আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কানাডার রাজধানী অটোয়ায় করোনাভাইরাস টিকা বাধ্যতামূলকসহ মহামারীজনিত বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে তিন সপ্তাহ ধরে চলা প্রতিবাদ বন্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে পুলিশ, গ্রেপ্তার করা হয়েছে শতাধিক বিক্ষোভকারীকে।
গত শুক্রবার অটোয়ার কেন্দ্রস্থলের সড়কগুলো থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে অভিযান চালায় পুলিশ; এতে কিছু অশ্বারোহী পুলিশও অংশ নিয়েছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।
তারা সেখানে অবস্থান নেওয়া বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ঢুকে পড়ে শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে নগরীর কেন্দ্রস্থল অবরোধ করে রাখা গাড়িগুলো সরিয়ে নেওয়া শুরু করে।
পরিস্থিতি আরও নাজুক বা সহিংসতা হতে পারে শঙ্কায় অটোয়া পুলিশ জরিমানা ও গ্রেপ্তারের হুমকি দিয়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে চেয়েছিল, কিন্তু শুক্রবার হিমশীতল তাপমাত্রা ও তুষারপাতের মধ্যে কয়েকশ পুলিশ কর্মকর্তা অভিযানে নেমে ধীরে ধীরে শহরের একটি অংশ পরিষ্কার করতে থাকে।
পুলিশ কিছু বিক্ষোভকারীকে তাদের গাড়ি থেকে টেনে নামায়, অন্য যারা অভিযানে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে তাদের মাটিতে ফেলে হাত পিছমোড়া করে বেঁধে ফেলে। সারাদিন ধরেই এমন উত্তেজনাপূর্ণ কিছু মুহূর্ত দেখা যায়।
এক বিবৃতিতে পুলিশ জানিয়েছে, শেষ বিকালের দিকে বিক্ষোভকারীরা ‘আক্রমণাত্মক আচরণ’ করে পুলিশকে ‘সমালোচনামূলক অবস্থানে’ নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় এক ব্যক্তি পুলিশের ঘোড়ার দিকে একটি সাইকেল ছুড়ে মারে; পুলিশ বিভাগের পশুকে ক্ষতি করার দায়ে ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২৮ জানুয়ারি থেকে অটোয়ার রাস্তাগুলো দখল করে রাখা বিক্ষোভকারী ও ট্রাক্টর-ট্রেইলার ট্রাকগুলো পুরোপুরি সরাতে কয়েকদিন লেগে যেতে পারে।
অটোয়ার অন্তর্র্বতী পুলিশ প্রধান স্টিভ বেল বলেছেন, “বাসিন্দারা ও জনসাধারণ তাদের পুরো শহর ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত এ অভিযান প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা ধরে চালাবো আমরা।”
রয়টার্স জানিয়েছে, নগরীর কেন্দ্রস্থলে অন্তত একটি সামরিক ধরনের সাঁজোয়া যান দেখা গেছে, অশ্বারোহী পুলিশ কর্মকর্তাদের অন্তত আট জনের মাথায় হেলমেট ছিল। কিছু পুলিশের কাছে বন্দুক ছিল আর অন্যদের হাতে কাঁদুনে গ্যাস লঞ্চার ছিল বলে দেখে মনে হয়েছে। শুক্রবার একবারও কাঁদুনে গ্যাস ব্যবহার করা হয়নি। তবে কানাডীয় সম্প্রচারমাধ্যম সিটিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, কিছু বিক্ষোভকারী পুলিশের বিরুদ্ধে পেপার স্প্রে ও অন্যরা অশ্বারোহী পুলিশের বিরুদ্ধে তাদের পদদলিত করার অভিযোগ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে পণ্য আনানেওয়া করা ট্রাক চালকদের জন্য করোনাভাইরাস টিকা বাধ্যতামূলক করার পর সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় ট্রাক চালকদের একটি বহর অটোয়ার কেন্দ্রস্থলে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। কিন্তু ক্রমে এই অবরোধ প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর একটি প্রতিবাদে পরিণত হয়।
অটোয়া পুলিশ বিক্ষোভাকারীদের অবস্থানস্থলের চারদিকে শতাধিক সড়ক বন্ধ করে দিয়ে সেখানে চেকপয়েন্ট বসিয়ে তাদের অভিযানের সূচনা করে। বিক্ষোভকারীদের অবস্থানে খাবার, জ্বালানি সরবরাহ যেন করা যেতে না পারে এবং বাইরে থেকে কোনো বিক্ষোভকারী যেন সেখানে প্রবেশ করতে না পারে তা নিশ্চিত করাই পুলিশের উদ্দেশ্য। শুক্রবার রাতে পুলিশ জানিয়েছে, তারা শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে এবং এ পর্যন্ত ২১টি গাড়ি সরিয়ে নিয়েছে। সিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার বহু ট্রাক চালককে স্বেচ্ছায় বিক্ষোভস্থল থেকে তাদের ট্রাক সরিয়ে নিতে যেতে দেখা যায়, তারপরও রাত পর্যন্ত বহু ট্রাক অবরোধস্থলে রয়ে গেছে।
যেসব বিক্ষোভকারীকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে তাদের পাশাপাশি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিন সংগঠককে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বলে জানিয়েছে। এদের মধ্যে বৃহস্পতিবার দুই জনকে ও শুক্রবার একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। তাদের নেতাদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে বিক্ষোভকারীদের প্রতিনিধিত্বকারী গোষ্ঠী ‘ফ্রিডম কনভয় ২০২২’ বলেছে, “আমরা বিক্ষোভ চালিয়ে যাব। ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রতি মাথা নত করবো না। বিশ্ব দেখছে, কানাডা।”
অটোয়ার বিক্ষোভের সমাপ্তি টানতে পুলিশের অভিযান, গ্রেপ্তার শতাধিক
জনপ্রিয় সংবাদ