ঢাকা ০৬:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫

অগ্নিঝরা মার্চ সব পথ এসে মিশে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে

  • আপডেট সময় : ১০:১৯:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ মার্চ ২০২৩
  • ৫৬ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : পহেলা মার্চ থেকে ধানম-ির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনটি হয় হয়ে উঠেছে সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু। সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী জনগণের পরিচালন কেন্দ্রই শুধু নয়, এই বাড়িটি হয়ে ওঠে মুক্তিকামী মানুষের মহামিলন ক্ষেত্রও। সব পথ যেন মিশেছে ওই বাড়িতে।
দিনভর মিছিলের পর বিভিন্ন পর্যায়ে মানুষ স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতার প্রতি তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন জানাতে এলে বঙ্গবন্ধু সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে বারবার উঠে এসে সমবেত জনতার উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন। তিনি বলেন, “বিদেশি বন্ধুরা দেখুন। আমার দেশের মানুষ প্রতিজ্ঞায় কি অটল। সংগ্রাম আর ত্যাগের মর্মে কত উজ্জীবিত, কার সাধ্য এদের রোখে। স্বাধীনতার জন্য জীবনদানের অগ্নিশপথে দীপ্ত জাগ্রত জনতার এ জীবন জোয়ারকে, প্রচ- গণবিস্ফোরণকে স্তব্ধ করতে পারে- এমন শক্তি মেশিনগানেরও আজ আর নেই।”
জনগণের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বলেন, “তোমরা চরম প্রস্তুতি নিয়ে ঘরে ঘরে সংগ্রামী দুর্গ গড়ে তোল। যদি তোমাদের ওপর আঘাত আসে তা প্রতিহত করে শত্রুর ওপর পাল্টা আঘাত হানো।”
জনতাকে চূড়ান্ত লড়াইয়ে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, “মুক্তি সংগ্রামের পতাকা আরও ওপরে তুলে ধরো। সাত কোটি শোষিত-বঞ্চিত বাঙালির সার্বিক মুক্তি না আসা পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাও।”
এদিন অনেক বিদেশি সাংবাদিক বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে এসেছিলেন। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আরও সৈন্য আনা হচ্ছে, সে সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু কিছু জানেন কিনা, বিদেশি এক সাংবাদিকের এ প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, “আমার দেশের মাটিতে যা কিছু ঘটছে তার সব খবরই আমি রাখি।” এদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ওয়ালী ন্যাপ প্রধান ওয়ালী খান এক ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। সেখানে পাকিস্তান ন্যাপের সভাপতি গাউস বক্স বেজেঞ্জোও ছিলেন।
দিনব্যাপী জনতার মিছিলের পর রাতে সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়, পরদিন বেলা ১১টায় প্রেসিডেন্ট ভবনে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের মধ্যে রাজনৈতিক সংকট নিয়ে তৃতীয় দফা আলোচনা হবে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা তেজগাঁওয়ে ও মহাখালীতে শ্রমিকদের ট্রাকে হামলা চালায়। সৈন্যরা এই দুই স্থানে নিরস্ত্র আরোহীদের নির্মমভাবে প্রহার করে এবং তাদের টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয়। এসব ঘটনায় নগরীতে জনসাধারণের মধ্যে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। রাতে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম সংবাদপত্রে বিবৃতি দেন। তিনি বলেন, “আমরা পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দিতে চাই, নিরস্ত্র মানুষের ওপর উসকানিমূলক আচরণ, তা যে কোনো মহলেরই হোক না কেন, আমরা আর সহ্য করব না। এর ফলাফলের দায়িত্ব উসকানিদাতাদেরই সম্পূর্ণ বহন করতে হবে।”
বাংলাদেশের জন্য খাদ্যশস্যবাহী ‘ইরনা এলিজাবেথ’ নামের একটি জাহাজের গতিপথ বদল করে চট্টগ্রাম থেকে করাচি নিয়ে যাওয়া হয়। ঢাকায় বিমান বাহিনীর সাবেক বাঙালি সৈনিকরা স্বাধীনতার সংগ্রামের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে সংগ্রাম কমিটি গঠন করেন। করাচিতে এক সংবাদ সম্মেলনে পিপলস পার্টি প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া শাসনতান্ত্রিক প্রশ্নে আলোচনার জন্য ঢাকায় আসার যে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি বিভিন্ন দেশের সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বুদ্ধিজীবীদের কাছে তারবার্তা পাঠিয়ে, গণহত্যা ও যুদ্ধ থেকে পশ্চিম পাকিস্তানির নিবৃত্তি করার অনুরোধ জানান। তথ্যসূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী ‘৭১ এর দশ মাস’

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

অগ্নিঝরা মার্চ সব পথ এসে মিশে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে

আপডেট সময় : ১০:১৯:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ মার্চ ২০২৩

প্রত্যাশা ডেস্ক : পহেলা মার্চ থেকে ধানম-ির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনটি হয় হয়ে উঠেছে সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু। সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী জনগণের পরিচালন কেন্দ্রই শুধু নয়, এই বাড়িটি হয়ে ওঠে মুক্তিকামী মানুষের মহামিলন ক্ষেত্রও। সব পথ যেন মিশেছে ওই বাড়িতে।
দিনভর মিছিলের পর বিভিন্ন পর্যায়ে মানুষ স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতার প্রতি তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন জানাতে এলে বঙ্গবন্ধু সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে বারবার উঠে এসে সমবেত জনতার উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন। তিনি বলেন, “বিদেশি বন্ধুরা দেখুন। আমার দেশের মানুষ প্রতিজ্ঞায় কি অটল। সংগ্রাম আর ত্যাগের মর্মে কত উজ্জীবিত, কার সাধ্য এদের রোখে। স্বাধীনতার জন্য জীবনদানের অগ্নিশপথে দীপ্ত জাগ্রত জনতার এ জীবন জোয়ারকে, প্রচ- গণবিস্ফোরণকে স্তব্ধ করতে পারে- এমন শক্তি মেশিনগানেরও আজ আর নেই।”
জনগণের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বলেন, “তোমরা চরম প্রস্তুতি নিয়ে ঘরে ঘরে সংগ্রামী দুর্গ গড়ে তোল। যদি তোমাদের ওপর আঘাত আসে তা প্রতিহত করে শত্রুর ওপর পাল্টা আঘাত হানো।”
জনতাকে চূড়ান্ত লড়াইয়ে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, “মুক্তি সংগ্রামের পতাকা আরও ওপরে তুলে ধরো। সাত কোটি শোষিত-বঞ্চিত বাঙালির সার্বিক মুক্তি না আসা পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাও।”
এদিন অনেক বিদেশি সাংবাদিক বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে এসেছিলেন। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আরও সৈন্য আনা হচ্ছে, সে সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু কিছু জানেন কিনা, বিদেশি এক সাংবাদিকের এ প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, “আমার দেশের মাটিতে যা কিছু ঘটছে তার সব খবরই আমি রাখি।” এদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ওয়ালী ন্যাপ প্রধান ওয়ালী খান এক ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। সেখানে পাকিস্তান ন্যাপের সভাপতি গাউস বক্স বেজেঞ্জোও ছিলেন।
দিনব্যাপী জনতার মিছিলের পর রাতে সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়, পরদিন বেলা ১১টায় প্রেসিডেন্ট ভবনে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের মধ্যে রাজনৈতিক সংকট নিয়ে তৃতীয় দফা আলোচনা হবে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা তেজগাঁওয়ে ও মহাখালীতে শ্রমিকদের ট্রাকে হামলা চালায়। সৈন্যরা এই দুই স্থানে নিরস্ত্র আরোহীদের নির্মমভাবে প্রহার করে এবং তাদের টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয়। এসব ঘটনায় নগরীতে জনসাধারণের মধ্যে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। রাতে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম সংবাদপত্রে বিবৃতি দেন। তিনি বলেন, “আমরা পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দিতে চাই, নিরস্ত্র মানুষের ওপর উসকানিমূলক আচরণ, তা যে কোনো মহলেরই হোক না কেন, আমরা আর সহ্য করব না। এর ফলাফলের দায়িত্ব উসকানিদাতাদেরই সম্পূর্ণ বহন করতে হবে।”
বাংলাদেশের জন্য খাদ্যশস্যবাহী ‘ইরনা এলিজাবেথ’ নামের একটি জাহাজের গতিপথ বদল করে চট্টগ্রাম থেকে করাচি নিয়ে যাওয়া হয়। ঢাকায় বিমান বাহিনীর সাবেক বাঙালি সৈনিকরা স্বাধীনতার সংগ্রামের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে সংগ্রাম কমিটি গঠন করেন। করাচিতে এক সংবাদ সম্মেলনে পিপলস পার্টি প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া শাসনতান্ত্রিক প্রশ্নে আলোচনার জন্য ঢাকায় আসার যে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি বিভিন্ন দেশের সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বুদ্ধিজীবীদের কাছে তারবার্তা পাঠিয়ে, গণহত্যা ও যুদ্ধ থেকে পশ্চিম পাকিস্তানির নিবৃত্তি করার অনুরোধ জানান। তথ্যসূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী ‘৭১ এর দশ মাস’