ঢাকা ১২:২৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫

অদক্ষতার কারণে ৮৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার: সিপিডির গবেষণা

  • আপডেট সময় : ০১:৫৩:০৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ এপ্রিল ২০২৩
  • ৬৪ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত থেকে সরকার বছরে প্রায় ৮৪ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে বলে হিসাব দিয়েছে গবেষণা সংস্থা সিপিডি। কর দিতে সক্ষম ব্যক্তি এবং অনেক কর্পোরেট কোম্পানির কাছ থেকে এই পরিমাণ রাজস্ব অনাদায়ী থাকছে। সিপিডি মনে করছে, কর প্রশাসন শক্তিশালী ও আধুনিকায়নের মাধ্যমে প্রতি বছর এই বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় বাড়ানো সম্ভব।
গতকাল সোমবার ‘কর্পোরেট খাতে কর স্বচ্ছতা জাতীয় বাজেটে এর প্রভাব কী হতে পারে’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী বছরে প্রায় ৮৪ হাজার কোটি টাকা কীভাবে ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে, তার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “দেশের জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে ২ লাখ ১৩ হাজার কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলেও রিটার্ন দাখিল করে মাত্র ৪৫ হাজার কোম্পানি। আবার দেশে যে পরিমাণ মানুষ কর দিতে পারে তার ৬৮ শতাংশ কর দিচ্ছে না।
“এই বিপুল অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত থেকে ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী সরকার প্রায় ৮৪ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।” এর আগে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত ৩৬ শতাংশ ছিল, সেখান থেকে এখন ৩০ শতাংশ হয়েছে উল্লেখ করে এই গবেষক বলেন, “আমাদের অর্থনীতির আকার যেভাবে বেড়েছে সেভাবে প্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতি বাড়েনি। এরফলে এই খাতের বড় একটা কর আমাদের অর্থনীতির বাইরে রয়ে গেছে।” এর ফলে কর ক্ষতির পরিমাণও উত্তরোত্তর বাড়ছে মন্তব্য করে গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাংলাদেশের প্রায় ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র ২৫ লাখ লোক কর দেয়। এমন পরিস্থিতিতে কর-জিডিপির অনুপাত ৯ শতাংশে নেমে আসার তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইএমএফ এবং বিশ্ব ব্যাংকের মানদন্ড অনুযায়ী একটি উদীয়মান অর্থনীতির দেশকে অবশ্যই কর জিডিপির হার ১২ থেকে ১৫ শতাংশ হওয়া উচিৎ। “আমাদের কর আদায় পরিস্থিতি সেই মানে উন্নীত করতে হলে আমরা প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা পিছিয়ে রয়েছি।” কর্পোরেট কর হার বেশি হওয়ায় কর ফাঁকির প্রবণতাও বাড়ছে বলে মনে করেন মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, “আমাদের কর্পোরেট করহার এখনও এশিয়া এমনকি আফগানিস্তানের পর দক্ষিণ এশিয়াও সর্বোচ্চ।
“বেশিরভাগ দেশেই কর্পোরেট কর ১৫ শতাংশ হলেও বাংলাদেশে এখনও শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির কর হার ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত রয়েছে। যদিও চলতি অর্থবছরের বাজেটে বাংলাদেশে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।” তিনি বলেন, অর্থনীতিবিদদের মধ্যে একটি সাধারণ ধারণা রয়েছে যে যে দেশে যত বেশি অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতি রয়েছে, সেই দেশের কর আদায়ের হার ততই কম। “কিন্তু ব্রাজিলে এই ধারণা উল্টে গেছে। যেমন দেশটির মোট অর্থনীতির ৩৩ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক, কিন্তু কর জিডিপির হার ৩২ শতাংশ। অন্যদিকে বাংলাদেশের অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতি ৩০ শতাংশ হলেও কর আদায় হয় জিডিপির মাত্র ৯ শতাংশ।” প্রতি বছর যে পরিমাণ কর ফাঁকি হচ্ছে, তা কর প্রশাসনের অদক্ষতার কারণে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, “যে দেশের কর প্রশাসন যত বেশি শক্তিশালী, সে দেশে কর আহরণ ব্যবস্থাও ততটাই মজবুত।” তার মন্তব্য, প্রশাসন দক্ষ না হলে কর হার কমালেও ভালো ফল পাওয়া যায় না। সিপিডি ও খ্রিস্টিয়ান এইডের সহযোগিতায় এই গবেষণাটি পরিচালনা করা হয় বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়েছে। সিপিডি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, একটি যৌক্তিক, স্বচ্ছ, প্রগতিশীল এবং সুষম কর ব্যবস্থা একটা জাতীয় উন্নয়নের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কর্পোরেট খাতের কর আদায় কীভাবে আরও স্বচ্ছ করা যায়,সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার উপর জোর দেন তিনি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

অদক্ষতার কারণে ৮৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার: সিপিডির গবেষণা

আপডেট সময় : ০১:৫৩:০৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ এপ্রিল ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত থেকে সরকার বছরে প্রায় ৮৪ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে বলে হিসাব দিয়েছে গবেষণা সংস্থা সিপিডি। কর দিতে সক্ষম ব্যক্তি এবং অনেক কর্পোরেট কোম্পানির কাছ থেকে এই পরিমাণ রাজস্ব অনাদায়ী থাকছে। সিপিডি মনে করছে, কর প্রশাসন শক্তিশালী ও আধুনিকায়নের মাধ্যমে প্রতি বছর এই বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় বাড়ানো সম্ভব।
গতকাল সোমবার ‘কর্পোরেট খাতে কর স্বচ্ছতা জাতীয় বাজেটে এর প্রভাব কী হতে পারে’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী বছরে প্রায় ৮৪ হাজার কোটি টাকা কীভাবে ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে, তার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “দেশের জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে ২ লাখ ১৩ হাজার কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলেও রিটার্ন দাখিল করে মাত্র ৪৫ হাজার কোম্পানি। আবার দেশে যে পরিমাণ মানুষ কর দিতে পারে তার ৬৮ শতাংশ কর দিচ্ছে না।
“এই বিপুল অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত থেকে ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী সরকার প্রায় ৮৪ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।” এর আগে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত ৩৬ শতাংশ ছিল, সেখান থেকে এখন ৩০ শতাংশ হয়েছে উল্লেখ করে এই গবেষক বলেন, “আমাদের অর্থনীতির আকার যেভাবে বেড়েছে সেভাবে প্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতি বাড়েনি। এরফলে এই খাতের বড় একটা কর আমাদের অর্থনীতির বাইরে রয়ে গেছে।” এর ফলে কর ক্ষতির পরিমাণও উত্তরোত্তর বাড়ছে মন্তব্য করে গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাংলাদেশের প্রায় ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র ২৫ লাখ লোক কর দেয়। এমন পরিস্থিতিতে কর-জিডিপির অনুপাত ৯ শতাংশে নেমে আসার তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইএমএফ এবং বিশ্ব ব্যাংকের মানদন্ড অনুযায়ী একটি উদীয়মান অর্থনীতির দেশকে অবশ্যই কর জিডিপির হার ১২ থেকে ১৫ শতাংশ হওয়া উচিৎ। “আমাদের কর আদায় পরিস্থিতি সেই মানে উন্নীত করতে হলে আমরা প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা পিছিয়ে রয়েছি।” কর্পোরেট কর হার বেশি হওয়ায় কর ফাঁকির প্রবণতাও বাড়ছে বলে মনে করেন মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, “আমাদের কর্পোরেট করহার এখনও এশিয়া এমনকি আফগানিস্তানের পর দক্ষিণ এশিয়াও সর্বোচ্চ।
“বেশিরভাগ দেশেই কর্পোরেট কর ১৫ শতাংশ হলেও বাংলাদেশে এখনও শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির কর হার ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত রয়েছে। যদিও চলতি অর্থবছরের বাজেটে বাংলাদেশে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।” তিনি বলেন, অর্থনীতিবিদদের মধ্যে একটি সাধারণ ধারণা রয়েছে যে যে দেশে যত বেশি অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতি রয়েছে, সেই দেশের কর আদায়ের হার ততই কম। “কিন্তু ব্রাজিলে এই ধারণা উল্টে গেছে। যেমন দেশটির মোট অর্থনীতির ৩৩ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক, কিন্তু কর জিডিপির হার ৩২ শতাংশ। অন্যদিকে বাংলাদেশের অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতি ৩০ শতাংশ হলেও কর আদায় হয় জিডিপির মাত্র ৯ শতাংশ।” প্রতি বছর যে পরিমাণ কর ফাঁকি হচ্ছে, তা কর প্রশাসনের অদক্ষতার কারণে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, “যে দেশের কর প্রশাসন যত বেশি শক্তিশালী, সে দেশে কর আহরণ ব্যবস্থাও ততটাই মজবুত।” তার মন্তব্য, প্রশাসন দক্ষ না হলে কর হার কমালেও ভালো ফল পাওয়া যায় না। সিপিডি ও খ্রিস্টিয়ান এইডের সহযোগিতায় এই গবেষণাটি পরিচালনা করা হয় বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়েছে। সিপিডি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, একটি যৌক্তিক, স্বচ্ছ, প্রগতিশীল এবং সুষম কর ব্যবস্থা একটা জাতীয় উন্নয়নের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কর্পোরেট খাতের কর আদায় কীভাবে আরও স্বচ্ছ করা যায়,সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার উপর জোর দেন তিনি।