ঢাকা ০৯:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংবিধানকে জনবান্ধব করতে ১৯ প্রস্তাব জাপার

  • আপডেট সময় : ০৮:১১:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪
  • ৩১ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : সংবিধানকে জনবান্ধব করে তুলতে এবং একক ব্যক্তি বা প্রধানমন্ত্রীর কেন্দ্রীভূত নিয়ন্ত্রণ কমাতে সাংবিধানিক কাঠামোর সংস্কার চেয়েছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। এ লক্ষ্যে দলের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের সংবিধান সংস্কারের জন্য ১৯ দফার প্রস্তাব করেছেন। প্রস্তাবে জাপা বলছে, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বে ভারসাম্য আনতে হবে। জাপা বলছে, একক ব্যক্তি, তথা প্রধানমন্ত্রী সব রাষ্ট্রীয় নির্বাহী ক্ষমতার একক কর্তৃত্ব নিয়ে যেন স্বৈরাচারী হয়ে না উঠতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করতেই তাদের এমন প্রস্তাব। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) জাপা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই ১৯ দফা প্রস্তাব পেশ করা হয়। এ সময় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজউল ইসিলাম ভূঁইয়াসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সংসদ সদস্যদের সংসদের নিজ দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে ভোট দেওয়ার সুযোগ রাখতে হবে। তবে তারা সেটি করতে পারবেন যখন দলীয় সংসদ সদস্যদের মধ্যে সুস্পষ্ট বিভাজন দেখা যাবে এবং কমপক্ষে দলীয় সংসদ সদস্যদের এক-তৃতীয়াংশ দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন। এমন প্রস্তাব অনুযায়ী সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন করতে হবে; এক ব্যক্তি দীর্ঘ সময় সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত থাকলে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার প্রবণতা তৈরি হয়, তিনি স্বৈরাচারী হয়ে ওঠেন। এ কারণে বিশ্বের অনেক দেশের সংবিধানে কোনো ব্যক্তির সর্বোচ্চ দুই বার শীর্ষ পদে অধিষ্ঠিত থাকার সীমাবদ্ধতা আরোপ করা রয়েছে। একইভাবে বাংলাদেশেও একই বিধান অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে;
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল হলে নির্বাচন পরিচালনার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের বিধানগুলো পুনরায় চালু হবে। তাই পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করতে হবে; সংসদে তিন-চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে নির্বাচিত হয়ে প্রস্তাবিত রাষ্ট্রপতি সর্বসম্মত প্রার্থী বিবেচিত হতে পারেন। সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নেতৃত্ব দিতে পারেন। ১৫তম সংশোধনী বাতিল করার পর সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫৮ (খ)-তে, সে অনুযায়ী পরিবর্তন আনতে হবে; পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করা হলে ৭(ক) ও ৭(খ) অনুচ্ছেদ দুটি বাতিল হয়ে যাবে। পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করে সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংগঠন করার মৌলিক অধিকারের ওপর সরকারের জনবিরোধী বিধিনিষেধ তুলে নিতে হবে; রাষ্ট্রপতির নিয়োগ সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নয়, বরং সংসদ সদস্যদের তিন-চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভোটে হতে হবে। এতে রাষ্ট্রপতির সর্বসম্মত প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। রাষ্ট্রপতি নিয়োগের জন্য তিন-চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য অনুচ্ছেদ ৪৮(ক) সংশোধন করতে হবে; রাষ্ট্রপতির অভিশংসনের জন্য সংসদের তিন-চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিধান প্রবর্তন করে স্থায়িত্বের ঝুঁকি কমাতে হবে। সে অনুযায়ী সংবিধানের ৫২ অনুচ্ছেদ সংশোধন করতে হবে; ৪৮ (৩) অনুচ্ছেদের সংশোধনী নিম্নরূপে করতে হবে— সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুযায়ী কেবল প্রধানমন্ত্রী ও ৯৬ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ছাড়া রাষ্ট্রপতি তার অন্য সব দায়িত্ব পালনে নির্ধারিত পদ্ধতি অনুযায়ী কাজ করবেন। নির্ধারিত কোনো পদ্ধতি না থাকলে তিনি নিজের বিবেক, বুদ্ধি ও বিবেচনা অনুযায়ী কাজ করবেন; দুজন ডেপুটি স্পিকার এবং এর মধ্যে একজনকে অবশ্যই বিরোধী দল থেকে মনোনীত বা নির্বাচিত করার বিধান যুক্ত করতে হবে; সংসদের হাতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অভিশংসনের ১৯৭২ সালের মূল বিধান পুনরুদ্ধারকারী ষোড়শ সংশোধনী এরই মধ্যে আপিল বিভাগের মাধ্যমে বাতিল করা হয়েছে। এ অবস্থায় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ও নির্বাচন কমিশনারদের অপসারণের জন্য ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল’ গঠন করা যেতে পারে। একই ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে’র মাধ্যমে অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানপ্রধান ও সদস্যদের অপসারণ বিষয়ক কার্যাবলি পরিচালনা করা যেতে পারে; সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদের অধীন অর্পিত কার্যাবলি পরিচালনায় সুপ্রিম কোর্টকে সহায়তা করার জন্য একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ‘সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়’ থাকবে। একই সচিবালয়ের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের দাফতরিক কাজও পরিচালনা করা যেতে পারে। সংবিধানে এ প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিধান অন্তর্ভুক্ত করতে হবে;
সংবিধানে ১১৬ ও ১০৯ নম্বর পরস্পর সাংঘর্ষিক। সে অনুযায়ী ১১৬ নম্বর অনুচ্ছেদটি অপ্রয়োজনীয় বিবেচনায় বাদ দেওয়া যেতে পারে; সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধানের ৯৫(২) (গ) অনুচ্ছেদে আইন প্রণয়নের কথা বলা আছে। প্রধান বিচারপতির দ্বারা নির্বাচিত সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ বিচারপতিদের একটি প্যানেল অনুসন্ধান কমিটি হিসেবে কাজ করবেন, তারা বিচারক নিয়োগের সুপারিশ প্রধান বিচারপতির কাছে পেশ করবেন। সুপারিশসহ নিয়োগ চূড়ান্ত করার জন্য প্রধান বিচারপতি, রাষ্ট্রপতির কাছে তা পাঠাবেন— এভাবে আইনটি তৈরি করা যেতে পারে;
সংবিধানের ৬৫(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংরক্ষিত নারী আসনের বিধান অক্ষত রেখে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে অবশ্যই তাদের মোট প্রার্থীর ১০ শতাংশ নারী রাখতে হবে, যারা সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনের সময় সরাসরি নির্বাচনে অংশ নিয়ে জিততে না পারা প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ অনুযায়ী একটি বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে;
প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়াই রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনারদের নিয়োগ দেবেন। তবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সদস্যদের মনোনয়নের জন্য রাষ্ট্রপতি একটি ‘অনুসন্ধান কমিটি’ গঠন করবেন। অনুসন্ধান কমিটির এক-তৃতীয়াংশ সদস্যকে অবশ্যই বিরোধী দল থেকে মনোনীত করতে হবে। অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররা নিয়োগ দেবেন;
সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচনের সময় কোনো কর্মকর্তা ইসির নির্দেশনা না মানলে নির্বাচন কমিশনের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা থাকবে, এমন বিধান অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করছি; কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল, পাবলিক সার্ভিস কমিশন ইত্যাদি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগে প্রধানমন্ত্রীর কর্তৃত্ব থাকবে না। রাষ্ট্রপতি এ নিয়োগগুলো চূড়ান্ত করবেন। এ প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের দুজন বিচারপতি (অবসরপ্রাপ্ত বা কর্মরত), দুজন সংসদ সদস্য (একজন সরকারি দল থেকে, আরেকজন বিরোধী দল থেকে), অবসরপ্রাপ্ত একজন সরকারি কর্মকর্তা ও সুশীল সমাজের দুজন প্রতিনিধি (একজন পুরুষ, একজন নারী) নিয়ে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করতে পারেন। এই কমিটিকে প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করে সুপারিশ রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে; এবং দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, তথ্য অধিকার কমিশন ইত্যাদির মতো অন্যান্য সব সাংবিধানিক সংস্থার জন্যও একই নিয়োগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা যেতে পারে।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

গুমে শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততা পেয়েছে কমিশন

সংবিধানকে জনবান্ধব করতে ১৯ প্রস্তাব জাপার

আপডেট সময় : ০৮:১১:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : সংবিধানকে জনবান্ধব করে তুলতে এবং একক ব্যক্তি বা প্রধানমন্ত্রীর কেন্দ্রীভূত নিয়ন্ত্রণ কমাতে সাংবিধানিক কাঠামোর সংস্কার চেয়েছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। এ লক্ষ্যে দলের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের সংবিধান সংস্কারের জন্য ১৯ দফার প্রস্তাব করেছেন। প্রস্তাবে জাপা বলছে, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বে ভারসাম্য আনতে হবে। জাপা বলছে, একক ব্যক্তি, তথা প্রধানমন্ত্রী সব রাষ্ট্রীয় নির্বাহী ক্ষমতার একক কর্তৃত্ব নিয়ে যেন স্বৈরাচারী হয়ে না উঠতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করতেই তাদের এমন প্রস্তাব। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) জাপা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই ১৯ দফা প্রস্তাব পেশ করা হয়। এ সময় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজউল ইসিলাম ভূঁইয়াসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সংসদ সদস্যদের সংসদের নিজ দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে ভোট দেওয়ার সুযোগ রাখতে হবে। তবে তারা সেটি করতে পারবেন যখন দলীয় সংসদ সদস্যদের মধ্যে সুস্পষ্ট বিভাজন দেখা যাবে এবং কমপক্ষে দলীয় সংসদ সদস্যদের এক-তৃতীয়াংশ দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন। এমন প্রস্তাব অনুযায়ী সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন করতে হবে; এক ব্যক্তি দীর্ঘ সময় সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত থাকলে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার প্রবণতা তৈরি হয়, তিনি স্বৈরাচারী হয়ে ওঠেন। এ কারণে বিশ্বের অনেক দেশের সংবিধানে কোনো ব্যক্তির সর্বোচ্চ দুই বার শীর্ষ পদে অধিষ্ঠিত থাকার সীমাবদ্ধতা আরোপ করা রয়েছে। একইভাবে বাংলাদেশেও একই বিধান অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে;
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল হলে নির্বাচন পরিচালনার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের বিধানগুলো পুনরায় চালু হবে। তাই পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করতে হবে; সংসদে তিন-চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে নির্বাচিত হয়ে প্রস্তাবিত রাষ্ট্রপতি সর্বসম্মত প্রার্থী বিবেচিত হতে পারেন। সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নেতৃত্ব দিতে পারেন। ১৫তম সংশোধনী বাতিল করার পর সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫৮ (খ)-তে, সে অনুযায়ী পরিবর্তন আনতে হবে; পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করা হলে ৭(ক) ও ৭(খ) অনুচ্ছেদ দুটি বাতিল হয়ে যাবে। পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করে সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংগঠন করার মৌলিক অধিকারের ওপর সরকারের জনবিরোধী বিধিনিষেধ তুলে নিতে হবে; রাষ্ট্রপতির নিয়োগ সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নয়, বরং সংসদ সদস্যদের তিন-চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভোটে হতে হবে। এতে রাষ্ট্রপতির সর্বসম্মত প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। রাষ্ট্রপতি নিয়োগের জন্য তিন-চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য অনুচ্ছেদ ৪৮(ক) সংশোধন করতে হবে; রাষ্ট্রপতির অভিশংসনের জন্য সংসদের তিন-চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিধান প্রবর্তন করে স্থায়িত্বের ঝুঁকি কমাতে হবে। সে অনুযায়ী সংবিধানের ৫২ অনুচ্ছেদ সংশোধন করতে হবে; ৪৮ (৩) অনুচ্ছেদের সংশোধনী নিম্নরূপে করতে হবে— সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুযায়ী কেবল প্রধানমন্ত্রী ও ৯৬ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ছাড়া রাষ্ট্রপতি তার অন্য সব দায়িত্ব পালনে নির্ধারিত পদ্ধতি অনুযায়ী কাজ করবেন। নির্ধারিত কোনো পদ্ধতি না থাকলে তিনি নিজের বিবেক, বুদ্ধি ও বিবেচনা অনুযায়ী কাজ করবেন; দুজন ডেপুটি স্পিকার এবং এর মধ্যে একজনকে অবশ্যই বিরোধী দল থেকে মনোনীত বা নির্বাচিত করার বিধান যুক্ত করতে হবে; সংসদের হাতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অভিশংসনের ১৯৭২ সালের মূল বিধান পুনরুদ্ধারকারী ষোড়শ সংশোধনী এরই মধ্যে আপিল বিভাগের মাধ্যমে বাতিল করা হয়েছে। এ অবস্থায় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ও নির্বাচন কমিশনারদের অপসারণের জন্য ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল’ গঠন করা যেতে পারে। একই ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে’র মাধ্যমে অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানপ্রধান ও সদস্যদের অপসারণ বিষয়ক কার্যাবলি পরিচালনা করা যেতে পারে; সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদের অধীন অর্পিত কার্যাবলি পরিচালনায় সুপ্রিম কোর্টকে সহায়তা করার জন্য একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ‘সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়’ থাকবে। একই সচিবালয়ের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের দাফতরিক কাজও পরিচালনা করা যেতে পারে। সংবিধানে এ প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিধান অন্তর্ভুক্ত করতে হবে;
সংবিধানে ১১৬ ও ১০৯ নম্বর পরস্পর সাংঘর্ষিক। সে অনুযায়ী ১১৬ নম্বর অনুচ্ছেদটি অপ্রয়োজনীয় বিবেচনায় বাদ দেওয়া যেতে পারে; সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধানের ৯৫(২) (গ) অনুচ্ছেদে আইন প্রণয়নের কথা বলা আছে। প্রধান বিচারপতির দ্বারা নির্বাচিত সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ বিচারপতিদের একটি প্যানেল অনুসন্ধান কমিটি হিসেবে কাজ করবেন, তারা বিচারক নিয়োগের সুপারিশ প্রধান বিচারপতির কাছে পেশ করবেন। সুপারিশসহ নিয়োগ চূড়ান্ত করার জন্য প্রধান বিচারপতি, রাষ্ট্রপতির কাছে তা পাঠাবেন— এভাবে আইনটি তৈরি করা যেতে পারে;
সংবিধানের ৬৫(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংরক্ষিত নারী আসনের বিধান অক্ষত রেখে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে অবশ্যই তাদের মোট প্রার্থীর ১০ শতাংশ নারী রাখতে হবে, যারা সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনের সময় সরাসরি নির্বাচনে অংশ নিয়ে জিততে না পারা প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ অনুযায়ী একটি বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে;
প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়াই রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনারদের নিয়োগ দেবেন। তবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সদস্যদের মনোনয়নের জন্য রাষ্ট্রপতি একটি ‘অনুসন্ধান কমিটি’ গঠন করবেন। অনুসন্ধান কমিটির এক-তৃতীয়াংশ সদস্যকে অবশ্যই বিরোধী দল থেকে মনোনীত করতে হবে। অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররা নিয়োগ দেবেন;
সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচনের সময় কোনো কর্মকর্তা ইসির নির্দেশনা না মানলে নির্বাচন কমিশনের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা থাকবে, এমন বিধান অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করছি; কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল, পাবলিক সার্ভিস কমিশন ইত্যাদি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগে প্রধানমন্ত্রীর কর্তৃত্ব থাকবে না। রাষ্ট্রপতি এ নিয়োগগুলো চূড়ান্ত করবেন। এ প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের দুজন বিচারপতি (অবসরপ্রাপ্ত বা কর্মরত), দুজন সংসদ সদস্য (একজন সরকারি দল থেকে, আরেকজন বিরোধী দল থেকে), অবসরপ্রাপ্ত একজন সরকারি কর্মকর্তা ও সুশীল সমাজের দুজন প্রতিনিধি (একজন পুরুষ, একজন নারী) নিয়ে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করতে পারেন। এই কমিটিকে প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করে সুপারিশ রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে; এবং দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, তথ্য অধিকার কমিশন ইত্যাদির মতো অন্যান্য সব সাংবিধানিক সংস্থার জন্যও একই নিয়োগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা যেতে পারে।