স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ডেস্ক: হার্ট বা হৃদয় আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। নিঃশব্দ ঘাতক হার্ট অ্যাটাক আমাদের জীবনকে ধীরে ধীরে গ্রাস করে নিচ্ছে। যখন হৃৎপি-ের কোনো শিরায় রক্ত জমাট বেঁধে হৃৎপি-ে রক্ত প্রবাহে বাধার সৃষ্টি করে তখনই হার্ট অ্যাটাক হয়। বয়স, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা, উচ্চ কোলেস্টেরলের সমস্যা, অতিরিক্ত মেদ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, মদ্যপান, মানসিক চাপ—এগুলো মূলত হার্ট অ্যাটাকের কারণ। সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় এমনটাই জানা গিয়েছে যেসব মানুষের পায়ের পেশির শক্তি বেশি তাদের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন হার্ট ফেলিওরের সবচেয়ে সাধারণ কারণ। হার্ট অ্যাটাকের প্রায় ৬ থেকে ৯ শতাংশ রোগী এই অবস্থার শিকার হন। এর আগে গবেষণায় দেখা গেছে, শক্তিশালী কোয়াড্রিসেপ থাকলে করোনারি আর্টারি ডিজিজে আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি কম থাকে।
নতুন সমীক্ষায় উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রাগের ইউরোপিয়ান সোসাইটি অফ কার্ডিওলজি হার্ট ফেলিওর ২০২৩ এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়, পরীক্ষা করা দেখা গিয়েছে যে হার্ট অ্যাটাকের সঙ্গে যুক্ত মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশনের পরে অনেকক্ষেত্রে রোগী বেঁচে যান শক্তিশালী পায়ের পেশির কারণে। জাপানের কিতাসাতো বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব মেডিক্যাল সায়েন্সেসের একজন ফিজিক্যাল থেরাপিস্ট কেনসুকে উয়েনো বলেন, কোয়াড্রিসেপের শক্তি ক্লিনিকাল অনুশীলনে সঠিকভাবে পরিমাপ করা সহজ। গবেষণায় ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে কোয়াড্রিসেপসের শক্তি মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশনের পরে হার্ট ফেলিওরের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা রোগীদের শনাক্ত করতে সহায়তা করতে পারে। গবেষণাটি ২০০৭ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে তীব্র মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশনে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৯৩২ জন রোগীর তথ্য নিয়ে করা হয়েছে। এই রোগীদের ক্ষেত্রে আগে কোনও হার্টের অসুথ ছিল না। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের গড় বয়স ছিল ৬৬ বছর, এবং ৭৫৩ জন অংশগ্রহণকারী পুরুষ ছিলেন। পায়ের শক্তির সূচক হিসাবে সর্বাধিক কোয়াড্রিসেপ শক্তি পরিমাপ করা হয়েছিল। রোগীদের একটি চেয়ারে বসে পাঁচ সেকেন্ডের জন্য যতটা সম্ভব কোয়াড্রিসেপ পেশি সঙ্কুচিত করতে বলা হয়। গোড়ালির সঙ্গে যুক্ত একটি হ্যান্ডহেল্ড ডায়নামোমিটার কেজিতে সর্বোচ্চ মান গণনা করেছে। দুই পায়েরই কোয়াড্রিসেপ শক্তি পরিমাপ করে তার গড় করা হয়। শুধু কোয়াড্রিসেপ শক্তি নয়, বয়স, লিঙ্গ, বডি মাস ইনডেক্স, পূর্বের মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন বা এনজিনা পেক্টোরিস, ডায়াবিটিস, অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজ়িজ়, পেরিফেরাল আর্টারিয়াল ডিজ়িজ়— এই সব কিছু উপর পর্যালোচনা করেই গবেষণাপত্রটি তৈরি করা হয়।
যেভাবে পায়ের শক্তি বাড়াবেন
পায়ের শক্তি কমে যায় পায়ের দুর্বলতার কারণে। ঠিকমতো চলতে-ফিরতে পায়ে চাই স্বাভাবিক এবং সবল অবস্থা। রক্ত সঞ্চালনের অসুবিধা, স্নায়ুর ক্ষতি, বেশি কাজ, ব্যায়ামের অভাব, আর্থ্রাইটিস, পানিশূন্যতা, ডায়াবেটিস, রক্তস্বল্পতা, পুষ্টির ঘাটতি ইত্যাদি পায়ের দুর্বলতার কারণ। নিয়মিত পায়ে ম্যাসাজ রক্ত চলাচলকে বাড়ায়। এতে পা শক্তিশালী হয়। এটি পায়ের ব্যথা কমায়, প্রদাহ ও ফোলা ভাব কমায়। ম্যাসাজ শরীরকেও শিথিল করে। সামান্য জলপাইয়ের তেল বা নারকেল তেল নিন। একে হালকা গরম করুন। ১০ থেকে ১৫ মিনিট ম্যাসাজ করুন। প্রয়োজনে দিনে দুবার এটি করতে পারেন।
পায়ের শক্তি বাড়াতে হাঁটা খুব ভালো ব্যায়াম। এটি রক্ত সঞ্চালন ও পেশির শক্তি বাড়ায়। সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন ৩০ মিনিট করে হাঁটুন। হাঁটতে অসুবিধা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। হাঁটা ছাড়া দৌড়, সাঁতার বা সাইক্লিং করতে পারেন। পানিশূন্যতার কারণেও পায়ের বেশি দুর্বল হতে পারে। তাই পানীয় জাতীয় খাবার বেশি করে খান। পানিশূন্যতা প্রতিরোধে সারা দিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন। পানি আছে এমন ফল ও সবজি খান। কফিজাতীয় খাবার এড়িয়ে যান। যারা নিয়ম করে হাঁটেন বা সাঁতার কাটেন, তারা সাধারণত পায়ের পেশিগুলিকে টোনড এবং শক্তিশালী করে তোলার জন্য আর কোনও চেষ্টাই করেন না। কিন্তু মনে রাখবেন, এটুকুই যথেষ্ট নয়, পায়ের জন্য বিশেষ যতœ একান্ত প্রয়োজনীয়। সপ্তাহে অন্তত দু’বার পায়ের নিচের অংশের পেশি, যেমন কাভস, হ্যামস্ট্রিং এবং কোয়াড্রিসেপসের ব্যায়াম প্রয়োজন। দেওয়া রইল কয়েকটি সহজ ব্যায়ামের খুঁটিনাটি।
বৃক্ষাসন: খুব জনপ্রিয় যোগ ভঙ্গিমা। একাধারে স্ট্রেচিং এবং পায়ের মাসলের শক্তিবর্ধক ব্যায়াম। সেই সঙ্গে শরীরের কোর মাসলের শক্তিও বাড়ায় এই বিশেষ যোগমুদ্রাটি।
কীভাবে করবেন: পা জোড়া করে দাঁড়ান এবং হাত দুটো উপরের দিকে তুলে প্রণাম মুদ্রায় ভাঁজ করুন। ডান পা দৃঢ়ভাবে মাটিতে রেখে বাঁ পা হাঁটু থেকে ভাঁজ করে ডান পায়ের থাইয়ের ভিতরের অংশে রাখুন। ১০ গুনে পা নামিয়ে নিন এবং অন্য পা দিয়ে একই পদ্ধতি রিপিট করুন।
ফ্রগ জাম্প: ব্যাঙের মতো লাফান রোজ, তা বাড়তি ক্যালোরি ঝরাতে সাহায্য করবে।
কীভাবে করবেন: ব্যাঙের মতো মাটিতে হাত দিয়ে পা ভাঁজ করে হাঁটু মুড়ে বসুন। পায়ের পাতা মাটিতে থাকবে। শরীরের উপরের অংশ সোজা রাখবেন। লম্বা শ্বাস নিয়ে সামনের দিকে লাফান। লাফানোর সময় হাত ও পায়ের মধ্যে সমতা রেখে দুটোই একসঙ্গে তুলবেন। ব্রেক না নিয়ে পাঁচটা ফ্রগ জাম্প একসঙ্গে করুন।
কীভাবে করবেন: পা দুটো সামান্য ফাঁক করে দাঁড়ান। কনুই থেকে হাত ভাঁজ করে মুষ্টিবদ্ধ করুন। শরীরের উপরের অংশ সামান্য বাঁদিকে হেলিয়ে বাঁ পা তুলে সামনে কিক মারুন, একই দিকে ঘুষিও ছুড়ুন। ডান পা দিয়ে রিপিট করুন।