ঢাকা ০৬:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫

অধিকাংশ স্কুলে গাওয়া হয় না জাতীয় সংগীত!

  • আপডেট সময় : ০১:৩৪:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২২
  • ১০৬ বার পড়া হয়েছে

বরগুনা সংবাদদাতা : আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি … কোটি কোটি বাংলাদেশির হৃদয়ের গান; বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। অথচ, এ সংগীত নাকি গাওয়া হয় না বরগুনার জেলার অধিকাংশ স্কুলে! দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় সংগীত বাধ্যতামূলক হলেও বরগুনায় অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদরাসায় গাওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
ফলে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা এ সংগীতের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারছে না। দেশপ্রেমের শিক্ষা সম্পর্কের পূর্ণ জ্ঞান পাচ্ছে না। জেলার বেতাগী উপজেলার সরকারি বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদরাসা, কিন্ডারগার্টেনগুলোয় অধিকাংশ সময় জাতীয় সংগীত গাওয়া হয় না বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কিন্তু শিক্ষকদের দাবি, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়। আবার স্থানীয় বা কয়েকজন অভিভাবক জানালেন, হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে এ সংগীত গাওয়া হয়। ছাত্র-ছাত্রীরা এ ব্যাপারে মুখ খুলতে চাইছে না। বেতাগী উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১২৯টি। মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ২১টি, নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয় পাঁচটি। কলেজিয়েট দুটি, কলেজ পাঁচটি, মাদরাসা ২০টি ও কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে দশটি। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশে নিয়মিত জাতীয় সংগীত গাওয়া হয় না। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় দুই দফা জাতীয় সংগীত গাওয়ার নির্দেশনা থাকলেও মানা হয় একবার।
জানা গেছে, উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় কেবল শীতকালে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়। শীতকাল পার হয়ে গেলে আর তেমন গাওয়া হয় না। কয়েকটি স্কুলে জাতীয় সংগীত শুদ্ধ করে গাওয়া হয় না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী জানিয়েছে, তাদের প্রতিষ্ঠানে সঠিক নিয়মে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয় না। প্রতিদিন এ সংগীত গাওয়ার কথা থাকলেও কোনো অনুষ্ঠান বা শীতকালে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়। বেতাগী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জেসমিন আক্তার দাবি করেন, তার প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়। কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীদের ভাষ্য আলাদা। সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. গোলাম কবিরের দাবি, তাদের প্রতিষ্ঠানে কাল ভেদে নয়, সারা বছর জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়। নিয়মিত প্রাত্যহিক সমাবেশ, বিভিন্ন অনুষ্ঠানও শুরু করা হয় এ সংগীতের মাধ্যমে। যদিও স্থানীয় ও অভিভাবকদের কথার সঙ্গে গোলাম কবিরের কথার তেমন মিল পাওয়া যায়নি। উপজেলার বিবিচিনি ইউনিয়নের পুটিয়াখালী আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. বজলুর রহমান দাবি করে বলেন, জাতীয় সংগীত গাওয়া হবে না, তা হতে পারে না। সারা বছর জাতীয় সংগীত, শপথ বাক্য, পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত ও শ্রীমদ্ভগবদগীতা পাঠের মাধ্যমে শ্রেণির কার্যক্রম শুরু করা হয়। এদিকে মাদরাসাগুলোর মধ্যে দুয়েকটি ছাড়া আর কোনো প্রতিষ্ঠানে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয় না। শপথ পাঠ করানো হয় মনগড়া-বানানো বাক্যে। এ বিষয়ে কোনো মাদরাসা থেকে দায়িত্বরত কেউ কোনো মতামত দেয়নি। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহীদুর রহমান এ ব্যাপারে বলেন, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সুহৃদ সালেহীন বলেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয় না বা হবে না; তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও প্রতিযোগিতার আয়োজন বাধ্যতামূলক করার জন্য একটি নির্দেশনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ। ২০১৮ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর এক পরিপত্রের মাধ্যমে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। এটি বাস্তবায়নে প্রতি জেলায় ১৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটিও গঠন করতে বলা হয়।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ইসির ওয়েবসাইট থেকে নৌকা বাদ, যুক্ত হলো দাঁড়িপাল্লা

অধিকাংশ স্কুলে গাওয়া হয় না জাতীয় সংগীত!

আপডেট সময় : ০১:৩৪:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২২

বরগুনা সংবাদদাতা : আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি … কোটি কোটি বাংলাদেশির হৃদয়ের গান; বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। অথচ, এ সংগীত নাকি গাওয়া হয় না বরগুনার জেলার অধিকাংশ স্কুলে! দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় সংগীত বাধ্যতামূলক হলেও বরগুনায় অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদরাসায় গাওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
ফলে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা এ সংগীতের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারছে না। দেশপ্রেমের শিক্ষা সম্পর্কের পূর্ণ জ্ঞান পাচ্ছে না। জেলার বেতাগী উপজেলার সরকারি বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদরাসা, কিন্ডারগার্টেনগুলোয় অধিকাংশ সময় জাতীয় সংগীত গাওয়া হয় না বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কিন্তু শিক্ষকদের দাবি, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়। আবার স্থানীয় বা কয়েকজন অভিভাবক জানালেন, হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে এ সংগীত গাওয়া হয়। ছাত্র-ছাত্রীরা এ ব্যাপারে মুখ খুলতে চাইছে না। বেতাগী উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১২৯টি। মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ২১টি, নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয় পাঁচটি। কলেজিয়েট দুটি, কলেজ পাঁচটি, মাদরাসা ২০টি ও কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে দশটি। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশে নিয়মিত জাতীয় সংগীত গাওয়া হয় না। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় দুই দফা জাতীয় সংগীত গাওয়ার নির্দেশনা থাকলেও মানা হয় একবার।
জানা গেছে, উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় কেবল শীতকালে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়। শীতকাল পার হয়ে গেলে আর তেমন গাওয়া হয় না। কয়েকটি স্কুলে জাতীয় সংগীত শুদ্ধ করে গাওয়া হয় না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী জানিয়েছে, তাদের প্রতিষ্ঠানে সঠিক নিয়মে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয় না। প্রতিদিন এ সংগীত গাওয়ার কথা থাকলেও কোনো অনুষ্ঠান বা শীতকালে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়। বেতাগী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জেসমিন আক্তার দাবি করেন, তার প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়। কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীদের ভাষ্য আলাদা। সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. গোলাম কবিরের দাবি, তাদের প্রতিষ্ঠানে কাল ভেদে নয়, সারা বছর জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়। নিয়মিত প্রাত্যহিক সমাবেশ, বিভিন্ন অনুষ্ঠানও শুরু করা হয় এ সংগীতের মাধ্যমে। যদিও স্থানীয় ও অভিভাবকদের কথার সঙ্গে গোলাম কবিরের কথার তেমন মিল পাওয়া যায়নি। উপজেলার বিবিচিনি ইউনিয়নের পুটিয়াখালী আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. বজলুর রহমান দাবি করে বলেন, জাতীয় সংগীত গাওয়া হবে না, তা হতে পারে না। সারা বছর জাতীয় সংগীত, শপথ বাক্য, পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত ও শ্রীমদ্ভগবদগীতা পাঠের মাধ্যমে শ্রেণির কার্যক্রম শুরু করা হয়। এদিকে মাদরাসাগুলোর মধ্যে দুয়েকটি ছাড়া আর কোনো প্রতিষ্ঠানে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয় না। শপথ পাঠ করানো হয় মনগড়া-বানানো বাক্যে। এ বিষয়ে কোনো মাদরাসা থেকে দায়িত্বরত কেউ কোনো মতামত দেয়নি। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহীদুর রহমান এ ব্যাপারে বলেন, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সুহৃদ সালেহীন বলেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয় না বা হবে না; তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও প্রতিযোগিতার আয়োজন বাধ্যতামূলক করার জন্য একটি নির্দেশনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ। ২০১৮ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর এক পরিপত্রের মাধ্যমে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। এটি বাস্তবায়নে প্রতি জেলায় ১৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটিও গঠন করতে বলা হয়।