিনের পোশাক, গহনা, জুতোসহ অন্যান্য আইটেম। এ জন্য অবশ্য শুরুর দিকে তাকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে। পণ্য ডেলিভারি থেকে শুরু করে টাকা কালেকশন অনেক কাজ! এসব কাজে বিভিন্ন সময় স্বামীর সমর্থন এবং সহযোগিতা পেয়েছেন তিনি। শুরুর দিকে পণ্য ডেলিভারি করতেন আমরিনের স্বামী। কাজ বেড়ে যাওয়ার পর পণ্য ডেলিভারির দায়িত্ব তিনি দেন একটি ডেলিভারি কোম্পানিকে। সেখানেও ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে তাকে। পেমেন্টের ঝামেলা হওয়ায় কুরিয়ারের মাধ্যমে ডেলিভারি শুরু করেন তিনি। ব্যবসার বিস্তৃতি ঘটায় আমরিন মিরপুর-১০ এ নিজস্ব ওয়্যার হাউজ গড়ে তোলেন। গ্রাহককে সর্বোচ্চ সেবা দিতে সব পার্সেল নিজ হাতে করেন তিনি। কখনো কোনো সমস্যা হলে সেগুলোর সমাধান তিনি আন্তরিকভাবে করার চেষ্টা করেন। কারণ আমরিন মনে করেন, গ্রাহকের ভালোবাসা ব্যবসার অন্যতম পুঁজি। ব্যবসার ক্ষেত্রে স্বামী এবং পরিবারের সদস্যদের পাশে পেয়েছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে আমরিন বলেন, আমার স্বামী এবং পরিবার অনেক সাহায্য করেছে প্রতিটি পদক্ষেপে। প্রথম যখন লাইসেন্স করেছিলাম এবং যেহেতু এটা অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা; সম্পূর্ণ নতুন একটি সেক্টর, আমার স্বামী মিরপুর সিটি করপোরেশন থেকে নগরভবন পর্যন্ত দিনের পর দিন ঘুরে লাইসেন্স সংগ্রহ করেছে। যা আমার পক্ষে হয়তো সম্ভব হতো না। অনেক সময় লাইভে কমেন্টে হাজারো কটূক্তি বা বাজে কথা শুনতে হয়েছে। অনলাইন বুলিংয়ের স্বীকার হয়েছি। তারপরও হাল ছাড়িনি। কারণ আমি জানতাম, আমি অন্যায় কিছু করছি না।
করোনাকালে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমরিনের ব্যবসা। আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হন তিনি। এ ছাড়াও বারবার ফেসবুক পেইজ ডিলিট হয়ে যাওয়ায় অনেকবার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। হতাশ না হয়ে প্রতিবারই নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেছেন। আমরিন বলেন, প্রথমে ব্যবসা করতে অনেক বেগ পোহাতে হয়েছে। আস্তে আস্তে ব্যবসা বুঝেছি। ব্যবসা করতে হলে ধৈর্য ধরতে হবে। নানা সময়ে নানা বাধা আসবে, তবুও এগিয়ে যেতে হবে। তবেই একদিন সফল হওয়া যাবে। এখন আমরিনের স্বপ্ন কী? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ক্যাপাসিটি বাড়লে ঢাকা এবং চট্টগ্রামে অফলাইন ব্যবসা পরিচালনা শুরুর ইচ্ছে আছে। কারণ ফেইসবুক হুটহাট পেইজ ডিলিট করে দেয়। শুধু অনলাইনভিত্তিক মার্কেট থেকে বের হতে হবে আমাদের। এটা মোনোপলি হয়ে যাচ্ছে, দেখা যায় এখন নির্দিষ্ট পরিমাণে একটা এমাউন্ট ফেসবুকে বুস্ট না করলে যথেষ্ট রিচ হচ্ছে না। গ্রাহক পর্যন্ত যদি পোস্ট না পৌঁছায়, তাহলে আশানুরূপ অর্ডার হয় না। অনেক নতুন উদ্যোক্তা এ কারণে হারিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানান আমরিন।
অনলাইন বুলিংয়ের স্বীকার হয়েও হাল ছাড়েননি আমরিন
জনপ্রিয় সংবাদ