ঢাকা ১২:২৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

অচিরেই বাংলাদেশে চুক্তির পুরো বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে আদানি পাওয়ার

  • আপডেট সময় : ০৪:০৩:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ২১ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক: পিডিবির অনুরোধে ঝাড়খণ্ড কেন্দ্রের সক্ষমতার পুরো ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে সরবরাহে আদানি পাওয়ার সম্মত হয়েছে বলে খবর দিয়েছে রয়টার্স।

তবে ভারতীয় ওই কোম্পানি তাদের দেশে যে কর ছাড় পেয়েছে, সেই সুবিধা এবং মূল্যছাড় প্রশ্নে ঢাকার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে।

শীত মৌসুমে চাহিদা কম থাকা ও বকেয়া পরিশোধ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় সাড়ে তিন মাসের বেশি সময় ধরে চুক্তির অর্ধেক পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ করছিল আদানি পাওয়ার।

ধনকুবের গৌতম আদানির এই কোম্পানি ভারতের পূর্বাঞ্চলে ঝাড়খণ্ডের কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ২০১৭ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে।

১৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ওই কেন্দ্রের দুটি ইউনিট থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছিল আদানি। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮৫ কোটি ডলারের বকেয়া আদায়ে গত ৩১ অক্টোবর বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেক করে দেয় এই ভারতীয় কোম্পানি।

রয়টার্স লিখেছে, ১ নভেম্বর একটি ইউনিট বন্ধ করে দেওয়া হলে কেন্দ্রের সক্ষমতার ৪২ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছিল। পরে বাংলাদেশও আদানিকে অর্ধেক বিদ্যুৎই সরবরাহ করতে বলে। তবে গ্রীষ্ম শুরুর আগে ঝাড়খণ্ড কেন্দ্রের পুরো ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহে সম্প্রতি আদানি পাওয়ারকে অনুরোধ করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। সেই অনুরোধে সাড়া দিয়ে আগামী সপ্তাহ নাগাদ সক্ষমতার পুরো বিদ্যুৎ দিতে আদানি রাজি হয়েছে বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন দুটি সূত্র।

বিষয়টি সরাসরি জানা থাকলেও সংবাদম্যমে কথা বলার জন্য অনুমতি না থাকায় তারা নাম প্রকাশ করতে চাননি। দিল্লি ২০১৯ সালে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রকে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের অংশ ঘোষণা করে। সেই সুবাদে আয়কর এবং অন্যান্য শুল্কের ক্ষেত্রে ছাড় পাচ্ছে আদানি পাওয়ার।

রয়টার্স লিখেছে, আদানি যে কর সুবিধা ভারত সরকারের কাছ থেকে পেয়েছে, তা যেন বাংলাদেশের বিদ্যুতের দামের ক্ষেত্রে সমন্বয় করা হয়- পিডিবির এই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে বিদ্যুৎ কোম্পানিটি। তাছাড়া বিদ্যুতের মূল্যছাড় অব্যাহত রাখতে পিডিবির অনুরোধও প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।

আদানি পাওয়ার গত বছরের মে মাস পর্যন্ত ওই মূল্যছাড় সুবিধা বাংলাদেশকে দিয়েছিল, যাতে বাংলাদেশের প্রায় ১৩ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হয়। ওই সূত্র দুটির বরাতে রয়টার্স লিখেছে, পিডিবির আরও বেশ কয়েকটি দাবি পূরণে রাজি হয়নি আদানি পাওয়ার। গত মঙ্গলবার উভয় পক্ষের ভার্চুয়াল বৈঠক হয়েছে এবং আরও আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আদানি পাওয়ারের কথা উল্লেখ করে একটি সূত্র বলেছেন, তারা কোনও কিছুতেই ছাড় দিতে চায় না, এমনকি এক মিলিয়ন ডলারও না। আমরা কোনো ছাড় পাইনি। আমরা পারস্পরিক সমঝোতা চাই, তারা বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির কথা টানছে। এ মতানৈক্যের বিষয়ে রয়টার্স জানতে চাইলে পিডিবি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম তাতে সাড়া দেননি।

তিনি গত সপ্তাহের শুরুতে রয়টার্সকে বলেছিলেন, এখন আদানির সঙ্গে বড় কোনো ঝামেলা নেই। তারা সক্ষমতার পুরো বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। এখন প্রতি মাসে সাড়ে আট কোটি ডলার পরিশোধ করা হচ্ছে।

আদানি পাওয়ারের একজন মুখপাত্র তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেননি।

রয়টার্সের মঙ্গলবারের প্রতিবেদনের পর এক বিবৃতিতে কোম্পানিটি বলেছে, ক্রেতার চাহিদা মোতাবেক কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়, ক্রেতার চাহিদা পরিবর্তন হতে থাকে।

গত ডিসেম্বরে আদানির একটি সূত্র দাবি করেছিল, বাংলাদেশের কাছে তাদের পাওনা ৯০ কোটি ডলার। অন্যদিকে পিডিবি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম তখন বলেছিলেন, তাদের বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ৬৫ কোটি ডলার। বিদ্যুতের শুল্ক কীভাবে গণনা করা হচ্ছে তা নিয়েই দামের বিরোধ তৈরি হয়।

ভারত সরকারের কাছ থেকে পাওয়া কর ছাড় সুবিধা বাংলাদেশের সঙ্গে সমন্বয় করতে এবং গত বছরের মে পর্যন্ত পাওয়া মূল্যছাড় ফের চালু করতে এর আগে চিঠি দিয়েছিল পিডিবি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

অচিরেই বাংলাদেশে চুক্তির পুরো বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে আদানি পাওয়ার

আপডেট সময় : ০৪:০৩:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

প্রত্যাশা ডেস্ক: পিডিবির অনুরোধে ঝাড়খণ্ড কেন্দ্রের সক্ষমতার পুরো ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে সরবরাহে আদানি পাওয়ার সম্মত হয়েছে বলে খবর দিয়েছে রয়টার্স।

তবে ভারতীয় ওই কোম্পানি তাদের দেশে যে কর ছাড় পেয়েছে, সেই সুবিধা এবং মূল্যছাড় প্রশ্নে ঢাকার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে।

শীত মৌসুমে চাহিদা কম থাকা ও বকেয়া পরিশোধ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় সাড়ে তিন মাসের বেশি সময় ধরে চুক্তির অর্ধেক পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ করছিল আদানি পাওয়ার।

ধনকুবের গৌতম আদানির এই কোম্পানি ভারতের পূর্বাঞ্চলে ঝাড়খণ্ডের কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ২০১৭ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে।

১৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ওই কেন্দ্রের দুটি ইউনিট থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছিল আদানি। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮৫ কোটি ডলারের বকেয়া আদায়ে গত ৩১ অক্টোবর বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেক করে দেয় এই ভারতীয় কোম্পানি।

রয়টার্স লিখেছে, ১ নভেম্বর একটি ইউনিট বন্ধ করে দেওয়া হলে কেন্দ্রের সক্ষমতার ৪২ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছিল। পরে বাংলাদেশও আদানিকে অর্ধেক বিদ্যুৎই সরবরাহ করতে বলে। তবে গ্রীষ্ম শুরুর আগে ঝাড়খণ্ড কেন্দ্রের পুরো ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহে সম্প্রতি আদানি পাওয়ারকে অনুরোধ করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। সেই অনুরোধে সাড়া দিয়ে আগামী সপ্তাহ নাগাদ সক্ষমতার পুরো বিদ্যুৎ দিতে আদানি রাজি হয়েছে বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন দুটি সূত্র।

বিষয়টি সরাসরি জানা থাকলেও সংবাদম্যমে কথা বলার জন্য অনুমতি না থাকায় তারা নাম প্রকাশ করতে চাননি। দিল্লি ২০১৯ সালে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রকে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের অংশ ঘোষণা করে। সেই সুবাদে আয়কর এবং অন্যান্য শুল্কের ক্ষেত্রে ছাড় পাচ্ছে আদানি পাওয়ার।

রয়টার্স লিখেছে, আদানি যে কর সুবিধা ভারত সরকারের কাছ থেকে পেয়েছে, তা যেন বাংলাদেশের বিদ্যুতের দামের ক্ষেত্রে সমন্বয় করা হয়- পিডিবির এই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে বিদ্যুৎ কোম্পানিটি। তাছাড়া বিদ্যুতের মূল্যছাড় অব্যাহত রাখতে পিডিবির অনুরোধও প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।

আদানি পাওয়ার গত বছরের মে মাস পর্যন্ত ওই মূল্যছাড় সুবিধা বাংলাদেশকে দিয়েছিল, যাতে বাংলাদেশের প্রায় ১৩ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হয়। ওই সূত্র দুটির বরাতে রয়টার্স লিখেছে, পিডিবির আরও বেশ কয়েকটি দাবি পূরণে রাজি হয়নি আদানি পাওয়ার। গত মঙ্গলবার উভয় পক্ষের ভার্চুয়াল বৈঠক হয়েছে এবং আরও আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আদানি পাওয়ারের কথা উল্লেখ করে একটি সূত্র বলেছেন, তারা কোনও কিছুতেই ছাড় দিতে চায় না, এমনকি এক মিলিয়ন ডলারও না। আমরা কোনো ছাড় পাইনি। আমরা পারস্পরিক সমঝোতা চাই, তারা বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির কথা টানছে। এ মতানৈক্যের বিষয়ে রয়টার্স জানতে চাইলে পিডিবি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম তাতে সাড়া দেননি।

তিনি গত সপ্তাহের শুরুতে রয়টার্সকে বলেছিলেন, এখন আদানির সঙ্গে বড় কোনো ঝামেলা নেই। তারা সক্ষমতার পুরো বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। এখন প্রতি মাসে সাড়ে আট কোটি ডলার পরিশোধ করা হচ্ছে।

আদানি পাওয়ারের একজন মুখপাত্র তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেননি।

রয়টার্সের মঙ্গলবারের প্রতিবেদনের পর এক বিবৃতিতে কোম্পানিটি বলেছে, ক্রেতার চাহিদা মোতাবেক কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়, ক্রেতার চাহিদা পরিবর্তন হতে থাকে।

গত ডিসেম্বরে আদানির একটি সূত্র দাবি করেছিল, বাংলাদেশের কাছে তাদের পাওনা ৯০ কোটি ডলার। অন্যদিকে পিডিবি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম তখন বলেছিলেন, তাদের বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ৬৫ কোটি ডলার। বিদ্যুতের শুল্ক কীভাবে গণনা করা হচ্ছে তা নিয়েই দামের বিরোধ তৈরি হয়।

ভারত সরকারের কাছ থেকে পাওয়া কর ছাড় সুবিধা বাংলাদেশের সঙ্গে সমন্বয় করতে এবং গত বছরের মে পর্যন্ত পাওয়া মূল্যছাড় ফের চালু করতে এর আগে চিঠি দিয়েছিল পিডিবি।