ঢাকা ০৯:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হিন্দু নারীর উত্তরাধিকার প্রসঙ্গ

  • আপডেট সময় : ০৯:২৭:৩১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩
  • ৫৯ বার পড়া হয়েছে

জয়শ্রী সরকার : আলোচনা কোথা থেকে শুরু করবো তা-ই ভেবে পাচ্ছি না। নিজের জন্মদাতাই লক্ষণরেখা টেনে দিয়েছে ভাই ও বোনের অধিকারে। যে রেখা কন্যাকে দানের বস্তু বানিয়ে ছেড়েছে, আর উত্তরাধিকারের মুকুট পরিয়েছে পুত্রসন্তানকে। অন্দরের সব কাজে নারী পটীয়সী হলেও সম্পত্তি ইস্যুতে নারীকে দুধভাত করে রাখতে পারলে পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার সুবিধা হয়। আর কোনও বিষয়ে মিল থাকুক আর না থাকুক, নারীকে ঠকানোর বিষয়ে সবার সম্প্রীতি যেন উপচে পড়ে। বিভিন্ন বিষয়ে শাস্ত্রকে অবজ্ঞা করা গেলেও নারীর উত্তরাধিকার নির্দেশনা পইপই মানা চাই।
হিন্দুশাস্ত্র নারীকে দেবীর মর্যাদা দিলেও উত্তরাধিকারের অধিকার দেয়নি। ফলে, ‘নারীর বাড়ি কই?’– এ প্রশ্ন বারবার সমতায় বিশ্বাসীদের আঘাত করে। কেবল কন্যারূপে জন্মগ্রহণ করায় অস্তিত্ব সংকটে নারী। উত্তরাধিকারের স্বীকৃতির রাজনীতিতে নিজ গৃহে অতিথি। পিতার অঢেল সম্পদ থাকা সত্ত্বেও শ্বশুরবাড়িতে নিপীড়ন সহ্য করে নীরবে মরে যেতে হয়। এ দেশের হিন্দু নারীরা জানে, বিয়ের পর বাবার বাড়িতে তার কোনও অধিকার নেই। সমতায় বিশ্বাসী অনেক মা-বাবা চায় মেয়েকে সম্পত্তি দিতে, কিন্তু ধর্মীয় প্রথা তাদের বাধা দেয়।
এরমধ্যে কেউ কেউ বিভিন্ন ছলে মেয়েকে সম্পত্তির হিস্যা দেয়, তবে তার সংখ্যা হাতেগোনা। বাবার সম্পদ সব সন্তানের মধ্যে সমভাবে বণ্টন হবে, তাতে ছল কেন করতে হবে? সময়ের স্রোতে আজ আওয়াজ উঠেছে হিন্দু নারীকে উত্তরাধিকার ও সম্পত্তির অধিকার দিতে হবে। এই আওয়াজের বিপক্ষ দল রয়েছে। যারা বলছেন, কোনোভাবেই হিন্দুশাস্ত্র আইন সংস্কার হবে না। কিন্তু সমতায় বিশ্বাসী মানুষেরা সংস্কার চাইছেন। অন্তর্জাল ফুঁসে উঠছে হিন্দু নারীর উত্তরাধিকারের প্রসঙ্গে। সময়ের স্রোতে হাজার সংকট কাটিয়ে কন্যারা স্বনির্ভরতা অর্জন করছে। সম্পদের অধিকার ছাড়াই শত সহস্র মেয়ে মা-বাবাকে আগলে রাখছেন। আর অন্যদিকে সব সম্পদ নিয়েও মা-বাবা’র সেবায় লাগছে না প্রাণপ্রিয় উত্তরাধিগণ!।
কেন উত্তরাধিকারের ফর্দে ভাইয়ের নাম থাকবে, বোনের নাম থাকবে না?
পুত্রসন্তান গর্ভ ধারণে কি মায়ের কম কষ্ট হয়? পুত্রসন্তান কি কন্যার আগে পৃথিবীতে আসে? মাতৃকূপে কন্যা-পুত্র জন্ম প্রক্রিয়ায় যেখানে পার্থক্য নেই সেখানে জন্মের পর কোন যুক্তিতে নারীকে উত্তরাধিকার হিসেবে ত্যাগ করা হয়? প্রসঙ্গতই উত্তর আসে, দায়ভাগ মতে, পি-দানের অধিকারী ব্যক্তি তো পুত্রসন্তান। সুতরাং সম্পত্তির ওয়ারিশ তো পুত্রই পাবে। এখানে বলার দাবি রাখে যে হিন্দু ধর্মমতে ক্রমান্বয়ে মৃত ব্যক্তির পুত্র, পৌত্র এবং প্রপৌত্র পি-দান করবে। ফলে, তারা সম্পত্তির ওয়ারিশ পাবে। ১৯৩৭ সালে প্রবর্তিত সম্পত্তির ওপর হিন্দু নারীর অধিকার আইনমতে, মৃতের বিধবা স্ত্রী, পুত্রের বিধবা স্ত্রী, পৌত্রের বিধবা স্ত্রী জীবন স্বত্ব উত্তরাধিকারের মর্যাদা পাবে। মৃতের উত্তরাধিকারে ছয়জন অগ্রাধিকার পাবে, যেমন
১। পুত্র, ২। পৌত্র অর্থাৎ নাতি, ৩। প্রপৌত্র অর্থাৎ নাতির পুত্র (অবর্তমানে), ৪। মৃতের বিধবা স্ত্রী, ৫। পুত্রের বিধবা স্ত্রী, ৬। পৌত্রের বিধবা স্ত্রী।
ওপরের ছয় জন না থাকলে কন্যা সম্পত্তি পাবে, তবে সব কন্যা নয়। পিতার পি-দানের জন্য সেই কন্যাকে পুত্র জন্ম দেওয়ায় সক্ষম হতে হবে। জীমূতবাহন নামে প্রাচীন ধর্মশাস্ত্র রচয়িতার একটি বাণী প্রচলিত রয়েছে, যে কন্যা পুত্রবতী নয় বা পুত্র জন্ম দেবার শক্তি যার নাই বা যে বন্ধ্যা এবং যে শুধু কন্যাবতী সে উত্তরাধিকার পাবে না। তবে পুত্রসন্তান দত্তক নেওয়ার সামর্থ্য থাকলে সেই কন্যাও উত্তরাধিকারের তালিকায় স্থান পাবে। তবে অবিবাহিত কন্যা থাকলে পিতার সম্পত্তি সমুদয়ভাবে পায়। সকলের অবর্তমানে পিতৃব্য পুত্র অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির ভাতিজা সম্পত্তি পাবে। বিস্ময়কর, ভাতিজা বা পুত্রবধূদের যে অধিকার, কন্যাসন্তানের সে অধিকারও নেই। যেটুকু সুযোগ রয়েছে সেখানেও পুত্রসন্তান জন্ম দিতে হবে। এ যেন কন্যা সন্তানের বিপক্ষে এক যুদ্ধ। লিখতে গেলেও ভার লাগে। পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা নারীকে অধিকার দেওয়ায় চিরকাল বিদ্রোহী। এছাড়াও হিন্দু মেয়েদের উত্তরাধিকার প্রসঙ্গে একটি শঙ্কার কথা শোনা যায়। তা হলো, হিন্দু কন্যাসন্তানকে সম্পত্তির অধিকার দিলে বিয়েসূত্রে তা অন্য ধর্মাবলম্বীদের দখলে চলে যেতে পারে, এবং সম্পত্তিক্লেশ ধর্মের আচার সংস্কৃতিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। যদি এই আশঙ্কা সত্য হয়, তবে সম্ভাব্য সংকট কাটাতে আইনে কিছু বিষয় রেসট্রিকটেড করে রাখা যেতে পারে। ধর্মত্যাগ বা অন্য ধর্মে বিয়ে করলে আইন তার জন্যে নিয়ম বেঁধে দিতে পারে। কিন্তু নিষ্ঠুরের মতো নিজের সন্তানকে ভিন্নদৃষ্টিতে দেখতে পারে না। এ শুধু অন্যায় নয়, অনাচার। ভাববার বেলা বয়ে যায়, নারী সকল বাধা পেরিয়ে অন্দরে আজ আর আটকে নেই। ঘর-বাহির সামলে লড়াইয়েও নারী সোচ্চার। সংসারের অর্থ জোগানে আজ আর শুধু পুরুষ নয়, নারীও রয়েছে। লক্ষ লক্ষ কন্যাসন্তানের উপার্জনে আজ সংসার চলে। উত্তরাধিকার না পেয়েও মা-বাবার অন্ধের ষষ্টি হয়ে বাঁচে। ঝড় বাদলে পরিবারে ছাতা হয়ে থাকে। অথচ সেই কন্যাকেও গরুর ন্যায় দান করে দেওয়া হয়। বংশের বাতির স্রষ্টারই বংশের বাতি হওয়ার সম্মান মিলে না!
কোনও কোনও বাবার নিশ্চয়ই মনে হয় কী নিষ্ঠুরতা, কী প্রহসন তাকে করতে হচ্ছে প্রাণপ্রিয় সন্তানের সঙ্গে। যারা এখনও ভেবে উঠতে পারছে না তারা শিগগিরই ভাবতে পারবেন যে মানুষের কল্যাণে ধর্মীয় নিয়মাচার সংস্কার হওয়া অন্যায় নয়। বরং নারীর অধিকার প্রশ্নে আইন সংস্কার হলে তা ধর্মের বিশালতাকেই প্রকাশ করবে। তাছাড়া বিষয়টা এমন নয় যে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তিতে কন্যাদের স্বর্গপ্রাপ্তি মিলবে। বিষয়টা মনুষ্যজন্মের অধিকারের।
লেখক: গবেষক, কথাসাহিত্যিক।
ই-মেইল: ঔড়ুংযৎর.নরঃযর@মসধরষ.পড়স

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

হিন্দু নারীর উত্তরাধিকার প্রসঙ্গ

আপডেট সময় : ০৯:২৭:৩১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩

জয়শ্রী সরকার : আলোচনা কোথা থেকে শুরু করবো তা-ই ভেবে পাচ্ছি না। নিজের জন্মদাতাই লক্ষণরেখা টেনে দিয়েছে ভাই ও বোনের অধিকারে। যে রেখা কন্যাকে দানের বস্তু বানিয়ে ছেড়েছে, আর উত্তরাধিকারের মুকুট পরিয়েছে পুত্রসন্তানকে। অন্দরের সব কাজে নারী পটীয়সী হলেও সম্পত্তি ইস্যুতে নারীকে দুধভাত করে রাখতে পারলে পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার সুবিধা হয়। আর কোনও বিষয়ে মিল থাকুক আর না থাকুক, নারীকে ঠকানোর বিষয়ে সবার সম্প্রীতি যেন উপচে পড়ে। বিভিন্ন বিষয়ে শাস্ত্রকে অবজ্ঞা করা গেলেও নারীর উত্তরাধিকার নির্দেশনা পইপই মানা চাই।
হিন্দুশাস্ত্র নারীকে দেবীর মর্যাদা দিলেও উত্তরাধিকারের অধিকার দেয়নি। ফলে, ‘নারীর বাড়ি কই?’– এ প্রশ্ন বারবার সমতায় বিশ্বাসীদের আঘাত করে। কেবল কন্যারূপে জন্মগ্রহণ করায় অস্তিত্ব সংকটে নারী। উত্তরাধিকারের স্বীকৃতির রাজনীতিতে নিজ গৃহে অতিথি। পিতার অঢেল সম্পদ থাকা সত্ত্বেও শ্বশুরবাড়িতে নিপীড়ন সহ্য করে নীরবে মরে যেতে হয়। এ দেশের হিন্দু নারীরা জানে, বিয়ের পর বাবার বাড়িতে তার কোনও অধিকার নেই। সমতায় বিশ্বাসী অনেক মা-বাবা চায় মেয়েকে সম্পত্তি দিতে, কিন্তু ধর্মীয় প্রথা তাদের বাধা দেয়।
এরমধ্যে কেউ কেউ বিভিন্ন ছলে মেয়েকে সম্পত্তির হিস্যা দেয়, তবে তার সংখ্যা হাতেগোনা। বাবার সম্পদ সব সন্তানের মধ্যে সমভাবে বণ্টন হবে, তাতে ছল কেন করতে হবে? সময়ের স্রোতে আজ আওয়াজ উঠেছে হিন্দু নারীকে উত্তরাধিকার ও সম্পত্তির অধিকার দিতে হবে। এই আওয়াজের বিপক্ষ দল রয়েছে। যারা বলছেন, কোনোভাবেই হিন্দুশাস্ত্র আইন সংস্কার হবে না। কিন্তু সমতায় বিশ্বাসী মানুষেরা সংস্কার চাইছেন। অন্তর্জাল ফুঁসে উঠছে হিন্দু নারীর উত্তরাধিকারের প্রসঙ্গে। সময়ের স্রোতে হাজার সংকট কাটিয়ে কন্যারা স্বনির্ভরতা অর্জন করছে। সম্পদের অধিকার ছাড়াই শত সহস্র মেয়ে মা-বাবাকে আগলে রাখছেন। আর অন্যদিকে সব সম্পদ নিয়েও মা-বাবা’র সেবায় লাগছে না প্রাণপ্রিয় উত্তরাধিগণ!।
কেন উত্তরাধিকারের ফর্দে ভাইয়ের নাম থাকবে, বোনের নাম থাকবে না?
পুত্রসন্তান গর্ভ ধারণে কি মায়ের কম কষ্ট হয়? পুত্রসন্তান কি কন্যার আগে পৃথিবীতে আসে? মাতৃকূপে কন্যা-পুত্র জন্ম প্রক্রিয়ায় যেখানে পার্থক্য নেই সেখানে জন্মের পর কোন যুক্তিতে নারীকে উত্তরাধিকার হিসেবে ত্যাগ করা হয়? প্রসঙ্গতই উত্তর আসে, দায়ভাগ মতে, পি-দানের অধিকারী ব্যক্তি তো পুত্রসন্তান। সুতরাং সম্পত্তির ওয়ারিশ তো পুত্রই পাবে। এখানে বলার দাবি রাখে যে হিন্দু ধর্মমতে ক্রমান্বয়ে মৃত ব্যক্তির পুত্র, পৌত্র এবং প্রপৌত্র পি-দান করবে। ফলে, তারা সম্পত্তির ওয়ারিশ পাবে। ১৯৩৭ সালে প্রবর্তিত সম্পত্তির ওপর হিন্দু নারীর অধিকার আইনমতে, মৃতের বিধবা স্ত্রী, পুত্রের বিধবা স্ত্রী, পৌত্রের বিধবা স্ত্রী জীবন স্বত্ব উত্তরাধিকারের মর্যাদা পাবে। মৃতের উত্তরাধিকারে ছয়জন অগ্রাধিকার পাবে, যেমন
১। পুত্র, ২। পৌত্র অর্থাৎ নাতি, ৩। প্রপৌত্র অর্থাৎ নাতির পুত্র (অবর্তমানে), ৪। মৃতের বিধবা স্ত্রী, ৫। পুত্রের বিধবা স্ত্রী, ৬। পৌত্রের বিধবা স্ত্রী।
ওপরের ছয় জন না থাকলে কন্যা সম্পত্তি পাবে, তবে সব কন্যা নয়। পিতার পি-দানের জন্য সেই কন্যাকে পুত্র জন্ম দেওয়ায় সক্ষম হতে হবে। জীমূতবাহন নামে প্রাচীন ধর্মশাস্ত্র রচয়িতার একটি বাণী প্রচলিত রয়েছে, যে কন্যা পুত্রবতী নয় বা পুত্র জন্ম দেবার শক্তি যার নাই বা যে বন্ধ্যা এবং যে শুধু কন্যাবতী সে উত্তরাধিকার পাবে না। তবে পুত্রসন্তান দত্তক নেওয়ার সামর্থ্য থাকলে সেই কন্যাও উত্তরাধিকারের তালিকায় স্থান পাবে। তবে অবিবাহিত কন্যা থাকলে পিতার সম্পত্তি সমুদয়ভাবে পায়। সকলের অবর্তমানে পিতৃব্য পুত্র অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির ভাতিজা সম্পত্তি পাবে। বিস্ময়কর, ভাতিজা বা পুত্রবধূদের যে অধিকার, কন্যাসন্তানের সে অধিকারও নেই। যেটুকু সুযোগ রয়েছে সেখানেও পুত্রসন্তান জন্ম দিতে হবে। এ যেন কন্যা সন্তানের বিপক্ষে এক যুদ্ধ। লিখতে গেলেও ভার লাগে। পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা নারীকে অধিকার দেওয়ায় চিরকাল বিদ্রোহী। এছাড়াও হিন্দু মেয়েদের উত্তরাধিকার প্রসঙ্গে একটি শঙ্কার কথা শোনা যায়। তা হলো, হিন্দু কন্যাসন্তানকে সম্পত্তির অধিকার দিলে বিয়েসূত্রে তা অন্য ধর্মাবলম্বীদের দখলে চলে যেতে পারে, এবং সম্পত্তিক্লেশ ধর্মের আচার সংস্কৃতিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। যদি এই আশঙ্কা সত্য হয়, তবে সম্ভাব্য সংকট কাটাতে আইনে কিছু বিষয় রেসট্রিকটেড করে রাখা যেতে পারে। ধর্মত্যাগ বা অন্য ধর্মে বিয়ে করলে আইন তার জন্যে নিয়ম বেঁধে দিতে পারে। কিন্তু নিষ্ঠুরের মতো নিজের সন্তানকে ভিন্নদৃষ্টিতে দেখতে পারে না। এ শুধু অন্যায় নয়, অনাচার। ভাববার বেলা বয়ে যায়, নারী সকল বাধা পেরিয়ে অন্দরে আজ আর আটকে নেই। ঘর-বাহির সামলে লড়াইয়েও নারী সোচ্চার। সংসারের অর্থ জোগানে আজ আর শুধু পুরুষ নয়, নারীও রয়েছে। লক্ষ লক্ষ কন্যাসন্তানের উপার্জনে আজ সংসার চলে। উত্তরাধিকার না পেয়েও মা-বাবার অন্ধের ষষ্টি হয়ে বাঁচে। ঝড় বাদলে পরিবারে ছাতা হয়ে থাকে। অথচ সেই কন্যাকেও গরুর ন্যায় দান করে দেওয়া হয়। বংশের বাতির স্রষ্টারই বংশের বাতি হওয়ার সম্মান মিলে না!
কোনও কোনও বাবার নিশ্চয়ই মনে হয় কী নিষ্ঠুরতা, কী প্রহসন তাকে করতে হচ্ছে প্রাণপ্রিয় সন্তানের সঙ্গে। যারা এখনও ভেবে উঠতে পারছে না তারা শিগগিরই ভাবতে পারবেন যে মানুষের কল্যাণে ধর্মীয় নিয়মাচার সংস্কার হওয়া অন্যায় নয়। বরং নারীর অধিকার প্রশ্নে আইন সংস্কার হলে তা ধর্মের বিশালতাকেই প্রকাশ করবে। তাছাড়া বিষয়টা এমন নয় যে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তিতে কন্যাদের স্বর্গপ্রাপ্তি মিলবে। বিষয়টা মনুষ্যজন্মের অধিকারের।
লেখক: গবেষক, কথাসাহিত্যিক।
ই-মেইল: ঔড়ুংযৎর.নরঃযর@মসধরষ.পড়স