ঢাকা ০১:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫

অগ্নিঝরা মার্চ
পূর্ব বাংলা হয়ে ওঠে মুজিবময়

  • আপডেট সময় : ০২:৫০:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ মার্চ ২০২৩
  • ৬৯ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : ৯ মার্চ ১৯৭১। রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পর পুরো দৃশ্যপট বদলে যায়। পূর্ব বাংলা হয়ে ওঠে মুজিবময়। একে একে সরকারি, আধা সরকারি, বে-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে। সভা, সমাবেশ ও বিবৃতিতের মাধ্যম সংগঠনের নেতারা সাফ জানিয়ে দেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গৃহীত সকল কর্মসূচি ও সিদ্ধান্তের প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু আহূত অহিংস ও অসহযোগ আন্দোলনের অষ্টম দিন ৯ মার্চ সর্বত্র হরতাল পালিত হয়। যানবাহন, জরুরি সার্ভিস ও ব্যাংক ছাড়া হাইকোর্ট, জজ কোর্ট, আধা সরকারি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। ঘরে ঘরে কালো পতাকা উড়তে দেখা যায়। যানবাহন, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র, শিক্ষ, কর্মচারী ও কর্মকর্তারা কালো ব্যাজ ধারণ করেন। স্টেট ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংক বাংলাদেশের বাইরে টাকা পাঠানো বন্ধ রাখে। দেশের সর্বত্র মিছিল-মিটিং অব্যাহত থাকে।
পল্টন ময়দানে আয়োজিত সমাবেশে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির প্রধান মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ২৫ মার্চের পূর্বে বাংলাদেশকে স্বাধীন ঘোষণা করার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘অন্যথায় ১৯৫২ সালের মতোই আমি ও শেখ মুজিব ঐক্যবদ্ধভাবে স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু করব। ইয়াহিয়া খান, তোমার যদি পশ্চিম পাকিস্তানের পাঁচ কোটি মানুষের জন্য দরদ থাকে তাহলে তুমি পূর্ব বাংলাকে স্বাধীন ঘোষণা কর। এতে করে দুই পাকিস্তানে ভালবাসা থাকবে, বন্ধুত্ব থাকবে। কিন্তু এক পাকিস্তান আর থাকবে না, থাকবে না, থাকবে না!’
ভাসানী বলেন, ‘আমি অহিংস নীতিতে বিশ্বাস করি না। অহিংসার কথা বাদ দাও, এটা অবাস্তব। আমার নবী (সা.) বলতেন, প্রথমে আক্রমণ করো না। কিন্তু কেউ যদি আক্রমণ করে তার তেরটা কেন চৌদ্দটা বাজিয়ে দাও।’ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর সাত কোটি মানুষ স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ায় তাদেরকে মোবারকবাদ জানান ভাসানী।’
পশ্চিম পাকিস্তানিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে কোনো আইন পাস করে আপনাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে আপনারা বিশ্ববাসীর কাছে আবেদন জানাতে পারতেন। পূর্ব বাংলার স্বাধারণ মানুষ আপনাদের সমর্থন করত ।’
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে মওলানা ভাসানী বলেন, ‘বাঙালি, বিহারি, হিন্দু, মুসলমান-সকলেই এ দেশের অধিবাসী। এদের জানমাল রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। বিহারিরা পশ্চিমা নয়।’
ওয়াপদা ফেডারেশনের ১৬ জন নেতা যুক্ত বিবৃতিতে বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনের লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত ‘এক মরণজয়ী সংগ্রাম’ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের এক সভায় গৃহীত প্রস্তাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের শপথ নেওয়া হয়। অপর এক প্রস্তাবে ‘ইনস্টিটিউট অব চাটাড্র্ অ্যাকাউন্ট্যান্টস পাকিস্তান’-এর পরিবর্তে ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব চাটাড্র্ অ্যাকাউন্ট্যান্টস’ নামকরণ করা হয়। এ ছাড়া পৃথক বিবৃতিতে বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন, আদমজী শ্রমিক ইউনিয়ন, বিমান পরিবহন কর্মচারী ইউনিয়ন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করেন। ইস্টার্ন ব্যাংকিং করপোরেশনের কর্মচারীরা স্বাধিকার আন্দোলনের শহীদদের জন্য আওয়ামী লীগের রিলিফ তহবিলে একদিনের বেতন দান করেন।
এদিকে উদ্ভূত পরিসিস্থিতে জার্মান, জাপান, বৃটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া তাদের নাগরিকদের ঢাকা থেকে দ্রুত নিজ নিজ দেশে পাঠাতে শুরু করে। জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল উথান্ট ঢাকাস্থ জাতিসংঘের ডেপুটি রেসিডেন্ট প্রতিনিধিকে পূর্ব পাকিস্তান থেকে জাতিসংঘের স্টাফ এবং তাদের নির্ভরশীলদের ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা দিয়েছে বলে জানায় রয়টার্স।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

অগ্নিঝরা মার্চ
পূর্ব বাংলা হয়ে ওঠে মুজিবময়

আপডেট সময় : ০২:৫০:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ মার্চ ২০২৩

প্রত্যাশা ডেস্ক : ৯ মার্চ ১৯৭১। রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পর পুরো দৃশ্যপট বদলে যায়। পূর্ব বাংলা হয়ে ওঠে মুজিবময়। একে একে সরকারি, আধা সরকারি, বে-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে। সভা, সমাবেশ ও বিবৃতিতের মাধ্যম সংগঠনের নেতারা সাফ জানিয়ে দেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গৃহীত সকল কর্মসূচি ও সিদ্ধান্তের প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু আহূত অহিংস ও অসহযোগ আন্দোলনের অষ্টম দিন ৯ মার্চ সর্বত্র হরতাল পালিত হয়। যানবাহন, জরুরি সার্ভিস ও ব্যাংক ছাড়া হাইকোর্ট, জজ কোর্ট, আধা সরকারি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। ঘরে ঘরে কালো পতাকা উড়তে দেখা যায়। যানবাহন, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র, শিক্ষ, কর্মচারী ও কর্মকর্তারা কালো ব্যাজ ধারণ করেন। স্টেট ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংক বাংলাদেশের বাইরে টাকা পাঠানো বন্ধ রাখে। দেশের সর্বত্র মিছিল-মিটিং অব্যাহত থাকে।
পল্টন ময়দানে আয়োজিত সমাবেশে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির প্রধান মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ২৫ মার্চের পূর্বে বাংলাদেশকে স্বাধীন ঘোষণা করার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘অন্যথায় ১৯৫২ সালের মতোই আমি ও শেখ মুজিব ঐক্যবদ্ধভাবে স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু করব। ইয়াহিয়া খান, তোমার যদি পশ্চিম পাকিস্তানের পাঁচ কোটি মানুষের জন্য দরদ থাকে তাহলে তুমি পূর্ব বাংলাকে স্বাধীন ঘোষণা কর। এতে করে দুই পাকিস্তানে ভালবাসা থাকবে, বন্ধুত্ব থাকবে। কিন্তু এক পাকিস্তান আর থাকবে না, থাকবে না, থাকবে না!’
ভাসানী বলেন, ‘আমি অহিংস নীতিতে বিশ্বাস করি না। অহিংসার কথা বাদ দাও, এটা অবাস্তব। আমার নবী (সা.) বলতেন, প্রথমে আক্রমণ করো না। কিন্তু কেউ যদি আক্রমণ করে তার তেরটা কেন চৌদ্দটা বাজিয়ে দাও।’ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর সাত কোটি মানুষ স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ায় তাদেরকে মোবারকবাদ জানান ভাসানী।’
পশ্চিম পাকিস্তানিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে কোনো আইন পাস করে আপনাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে আপনারা বিশ্ববাসীর কাছে আবেদন জানাতে পারতেন। পূর্ব বাংলার স্বাধারণ মানুষ আপনাদের সমর্থন করত ।’
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে মওলানা ভাসানী বলেন, ‘বাঙালি, বিহারি, হিন্দু, মুসলমান-সকলেই এ দেশের অধিবাসী। এদের জানমাল রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। বিহারিরা পশ্চিমা নয়।’
ওয়াপদা ফেডারেশনের ১৬ জন নেতা যুক্ত বিবৃতিতে বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনের লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত ‘এক মরণজয়ী সংগ্রাম’ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের এক সভায় গৃহীত প্রস্তাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের শপথ নেওয়া হয়। অপর এক প্রস্তাবে ‘ইনস্টিটিউট অব চাটাড্র্ অ্যাকাউন্ট্যান্টস পাকিস্তান’-এর পরিবর্তে ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব চাটাড্র্ অ্যাকাউন্ট্যান্টস’ নামকরণ করা হয়। এ ছাড়া পৃথক বিবৃতিতে বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন, আদমজী শ্রমিক ইউনিয়ন, বিমান পরিবহন কর্মচারী ইউনিয়ন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করেন। ইস্টার্ন ব্যাংকিং করপোরেশনের কর্মচারীরা স্বাধিকার আন্দোলনের শহীদদের জন্য আওয়ামী লীগের রিলিফ তহবিলে একদিনের বেতন দান করেন।
এদিকে উদ্ভূত পরিসিস্থিতে জার্মান, জাপান, বৃটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া তাদের নাগরিকদের ঢাকা থেকে দ্রুত নিজ নিজ দেশে পাঠাতে শুরু করে। জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল উথান্ট ঢাকাস্থ জাতিসংঘের ডেপুটি রেসিডেন্ট প্রতিনিধিকে পূর্ব পাকিস্তান থেকে জাতিসংঘের স্টাফ এবং তাদের নির্ভরশীলদের ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা দিয়েছে বলে জানায় রয়টার্স।