ক্যাম্পাস ও ক্যারিয়ার ডেস্ক: সড়কে দীর্ঘ আন্দোলনের পর শিক্ষার্থীরা সুখবর পেলেন অধিভুক্তির আগল আর থাকছে না; তবে সরকারি সাত কলেজের পরবর্তী ভর্তি প্রক্রিয়া কীভাবে সেই আলোচনা সামনে আসার মধ্যে জটিলতার ইঙ্গিত মিলল কলেজগুলো পরিচালনার সম্ভাব্য কাঠামো ঠিক করতে গঠিত কমিটির প্রধানের কথায়। সংঘাত আর সংঘর্ষের রাত পেরিয়ে আট বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে বের হয়ে ‘সম্মানজনক পৃথকীকরণের’ পথে হাঁটতে শিক্ষার্থীদের সেই ‘কাঙ্খিত’ সিদ্ধান্ত এল সোমবার ২৭ জানুয়ারি দুপুরে।
দাবি আদায়ে গত কয়েক মাসের আন্দোলন-অবরোধের নানা ঘটনা প্রবাহ পেরিয়ে রাজধানীর বৃহৎ এসব সরকারি কলেজ মুক্ত হল; তবে সব বাধা কী কাটল? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে নতুন সংকট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা সামনে এল বিশেষজ্ঞদের নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত ‘প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপরেখা প্রণয়ন কমিটির’ প্রধান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজের কথায়।
সোমবার রাতে অনলাইন সংবাদমাধ্যম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সাত কলেজের শিক্ষার্থী ভর্তি এখনও কমিটির দায়িত্ব না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের অধ্যক্ষরা বসে কী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা তাদের বিষয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় যদি আমাদের এটা করার নির্দেশ দেয় তাহলে বিষয়টি নিয়ে বসে আমরা আলোচনা করব।” অপরদিকে কলেজগুলো পরিচালনার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপরেখা তৈরির এ কমিটির কাজও খুব বেশি দূর এগোয়নি বলে তিনি তুলে ধরেন।
এ দুই কারণে নতুন শিক্ষাবর্ষে সাত কলেজের ভর্তি প্রক্রিয়া কীভাবে এবং কবে হবে সেই প্রশ্নও আলোচনা হচ্ছে। কেননা এদিন বিকালেই সিদ্ধান্ত এসেছে চলতি ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এসব কলেজের শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম বন্ধ হবে। তবে বর্তমান শিক্ষার্থীরা আগের মতই তাদের শিক্ষাক্রম ও পরীক্ষা অধিভুক্তির নিয়ম মেনেই চালিয়ে যাবেন। আর কলেজগুলো কীভাবে পরিচালনা হবে সেজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপরেখা প্রণয়ন কমিটির সুপারিশ পর্যন্ত অপেক্ষা করার কথা বলেছেন সাত কলেজের একটি ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস। তবে এ কমিটি এখনও সেভাবে কাজ শুরু না করায় নতুন শিক্ষাবর্ষে ভর্তির প্রক্রিয়া কী হবে তা ভাবা হচ্ছে। এরইমধ্যে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। সরকারি সাত কলেজের ভর্তির জন্যও আলাদা বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।
২০১৭ সালে রাজধানীর এই সাত কলেজ হল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়।
কলেজগুলো হল-ঢাকা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, ইডেন কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে সভা শেষে সোমবার বিকালে ঢাকা কলেজে সংবাদ সম্মেলনে অধ্যক্ষ ইলিয়াস বলেন, শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে না ফিরে এসব কলেজ পরিচালনায় আলাদা প্রতিষ্ঠানিক কাঠামো ঠিক করার পরই নতুন শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। তিনি বলেন, “নতুন ওই কাঠামো ঠিক করার পরই সাত কলেজ শিক্ষার্থী ভর্তির কাজ শুরু করবে।” তবে গত ৬ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধীনেই ভর্তি পরীক্ষা নিতে ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের জন্য ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল। ওইদিনই অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়, যা ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলার কথা।
ভর্তি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ১৮ এপ্রিল থেকে লিখিত ভর্তি পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া শেষে আগের শিক্ষাবর্ষে পরীক্ষা হয়েছিল মে মাসে। এখন নতুন সিদ্ধান্ত আসায় এ ভর্তি বিজ্ঞপ্তির কী হবে তা এখনও অজানা।
এদিকে সাত কলেজে চলমান পরীক্ষাগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চালানোর কথা বলেছেন কলেজগুলোর অধ্যক্ষরা। ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইলিয়াস বলেন, “আমাদের কয়েকটা পরীক্ষা চলমান। আমরা সাত কলেজের পরীক্ষাগুলো শেষ করতে চাই। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ও সম্মত। চলমান পরীক্ষাগুলো আমরা চালাতে চাই, তাতে যদি শিক্ষার্থীরা সম্মত থাকে। দু-একটি পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন হয়েছে, অবস্থা দেখে ওই তারিখগুলো নতুন করে দেওয়ার কথা আমরা বলেছি।” আলাদা কাঠামোর বিষয়ে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, “যেহেতু সরকার একটা উচ্চপর্যায়ের কমিটি করেছেন, সেখানে আমরা সাত কলেজের প্রিন্সিপাল ও বিভাগীয় প্রধানরা আমন্ত্রিত হয়ে তাদেরকে অবস্থাটা ব্যাখ্যা করেছি। ছাত্রদের চাওয়াটার সঙ্গে এটা কতটা সঙ্গতিপূর্ণ সেটা আমরা তুলে ধরেছি।
“কমিটি বলেছে, তারা শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনার পর বরেণ্য শিক্ষাবিদদের সঙ্গেও কথা বলবেন। তারপর তারা একটি সিদ্ধান্ত দেবেন, যেটা হল এ দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে আরেকটা কাঠামো দাঁড় করাবেন। সেটার কী রূপরেখা হবে, কী কাঠামো হবে, সেটা নিয়ে আলোচনা হয়নি।” সাত কলেজের জন্য ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকক্ষ একটি স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপরেখা প্রণয়ন’ কতদূর এগিয়েছে জানতে চাইলে সোমবার রাতে কমিটির প্রধান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ বলেন, “আমরা অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করছি। তবে কাজ খুব বেশিদূর এগোয়নি।”
অধিভুক্তি বাতিলে গেরো ছুটবে?
রোববার রাত ১১টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অন্তত সাড়ে ৪ ঘণ্টা সংঘর্ষ-মারামারিতে জড়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। গভীর রাতে পরদিন জরুরি সভা ডাকার কথা জানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সোমবার দুপুরে সেই জরুরি সভায় সাত কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান। বৈঠক শেষে দুপুর আড়াইটার দিকে সংবাদ সম্মেলনে সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন উপাচার্য। বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অধিভুক্ত সাত কলেজের সম্মানজনক পৃথকীকরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।“
বৈঠকে পাঁচটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানানো হয়। এগুলো হল-
>> ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের সম্মানজনক পৃথকীকরণ;
>> আগের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে এক বছর এগিয়ে এনে অর্থাৎ ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সাত কলেজের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে;
>> শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠন করা বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের কার্যক্রম পরিচালনা করার সুপারিশ;
>> ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষ আসন সংখ্যা ও ভর্তি ফি নির্ধারণসহ যাবতীয় বিষয়ে মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে; এবং
>> যেসব শিক্ষার্থী বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান শিক্ষা কার্যক্রমের অধীনে রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায়িত্বশীল থাকবে, যাতে তাদের শিক্ষাজীবন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
সরকারি সাত কলেজের কাঙ্খিত এই অধিভুক্তি বাতিল হওয়ায় এখন সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নটি আসছে, সেটি হচ্ছে কলেজগুলো তাহলে কাদের অধীনে থাকবে। তাদের ভর্তি প্রক্রিয়া কী হবে? তারা কী আবারও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেই যাবে? তাদের সনদ কে দেবে? সংশ্লিষ্ট অনেকের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বললেও কেউ খোলাসা করে কিছু বলতে পারেননি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ অনেকগুলো পক্ষ এর সঙ্গে জড়িত থাকায় এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে অপেক্ষায় থাকতে হবে আরও কয়েকদিন। অপক্ষোয় করতে হবে গত ২৯ ডিসেম্বর সাত কলেজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকক্ষ একটি স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপরেখা প্রণয়নে চার সদস্যের উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশের দিকেও। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ কমিটি প্রধানের দায়িত্ব দেয় ইউজিসির চেয়ারম্যানকে; যিনি বলছেন কমিটির কাজ সবেমাত্র শুরু হয়েছে। সাত কলেজকে স্বতন্ত্র কাঠামো দিতে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রচেষ্টা চালানোর মধ্যে হঠাৎ অধিভুক্তি বাতিলের এমন ঘোষণায় সংকট আরও ঘনীভূত হবে বলে মনে করেন কেউ কেউ।
সমাধান যে পথে
ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইলিয়াস সোমবার রাতে অনলাইন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আপাতত আমাদের শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক দায়িত্ব নেবে। তবে তারা ভর্তির কাজে সম্পৃক্ত থাকবে না। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি আলাদা প্রতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপরেখা দিলে ওই কাঠামো অনুযায়ী সাত কলেজ পরিচালনা করা হবে। “তাই ভর্তি ছাড়া কলেজগুলোর সামনে আপতত সংকট নেই। যে কাঠামো হবে ওই কাঠামোকে সব সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাই কমিটি যদি ওই কাঠামোর রূপরেখা দিয়ে আপাতত ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করে তাহলে সংকট থাকবে না। কারণ পরে ওই প্রতিষ্ঠানিক কাঠামো সাত কলেজের দায়িত্ব নেবে।”
অন্ধকারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়
অধিভুক্ত বাতিল হওয়ার পর কলেজগুলোর অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম কীভাবে চলবে, শিক্ষা কার্যক্রমইবা কীভাবে চলবে সেসব বিষয়ে এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও অন্ধকারে। এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অতিরিক্ত সচিব নুরুন আখতার সোমবার রাতে অনলাইন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের অধ্যক্ষরা ক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেটি এখনও আমার কাছে এসে পৌঁছায়নি। আনুষ্ঠানিকভাবে সিদ্ধান্ত পেলে আমরা বিষয়টি পর্যালোচনা করবো।” শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়েরকে ফোন করা হলেও সাড়া মেলেনি।
যেভাবে এসেছিল অধিভুক্তির সিদ্ধান্ত
এক সময় দেশের সব ডিগ্রি কলেজ পরিচালিত হত ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। ১৯৯২ সালে সরকারি কলেজগুলোকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করে তখনকার বিএনপি সরকার। কিন্তু বিপুল সংখ্যক কলেজ সামলাতে গিয়ে হিমশিম দশা হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের। সময়মত পরীক্ষা নেওয়া বা ফল প্রকাশ করতে না পারায় দেখা দেয় দীর্ঘ সেশনজট। অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে দেখা দেয় স্থবিরতা। সনদের মান নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্যের অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থীরা তখনও রাস্তায় নেমেছিলেন। ২০১৪ সালের শেষ দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে গিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ২৭৯টি সরকারি কলেজকে বিভাগীয় পর্যায়ের পুরনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার নির্দেশ দেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরের বছর তিনি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সঙ্গে এক বৈঠকে সরকারি কলেজগুলোকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আনার প্রক্রিয়া ত্বরাণ্বিত করার তাগিদ দেন।
এর ধারাবাহিতায় ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বৃহৎ এই সাত সরকারি কলেজকে ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়া হয়। সেসময় সিদ্ধান্ত হয়, এসব কলেজে ভর্তি পরীক্ষা, পাঠ্যসূচি ও পরীক্ষা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিচালিত হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সে সময় কলেজ ছিল দুই হাজার ১৫৪টি, শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২০ লাখের বেশি। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত হওয়া সাত কলেজে তখন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে এক লাখ ৬৭ হাজার ২৩৬ জন শিক্ষার্থী এবং এক হাজার ১৪৯ জন শিক্ষক ছিলেন। ওই সময় দেশের অন্য সরকারি কলেজগুলোকেও ধারাবাহিকভাবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার সিদ্ধান্ত ছিল, কিন্তু সাত কলেজের পর সেই উদ্যোগ আর এগোয়নি। তবে দীর্ঘমেয়াদী কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়ায় প্রশাসনিক ও অ্যাকাডেমিক বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে থাকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনে ‘হয়রানি’, অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ না করা, সেশনজট, ফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রতা, ত্রুটিপূর্ণ ফলাফল প্রকাশ, রেকর্ড সংখ্যক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হওয়া– ইত্যাদি সমস্যা নিয়ে আন্দোলন করতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। আট বছরেও এসব সংকটের সমাধান হয়নি। উল্টো পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।